মা, বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রীদের মাঝে সম্পদ বন্টন পদ্ধতি কি হবে

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসহেবা-ফারায়েজ১২ মে, ২১

প্রশ্ন

১. মৃত ব্যক্তির স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে থাকাবস্থায় তার মা-বাবা ও ভাই-বোন তার সম্পদের কোন অংশ পাবে কি? যদি পায় তবে কে কত অংশ পাবে?

২. আর যদি শুধু স্ত্রী ও মেয়ে থাকে ছেলে না থাকে তবে মৃতের মা-বাবা ও ভাই-বোন তার সম্পদের কোন অংশ পাবে কি? যদি পায় তবে কে কত অংশ পাবে?

৩. মৃত ব্যক্তির যদি কোন ছেলে-মেয়ে না থাকে শুধু স্ত্রী, মা-বাবা ও ভাই-বোন থাকে তবে তার সম্পদের বন্টন কিভাবে হবে অর্থাৎ কে কত অংশ পাবে?

৪. আর যদি স্ত্রী না থাকে শুধু ছেলে, মা-বাবা ও ভাই-বোন থাকে অথবা শুধু মেয়ে, মা-বাবা ও ভাই-বোন থাকে সে ক্ষেত্রে সম্পদের কে কত অংশ পাবে? আসলে সম্পদ বন্টনের মূলনীতি কি? মৃতের মা-বাবা ও ভাই-বোন কখন ও কোন পরিস্থিতিতে তার সম্পদের অংশ পেতে পারে? স্ত্রী জীবিত থাকলে সর্বাবস্থায় ৮ ভাগের ১ ভাগ পাবে? নাকি কোন কারণে এর তারতম্য হতে পারে? ছেলে মেয়ের সংখ্যা যাইহোক (যেমন ১ বা ২ ছেলে ৩ বা ৪ মেয়ে) সর্বাবস্থায় ছেলেরা ৪ ভাগের ৩ ভাগ ও মেয়েরা ১ ভাগ পাবে? নাকি কোন কারণে এর বিপরীত হতে পারে? আর মৃতের স্ত্রী বা ছেলে-মেয়ে না থাকলে তার সম্পদের ওয়ারিস কারা হবে এবং কে কত অংশ পাবে?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

ইসলামী শরীয়তে প্রতিটি ওয়ারিসের অংশ সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছে। আসলে আপনার প্রশ্নটি বিস্তারিত। প্রশ্নের মৌলিক বিষয়গুলোর জবাব দেয়া হচ্ছে। মিরাসের হকদার হওয়ার ক্ষেত্রে

মায়ের অবস্থা ৩টিঃ

১. সম্পত্তির এক ছষ্ঠমাংশ বা ছয় ভাগের এক ভাগ পাবেন যদি মৃত ব্যক্তির এক বা একাধিক সন্তান বা সন্তানের সন্তান থাকে, বা মৃতের দুই বা ততোধিক ভাই/বোন থাকে।

২. আর যদি উপরোক্ত ব্যক্তিগণের কেউ না থাকে, তাহলে মা পাবেন পূর্ণ সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগ তথা এক তৃতীয়াংশ।

৩. আর যদি মায়ের সাথে বাবাও থাকে, আর সেই সাথে স্বামী কিংবা স্ত্রী থাকে, তাহলে স্বামী বা স্ত্রীর অংশ দেয়ার পর বাকি সম্পত্তি থেকে তিন ভাগের এক ভাগ পাবেন মা। -আস্‌সিরাজী ফিল মিরাছ, ১৭-১৮

বাবার অবস্থা তিনটিঃ

১. শুধু ছয় ভাগের এক ভাগ পাবেন। যদি মৃত ব্যক্তির এক বা ততোধিক ছেলে বা ছেলেদের ছেলে থাকে।

২. যদি মৃত ব্যক্তির মেয়ে বা ছেলের মেয়ে থাকে, তাহলে পিতা সম্পত্তির প্রথমে ছয় ভাগের এক ভাগ পাবেন, তারপর বাকিদের মাঝে সম্পত্তি বন্টনের পর যদি কোন সম্পত্তি বেচে যায়, তাহলে উক্ত অতিরিক্ত সম্পত্তি পুরোটাই পিতা পাবেন।

৩. আর যদি মৃতের ছেলে বা মেয়ে কোন সন্তানই না থাকে, তাহলে পিতা শরীয়ত নির্ধারিত হকদারদের নির্ধারিত অংশ দেবার পর যত সম্পত্তি থাকবে, সকল সম্পত্তির মালিক হবেন। -আস্‌সিরাজী ফিল মিরাছ, ৯-১০

আপন ভাই-বোনদের অবস্থাঃ

১. আপন বোন একজন হলে মৃতের সম্পত্তির অর্ধেক পাবে যদি মিরাসের অধিকারী আর কেউ না থাকে, সে যদি শুধু একা হকদার হয়ে থাকে।

২. আর যদি দুই বা ততোধিক বোন হয়, তাহলে পাবে তিন ভাগের দুই ভাগ।

৩. আর যদি ভাইয়ের সাথে বোনেরা আসে, তাহলে এক ভাই দুইবোনের সমান অংশ হিসেবে সম্পদ বন্টিত হবে। অর্থাৎ এক ভাই যা পাবে, দুই বোন তা পাবে। উদাহরণতঃ এক ভাই আর দুই বোন থাকলে, সম্পদ দুই ভাগে ভাগ করে, এক ভাগ পাবে, এক ভাই, আর বাকি এক ভাগ পাবে দুই বোন।

