“যাদের বিয়ে করা জায়েজ নেই তাদের সাথে সহবাস করা জায়েজ” এমন ফাতওয়া কি হানাফী ফিক্বহের কিতাবে এসেছে

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসবিবিধ২০ এপ্রিল, ২২

প্রশ্ন

আমাদের দেশের কিছু আহলে হাদীসরা প্রচার করে বেড়াচ্ছে যে, ফিক্বহে হানাফীর কিতাব আছে ইমাম আবূ হানীফা i বলেছেন- “যদি কোন ব্যক্তি আজীবন বিবাহ নিষিদ্ধ যেমন মেয়ে, বোন, মা, ফুপী বা খালা প্রমূখ কাউকে বিবাহ করে সহবাস করে তাহলে উক্ত ব্যক্তির উপর শরয়ী হদ আরোপিত হবে না।” ফিক্বহে হানাফীর একাধিক গ্রন্থে এমন কথা রয়েছে। তাহলে কী বুঝা গেল? হানাফীদের মতে আজীবন যাদের বিবাহ করা হারাম, তাদের বিবাহ করা জায়েজ, সহবাস করা জায়েজ? যারা এমন জঘন্য কাজ করল, তাকে ছেড়ে দেয়া হবে যেন সে আরো এমন জঘন্য কাজ করতে পারে? এ বিষয়ে সঠিক ব্যাখ্যা জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

অর্ধেক ইবারত নকল করে ধুম্রজাল সৃষ্টি করে বিভ্রান্তি ছড়ানো আহলে হাদীসের কাজ নয়, বাটপারের কাজ। ধোঁকাবাজের কাজ। উপরোক্ত বক্তব্যে হানাফী ফিক্বহের কিতাবে রয়েছে একটি কথা সেটি হল, “যদি কেউ আজীবন বিবাহ নিষিদ্ধ এমন কাউকে বিবাহ করে ও সহবাস করে তাহলে তার উপর শরয়ী হদ নেই”। ব্যস এতটুকু কথা। কিন্তু কথিত আহলে হাদীস ভাই! তার মহাজ্ঞান দিয়ে আরো ৩টি বক্তব্য নিজের পক্ষ থেকে বাড়িয়েছেন। যথা-

