স্বামীর সম্পূর্ণ অজ্ঞাতসারে কাজী স্ত্রীকে তালাকের অধিকার দিয়েছে বলে লেখে দেয় তবে কি বিধান

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসবিবাহ-তালাক২০ এপ্রিল, ২২

প্রশ্ন

বিগত ৬-ই আগস্ট ২০১২ইং তারিখে, আমার আপন চাচাতো বোনের সহিত ইসলামী শরিয়া মোতাবেক, বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। উল্লেখ্যঃ বিবাহের পূর্বে, আমরা ২জনে উভয় পরিবারকে, আমাদের আপন ফুফু’দের দ্বারা এই ব্যাপারে অবহিত করি যে আমরা উভয়ে একে অপরের সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে ইচ্ছুক, যেহেতু আমরা একে অপরের সম্বন্ধে শৈশব হতে খুব ভালো ভাবে জানি ও বুঝি। কিন্তু আমার পরিবার এই ব্যাপারে ইচ্ছা এবং আন্তরিকতা প্রকাশ করলেও, আমার চাচাতো বোন তথা, বর্তমান স্ত্রীর পরিবার এই ব্যাপারে অনিচ্ছা এবং অনাগ্রহ প্রদর্শন করেন। যাতে কিছুটা মর্মাহত হয়েই আমরা উভয়ে(আমি এবং আমার স্ত্রী), এই সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে আমরা স্বেচ্ছায়, নিজ উদ্যোগে একে অপরের সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবো। যেহেতু এই বিষয়ে আমার নিজের পরিবার পূর্বেই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন। আমরা আমাদের উভয়ের দূরসম্পর্কের চাচাতো ভাইয়ের বাসায়, কাজী ডেকে উক্ত দিন বিবাহ(আকদ্) সম্পন্ন করি। বিবাহের ৮ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর গত ১৯শে মার্চ ২০১৩ইং তারিখে আমি আমার স্ত্রীকে আমার পরিবারের নিকট নিয়ে আছি। এবং নিজের ভাইয়ের মেয়েকে পুত্রবধূ রুপে পাওয়ার দরুন, আমার পিতা-মাতা আমাদের ২জনকেই অত্যন্ত আনন্দের সহিত গ্রহন করেন। এই বিবাহকে পারিবারিক ভাবে আনুষ্ঠানিক রূপ দান করার জন্য, আমার পিতা তার ভাইয়ের(আমার শ্বশুর) নিকট যান এবং এই বিষয়ে পরামর্শ চান। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, আমার আপন চাচা-চাচী হওয়া সত্তেও, তারা আমাদের বিয়ে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নেন নি, যেহেতু আমি তখন বেকার ছিলাম। তারা আমার পরিবার এবং তাদের নিজ কন্যার(আমার স্ত্রী) সহিত সকল প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করেন। এমতাবস্থায়, আমরা উভয়ে আমাদের নিজ বাসায়, আমার পিতা-মাতার সহিত বসবাস করতে থাকি। এরই মাঝে, প্রায়ই আমার শাশুড়ি(চাচী) তাদের অন্যান্য আত্মীয়স্বজন দিয়ে আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে, বুঝাতে চেষ্টা করেন যে, যদি সে আমার সহিত সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে চলে আসে, তবে তিনি আমার স্ত্রীকে আপন কন্যা রুপে মেনে নিয়ে গ্রহন করবেন। কিন্তু উল্লেখ্য আমার শ্বশুর(চাচা) তার স্ত্রীর(আমার শাশুড়ির) এরূপ হীন অপচেষ্টার ব্যপারে অবগত ছিলেন না, এবং তিনি একজন সহজ-সরল মনের মানুষ। এভাবে ৩মাস আমি এবং আমার স্ত্রী, আমার পিতা-মাতার সহিত