“আল্লাহর কসম আমি আর তোমার সাথে থাকবো না।” এরকম কথা বলার পর স্ত্রীর সাথে হুকুম কি

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসবিবাহ-তালাক১১ মে, ২১

প্রশ্ন

একজন স্বামী তার স্ত্রীর গালে থাপ্পড় মারার পর স্ত্রী কসম করে বসল “আল্লাহর কসম আমি আর তোমার সাথে থাকবো না।” এই কসম করার পরও তারা একই বিছানায় কয়েক রাত ধরে আছে। উক্ত কসমে কবে থেকে থাকবেনা সেটা বলা হয়নি। এই অবস্থায় কি কাফফারা ওয়াযিব হয়েছে? এরূপ কসমে তালাক হয় কি না?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

একথার দ্বারা কসম পূর্ণ হয়ে গেছে। সময়-অবস্থানের নিয়ত না করার কারণে সেটি তৎক্ষণাতের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য বলে ধর্তব্য হবে। কসম করার পর স্বামী ও স্ত্রী একসাথে বসবাসের কারণে কসম ভঙ্গ হয়ে গেছে। স্ত্রীর কসম ভঙ্গ করাটিই যথাযথ ও উপযুক্ত কাজ হয়েছে। অযথা স্ত্রীর গায়ে হাত তোলা খুবই নিচু মনের কাজ। নিম্ন মানের কাজ। এরকম গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।

রাসূল c স্ত্রীদের সাথে উত্তম ব্যবহারের বারবার উপদেশ দিয়েছেন। عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَال: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم: لَا يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً، إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقًا رَضِيَ مِنْهَا آخَرَ • হযরত আবূ হুরায়রা e থেকে বর্ণিত। রাসূল c ইরশাদ করেছেন, কোন মুমিন পুরুষ যেন কোন মুমিন নারীকে শত্রু মনে না করে। কেননা, যদি সে তার এক কাজকে নাপছন্দ করে, তার অপর কাজকে পছন্দ করবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৪৬৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৩৬৩

عَنْ عَائِشَةَ قَالَت: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم: ” إِنَّ مِنْ أَكْمَلِ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا، أَحْسَنَهُمْ خُلُقًا، وَأَلْطَفَهُمْ بِأَهْلِهِ • হযরত আয়শা e থেকে বর্ণিত। রাসূল c ইরশাদ করেছেন, মুমিনদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অধিকতর পূর্ণ মুমিন, যে ব্যক্তি সদাচারী এবং নিজ পরিবারের জন্য কোমল এবং অনুগ্রহশীল। -সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৬১২, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৪২০৪

যেহেতু কসমটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। তাই কসমের কাফফারা আদায় করতে হবে। তবে এর দ্বারা কোন তালাক পতিত হয়নি। কারণ স্ত্রীর কথায় তালাক হয় না। • عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ فَرَأَى غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا فَلْيَأْتِ الَّذِى هُوَ خَيْرٌ وَلْيُكَفِّرْ عَنْ يَمِينِهِ • হযরত আবূ হুরায়রা e থেকে বর্ণিত। রাসূল c ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন কিছুর কসম খায়, তারপর এর বিপরীত কাজে কল্যাণ দেখে, তাহলে সে যেন উক্ত কল্যাণধর্মী কাজটি করে এবং স্বীয় কসমের কাফফারা প্রদান করে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪৩৬২, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪৩৫২,৪৩৪৭, মুসনাদে আবী আওয়ানা, হাদীস নং-৫৯৩১, মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং-১৮২৫১, মুসনাদুশ শিহাব, হাদীস নং-৫১৬, মুসনাদে ইবনুফ জিদ, হাদীস নং-১৩৬, মুসনাদে তায়ারিসী, হাদীস নং-১৩৭০, মুজামে ইবনে আসাকীর, হাদীস নং-১৪৫৭, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২৩৪৫, সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৪৭২৭, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৮৬৩৪, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২১০৮, সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬২৪৭

কাফফারার পদ্ধতিঃ لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللَّهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ وَلَٰكِن يُؤَاخِذُكُم بِمَا عَقَّدتُّمُ الْأَيْمَانَ ۖ فَكَفَّارَتُهُ إِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسَاكِينَ مِنْ أَوْسَطِ مَا تُطْعِمُونَ أَهْلِيكُمْ أَوْ كِسْوَتُهُمْ أَوْ تَحْرِيرُ رَقَبَةٍ ۖ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ ۚ ذَٰلِكَ كَفَّارَةُ أَيْمَانِكُمْ إِذَا حَلَفْتُمْ ۚ وَاحْفَظُوا أَيْمَانَكُمْ ۚ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ • আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অনর্থক শপথের জন্যে; কিন্তু পাকড়াও করেন ঐ শপথের জন্যে যা তোমরা মজবুত করে বাধ। অতএব, এর কাফফরা এই যে, দশজন দরিদ্রকে খাদ্য প্রদান করবে; মধ্যম শ্রেনীর খাদ্য যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে দিয়ে থাক। অথবা, তাদেরকে বস্তু প্রদান করবে অথবা, একজন ক্রীতদাস কিংবা দাসী মুক্ত করে দিবে। যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে না, সে তিন দিন রোযা রাখবে। এটা কাফফরা তোমাদের শপথের, যখন শপথ করবে। তোমরা স্বীয় শপথসমূহ রক্ষা কর এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নির্দেশ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। -সূরা মায়িদা-৮৯

উক্ত আয়াতের আলোকে কসমের কাফফারা হল- ব্যক্তি তার পরিবারকে নিয়ে মধ্যম ধরণের যে খাবার গ্রহণ করে এমন খাবার দশজন মিসকিনকে দুই বেলা খাইয়ে দিবে। অথবা দুই জোড়া কাপড় দিয়ে দিবে। বা এর সমপরিমাণ মূল্য দশজন গরীবকে দিবে। যে ব্যক্তি এর সামর্থ রাখে না, সে তিন দিন রোযা রাখবে।

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১১ মে, ২১