সূরায়ে ইয়াসীন পড়ে সাওয়াব রিসানী ও তবারক বিতরণ করা

ইসলামী জিন্দেগীবিবিধ২৩ ফেব, ২১

প্রশ্ন

জনৈক ইঞ্জিনিয়ারের ইন্তেকালের কয়েক দিন পর তাবলীগী মেহনতের দীনী মারকাযে (জামে মসজিদে) এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে আমন্ত্রনের মাধ্যমে একত্রিত করে আসর নামায বাদ তাদের সামনে হাফেজ সাহেব সূরা ইয়াসীন সশব্দে তিলাওয়াত করেন। অতঃপর ইমাম সাহেব দরূদ শরীফ (বালাগাল উলা) বিভিন্ন দু’আ ও তাসবীহ পাঠ করেন। উপস্থিত মুসল্লীগণ সূরায়ে ফাতিহা এক বার ও সূরা ইখলাস তিনবার পাঠ করার পর মুনাজাত করেন। এর পর তবারক হিসেবে মিষ্টান্ন (জিলাপী) বিতরণ করা হয়। এই আনুষ্ঠানিকতা শুরু হওয়ার পূর্বে অর্থাৎ সূরা ইয়াসীন তিলাওয়াত শুরু হওয়ার পূর্বেই একাধিক ব্যক্তি দু’আয় শরীক না হয়ে চলে যায়। উল্লেখ্য যে, উক্ত হাফেজ সাহেব ও ইমাম সাহেব কোন পারিশ্রমিক গ্রহণ করেননি। যদিও উভয়েই ওয়াক্তিয়া নামাযের ইমামতী করেন। এখন

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

(ক) উল্লেখিত পন্থায় অথবা শরী‘আত সম্মত যে কোনো পন্থায় সাওয়াব রিসানী করা জায়িয আছে। তবে এতে কোন কিছু খাওয়ার আয়োজন করা নাজায়িয। কেননা, খাওয়া-দাওয়া, তাবারক বিতরণ করা ইত্যাদি পারিশ্রমিকের অন্তর্ভুক্ত। এর প্রমাণ হচ্ছে এই যে, এ ধরনের মজলিসের পর মিষ্টি বা অন্য কিছু বিতরণ করা না হলে, অনেকেই এরূপ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে না। আর যদি সাওয়াব রিসানীর উদ্দেশ্যে নিজের মাল দ্বারা কেউ খাওয়াতে চায়, তাহলে গরীবদের খাওয়াবে। তবে তাদের দ্বারা খতম অথবা সূরা ও কালাম পড়াবে না।

(খ) মৃত ব্যক্তির রূহে সাওয়াব রিসানীর উদ্দেশ্যে কুরআনে কারীম তিলাওয়াত করে অথবা অন্য যে কোন ধরনের দু’আ করে টাকা-পয়সা নেয়া-দেয়া অথবা খাবার খাওয়া সবই নাজায়িয ও হারাম। সুতরাং ইমাম, মুআযযিনও কোন বিনিময় গ্রহণ করতে পারবে না। টাকা-পয়সা ইত্যাদির বিনিময়ে খতম পড়িয়ে ঈসালে সাওয়াব করলে এতে মৃত ব্যক্তির কোন উপকার হবে না। কেননা, টাকা-পয়সা অথবা যে কোন ধরনের বিনিময় গ্রহণ করে তিলাওয়াত করলে তিলাওয়াতকারী কোন সাওয়াব পায় না। তাহলে তিনি মৃত ব্যক্তির নিকট কি পৌঁছাবেন। সুতরাং মৃত ব্যক্তির রূহে সাওয়াব পৌঁছানোর জন্য তার আত্মীয়-স্বজন বা পরিবার-পরিজন খতমে কুরআন, দান-সদকা ইত্যাদির মাধ্যমে সাওয়াব রিসানী করবে। আর খতম পড়াতে হলে এমন লোকের দ্বারা খতম পড়াবে, যাদের সাথে পূর্ব থেকে আন্তরিকতা রয়েছে। যাতে তারা পারিশ্রমিক ব্যতিরেকেই কুরআন তিলাওয়াত করতে রাজী হয়।

(গ) উক্ত অনুষ্ঠান বা দু’আর মাহফিলে শরীক হওয়া কারো উপর জরুরী নয়। বরং এটা প্রত্যেকের ইচ্ছাধীন বিষয়। তবে প্রতিবেশী হিসেবে অবশ্যই উক্ত ব্যক্তির জন্য তাদের দু’আ করা উচিত। কিন্তু কেউ যদি মিষ্টি খাওয়ানোর এ রকম প্রথা থেকে বেঁচে থাকার জন্য চলে গিয়ে থাকেন, তাহলে তিনি ঠিকই করেছেন।

(ঘ) কারো যদি জানা থাকে যে, এটা প্রচলিত মীলাদের তাবারক, তাহলে তার জন্য সেটা খাওয়া জায়িয হবে না। কেননা, প্রচলিত কিয়াম ও মীলাদ বিদ‘আত ও গোনাহের কাজ। আর তাদের তাবারক গ্রহণের অর্থ হচ্ছে, তাদের মীলাদ ও কিয়ামে সহযোগিতা করা। সুতরাং এটাও বিদ‘আত ও গোনাহের কাজ। গোনাহের কারণে অন্তরের নূর চলে যায়। একথা সম্পূর্ণ সঠিক। আর তা অজানা বশতঃ খেলেও কিছুটা প্রভাব পড়বেই। তাবে প্রচলিত মীলাদ ও কিয়ামের তবারক খেলে ৬০-৭০ বৎসরের ইবাদত নষ্ট হয়ে যায় বলে যে কথা প্রচলিত আছে সেটা ভিত্তিহীন।

- والله اعلم باالصواب -

সূত্র

  • রাদ্দুল মুহ্‌তার-শামী, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ২৪০
  • ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৩৪৩
  • আহসানুল ফাতাওয়া, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৩৬২
  • মুসনাদে আহ্‌মদ, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৪২৮
  • ফাতাওয়া শামী, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৫৬
  • ফাতাওয়া মাহমূদিয়া, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ২৫৬
  • ফাতাওয়া দারুল উলূম, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৪২৪
  • সূরা: বাকারাহ, আয়াত: ১৭৭
  • সূরা: মায়িদাহ, আয়াত:

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২৩ ফেব, ২১