সংসার পরিচালনা করি। এই তিন মাসে আমার স্ত্রী মানসিক ভাবে কিছুটা ভেঙে পড়েন, যেহেতু তার পিতা-মাতা তার সহিত কোনো প্রকার যোগাযোগ রাখে নি। এবং বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য বিষয় এই যে, দ্বীন-ইসলামের বিষয়ে আমার যথাযথ জ্ঞান না থাকার ফলে, আমিও তার সহিত বিভিন্ন সময় ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে ঝগড়া-ঝাঁটিতে লিপ্ত থাকতাম। সে তার মা-বাবার পক্ষ থেকে কোনরূপ আন্তরিক সাড়া না পেয়ে, আমার স্ত্রী আরও ভেঙে পড়েন। তাই সে মনের অজান্তে টুকিটাকি পারিবারিক সমস্যা নিয়ে আমার সাথে প্রায়ই মন’মালিন্নে লিপ্ত থাকতেন। আর দ্বীনের সহি বুঝ না থাকায়, আমি তার সহিত কিছুটা উগ্র আচরণ করে বসতাম। সে তার মা-বাবার কথা স্মরণ করে প্রায়ই কান্না করতেন। আমি তাকে সান্তনা দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করতাম ঠিকই, কিন্তু তাকে সর্বদা বিষণ্ণ এবং মলিন চেহারায় দেখে, আমি আমার চাচা-চাচীর(শ্বশুর-শাশুড়ি) প্রতি খুবই ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের সম্বন্ধে কুটুক্তি করে বসতাম, যেহেতু আমি তাদের আপন ভাতিজা হওয়া সত্তেও তারা আমাকে তাদের আপন ‘মেয়ের জামাই’ হিসেবে মেনে নিতে পারেন নি। এরূপ অবস্থা চলাকালীন, গত ২২সে জুন ২০১৩ইং তারিখে, আমার স্ত্রীর সহিত আমার তুমুল ঝগড়া বাধে। এবং রাগের মাথায় সে আমাকে কিছু বাজে মন্তব্য করায়, আমি রাগ সামলাতে না পেরে তাকে থাপ্পড় দিয়ে বসি। এবং এই থাপ্পড়ের জবাবে সে আমাকে ঘর থেকে বের হয়ে যাবে বলে শাঁসালে আমি তাকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বলি, আমি রাগে এতটাই অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম যে, আমার স্ত্রী যখন ঘর থেকে বেরিয়ে যান, তখন আমি তাকে বিন্দুমাত্র আটকানোর চেষ্টা করিনি। এবং আমার এই গাফেলতির দরুন, মহান আল্লাহ-রাব্বুল-আলামিন আমাকে আজ অবধি মানসিক ভাবে শাস্তি দিয়ে যাচ্ছেন। বিগত সেদিন, আমার স্ত্রী ঘর থেকে বের হয়ে তার মায়ের এক বান্ধবীর বাসায় আশ্রয় নেন। এবং তাকে অনুরোধ করেন, তিনি যেন তার মাকে(আমার শাশুড়ি) এই বিষয়ে কোনকিছু যেন না জানান। অপরদিকে আমার স্ত্রী আমার ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে জানতে পেরে আমার শাশুড়ি আমার বাসায় আসেন এবং আমাকে জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়ে শাসান। তারপর তিনি আমার পার্শ্ববর্তী থানায় গিয়ে, তার মেয়েকে মেরে গুম করে ফেলেছি এই মর্মে- আমার নামে থানায় একটি ‘জি.