৪. আর যদি মৃতের শুধু মেয়ে থাকে, কোন ছেলে না থাকে, তাহলে মৃতের মেয়ে তার নির্ধারিত অংশ নেবার পর বাকি সম্পত্তি বোন পাবে। ভাই থাকলে ভাই পাবে। আর ভাই-বোন উভয়ে থাকলে এক ভাই দুই বোনের সমান হিসেবে সম্পদ বন্টন করে নিব।

৫. মৃতের ছেলে বা ছেলের ছেলে থাকলে কিংবা পিতা বা দাদা থাকলে আপন ভাই-বোন কিছুই পাবে না। -আস্‌সিরাজী ফিল মিরাছ, ১৫-১৭ يَسْتَفْتُونَكَ قُلِ اللَّهُ يُفْتِيكُمْ فِي الْكَلَالَةِ ۚ إِنِ امْرُؤٌ هَلَكَ لَيْسَ لَهُ وَلَدٌ وَلَهُ أُخْتٌ فَلَهَا نِصْفُ مَا تَرَكَ ۚ وَهُوَ يَرِثُهَا إِن لَّمْ يَكُن لَّهَا وَلَدٌ ۚ فَإِن كَانَتَا اثْنَتَيْنِ فَلَهُمَا الثُّلُثَانِ مِمَّا تَرَكَ ۚ وَإِن كَانُوا إِخْوَةً رِّجَالًا وَنِسَاءً فَلِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنثَيَيْنِ ۗ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ أَن تَضِلُّوا ۗ وَاللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ • মানুষ আপনার নিকট ফতোয়া জানতে চায় অতএব, আপনি বলে দিন, আল্লাহ তোমাদিগকে কালালাহ এর মীরাস সংক্রান্ত সুস্পষ্ট নির্দেশ বাতলে দিচ্ছেন, যদি কোন পুরুষ মারা যায় এবং তার কোন সন্তানাদি না থাকে এবং এক বোন থাকে, তবে সে পাবে তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তির অর্ধেক অংশ এবং সে যদি নিঃসন্তান হয়, তবে তার ভাই তার উত্তরাধিকারী হবে। তা দুই বোন থাকলে তাদের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই তৃতীয়াংশ। পক্ষান্তরে যদি ভাই ও বোন উভয়ই থাকে, তবে একজন পুরুষের অংশ দুজন নারীর সমান। তোমরা বিভ্রান্ত হবে আল্লাহ তোমাদিগকে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন। আর আল্লাহ হচ্ছেন সর্ব বিষয়ে পরিজ্ঞাত। -সূরা নিসা-১৭৬

স্ত্রীর অবস্থা দুটিঃ

মৃত ব্যক্তির সন্তান না থাকলে স্ত্রী পাবে পূর্ণ সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ। আর সন্তান থাকলে পাবে আট ভাগের এক ভাগ। وَلَهُنَّ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْتُمْ إِن لَّمْ يَكُن لَّكُمْ وَلَدٌ ۚ فَإِن كَانَ لَكُمْ وَلَدٌ فَلَهُنَّ الثُّمُنُ مِمَّا تَرَكْتُم ۚ مِّن بَعْدِ وَصِيَّةٍ تُوصُونَ بِهَا أَوْ دَيْنٍ • স্ত্রীদের জন্যে এক-চতুর্থাংশ হবে ঐ সম্পত্তির, যা তোমরা ছেড়ে যাও যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে, তবে তাদের জন্যে হবে ঐ সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ, যা তোমরা ছেড়ে যাও ওছিয়্যতের পর, যা তোমরা কর এবং ঋণ পরিশোধের পর। -সূরা নিসা-১২

ছেলে ও মেয়ের মাঝে সম্পদ বন্টনের পদ্ধতিঃ

মৃত ব্যক্তির যত ছেলে আর মেয়ে রেখে মারা যাক না কেন, তাদের মাঝে সম্পদ বন্টনের সর্ববস্থায় পদ্ধতি হল, এক ছেলে সমান সমান দুই মেয়ে। অর্থাৎ দুই মেয়ে যা পাবে, এক ছেলে তা পাবে। يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلَادِكُمْ ۖ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنثَيَيْنِ • আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেনঃ একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান। -সূরা নিসা-১১

মৃতের ছেলে-মেয়ে বা স্ত্রী না থাকলে সম্পদ কে পাবে? অনেকেই পেতে পারেন। সেটি নির্ভরশীল মূলত ছেলে-মেয়ে আর স্ত্রী ব্যতিত মৃত ব্যক্তি কোন কোন নিকত্মীয় রেখে তাদের অবস্থা জানার উপর নির্ভরশীল। তাই এটি আমভাবে জবাব দেয়া সম্ভব নয়। যেমন পিতা সম্পদ পেতে পারে, মা সম্পদ পেতে পারে। ভাই-বোন সম্পদ পেতে পারে ইত্যাদি। আপনার প্রশ্নটি একটু বিদঘুটে হয়ে গেছে। তাই সুনির্দিষ্ট কোন সুরতের উত্তর পেতে হলে মৃত ব্যক্তির কতজন আত্মীয় রেখে মারা গেছেন? তাদের সংখ্যা লিখে জানালে আমরা কে কতটুকু অংশ পাবে তা স্পষ্ট ভাষায় জানাতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১২ মে, ২১