হারাম টাকার বৃত্তি নেয়ার হুকুম কি

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসশিক্ষা১৯ এপ্রিল, ২১

প্রশ্ন

আমি অনার্স ২য় বর্ষে পড়ি। আমার পিতা আমার ব্যয় বহনে অসমর্থ। আমি একজনকে প্রাইভেট পড়াই। এটা ভিন্ন আমার রোজগারের আর কোন রাস্তা নাই। সম্প্রতি আমাদের বিভাগ থেকে বৃত্তির জন্য দরখাস্ত আহ্বান করা হলে আমি দরখাস্ত করি। সিলেকশন হবার কথা ছিল ২ ধাপে-১ম ভাইভা ও ২য় ভাইভা।আমি প্রথম ভাইভার পর জানতে পারি যে বৃত্তিটা স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক দিচ্ছে।তাই ২য় ভাইভার জন্য মনোনীত হলেও আর যাইনি। পরবর্তীতে জানতে পারি বিভাগ অফিস আবেদনকারীদের মধ্যে শীর্ষ ফলাফলধারী ৮ জনকে বৃত্তির জন্য মনোনীত করেছে চাই তারা ভাইভা উপস্থিত হোক বা না হোক। সে হিসেবে আমাকেও বৃত্তির জন্য মনোনীত করা হয়েছে। এখন আমি ঐ ৪০,০০০ টাকা কি করব?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

হারাম উপার্জনকারী থেকে হাদিয়া নেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা রয়েছে। যথা-

১. হারাম উপার্জনকারীর পূর্ণ রোজগারই হারাম। আর লোকটি তার হারাম টাকা দিয়েই হাদিয়া তথা বৃত্তি দিচ্ছে।

২. লোকটির উপার্জন হালাল ও হারামের মাঝে সংমিশ্রিত। এ দুটি উপার্জিত অর্থ এমনভাবে সংমিশ্রিত যে, একটি অন্যটি থেকে পৃথক নয়। তবে এর মাঝে হারাম উপার্জন বেশি। আর লোকটি মিশ্রিত সে সম্পদ দিয়ে হাদিয়া তথা বৃত্তি দিচ্ছে।

৩. দাওয়াতকারীর হালাল উপার্জনও আছে, আবার হারাম উপার্জনও আছে। এ দুটি উপার্জিত অর্থ এমনভাবে সংমিশ্রিত যে, একটি অন্যটি থেকে পৃথক নয়। তবে তার হারাম উপার্জন কম। হালাল উপার্জন বেশি। আর লোকটি এ মিশ্রিত সম্পদ দিয়ে বৃত্তি দিচ্ছে।

৪. হারাম উপার্জনকারী হারাম উপার্জন দিয়ে বৃত্তি দিচ্ছে না। বরং কারো থেকে হালাল টাকা ধার করে বা কারো কাছ থেকে অর্থ নিয়ে বৃত্তি দিচ্ছে। প্রথমোক্ত দুই সূরতে উক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে বৃত্তি নেয়া জায়েজ নয়। আর তৃতীয় সুরতে উক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে বৃত্তি নেয়া জায়েজ হলেও, না নেয়া উত্তম।

আর চতুর্থ সুরতে উক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে বৃত্তি নেয়া জায়েজ আছে। আরেকটি বিষয় জেনে রাখা প্রয়োজন যে, ব্যাংকের সকল ইনকামই হারাম নয়। ব্যাংকের অবস্থা এই যে, তার পূর্ণ সম্পদ কয়েকটি বিষয়ের সমষ্টি। যথা- ১. মূলধন। ২. সঞ্চয়কারীদের জমাকৃত টাকা। ৩. জায়েজ ব্যবসার আমদানী। ৪. সুদ এবং হারাম ব্যাবসার আমদানী। এ চারটি বিষয়ের মাঝে কেবল ৪র্থ সুরতটি হারাম। বাকিগুলো যদি কোন হারাম কাজ না হয় তাহলে মূলত জায়েজ।

যেসব ব্যাংকে প্রথম ৩টি বিষয়ের লেনদেন অধিক। আর ৪র্থ বিষয়টি তথা হারাম লেনদের লভ্যাংশ কম সেসব ব্যাংকে সেসব ব্যাংক থেকে বৃত্তি নেয়া জায়েজ হবে। তবে যদি উক্ত ব্যাংকের হারাম লেনদেন বেশি হয়, তাহলে উক্ত ব্যাংক থেকে বৃত্তি নেয়া জায়েজ হবে না। এখন আপনি নিজেই নির্দিষ্ট করে নিন উক্ত ব্যাংকের আর্থিক লেনদেনের কি হালাত? সেই হিসেবে আপনার বৃত্তি নেয়াটা বৈধ হবে কি না?

এই হল একজন অর্থ-বিত্তের অধিকারী হারাম টাকা থেকে হাদিয়া বৃত্তি নিতে পারবে কি না? এর হুকুম। যা উপরে বর্ণিত হয়েছে। বিত্তশালী ব্যক্তির জন্য হারাম টাকার হাদিয়া বা দান গ্রহণ জায়েজ নয়। কিন্তু যাকে হাদিয়া দেয়া হচ্ছে, তিনি যদি এমন মিসকিন হন যে, তার উপর যাকাত ওয়াজিব হওয়া পরিমাণ সম্পদ নেই। অর্থাৎ দরিদ্র হন, তাহলে উক্ত ব্যক্তির জন্য ব্যাংকের হারাম টাকা গ্রহণ করা জায়েজ আছে। কারণ, হারাম টাকার বিধান হল, তা প্রাথমিকভাবে মূল মালিকের কাছে ফেরত দিয়ে দিতে হয়। যদি মূল মালিকের কাছে ফেরত দেয়ার সুযোগ না থাকে, তাহলে তা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরীবদের মাঝে দান করে দেয়া আবশ্যক। সেই হিসেবে যাকে দান করা হচ্ছে তথা বৃত্তি দেয়া হচ্ছে, সে যদি এমন দরিদ্র হয়, তাহলে তার জন্য উক্ত টাকা বৃত্তি স্বরূপ নিতে কোন সমস্যা নেই।

- والله اعلم باالصواب -

সূত্র

  • ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৩৪২
  • রদুল মুহতার, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ২৪৭
  • معارف السنن, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৩৪
  • ফাতাওয়ায়ে শামী, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৩০১
  • بذل المجهود, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৩৭

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১৯ এপ্রিল, ২১