ডি’ করেন। তার পরদিন-ই তিনি তার সেই বান্ধবীর কাছ থেকে খবর পান যে তার মেয়ে(আমার স্ত্রী) সেখানেই অবস্থান করছেন। এবং তিনি আমার শ্বশুর, আমার শ্যালক, উভয়কে এই বিষয়ে না জানিয়ে, গোপনে আমার স্ত্রীর নিকট যান এবং তাকে এই শর্ত দেন যে, তিনি তাকে মাফ করে ঘরে তুলে নিতে ইচ্ছুক, যদি সে আমাকে ‘তালাক’ প্রদান করে। আমার স্ত্রী, তার মাকে প্রাথমিক অবস্থায় আপ্রাণ বোঝানোর চেষ্টা করেন যে আপনি বিষয়টি মেনে নিন। কিন্তু তার মায়ের(আমার শাশুড়ির) বিভিন্ন আকুতি-মিনতি ও এবং তাকে ওখানে আটকে রেখে মানসিক নির্যাতন এবং তখন আমার উপর তার সীমাহীন রাগ ও ক্ষোভ থাকার দরুন, সে তার মায়ের কথা মেনে নেন। অতঃপর তারই চক্রান্ত সফল করার লক্ষে, গত ২৭শে জুন ২০১৩ইং তারিখে আমার শাশুড়ি আমার স্ত্রীকে কোর্টে নিয়ে গিয়ে, রাষ্ট্রীয় যে জাহেলি আইন অনুযায়ী বর্তমানে নারীরা তাদের স্বামীদের নিজ ক্ষমতাবলে তালাক দিয়ে থাকে, যা ‘নোটরী পাবলিক’ নামে পরিচিত। সেই ‘নোটরী পাবলিকের’ মাধ্যমে, কোনো নির্দিষ্ট শরিয়া ভিত্তিক তালাকনামা ছাড়াই, তথাকথিত মুসলিম পারিবারিক আইন ১৯৬১ইং এর অধ্যাদেশ মোতাবেক স্ট্যাম্প পেপারে আমার স্ত্রীর সিগনেচার নিয়ে, আমার নিকট তা প্রেরণ করেন। যেখানে তালাক কার্যকর করার জন্য স্বামী হিসেবে আমার কোনো প্রকার ভূমিকাই নেই!!! যা আমার নিকট নিতান্তই হাস্যকর, এবং তা আমার মতে ‘ইসলামী শরীয়তের’ সহিত তামাশা করার সামিল। আল্লাহ্-পাক-ই এই বিষয়ে ভালো জানেন। উক্ত তালাকনামা’র একটি ফটোকপি, আমি আমার এই পত্রের সহিত সংযুক্ত করে আপনাদের নিকট প্রেরন করলাম। ## এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্যযোগ্য বিষয় এই যে, আমার নিজস্ব ক্ষুদ্র জ্ঞান থেকে আমি যতটুকু জানি যে, ইসলাম নারীদের জন্য খুলা, মুবারাত, ও তাফউইয- এই তিন ধরনের তালাক প্রদানের ব্যবস্থা রেখেছে। ১। ‘খুলা’ হলো স্ত্রীর প্রস্তাবনায় স্বামীকে কোন কিছু দেওয়ার মাধ্যমে আপসে তালাক নেওয়া। তা মোহরানা ফিরিয়ে দেওয়া বা মওকুফ করার মাধ্যমেও হতে পারে। ২। ‘মুবারাত’ হলো, স্বামী-স্ত্রী উভয়ের সম্মতিতে বিবাহ বিচ্ছেদ করণ। যার মাধ্যমে স্বামীই স্ত্রীকে তালাক প্রদান করে থাকেন। আর ৩। ‘তাফউইয’ হলো, স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা প্রদান। আমাদের দেশের বিবাহের রেজিস্ট্রীতে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার যে ক্ষমতা দেওয়া হয়, তা এই ‘তাফউইযের’ মাধ্যমেই হয় বলে আমি জানি। স্বামী যদি বিবাহের সময় কাবিনের এই জায়গায় টিক চিহ্ন দেয়, তাহলে স্ত্রী তাকে এই ক্ষমতাবলে তালাক দিতে পারবে। আমাদের দেশের “মুসলিম পারিবারিক আইনে ১৯৬১ সালের সংশোধনীতে এ বিষয়টি সংযোজিত হয়।’’ কিন্তু আমার এই ক্ষমতা প্রদানে আপত্তি থাকা সত্ত্বেও, আমার বিবাহ কাবিনভুক্ত করেন যেই কাজী তিনি, আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে, আমার অজান্তেই সেই স্থানে টিক চিহ্ন প্রদান করেন। আমি বিয়ের মাসখানিক পর যখন আমার কাবিননামা হাতে পাই এবং সেখানে এরূপ কারচুপি দেখি, তখনই আমি কাজী সাহেবের সাথে দেখা করে এই বিষয়ে তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়ি। কিন্তু তাতে কোনই লাভ হয়নি।