সূরা ফাতিহা কিরাত নয় একটি দালিলিক পর্যালোচনা

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসবিবিধ১২ মে, ২১

প্রশ্ন

আপনাদের সাইটে প্রকাশিত লেখা- “সূরা ফাতিহা কিরাত বা কুরআনের অন্তর্ভূক্ত নয়?” নামক লেখায় অনেক সুন্দর দালিলিকভাবে প্রমাণ করেছেন যে, সূরা ফাতিহা শুধু কুরআনই নয় বরং কুরআনের মূল। কিন্তু কথিত আহলে হাদীসরা প্রথমেতো সূরা ফাতিহাকে কুরআন মানতেই নারাজ ছিল। বলতো কুরআন এক আর সূরা ফাতিহা ভিন্ন। সূরা ফাতিহা কুরআনের অন্তর্ভূক্ত নয়। যখন আপনাদের দেয়া দলীল পেশ করা হল, তখন বলতে শুরু করে দেয়, “সূরা ফাতিহা কুরআন কিন্তু কেরাত নয়। হাদীসের কোথাও সূরা ফাতিহাকে কেরাত বলা হয়নি”। এসব কথার সত্যতা কতটুকু? কি জবাব দেয়া যায় এর?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

কথিত আহলে হাদীস নামধারীরা কখনোই এক স্থানে স্থীর থাকতে পারে না। মুরুব্বীর হাত ছেড়ে দিলে যেমন বাচ্চা ছেলে বাজারের গলিতে গলিতে কেঁদে কেটে বেড়ায়। একেক দুয়ারে গিয়ে গিয়ে ঠোকর খায়। এরাও যখন মুজতাহিদদের অনুসরণ ছেড়ে দিয়ে মনের পূজা শুরু করেছে তখন তারাও দুয়ারে দুয়ারে ঠোকর খেয়ে বেড়াচ্ছে। একবার এক দাবী করবে, তারপর এর বিরুদ্ধে দলীল উপস্থাপন করলে সাথে সাথেই দাবির স্টাইল পাল্টে ফেলে নতুন দাবি জোড়ে দিবে। আবার দলীল দিলে আবার চেহারা পাল্টে ফেলবে। এভাবেই অস্থিরতায়ই কেটে যায় জীবন। কেউবা নিজের কম আকল দিয়ে সঠিক সমাধানে না পৌঁছতে পেরে কাদিয়ানী হয়, কেউবা শিয়া হয়ে যায়, কেউবা আবার খৃষ্টান বা নাস্তিক হয়ে যায়। এই হল অবাধ স্বাধীনচেতা কথিত আহলে হাদীসদের আসল চিত্র। আল্লাহ তাআলা এ ভয়াবহ ভ্রান্ত থেকে মুসলিম উম্মাহকে হিফাযত করুন।

“সূরা ফাতিহা কিরাতের অন্তর্ভূক্ত” হাদীসের আলোকে প্রমাণ অসংখ্য হাদীস এ বিষয়ে পেশ করা যায় সূরায়ে ফাতিহা কিরাতের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার ব্যাপারে। কয়েকটি নিচে উদ্ধৃত করা হল।

১. عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ” أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ وَعُثْمَانَ، كَانُوا يَفْتَتِحُونَ الْقِرَاءَةَ بِ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ • হযরত আনাস বিন মালিক e থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় রাসূল c , হযরত আবু বকর সিদ্দীক e , হযরত উমর e ও হযরত উসমান e সকলে কিরাত শুরু করতেন আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন দিয়ে। এটি বুখারী মুসলিমের শর্তানুপাতে সহীহ হাদীস। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১১৯৯১, ১২১৩৫, ১৩১০৩ عَنْ أَنَسٍ، ” أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَبَا بَكْرٍ، وَعُمَرَ، وَعُثْمَانَ كَانُوا يَسْتَفْتِحُونَ قِرَاءَتَهُمْ فِي صَلَاتِهِم: بِ (الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ) • হযরত আনাস বিন মালিক e থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় রাসূল c , হযরত আবু বকর e , হযরত উমর e ও হযরত উসমান e তাদের নামাযের কিরাত আলহাদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন তথা সূরা ফাতিহা দিয়ে শুরু করতেন। হাদীসটির সনদ সহীহ। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৩১২৫ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ قَال: ” صَلَّيْتُ خَلْفَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَبِي بَكْرٍ، وَعُمَرَ، وَعُثْمَانَ، فَكَانُوا يَسْتَفْتِحُونَ بِـ (الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ) (الفاتحة) ، لَا يَذْكُرُونَ (بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ) (الفاتحة) فِي أَوَّلِ الْقِرَاءَةِ، وَلَا فِي آخِرِهَا • “হযরত আনাস বিন মালিক e বলেন, আমি রাসূল c , হযরত আবু বকর e , হযরত উমর e ও হযরত উসমান e এই সবার পিছনে নামায পড়েছি। তারা সবাই কিরাত শুরু করতেন আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন তথা সূরা ফাতিহা দিয়ে। এ কেরাতের শুরুতে এবং শেষে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়তেন না। এটি বুখারী মুসলিমের শর্তানুপাতে সহীহ হাদীস। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৩৩৩৭

২. عَنْ عَائِشَةَ قَالَت: ” كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَفْتَتِحُ الصَّلَاةَ بِالتَّكْبِيرِ، وَالْقِرَاءَةِ بِ (الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ • হযরত আয়শা e থেকে বর্ণিত। রাসূল c নামায শুরু করতেন তাকবীর দিয়ে, আর কিরাত শুরু করতেন আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন দিয়ে। হাদীসটি সহীহ। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৪০৩০, ২৫৩৮২

৩. عَنِ ابْنِ أَبِي مُلَيْكَةَ، أَنَّ بَعْضَ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَلَا أَعْلَمُهَا إِلَّا حَفْصَةَ سُئِلَتْ عَنْ قِرَاءَةِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَت: ” إِنَّكُمْ لَا تُطِيقُونَهَا “. قَالَت: (الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ) (الفاتحة) تَعْنِي التَّرْتِيلَ • হযরত ইবনে আবী মুলাইকা থেকে থেকে বর্ণিত। রাসূল c এর সম্মানিত স্ত্রীগণ যাদের নাম আমি জানি না শুধু হযরত হাফসা e নাম ছাড়া তাদের জিজ্ঞাসা করা হল, রাসূল c এর কিরাত কেমন ছিল? তখন তিনি বললেন, তোমরা এরকম কিরাত পড়তে সক্ষম হবে না। তখন তিনি জানালেন, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। তথা তারতীলের সাথে কিরাত করতে হবে। হাদীসটি সহীহ লিগাইরিহী। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৬৪৫১ قَالَ نَافِع: أُرَاهَا حَفْصَةَ أَنَّهَا سُئِلَتْ عَنْ قِرَاءَةِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَت: إِنَّكُمْ لَا تَسْتَطِيعُونَهَا قَال: فَقِيلَ لَهَا أَخْبِرِينَا بِهَا قَال: فَقَرَأَتْ قِرَاءَةً تَرَسَّلَتْ فِيهَا قَالَ أَبُو عَامِر:، قَالَ نَافِع: فَحَكَى لَنَا ابْنُ أَبِي مُلَيْكَةَ (الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ) (الفاتحة) . ثُمَّ قَطَّعَ (الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ) (الفاتحة) ثُمَّ قَطَّعَ (مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ) হযরত নাফে বলেন, আমরা হযরত হাফসা e সম্পর্কে বর্ণিত। তার কাছে প্রশ্ন করা হল রাসূল c এর কিরাত সম্পর্কে। তখন তিনি জবাব দিলেন- তোমরা এতে সক্ষম হবে না। তখন তাকে বলা হল, আপনি আমাদের এ ব্যাপারে জানান। বর্ণনাকারী বলেন, হযরত হাফসা e ইরসালের সাথে কিরাত পড়েন। আবু আমের বলেন, নাফে বলেছেন, আমাদের কাছে ইবনে আবী মুলাইকা বলে- আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, তারপর থেমে বলবে আররাহমানির রাহীম, তারপর থেমে বলবে মালিকি ওয়াইমিদ্দীন। হাদীসটি সহীহ। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৬৪৭০ عَنْ عَبْدِ الْجَبَّارِ بْنِ وَائِلٍ، عَنْ أَبِيهِ قَال: صَلَّيْتُ خَلْفَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمَّا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ كَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى حَاذَتَا أُذُنَيْهِ، ثُمَّ يَقْرَأُ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ • হযরত আব্দুল জাব্বার বিন ওয়াইল তার পিতা e থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি রাসূল c এর পিছনে নামায আদায় করেছি। যখন তিনি নামাযের শুরু করলেন তখন তাকবীর দিলেন। এবং হাত উঠালেন কানের লতি পর্যন্ত। তারপর সূরা ফাতিহার কিরাত পড়লেন। হাদীসটি সহীহ। -সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৮৭৯

