হুজুর c এর দাফনে বিলম্ব

ইসলামী জিন্দেগীসিরাত ও ইতিহাস২২ ফেব, ২১

প্রশ্ন

হাদীস শরীফে আছে মানুষ ইন্তিকালের পরে বিলম্ব না করে তাড়াতাড়ি দাফন করবে। কিন্তু শুনা যায় হুজুর c কে তিনদিন পর দাফন করা হয়েছে। এর কারণ কি?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

হ্যাঁ, মাসআলা সহীহ। কোন মানুষের ইন্তিকালের পর যত শীঘ্র তার দাফনের ব্যবস্থা করা তার অভিভাবকদের জন্য জরুরী এবং এটাই শরী‘আতের বিধান। আমাদের দেশে বিভিন্ন কারণে দাফনে বিলম্ব করা হয় যা শরী‘আতে মাকরুহে তাহরীমী ও নাজায়িয। যেমন- তার চেহারা দেখানোর জন্য কয়েক ঘন্টা দেরী করা হয়। তার ছেলে বা অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন দূর-দূরান্ত থেকে পৌঁছার জন্য দেরী করা হয়। কখনও কয়েক ঘন্টা পরে জুম‘আ বা কোন জামা‘আতের পর অধিক লোক জানাযার জামা‘আতে শরীক হতে পারবে এ আশায় দেরী করা হয়, অথচ ঐ ওয়াক্তের পূর্বেই দাফন কার্য সহজেই শেষ করা সম্ভব ছিল। আবার কখনো মাইয়্যিতের লাশ এক দেশ থেকে বা শহর থেকে অন্যত্র স্থানান্তর করতে গিয়ে দাফনে বিলম্ব হয় অথচ এসব সুরতে দাফনে বিলম্ব করা শরী‘আতে নিষেধ।

হুজুর c এর দাফনে দেরী হওয়ার কারণঃ

সোমাবার দুপুর বেলা হুজুর c ইন্তিকাল করেন। অধিকাংশের মতে মঙ্গবার দিবাগত রাত্রে হুজুর c এর দেহ মুবারক সমাহিত করা হয়। কেউ মঙ্গবার আবার কেউ বুধবার এর কথা উল্লেখ করেছে। মূলত এ দেরী ওফাত নিশ্চিত এবং নামাযে জানাযার জন্য হয়েছে, আর এ জরুরতে যতটুকু সময় লাগে তাতো দিতেই হবে। খামাখা দাফনে কোন বিলম্ব হয়নি, যা বিলম্ব হয়েছে দীর্ঘক্ষণ ব্যাপী লোকদের জানাযার নামায পড়ার জন্যই হয়েছে।

হুজুর c দীর্ঘ ২৩ বৎসর যে শিক্ষা-সংস্কৃতি ও উত্তম আদর্শের নজীর স্থাপন করে গেছেন, তাকে টিকিয়ে রাখার জন্য খলীফা নিযুক্ত করা ছিল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ কাজটি সমাধার জন্য হযরত আবু বকর সিদ্দীক, হযরত উমর ফারুক f এর ন্যায় বড় বড় সাহাবীগণ খলীফা নির্বাচনে ব্যস্ত থাকায় হযরত আলী প্রমুখগণ গোসল, কাফন ইত্যাদি আনজাম দেন তবে দাফনে দেরী হয় এ কারণে যে, হুজুর c ইন্তেকাল করেছেন একথা প্রথমে অনেকেরই বিশ্বাস হয়নি। হুযূরের c ইন্তিকালের ব্যাপারে সকলের বিশ্বাস হতেও অনেক বিলম্ব হয়েছে। এমনকি হযরত উমর e একথা ঘোষণাই করেছিলেন, যে ব্যক্তি বলবে মুহাম্মদ c ইন্তিকাল করেছেন তাকে তলোয়ার দ্বারা দ্বিখণ্ডিত করে ফেলবো।

দ্বিতীয় কারণ হলো, হুজুর c এর জানাযার নামায পড়তে অনেক সময় ব্যয় হয়েছে। কারণ হুজুর c এর জানাযায় কেউ ইমাম হয়ে নামায পড়েন নি। বরং দু’চার জন করে হযরত আয়েশা g এর হুযরায ঢুকেছেন এবং সকলেই একা একা নামায পড়েছেন। হাজার হাজার সাহাবীর h এভাবে অল্প জায়গায় নামায পড়তে অনেক সময় লেগেছে। এ সকল কারণে হুজুর c এর দাফন কাজে বিলম্ব হয়েছে।

সুতরাং এর উপর অন্য কাউকে তুলনা করা সহীহ হবে না। বর্তমানে লাশ দূরবর্তী স্থানে স্থানান্তর করা এবং জানাযা ও দাফনে ২/১ দিন দেরী হওয়া রেওয়াজে পরিণত হয়ে গেছে, এমনকি অনেক আল্লাহওয়ালা ব্যক্তিদের সাথে তার আত্মীয়-স্বজনগণ এরুপ আচরণ শুরু করেছে। এহেন মুহুর্তে এ বদ রসমকে বন্ধ করার জন্য তৎপর হওয়া এবং ওসীয়তনামা লিখে যাওয়া উচিত।

- والله اعلم باالصواب -

সূত্র

  • জুরকানী শরহে মুয়াত্তা, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ১৬
  • সীরাতে মুস্তফা, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ১৮৭
  • আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ২৬০
  • আসাহহুল সিয়ার, পৃষ্ঠা: ৫৪৪

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২২ ফেব, ২১