## যাইহোক, আমি আমার স্ত্রীর নিকট থেকে এরূপ কাগজ পাওয়ার সাথে-সাথেই তাকে আমার নিকট ফিরিয়ে আনার জন্য এবং এই তালাককে বাতিল করার জন্য অন্য কোন উপায় বা তাদের সহিত সমঝোতার কোন পথ দেখতে না পেয়ে, ইসলামিক ধর্মীয় বিষয়ে জ্ঞান রাখেন এমন একজন আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করে, ‘মুসলিম পারিবারিক আইনের’ ধাঁরা অনুযায়ী, কাগজ পাওয়ার ২দিন পর-ই ‘দাম্পত্য জীবন পুনুরাত্থানের’ মামলা নামক একটি মামলা, আমার শ্বশুর-শাশুড়ির বিরুদ্ধে দায়ের করি। আমার স্ত্রী আমার ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর হতে টানা ৩ মাস অবধি তার সাথে আমার সহিত কোনো প্রকার দেখা-সাক্ষাত বা মোবাইল যোগাযোগ ছিলনা। কারণ আমি জানতাম না সে কোথায় বা কার নিকট অবস্থান করছেন। কিন্তু আমি এতটুকু ভেবেই আশ্বস্ত ছিলাম যে, সে নিশ্চয় তার মা-বাবার হেফাজতেই আছেন। কিন্তু আমি তখনও অবহিত ছিলাম না যে আমার চাচা(শশুর) তখনও জানতেন না তার মেয়ে কোথায় এবং আমার শাশুড়ি তাকে আত্মগোপন করিয়ে রেখেছেন। এভাবে ৩ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর আমার স্ত্রী কোনভাবে গোপনে মোবাইল সংগ্রহ করে আমার সহিত যোগাযোগ করেন। কিন্তু তখন সঠিক দ্বীন-ইসলামের বুঝ তার ভিতর না থাকার দরুন সে আমার সহিত অসৌজন্যমূলক আচরণ করতে থাকেন। কারণ তাকে এমনভাবে ব্রেইন-ওয়াশ করা হয় তার পরিবার থেকে যে, সে গায়েব হয়ে যাওয়ার পর আমি নাকি কোন প্রকার চেষ্টাই করিনি তাকে খুজে বের করার বা এই তালাকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার। কিন্তু কিছুদিন আমার সাথে গোপনে যোগাযোগ রক্ষা করে সেও তার ভুল বুঝতে সক্ষম হন এবং তার ভিতর অনুশোচনা সৃষ্টি হয়, যে সে তার স্বামীর হক নষ্ট করেছেন। আর এই দীর্ঘ বিচ্ছেদে থাকাকালীন অবস্থায়, কিছু ইসলামি ধ্যান-ধারণার মানুষদের সাথে মিশে, আমি আমার নিজের ভিতর-ও দ্বীনের শূন্যতা অনুভব করি। এবং তাবলীগ-জামাতে, আল্লাহ্র রাস্তায় অল্পকিছু সময় লাগিয়ে, আল্লাহ্-তালার অশেষ মেহেরবানীতে সামান্য কিছু দ্বীনের বুঝও আমার ভিতর আসতে শুরু করেন। এবং আমার সহিত নিয়মিত ২ মাস মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখার দরুন, আমিও তাকে(আমার স্ত্রীকে) দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ে দাওয়াত দিতে শুরু করি। আল্লাহ্র সন্তুষ্টি, স্বামীর সন্তুষ্টি, ইসলামে নারীর হক ও পর্দা এইসব বিষয়ে তাকে তসকীল করার ফলে আমার স্ত্রীর অন্তরে খুব গভীরভাবে আল্লাহ্ ভীতি পয়দা হয়। এবং আমাদের বিচ্ছেদের সাড়ে ৫ মাস পর, এই চলতি ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে, তিনি(আমার স্ত্রী) হঠ্যাৎ করেই সাহস করে তাঁর বাবার বাসা থেকে বের হয়ে, কান্না করতে করতে আমার নিকট আমার বাসায় ফিরে আসেন। এবং তিনি তাঁর পরদিন-ই আমার সাথে আদালতে গিয়ে নোটরি পাবলিকের স্ট্যাম্প হলফনামা পেপারে এই অবহিত করে স্বাক্ষর প্রদান করেন যে, পূর্বে প্রেরিত