এইর রকম অসংখ্য বর্ণনা পাওয়া যায়, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, সুনানে নাসায়ী, মুসনাদে আহমাদ, মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজী বুখারীতে। যা পরিস্কার ভাষায় প্রকাশ করছে সূরা ফাতিহা কিরাত। আর আমাদের একথা কিছুতেই বুঝে আসে না, কোন একটি সূরা কুরআনের অন্তর্ভূক্ত হবার পর তা কিরাতের অন্তর্ভূক্ত নয় কেন? কিরাত মানে কি? কিরাত মানেতো সবাই জানে যে, তিলাওয়াত। কুরআনের সূরা হওয়ার পরও তা কিরাত তথা তিলাওয়াতের অন্তর্ভূক্ত নয় মানে কি?

কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা একদিকে বলছে সূরা ফাতিহা কিরাতের অন্তর্ভূক্ত নয়, আবার সেই সূরা ফাতিহাকে প্রতি নামাযে ইমাম মুসল্লি সকলের জন্য পড়াকে ফরজ বলছে। এ কোন জাহেলী বক্তব্য? আমাদের মাথা-মুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না। যে সূরা কিরাত নয়, সে সূরার কিরাত পড়ার জন্য ইমাম মুসল্লির জন্য বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে কেন? ধোঁকার ভেদ জানতে একটি আয়াত দেখুন- وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنْصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ • যখন কুরআন তিলাওয়াত করা হয়, তখন তোমরা তা মনযোগ সহকারে শ্রবণ কর এবং চুপ থাক। যেন তোমাদের উপর রহম করা হয়। -সূরা আরাফ-২০৪ এ আয়াত বিষয়ে হাদীসের কিতাবে এসেছে- عَنْ إِبْرَاهِيمَ فِي قَوْلِهِ تَعَالَ: (وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنْصِتُوا)، قَال: «فِي الصَّلَاةِ الْمَكْتُوبَةِ» • হযরত ইবরাহীম আল্লাহ তাআলার বাণী “যখন কুরআন তিলাওয়াত করা হয়, তখন তোমরা তা মনযোগ সহকারে শ্রবণ কর এবং চুপ থাক”।

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُغَفَّلٍ فِي قَوْلِهِ تَعَالَ: (وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنْصِتُوا)، قَالُو: «فِي الصَّلَاةِ» • হযরত আব্দুল্লাহ বিন মুগাফফাল e থেকে বর্ণিত। আল্লাহ তাআলার বাণী “যখন কুরআন তিলাওয়াত করা হয়, তখন তোমরা তা মনযোগ সহকারে শ্রবণ কর এবং চুপ থাক”। -সূরা আরাফ-২০৪ বিষয়ে বলেন, এটি নামাযের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৮৩৭৮

