আমরা জানি সিজদার সময় উভয় পায়ের মাঝে চার আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁক রাখতে হবে। কিন্তু বেহেশতী যেওরে (অনুবাদ ১ম খন্ড, ১১০ পৃ:) উল্লেখ আছে যে, সিজদায় উভয় পা মিলানো থাকবে এর মীমাংসা কি ?
- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -
নামাযের মধ্যে সিজদার সময় উভয় পায়ের মধ্যে চার আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁক রাখা যে সুন্নাত তরীকা হিসেবে বলা হয়েছে এটাই সহীহ মাসআলা। বেহেশতী যেওর ১ম খন্ড ১৩৯ পৃষ্ঠায় সিজদার মধ্যে গোড়ালী মিলানোর যে কথা আছে, তার উদ্দেশ্যও সেটা। অর্থাৎ উভয় গোড়ালীর মধ্যে বেশী দূরত্ব রাখবে না। বরং মিলানোর কাছাকাছি করে রাখবে। যার দূরত্ব মোটামুটি চার আঙ্গুল পরিমাণ। উভয় গোড়ালী সম্পূর্ণ মিলানো এজন্য উদ্দেশ্য হতে পারে না যে, তাতে একটি হাদীসের আমল হলেও এসম্পর্কিত অপর তিনটি হাদীসের উপর আমল তরক হয়ে যায়। আর আমরা যেভাবে বলেছি, তাতে এ ব্যাপারে বর্ণিত চারটি হাদীসের তিনটার উপরই সরাসরি আমল হয়ে যায়। একটি হাদীসের মধ্যে সামান্য ব্যাখ্যা দিতে হয়। হাদীসগুলো নিম্নরূপঃ
১. হযরত আয়িশা e হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ c কে বিছানায় না পেয়ে তালাশ করতে শুরূ করি। তখন আমার হাত হুজুর c - এর উভয় পায়ের উপর পড়ে। যা তখন খাড়া অবস্থায় ছিল। হুজুর c তখন নামাযের স্থানে সিজদাহরত ছিলেন। -মিশকাত শরীফ, পৃঃ ৮৪
২. হযরত আবূ হুমাইদ আস-সায়ীদী এক লম্বা হাদীসে নবীজী c - এর নামাযের বর্ণনা দেন। যার শেষাংশে বলেন- অতঃপর তিনি সিজদার জন্য মাটিতে ঝুঁকতেন। সিজদায় হস্তদ্বয়কে উভয় পাঁজর থেকে পৃথক রাখতেন। আর উভয় পায়ের আঙ্গুলগুলোকে কিবলার দিকে মুড়ে রাখতেন। -মিশকাত শরীফ, পৃঃ৭৬
৩. হযরত বারা e বর্ণনা করেন যে, নবী কারীম c যখন রুকুতে যেতেন, তখন পায়ের আঙ্গুলগলোকে এমনভাবে কিবলামূখী করাইতেন যে, উভয় পায়ের মাঝখানে ফাঁকা থাকত। (বাইহাকী) উল্লেখিত তিনটি রিয়াওয়াত দ্বারা সিজদার মধ্যে উভয় পায়ের গোড়ালীর ফাঁক রাখা সাব্যস্ত হয়।কারণ, তৃতীয় হাদীসটি একদম স্পষ্ট যে, উভয় পায়ের মাঝে ফাঁক থাকবে। আর ১ম হাদীস দ্বারা এভাবে ছাবিত হয় যে, শুধু গোড়ালী মিশালে উভয় পা খাড়া থাকে না। বরং বাঁকা হয়ে যায়। আর দুই পায়ের মাঝে চার আঙ্গুল ফাঁকা রাখলে উভয় পা খাড়া থাকে। তেমনিভাবে ২য়, ৩য় হাদীসে বলা হয়েছে যে, পায়ের আঙ্গুল সমূহ কিবলামুখী করে রাখতে হবে। এটাও তখনই সম্ভব যখন পা দ্বয়ের মাঝে চার আঙ্গুল ফাঁকা থাকবে। কারণ, উভয় পায়ের গোড়ালী মিলালে দুই পায়ের শুধুমাত্র বৃদ্ধাঙ্গুলী ব্যতীত অন্য কোন আঙ্গুল কিবলামুখী করা সম্ভব হয় না।
৪. হযরত আয়িশা e বর্ণনা করেন যে, একরাতে আমি হুজূর c কে হারিয়ে ফেলি। অথচ তিনি আমার সাথে একই বিছানায় শুয়েছিলেন। অতঃপর খুঁজতে খুঁজতে তাঁকে সিজদারত পাই। এমতাবস্থায় যে, তার পায়ের গোড়ালীদ্বয় মিলানো ছিল। আর পায়ের আঙ্গুলীগুলো মিলানো ছিল। আর পায়ের আঙ্গুলীগুলো কিবলামুখী ছিল। [ই’লাউল সুনান, ইবনে হিব্বান , নাসায়ী] যারা সিজদায় গোড়ালী মিলাতে বলেন এ হাদীসটি তাদের দলীল। কিন্তু একটা হাদীসের উপর আমল করলে, অবশিষ্ট তিনটি হাদীস বাদ দিতে হয়। এবং এ হাদীসের শেষের অংশের উপরও আমল করা যায় না। এজন্য ফুকাহাগণ বলেছেন যে, ৪র্থ হাদীসে যে গোড়ালীদ্বয় মিলানোর উল্লেখ আছে, এর অর্থ নবী c - এর গোড়ালীদ্বয় নিকটবর্তী ও কাছাকাছি ছিল এবং তার মর্ম এই যে, উভয় গোড়ালীর মধ্যে চার আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁক যেহেতু বেশী নয়, সুতরাং তাকেও মিলানো বলা যায়।
ফুকাহাগণ এ ব্যখ্যা এজন্য করেছেন যে, এ ব্যাখ্যা না করলে খোদ এ হাদীসের শেষাংশে যে পায়ের আঙ্গুল সমূহকে কিবলামুখী করতে বলা হয়েছে তার উপরেও আমল করা যায় না এবং উপরের তিনটা হাদীসও বাদ দিতে হয়। তার উপরও আমল করা যায় না। যারা গোড়ালী মিলাতে বলেন, তারা ফাতাওয়া শামীর কথাও বলে থাকেন। কিন্তু ফাতাওয়া শামীতে যে পুরুষদের জন্য রুকু ও সিজদায় উভয় পায়ের গোড়ালী মিলানোর কথা আছে, এটাকে এবং এর পক্ষে তিনি যে দলীল পেশ করেছেন তা অন্যান্য ফুকাহাগণ গ্রহণ করেননি। কারণ স্পষ্ট।
- والله اعلم باالصواب -