তালাকটি, তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে মানসিক ভাবে নির্যাতনের দ্বারা করানো হয়েছিলো। এবং তিনি আমার নিকট ফিরে এসেছেন, এবং আমার সহিত সংসার করতে ইচ্ছুক। তাছাড়া পূর্বের তালাক নামা’য় উল্লেখিত আমার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা ছিল। এই প্রক্রিয়ার দ্বারা রাষ্ট্রীয় এবং জাহেলি সাংবিধানিক আইন অনুযায়ী তাঁর সহিত আমার সংসার করতে কোন বাঁধা নেই ঠিকই। কিন্তু যেহেতু আল্লাহ্ পাকের প্রতি ভয় এবং শরীয়তের বিধানকে চূড়ান্ত’রুপে মেনে চলার মানসিকতা বর্তমানে আমার ভিতর আল্লাহ্’তালা সৃষ্টি করে দিয়েছেন, তাই আমি হুজুরের নিকট হতে এই মর্মে লিখিত ফতোয়া আন্তরিকভাবে গ্রহণ করতে চাই, যাতে আমি একমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশি ও সন্তুষ্ট রেখে আমার জীবনকে পরিচালিত করতে পারি। এবং কোন প্রকার ভুল-ভ্রান্তির ফলে আমার দাম্পত্য জীবনের স্বাভাবিক হক, যাতে জেনায় পরিনত না হয়। বিষয়টি নিয়ে আমি মানসিক ভাবে খুব পেরেশানিতে আছি। হজরতের নিকট আমার প্রশ্নসমূহ হলোঃ- ১। আমার স্ত্রীর সাথে আমার বিবাহ-বন্ধন কি আদৌ টিকে আছে?নাকি তাঁর ভুলের দরুন আল্লাহ্ পাকের পক্ষ হতে তাঁর উপর তালাক পতিত হয়ে গেছে? নাকি, তাঁর উপর ‘এক তালাক’ বায়েন হয়ে গেছে? (উল্লেখ্যঃ তাঁর পক্ষ হতে প্রেরিত তালাক নামা’র লিখিত বিষয়বস্তুর বিষয়ে তিনি(আমার স্ত্রী) স্বাক্ষর করার পূর্বে কিছুই অবহিত ছিলেন না বা জানতেন না। এবং তিনি মুখে এক, দুই, তিন তালাক-ও উচ্চারণ করেন নি। আদালত থেকে বাসায় ফিরে আসার পরই তাকে তালাকনামা’টি পড়তে দেওয়া হয়।)। ২। যেহেতু এই তালাকে স্বামী হিসেবে আমার কোনো ভূমিকা ছিল না, সুতরাং যদি তাঁরপরও, তাঁর উপর তালাক পতিত হয়ে যায়, বা এক তালাক বায়েন হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে আমার কি পুনরায় তাঁর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে? আমি কি তাকে হিল্লা বিয়ে ছাড়াই গ্রহণ করতে পারবো? নাকি তাঁর উপর হিল্লা ফরয হয়ে গেছে?? ৩। এই বিষয়ে খুব গভীরভাবে চিন্তা মাথায় আসার পূর্বেই আমরা শারীরিক ভাবে মিলিত হয়েছি। কিন্তু এই বিষয়টির চিন্তা বিস্তারিত ভাবে উপলব্ধি করার পর আমরা আল্লাহ্ কাছে ‘তওবা’ করে সবর করছি। কিন্তু আমরা উভয়েই সন্তান গর্ভে আসার ভয় করছি। এমতাবস্থায় কোরআন-সুন্নাহ ও শরীয়াতের আলোকে, যথাযথ ফতোয়া এবং পরামর্শ প্রদানের জন্য জনাবের নিকট বিনীত আবেদন জানাচ্ছি। মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন, হুজুরকে হায়াতে তাইয়্যেবা দান করুন। আমীন।। তালাকনামায় যা লিখা ছিল, তার সারমর্ম হল, এমতাবস্থায় আমি আমার স্বামী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ (ছদ্মনাম), পিতা আব্দুর রহমান (ছদ্মনাম) কে ইসলামী শরা মোতাবেক এবং দেশের প্রচলিত আইনের বিধান মোতাবেক সর্বোপরি কাবিন নামার ১৮নং দফার অনুবলে “এক তালাক” “দুই তালাক” “তিন