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَال: ” كَانُوا يَتَكَلَّمُونَ فِي الصَّلَاةِ، فَنَزَلَت: (وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنْصِتُوا)“، قَالُو: هَذَا فِي الصَّلَاةِ হযরত আবূ হুরায়রা e বলেন, লোকেরা নামাযের সময় কথা বলতো, তখন নাজিল হয়েছে- “যখন কুরআন তিলাওয়াত করা হয়, তখন তোমরা তা মনযোগ সহকারে শ্রবণ কর এবং চুপ থাক”। -সূরা আরাফ-২০৪ সাহাবাগণ বলেন, এটি নামাযের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৮৩৮০

যেহেতু আয়াতে কারীমা নামাযরত অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করার সময় জোরে পড়ার সময় মনযোগ দিয়ে শ্রবণ করতে, আর আস্তে কিরাত পড়ার সময় চুপ থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে,যাতে করে এ আমল করে আল্লাহর রহমাত পাওয়া যায়। তাই শয়তানের প্ররোচনায় সাধারণ মুসলিমদের উপর আল্লাহর রহমাতকে দূরে রাখার জন্য ইমামের পিছনে কিরাত পড়ার কথা বলে আসছে কথিত আহলে হাদীসরা। আর কুরআনের আয়াতে স্পষ্ট কুরআন পড়ার সময় জোরে পড়লে শ্রবণ করা আর আস্তে পড়লে চুপ থাকার উভয় নির্দেশ একসাথে দেয়ার পরও তা অস্বিকার করার জন্য চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে প্রথমে বলছে সূরা ফাতিহা কুরআনেরই অন্তর্ভূক্তই না। তারপর যখন কুরআনের একাধিক আয়াত ও বুখারীর হাদীস দ্বারা প্রমাণ দেয়া হয় যে, সূরা ফাতিহা শুধু কুরআনই নয় বরং কুরআনের মূল ও শ্রেষ্ঠ সূরা। তখন নতুন চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে বলে সূরা ফাতিহা কুরআন কিন্তু কিরাত নয়। আল্লাহ! এ কোন আজগুবী কুরআন ও সহীহ হাদীসের অনুসারীর আবির্ভাব হল। কুরআনের আয়াত অমান্য করার জন্য আর কত ছলের আশ্রয় নিবে ওরা?

কথিত আহলে হাদীসদের কাছে কয়েকটি প্রশ্নঃ

১. সূরা ফাতিহা কুরআন হলে সেটি আবার কিরাত তথা তিলাওয়াতের অন্তর্ভূক্ত না হয় কিভাবে? কুরআন ও সহীহ হাদীসের দলীল পেশ করুন।।

২. আর যেসব সহীহ হাদীসে স্পষ্ট ভাষায় সূরা ফাতিহাকে কিরাত বলা হয়েছে এতগুলো হাদীসগুলোর কী হুকুম হবে? সবগুলোই অস্বিকার করে দিবে কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা? ৩. সূরা ফাতিহা যদি কিরাতই না হয়, তাহলে সেটিকে ইমাম মুসল্লি সবাইকে পড়ানোর জন্য এত তোড়জোড় কেন? যে জিনিস কিরাতই না সেটির কিরাত পড়ার মানে কি? কুরআন ও সহীহ সরীহ হাদীস দ্বারা জবাব চাই।।

৪. عن أبي هريرة أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال من أدرك ركعة من الصلاة فقد أدركها قبل أن يقيم الإمام صلبه হযরত আবু হুরায়রা e থেকে বর্ণিত। রাসূল c ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি নামাযের রুকু পেয়ে যায় ইমাম তার পিঠ সোজা করার পূর্বে, সে ব্যক্তি উক্ত রাকাত পেয়ে গেল। -সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২৪০৮, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১৩২৯, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৪৫, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২০৬৯৩, নসবুর রায়াহ, হাদীস নং-৩২৭ তাহলে যে ব্যক্তি ইমামের সাথে রুকু পেল কিন্তু কিয়াম পেল না, উক্ত ব্যক্তির নামায সুরা ফাতিহা ছাড়াই কিভাবে সঠিক হয়ে যায়?

