তাবলীগের কাজ করার জন্য আলেম হওয়া শর্ত

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসতাবলীগ২৩ এপ্রিল, ২২

প্রশ্ন

-তাবলীগ করার জন্য কি আলেম হওয়া শর্ত?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

না, তাবলীগ করার জন্য আলেম হওয়া জরুরী নয়। তবে আলেম হলে উত্তম। এক হল হিফাযতে দ্বীন তথা দ্বীনের মৌলিকত্ব রক্ষা করা। আরেক হল ইশাআতে দ্বীন তথা দ্বীন প্রচার করা। হিফাযতে দ্বীন তথা দ্বীনের মৌলিকত্ব রক্ষার জন্য আলেম হওয়া জরুরী। কেননা, কোন কাজ বেদআত, কোন কাজ শিরকী? কোন কাজ কুফরী? কোন কাজ হারাম? এসকল বিষয় কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে প্রাজ্ঞতা ছাড়া জানা সম্ভব নয়। তাই এসব বিষয় সমাজে প্রবিষ্ট করলে তা প্রতিরোধ করার জন্য কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে প্রাজ্ঞ উলামা প্রয়োজন। উলামা ছাড়া এসব প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। পক্ষান্তরে দ্বীন প্রচার সাধারণ মুসলমান দিয়েও হতে পারে। এ কারণেই রাসূল c ইরশাদ করেছেন- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর e থেকে বর্ণিত। রাসূল c ইরশাদ করেছেনঃ আমার পক্ষ থেকে একটি বাণী হলেও পৌঁছে দাও। -সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩২৭৪, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১৪৯, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৪৭, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-৫৪২

এখানে আলেম, গায়রে আলেম কাউকেই সুনির্দিষ্ট করেননি। বরং সকল মুসলমানদের উপর দায়িত্ব হল, যিনি দ্বীনের যে বিষয় জেনেছেন তা অন্যের কাছে পৌঁছে দেয়া। এর নামইতো তাবলীগ। আর দ্বীনের জটিল বিষয় সম্পর্কে অজ্ঞ ও গায়রে আলেমদের আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নির্দেশনা দিয়েছেন, যেন তারা আলেম ও ফক্বীহ মুজতাহিদদের অনুসরণ করে চলতে। নিজে নিজে মনগড়া মত প্রকাশ না করতে। ইরশাদ হচ্ছে- فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ (١٦:٤٣) আপনার পূর্বেও আমি প্রত্যাদেশসহ মানবকেই তাদের প্রতি প্রেরণ করেছিলাম অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে; (সুরা নাহল-৪৩)

অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে- وَإِذَا جَاءَهُمْ أَمْرٌ مِّنَ الْأَمْنِ أَوِ الْخَوْفِ أَذَاعُوا بِهِ ۖ وَلَوْ رَدُّوهُ إِلَى الرَّسُولِ وَإِلَىٰ أُولِي الْأَمْرِ مِنْهُمْ لَعَلِمَهُ الَّذِينَ يَسْتَنبِطُونَهُ مِنْهُمْ ۗ وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ لَاتَّبَعْتُمُ الشَّيْطَانَ إِلَّا قَلِيلًا (٤:٨٣) তাদের কাছে যখন কোন সংবাদ আসে, তা শান্তির হোক বা ভীতির, তারা তা (যাচাই বাছাই না করেই) প্রচার শুরু করে দেয়। তারা যদি তা রাসূল বা যারা কর্তৃত্বের অধিকারী তাদের কাছে নিয়ে যেত, তবে তাদের মাঝে যারা তার তথ্য অনুসন্ধানী তারা তার বাস্তবতা জেনে নিত। -সূরা নিসা-৮৩ কিন্তু দ্বীন প্রচারের ক্ষেত্রে এরকম কোন বাধ্যবধকতা নেই। বরং মুর্খরাও দ্বীন প্রচার করতে পারে। যেমনটি রাসূল c এর আরো হাদীস থেকে প্রতিয়মান হয়। যেমন রাসূল c বিদায় হজ্বের সময় উপস্থিত লাখো সাহাবাগণকে সম্বোধন করে বলেছেন- فَلْيُبَلِّغِ الشَّاهِدُ الْغَائِبَ তথা উপস্থিত ব্যক্তিরা অনুপস্থিত ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছে দাও। -সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১০৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪৪৬, ১৩৫৪

সুনিশ্চিতভাবে বিদায় হজ্বের ঐ ভাষণের সময় উপস্থিত সকল সাহাবাগণ আলেম ছিলেন না। কারণ সেখানে এমন ব্যক্তিরাও উপস্থিত ছিলেন, যাদের অনেকেই তখন নতুন মুসলমান হয়েছেন। অনেকে রাসূল c কে সর্বপ্রথম দেখেছেন। সুতরাং তাদের আলেম হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। অথচ রাসূল c সবাইকেই দায়িত্ব দিয়েছেন, যেন তারা দ্বীনের এ দাওয়াতকে অন্যের কাছে পৌঁছে দেন। সুতরাং এর দ্বারা একথা স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান যে, দ্বীন প্রচারের জন্য আলেম হওয়ার দাবিটি বোকামী সূলভ দাবি। আল্লাহ তাআলা আমাদের দ্বীনের সহীহ বুঝ দান করুন।

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২৩ এপ্রিল, ২২