তালাক” উচ্চারনে তালাক প্রদান করিয়া স্বামী-স্ত্রীর চিরস্থায়ী ও সু-মধুর বন্ধন ও দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটাইলাম। অত্র তালাক বিষয়ক হলফনামা সম্পাদনের পর অবধি অর্থাৎ অদ্য হইতে জনাব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আমার স্বামী নহে এবং আমি তাহার স্ত্রী নহি। আমি স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে, কাহারো বিনা প্ররোচনায় মোহাম্মদ সাইমুন খান আরোফিনকে তালাক প্রদান পূর্বক অত্র হলফনামা সম্পাদন করিলাম

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

ঘটনা যদি তাই হয়, যা উপরে বর্ণিত। অর্থাৎ স্বামীর সম্পূর্ণ অজ্ঞাতসারে কাজী স্ত্রীকে তালাকের অধিকার দিয়েছে বলে লেখে দেয়, আর স্বামী একথা না জেনে বিবাহ হয়েছে মর্মে সাইন করে তাহলে স্বামী স্ত্রীকে তালাকের অধিকার দিয়েছে বলে ধর্তব্য হবে না। এতে করে কাজী স্বামীর সাথে ধোঁকাবাজী করেছে বলে ধর্তব্য হবে। কাজীর তালাকের অধিকার দেয়ার মাধ্যমে স্ত্রী তালাকের অধিকার পায় না। স্বামীর অধিকার দেয়ার মাধ্যমে স্ত্রী তালাক দেয়ার অধিকার পায়। সুতরাং যদি সত্যিই আপনার সম্পূর্ণ অজ্ঞাতসারে কাজী তালাকের তাফয়ীজ লিখে থাকে, তাহলে মূলত স্ত্রীকে তালাক দেয়ার অধিকারই দেয়া হয়নি। যেহেতু স্ত্রী নিজের উপর তালাক পতিত করার অধিকারই পায়নি, তাই তার নিজের উপর তালাক পতিত করাও সহীহ হয়নি। এ কারণে আপনাদের বিবাহ বন্ধন ভেঙ্গে যায়নি। এখনো অটুট আছে। তাই ভাবনার কিছু নেই। كُلُّ كِتَابٍ لَمْ يَكْتُبْهُ بِخَطِّهِ وَلَمْ يُمِلَّهُ بِنَفْسِهِ لَا يَقَعُ بِهِ الطَّلَاقُ إذَا لَمْ يُقِرَّ أَنَّهُ كِتَابُهُ كَذَا فِي الْمُحِيطِ (الفتاوى الهندية، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى الطلاق بالكتابة-1/379، المحيط البرهانى، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى ايقاع الطلاق بالكتاب-4/486، تاتارخانية، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى ايقاع الطلاق بالكتاب-3/380) হ্যাঁ, তবে যদি স্বামীর দস্তখত করার সময় জানা থাকে যে, কাজী স্ত্রীকে তালাক দেয়ার অধিকার দিয়েছে মর্মে উপরে লিখে দিয়েছে, একথা জানার পরও যদি স্বামী উক্ত কাগজের নিচে সাইন করে, তাহলে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক দেয়ার অধিকার দেয়া হয়েছে বলে সাব্যস্ত হবে। সেই হিসেবে স্ত্রী যদি পরবর্তীতে নিজের উপর তালাক পতিত করে থাকে, তাহলে তালাক পতিত হয়ে যায়। সুতরাং আপনি যদি কাজী তালাকের অধিকার দিয়েছে জানার পর দস্তখত করে থাকেন, তাহলে আপনি স্ত্রীকে তালাক দেয়ার অধিকার দিয়েছেন বলে ধর্তব্য হবে। সেই হিসেবে স্ত্রীর নিজের উপর তালাক পতিত করাটিও সহীহ হয়েছে। এখন আপনার জানা ও নাজানার উপর নির্ভরশীল তালাক পতিত হয়েছে কি না? رَجُلٌ اسْتَكْتَبَ مِنْ رَجُلٍ آخَرَ إلَى امْرَأَتِهِ كِتَابًا بِطَلَاقِهَا