সূরা আলে ইমরানের ১১০ নং আয়াতের তাফসীর এবং জিহাদ প্রসঙ্গ

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসতাবলীগ১২ জুন, ২৩

প্রশ্ন

“” “তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে”

।(আলে ইমরান ১১০)

এই আয়াত টা আমাদের সমাজে চরম ভুল ব্যাখ্যার শিকার। এটার বাখ্যায় ইমাম বুখারি(রহঃ) (৪৫৭৭)বলেনঃ এই আয়াতটি সম্পর্কে আবু হুরায়রা বলেন, মানুষের জন্য মানুষ কল্যাণজনক তখনই হয় যখন তাদের গ্রীবাদেশে শিকল লাগিয়ে নিয়ে আসে, এরপর তারা ইসলামে প্রবেশ করে” জিহাদ ব্যতীত কি লোকদের ঘাড়ে শিকল লাগানো অবস্থায় নিয়ে আসা সম্ভব? (শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদ) “”””_জনৈক এক ভাই তবলীগে আমরা যে এটা ব্যবহার করি, এতে কি কোন সমস্যা আছে? একটু ব্যাখ্যা করলে উপকার হত।

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

প্রথমে আমরা আয়াতটি দেখে নেই-

كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ ۗ وَلَوْ آمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُم ۚ مِّنْهُمُ الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُونَ (٣:١١٠)

তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। আর আহলে-কিতাবরা যদি ঈমান আনতো, তাহলে তা তাদের জন্য মঙ্গলকর হতো। তাদের মধ্যে কিছু তো রয়েছে ঈমানদার আর অধিকাংশই হলো পাপাচারী। -সুরা আলে ইমরান-১১০ ইমাম বুখারী i এনেছেন-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ، قَالَ: «خَيْرَ النَّاسِ لِلنَّاسِ تَأْتُونَ بِهِمْ فِي السَّلاَسِلِ فِي أَعْنَاقِهِمْ، حَتَّى يَدْخُلُوا فِي الإِسْلاَمِ»

হযরত আবূ হুরায়রা e থেকে বর্ণিত।“তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে”। তিনি বলেন, মানুষের জন্য মানুষ কল্যাণজনক তখনই হয় যখন তাদের গ্রীবাদেশে শিকল লাগিয়ে নিয়ে আসে, এরপর তারা ইসলামে প্রবেশ করে। -বুখারী, হাদীস নং-৪৫৫৭, ৪২৮১

খেয়াল করুন। এটি কি রাসূল c এর বলা তাফসীর? নাকি হযরত আবু হুরায়রা e এর তাফসীর? আয়াতটির তাফসীর রাসূল c থেকে বর্ণিত নয়। এটি হযরত আবূ হুরায়রা e এর তাফসীর। আল্লামা কাশতাল্লানী i তার ইরশাদুস সারীতে উল্লেখ করেন- وقول الزركشي وغيره قيل ليس هذا التفسير بصحيح ولا معنى لإدخاله في المسند لأنه لم يرفعه ليس بصحيح بل إساءة أدب لا ينبغي ارتكاب مثلها، وقد تقدم من وجه آخر في أواخر الجهاد مرفوعًا بلفظ: عجب الله من قوم يدخلون الجنة في السلاسل يعني الأسارى الذين يقدم بهم أهل الإسلام في الوثاق والأغلال والقيود ثم بعد ذلك يسلمون وتصلح سرائرهم وأعمالهم فيكونون من أهل الجنة.

যারকাশী এবং অন্যান্যরা বলেন, এ তাফসীরটি সঠিক নয়। আর এটিকে মুসনাদে অন্তর্ভূক্ত করারও কোন মানে হয় না। কেননা, এটি মারফূ নয়। আর সঠিক পদ্ধতি নয়। বরঞ্চ এটি আদব পরিপন্থী পদ্ধতি। এমন কাজ করা উচিত নয়। ইতোপূর্বে জিহাদ অধ্যায়ের শেষে মারফু হাদীস অতিক্রান্ত হয়েছে। যার শব্দ হল, আল্লাহ তাআলা ঐ কওমের ব্যাপারে বিস্ময় প্রকাশ করেন, যারা শিকলাবদ্ধ অবস্থায় জান্নাতে প্রবেশ করবে। অর্থাৎ বন্দি হয়ে। যাদের মুসলমানরা বন্দি করেছিল। তারপর তারা ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং তাদের মন ও আমল পরিবর্তিত হয়েছে। ফলে তারা জান্নাতের অধিবাসী হয়েছে। -ইরশাদুস সারী, হাদীস নং-৪৫৫৭ আয়াতে কারীমায় শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব বলা হয়েছে যারা সৎকাজের আদেশ দেয়। এবং যারা অসৎ কাজের নিষেধ করে। এর মাঝে আল্লাহর পথের মুজাহিদরা শামিল। এতে কোন সন্দেহ নেই। সেই হিসেবে এ আয়াতের যে ব্যাখ্যা হযরত আবূ হুরায়রা e করেছেন। এতে কোন সমস্যা নেই। বাকি মানুষকে ধরে জোর করে বন্দি করে মুসলিম বানালেই একমাত্র উত্তম পদ্ধতি মনে করা বা খাইরে উম্মতের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার চাবিকাঠি মনে করা অজ্ঞতা বৈ কিছু নয়। এটি একটি মাধ্যম কেবল। এটিই চূড়ান্ত ও একমাত্র মাধ্যম নয়।

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১২ জুন, ২৩