1. আজীবন নিষিদ্ধ মেয়েদের বিবাহ করা জায়েজ।

2. আজীবন নিষিদ্ধ মেয়েদের সাথে সহবাস করা জায়েজ।

3. এ জঘন্য কাজ করলে তাদের উপর কোন শাস্তিই আরোপ হবে না। উপরোক্ত তিনটি বক্তব্যের সাথে হানাফী ফিক্বহের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। এ ৩টি কথা কথিত আহলে হাদীসের নিজের মত হতে পারে। হানাফী ফিক্বহের নয়। আজীবন নিষিদ্ধ কাউকে বিবাহ করা জায়েজ, বা সহবাস করা জায়েজ, কিংবা এ জঘন্য কর্মকারীর উপর কোন শাস্তি নেই এমন কথা কোন হানাফী ফিক্বহের কিতাবে লিপিবদ্ধ নেই। বরং এর উল্টো কথা এসেছে, হানাফী ফিক্বহের কিতাবে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে যে, আজীবন নিষিদ্ধ কোন মেয়েকে বিবাহ করা হারাম। যদি কেউ জায়েজ মনে করে বিবাহ করে সহবাস করে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি মুরতাদ, উক্ত ব্যক্তিকে হত্যা করা ওয়াজিব। প্রসিদ্ধ হানাফী মাসলাকের হাদীসের কিতাব শরহু মাআনিল আসারে ইমাম তাহাবী i নকল করেছেন- فَلَمَّا لَمْ يَأْمُرِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّسُولَ بِالرَّجْمِ, وَإِنَّمَا أَمَرَهُ بِالْقَتْلِ ثَبَتَ بِذَلِكَ أَنَّ ذَلِكَ الْقَتْلَ لَيْسَ بِحَدٍّ لِلزِّنَا, وَلَكِنَّهُ لِمَعْنًى خِلَافَ ذَلِكَ. وَهُوَ أَنَّ ذَلِكَ الْمُتَزَوِّجَ, فَعَلَ مَا فَعَلَ مِنْ ذَلِكَ عَلَى الِاسْتِحْلَالِ كَمَا كَانُوا يَفْعَلُونَ فِي الْجَاهِلِيَّةِ فَصَارَ بِذَلِكَ مُرْتَدًّا, فَأَمَرَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُفْعَلَ بِهِ مَا يُفْعَلُ بِالْمُرْتَدِّ. وَهَكَذَا كَانَ أَبُو حَنِيفَةَ وَسُفْيَانُ رَحِمَهُمَا اللهُ, يَقُولَانِ فِي هَذَا الْمُتَزَوِّجِ إِذَا كَانَ أَتَى فِي ذَلِكَ عَلَى الِاسْتِحْلَالِ أَنَّهُ يُقْتَلُ.(شرح معانى الآثار، رقم الحديث-4885،-2/85) হানাফী ফিক্বহের প্রসিদ্ধতম গ্রন্থ হেদায়ার বিখ্যাত বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল কাদীরে স্পষ্ট ভাষায় উদ্ধৃত হয়েছে- উক্ত ব্যক্তিকে শরয়ী হদ না দেয়া হবে না, মতটি শুধু ইমাম আবূ হানীফা i এর নয়, ইমাম সুফিয়ান সাওরী i এরও। আর যে ব্যক্তি এমন জঘন্য কাজ করবে, তাকে কঠিন শাস্তি দিতে হবে রাষ্ট্র পক্ষ থেকে। (قَوْلُهُ وَمَنْ تَزَوَّجَ امْرَأَةً لَا يَحِلُّ لَهُ نِكَاحُهَا) بِأَنْ كَانَتْ مِنْ ذَوِي مَحَارِمِهِ بِنَسَبٍ كَأُمِّهِ أَوْ ابْنَتِهِ (فَوَطِئَهَا لَمْ يَجِبْ عَلَيْهِ الْحَدُّ عِنْدَ أَبِي حَنِيفَةَ) وَسُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ وَزُفَرَ، وَإِنْ قَالَ: عَلِمْت أَنَّهَا عَلَيَّ حَرَامٌ وَلَكِنْ يَجِبُ عَلَيْهِ بِذَلِكَ الْمَهْرُ وَيُعَاقَبُ عُقُوبَةً هِيَ أَشَدُّ مَا يَكُونُ مِنْ التَّعْزِيرِ سِيَاسَةً لَا حَدًّا مُقَدَّرًا شَرْعًا إذَا كَانَ عَالِمًا بِذَلِكَ، (فتح القدير، كتاب الحدود-5/246) তাহলে কি দেখা হল? ফিক্বহে হানাফীর কিতাবে শুধু এতটুকু কথা আছে যে, উক্ত ব্যক্তির উপর শরয়ী হদ নেই। কিন্তু বিভ্রান্তকারী আহলে হাদীস নামধারী ব্যক্তিটি নিজের পক্ষ থেকে ৩টি মিথ্যা কথা জোরে দিল। অথচ উক্ত হানাফী ফিক্বহের কিতাবেই যে, উক্ত ব্যক্তিকে কঠিন শাস্তি দেয়ার কথা বলা হয়েছে, তাকে মুরতাদ হিসেবে হত্যা করে ফেলা হয়েছে একথা বেমালুম চেপে গেল। এর নাম দ্বীন প্রচার না ধোঁকাবাজী? আমরা বলি এমন জঘন্য কাজ করলে তাকে মুরতাদ হিসেবে হত্যা করে ফেলা হবে। যেন আর ভবিষ্যতে আর কোন ব্যক্তি এমন কাজ না করতে পারে। কিন্তু আহলে হাদীস নামধারীরা কী করতে চায়? উক্ত জঘন্য কর্মকারীকে জিনার হদ দিতে চায়? জিনার হদের ক্ষেত্রেতো অবিবাহিত ব্যক্তি জিনা করলে বিধান