আমি এক পীর সাহেবের দরবারে উপস্থিত হয়ে নিম্নে বর্ণিত আলামত সমূহ দেখতে পাইঃ
১. দেয়াল ঘেরা বাড়ির একটি কক্ষে কথিত পীর সাহেব উপবিষ্ট । কক্ষটির মেঝে বাড়ির স্বাভাবিক আঙ্গিনা থেকে আনুমানিক ৪ ফুট উঁচু । কতিপয় ভক্তকে দেখতে পেলাম কক্ষটির কাছে আঙ্গিনায় দাঁড়িয়ে কক্ষটির মেঝের একপ্রান্তে দু’হাত বিছিয়ে দু’হাতের মাঝে মেঝেতে কপাল ঠেকিয়ে সিজদা করছে ।
২. অনেককে দেখতে পেলাম- পীর সাহেবের দরবার থেকে ফেরার সময় দু’হাত জোড় করে ঐ কক্ষটি সামনে রেখে (না ঘুরে আস্তে আস্তে, পিছিয়ে) আসছে । এভাবে পিছায়ে আনুমানিক ২০ গজ আসার পর মেইন রোডে উঠে স্বাভাবিক ভাবে হাঁটছে ।
৩. দরবারে যাওয়ার পর দূরে ঐ রাস্তার পাশে কোথাও জুতা খুলে রেখে খালি পায়ে যাচ্ছে ।
৪. পুরুষ ও মহিলা একই সাথে একই আঙ্গিনায় উপবিষ্ট । তবে মহিলা একদিকে, পুরুষ অপর দিকে । মাঝে পর্দার কোন ব্যবস্থা নেই । মহিলারা স্বাভাবিক পোষাক পরিহিতা । কাহারো গায়ে বোরখা নেই । অনেকের গায়ে চাদর পর্যন্ত নেই ।
জানতে পারলাম এখানে কোন নামাজের জামা‘আত হয় না । প্রতি শুক্রবার বাদ মাগরিব মাহফিল হয় । পীর সাহেব ওয়ায-নসীহত করেন । দু‘আ-কালাম পাঠ ও সওয়াব রিসানী হয় ।
উক্ত পীরের দরবারে যাওয়া বা তার নিকট বাই‘আত হওয়া জায়িয কি-না ? যদি কেউ মনে করে উপরোল্লেখিত বিষয় সমূহে শরীক না হয়ে শুধু ওয়ায নসীহত শুনবে, দু‘আয় শরীক হবে ও শরীয়ত সম্মত সবক গ্রহণ করবে, তবে তার ঈমান আকীদার কোন প্রকার ক্ষতির সম্ভাবনা আছে কি-না ?
- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -
আপনার বর্ণনা অনুযায়ী উক্ত পীরের যে সকল কর্মকান্ডের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা সবই শরীয়ত বিবর্জিত নাজায়িয ও হারাম কাজ ।এ সকল কর্মকান্ড তার গোচরে হওয়া সত্ত্বেও সে কোন বাঁধা প্রদান না করার দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে উক্ত পীর সম্পূর্ণ ভন্ড, বিদ‘আতী ও গোমরাহ । সুতরাং তার দরবারে যাওয়া বা তার নিকট বাই‘আত হওয়া জায়িয হবে না । তার নিকট শুধু ওয়ায-নসীহত শুনা ও দু‘আর জন্য শরীক হওয়াও শরী‘আত সম্মত হবে না । বরং ঈমান-আকীদা যতটুকু আছে তাও নষ্ট হওয়ার আশংকা আছে । পীরের নিকট বাই‘আত হওয়ার উদ্দেশ্যই হচ্ছে ইসলাহ্ । উক্ত পীরের নিকট কোন প্রকার ইসলাহের আশা করা যায় না । কারণ শরী‘আতের দৃষ্টিতে সে হক্কানী পীর নয় । বরং ভন্ড ও ভ্রষ্ট । হক্কানী পীর হওয়ার জন্য হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী i দশটি শর্ত উল্লেখ করেছেন- যার বিবরণ ‘কসদুসসাবীল’ নামক কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে ।
ঐ সমস্ত শর্তগুলো পাওয়া গেলে তার নিকট বাই‘আত হওয়া জায়িয আছে । আপনার বর্ণিত পীরের দরবারে যে সিজদা করা হয়, সেটি যদি তার সম্মানার্থে হয় তাহলে হবে হারাম । আর যদি ইবাদতের নিয়তে হয় তাহলে সেটি হবে শিরকী ও কুফরী কাজ । আর তিনি যে বিনা পর্দায় মেয়েদেরকে মুরীদ করেন এবং নারী পুরুষ তার দরবারে একই সাথে উঠাবসা করে এসবই ফাসেকী কাজের অন্তর্ভুক্ত ।
- والله اعلم باالصواب -