৫. কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা একাকী নামায পড়াকালীন সকল নামাযে সূরা ফাতিহা এবং অন্যান্য সূরা আস্তে পড়ে থাকে। কুরআন ও সহীহ হাদীস দিয়ে উক্ত আমলের প্রমাণ চাই।।

৬. পানির সকল ফোটাই যেমন পানি, তেমনি কুরআনের অন্তর্ভূক্ত সকল আয়াতই কুরআন। তাহলে আল্লাহ তাআলা কুরআনে যা সহজ তা পড়ার নির্দেশ দেয়ার পরও (সূরা মুজ্জাম্মিল) সূরা ফাতিহাকে আবশ্যক করে কেন কুরআনের বিরোধিতা করে?

৭. সূরা ফাতিহা পড়া ফরজ হওয়া কোন সরীহ সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত?

৮. রাসূল c ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি নামাযে সূরা ফাতিহা না পড়বে তার নামায অসম্পূর্ণ। -সহীহ মুসলিম-১/১৬৯ বাতিল ও অসম্পূর্ণ হওয়ার মাঝে আকাশ পাতালের পার্থক্যতো একজন সাধারণ ব্যক্তিও জানে। অথচ গায়রে মুকাল্লিদরা উক্ত নামাযকে বাতিল বলছে কেন রাসূল c এর বিরোধিতা করে কেন?

৯. রাসূল c জীবনের শেষ প্রান্তে এসে যখন সর্বশেষ জামাতের সাথে নামায পড়েছেন। সে নামাযে প্রমাণ করুন রাসূল c হযরত আবু বকর সিদ্দিক e এর পিছনে পড়া প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়েছেন। তারপর দ্বিতীয় রাকাতে আবু বকর সিদ্দিক e ইমাম রাসূল c এর পিছনে মুক্তাদী হয়ে সূরা ফাতিহা পড়েছেন প্রমাণ করুন। এটা কস্মিনকালেও প্রমাণ করতে পারবে না।

১০. রাসূল c এর মেরাজের পূর্বে সূরা ফাতিহা নাজিল হয়েছিল। নামাযও পড়তেছিলেন। রাসূল c মেরাজের রাতে নবীগণের ইমামতী করেছেন। এবার একটি হাদীস দিয়ে কি প্রমাণ করতে পারবেন যে, রাসূল c প্রথমে সূরা ফাতিহা পড়েছেন,তারপর পরের রাকাতে উপস্থিত মুক্তাদী নবীগণও সূরা ফাতিহা পড়েছেন?

১১. ইমামের পিছনে শুধু সূরা ফাতিহা পড়ে থাকে, কুরআনে কারীমের বাকি ১১৩ সূরা না পড়ার কী কারণ?

১২. কুরআনে কারীমের ১১৩ সূরা আপনারা ইমামের পিছনে পড়েন না। ইমামের সুতরা এবং খতীবের খুতবাও সবার পক্ষ থেকে হয়। মুআজ্জিনের আজান সবার পক্ষ থেকে হয়, মুআজ্জিনের ইকামত সবার পক্ষ থেকে হয়, ইমামের ১১৩ সূরাও সবার পক্ষ থেকে হয়, কিন্তু কেবল মাত্র সূরা ফাতিহা সবার পক্ষ থেকে হয় না কেন? কুরআনের কোন আয়াত বা সহীহ সরীহ হাদীস দ্বারা এ বৈষম্য প্রমাণিত?

১৩. গায়র মুকাল্লিদদের গায়র যিম্মাদার সাধারণ ভক্ত ও আলেমদের মতে ইমামের পিছনে কুরআনে কারীমের ১১৪ সূরার মাঝে ১১৩ সূরা পড়া হারাম। শুধুমাত্র এক সূরা তথা সূরা ফাতিহা পড়া ফরজ। যে ব্যক্তি এটি না পড়বে, তার নামায হবে না। এই পূর্ণ দাবির স্বপক্ষে কুরআনের আয়াত বা সহীহ সরীহ হাদীস দেখান।

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১২ মে, ২১