وَقَرَأَهُ عَلَى الزَّوْجِ فَأَخَذَهُ وَطَوَاهُ وَخَتَمَ وَكَتَبَ فِي عُنْوَانِهِ وَبَعَثَ بِهِ إلَى امْرَأَتِهِ فَأَتَاهَا الْكِتَابُ وَأَقَرَّ الزَّوْجُ أَنَّهُ كِتَابُهُ فَإِنَّ الطَّلَاقَ يَقَعُ عَلَيْهَا(الفتاوى الهندية، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى الطلاق بالكتابة-1/379، رد المحتار، كتاب الطلاق، مطلب فى الطلاق بالكتابة-4/456، المحيط البرهانى، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى ايقاع الطلاق بالكتاب-4/486، تاتارخانية، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى ايقاع الطلاق بالكتاب-3/380) বিবাহ একটি পবিত্রতম সম্পর্ক। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এক বড় নেয়ামত। সামান্য রাগের বশে এভাবে এ সুন্দর সম্পর্ককে নষ্ট করা কিছুতেই উচিত নয়। স্ত্রীর উপর যেমন স্বামীর হক আছে, তেমনি স্বামীর উপরও স্ত্রীর হক আছে। যে মেয়েটি নিজের পরিবার পরিজন, মা-বাবা সবাইকে ছেড়ে দিয়ে একজন পুরুষের কাছে নিজের সব কিছুকে বিলীন করে দিল, তার গায়ে সামান্য কারণে হাত তোলা, তাকে বকাঝকা করা খুবই গর্হিত এবং অন্যায় কাজ। এ জুলুমের শাস্তি বড় ভয়াবহ হবে। তাই এরকম নিচুমনের কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। কোন মানুষের সব কিছুই ভাল লাগবে এমন নয়। এ কারণেই রাসূল c ইরশাদ করেছেন- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً، إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقًا رَضِيَ مِنْهَا آخَرَ হযরত আবূ হুরায়রা e থেকে বর্ণিত। রাসূল c ইরশাদ করেছেন, কোন মুমিন পুরুষ যেন কোন মুমিন নারীকে শত্রু মনে না করে। কেননা, যদি সে তার এক কাজকে নাপছন্দ করে, তার অপর কাজকে পছন্দ করবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৪৬৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৩৬৩ عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِنَّ مِنْ أَكْمَلِ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا، أَحْسَنَهُمْ خُلُقًا، وَأَلْطَفَهُمْ بِأَهْلِهِ হযরত আয়শা e থেকে বর্ণিত। রাসূল c ইরশাদ করেছেন, মুমিনদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অধিকতর পূর্ণ মুমিন, যে ব্যক্তি সদাচারী এবং নিজ পরিবারের জন্য কোমল এবং অনুগ্রহশীল। -সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৬১২, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৪২০৪ আপনারা উভয়ে দ্বীনী বিষয়ে আগ্রহী হয়েছেন। সাধ্যানুযায়ী দ্বীন পালনের চেষ্টা করছেন শুনে আমাদের ভাল লেগেছে। আল্লাহ তাআলা আপনাদের কবুল করুন। আপনারা উভয়েই ফাযায়েলে আমল এবং হেকায়াতে সাহাবা পড়ে নিবেন। ইনশাআল্লাহ সাহাবায়ে কেরামের জীবনের চিত্র নিজের চোখের সামনে থাকলে অনেক কিছুই সহজ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২০ এপ্রিল, ২২