হল, ১০০ বেত্রাঘাত করে ছেড়ে দেয়া। -সূরা নূর-২ এমন জঘন্য কর্মকারীকে হানাফী ফিক্বহ অনুপাতে মুরতাদ হিসেবে হত্যা না করে জিনা শাস্তি দেয়ার প্রতি এত আগ্রহ কেন কথিত আহলে হাদীসদের? তাহলে কোন কথিত আহলে হাদীস যদি এমন জঘন্য কাজ করে, তাহলে তাকে ১০০ বেত্রাঘাত দিয়ে ছেড়ে দেয়া হবে? যেন সে আরেকজনের সাথে এমন জঘন্য কাজ করতে পারে? নাকি হানাফী ফিক্বহ মেনে মুরতাদ হিসেবে হত্যা করে দেয়া নিরাপদ যেন, ভবিষ্যতে এমন জঘন্য কাজ সে নিজেও না করতে পারে, আবার অন্য কেউ করার সাহসও না পায়? কোনটি ইনসাফের? হদ না বলা কি উক্ত কাজ জায়েজ হবার দলীল? মদ পান করলে উক্ত ব্যক্তির শরয়ী হদ হল ৮০ বেত্রাঘাত করার বিধান। কিন্তু কেউ যদি পেশাব পান করে তার জন্য শরীয়ত নির্দিষ্ট কোন হদ নেই, এ কারণে কি কথিত আহলে হাদীসরা ফাতাওয়া দিবে যে, পেশাব পান করা জায়েজ?! হদ নেই বললেই যদি উক্ত কাজ জায়েজ হয়ে যায়, তাহলে পেশাব পানের ব্যাপারে কোন হদ না থাকায় উক্ত কাজ জায়েজ হয়ে যাবে? উক্ত কর্মকারীর কোন শাস্তি নেই? এ কেমন উদ্ভট ও বিদ্বেষমাখা অপপচার? জিনা হলেই হদ আসে? যদি জিনা হলেই হদ আরোপ হয়, তাহলে কথিত আহলে হাদীসদের কাছে আমাদের প্রশ্ন রাসূল c থেকে এক হাদীসে এসেছে- عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيُّمَا مَمْلُوكٍ تَزَوَّجَ بِغَيْرِ إِذْنِ سَيِّدِهِ، فَهُوَ عَاهِرٌ» অনুবাদ- হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ e থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল c ইরশাদ করেছেন, যে গোলাম মনীবের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করে তাহলে সে জিনাকারী। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২০৭৮, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৪২১২, সুনানে দারামী, হাদীস নং-২২৭৯, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১১১১, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-২৭০৫ গোলাম যদি মনীবের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করে, তাহলে উক্ত গোলামকে জিনাকারী বলেছেন রাসূল c । এবার কথিত আহলে হাদীস ভাইটির কাছে আমাদের প্রশ্ন, উক্ত মনীবের অনুমতি ছাড়া বিয়েকারী জিনাকারীর হদ কি? কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে জবাব দিন? যুক্তি বা কারো অন্ধ তাকলীদে নয়, কুরআন বা সহীহ হাদীস জানতে চাই। কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা! নিজের হাড়ির খবর নিন ফিক্বহে হানাফীর কোথাও আজীবন বিবাহ নিষিদ্ধ কাউকে বিবাহ করার জায়েজ হওয়ার কথা নেই। নেই তাদের সাথে সহবাস জায়েজ হওয়ার কথাও। সেই সাথে এ কর্মকারীর কোন শাস্তি নেই এমন কথাও কোথাও নেই। কিন্তু কথিত আহলে হাদীসদের পথিকৃতরা কি জঘন্য সব ফাতাওয়া দিয়ে গেছেন। একটু দেখে নিন- কথিত আহলে হাদীস নওয়াব নূর হুসাইন সাহেব লিখেছেনঃ “জিনার মাধ্যমে যে সন্তান হয়েছে উক্ত মেয়েকে জিনাকারীর জন্য বিবাহ করা জায়েজ”। -আরফুল জাদী-১১৩ নাউজুবিল্লাহ! শুধু তাই নয়, বিশিষ্ট আহলে হাদীস নামধারী মাওলানা সানাউল্লাহ উমরতাসরী লিখেছেনঃ “দাদীর সাথে নাতির বিয়ে জায়েজ আছে, এর হারাম হওয়ার ব্যাপারে শরীয়তে কোন ইবারত নেই”। -আখবারে আহলে হাদীস, রমজান সংখ্যা ১৩৮৮হিজরী, মুঈনুল ফিক্বহ-৯৫ এই না হলে কথিত আহলে হাদীস? এ জঘন্য কাজ জায়েজ কাদের কাছে, আর অপপ্রচার করা হচ্ছে কাদের বিরুদ্ধে? একেই বলে উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে। আল্লাহ তাআলা আমাদের এসব ধোঁকাবাজ নামধারী আহলে হাদীসদের চক্রান্ত থেকে সাধারণ মুসলমানদের হিফাযত করুন। আমীন।

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২০ এপ্রিল, ২২