সুন্নী ও বিদ‘আতীর পরিচয় এবং উলামায়ে হক্কানীদের ওহাবী বলার রহস্য

ইসলামী জিন্দেগীসিরাত ও ইতিহাস২২ ফেব, ২১

প্রশ্ন

ওহাবী ও সুন্নীর অর্থ কি ? আমাদের দেশের অনেক এলাকায় ওহাবী-সুন্নী নামে ঝগড়া-মারামারি হয় । তার রহস্য কি ?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

‘সুন্নী’ বলা হয় ঐসকল লোককে যারা রাসূল c এবং খুলাফায়ে রাশেদীনের পথের হুবহু অনুসারী । অর্থাৎ যারা আক্বাইদ ও আমল-আখলাক ইত্যাদির দিক দিয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামা‘আতের পুরোপুরি অনুসারী ।

আর যারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামা‘আতের সাথে একমত পোষণ করে না, বরং শরী‘আতের মধ্যে নতুন নতুন আক্বীদা ও আমল জুড়ে দেয় এবং সেগুলো নেকীর কাজ মনে করতে থাকে, শরী‘আতের দৃষ্টিতে তাদেরকে বিদ‘আতী বলা হয় । যেমন রাসূল c হাযির-নাযির । তিনি আলিমুল গায়িব- এরূপ বিশ্বাস করা । মাযার পূজা করা, কবরে গিলাফ দেয়া, আগরবাতি ইত্যাদি দেয়া, পীরের পায়ে বা পীরের নামে সিজদা করা, পীরের কবরে ওরশ করা, ‍মিলাদ ও ‍কিয়াম করা, রবিউল আউয়াল মাসে জশনে জুলূশে ঈদে মিলাদুন্নবী নামে বর্ণাঢ্য মিছিল বের করা ইত্যাদি সকল কাজ গর্হিত বিদ‘আতের অন্তভূক্ত। এসকল কাজ যারা করে, শরী‘আতের ভাষায় তারা বিদ‘আতী নামে অভিহিত । আফসোস-বর্তমান যামানায় বিদ‘আতী লোকেরা নিজেদেরকে সুন্নী বলে দাবী করে। আর প্রকৃতপক্ষে যারা সুন্নী, বা আহলে সুন্নত ওয়াল জামা‘আতের অনুসারী, যারা উল্লেখিত শিরক-বিদ‘আতকে প্রশ্রয় দেয় না এবং এসবের প্রতিবাদ করে, তাদেরকে ‘ওহাবী’ বলে গালি দেয় ।

এর উদাহরণ এমন, যেমন চোর নিজেই “চোর” বলে সাধুকে ধাওয়া করল । বিদ‘আতীরা প্রকৃত সুন্নীদেরকে ওহাবী এজন্য বলে যে, আরব দেশে মুহম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নামে এক ব্যক্তি আবির্ভূত হন । তিনি অনেক শিরক বিদ‘আতের মূলোৎপাটন করে সুন্নাত কায়িম করেছিলেন । তবে তার ভিতর কঠোরতা ছিল অত্যাধিক । তাই তিনি বিভিন্ন মাসআলার জন্য অতিরিক্ত কঠোরতা করে সুন্নতের খিলাফও করেছেন ।

যেমন ‍তিনি বলেছেন, হুজুর c বা কোন নবী-ওলীদের কবর যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে সফর করা নাজায়িয। নবী-ওলী বা কোন বুযুর্গ ব্যক্তির উসীলা ধরে দু‘আ করা নাজায়িয প্রভৃতি। এসব বাড়াবাড়ির কারণে অনেক মানুষ তার প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে তার সমালোচনা ও বিরোধিতা করে, তা অনেক লম্বা ইতিহাস।

তার আন্দোলন ওহাবী আন্দোলন নামে পরিচিত ।

কিন্তু আমাদের দেশে ওহাবী নামের প্রয়োগ সেই ওহাবীদের সহিত কোন যোগসূত্রে নয়। বরং হক্কানী ওলামাগণকে ঘায়েল করার জন্য বিদ‘আতীদের একটি অপপ্রয়োগ।

ওহাবী বলে এ বিদ‘আতীরা দেওবন্দী উলামা-মাশায়েখ ও তাদের অনুসারীগণকে বুঝিয়ে থাকে।

স্মর্তব্য যে, উলামায়ে দেওবন্দ যখন বৃটিশ ইংরেজদের বিরুদ্ধে জিহাদী আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েন, তখন তাদের আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য ইংরেজ সরকার ভারতের উল্টা বাঁশ বেরেলীর আহমদ রেজাখান নামে এক ব্যক্তিকে বহুরকম প্রলোভনে তারা হাত করে । সে জনগণকে উলামায়ে দেওবন্দ থেকে বিমুখ করার জন্য তাদের প্রতি “ওহাবী” নামের প্রয়োগ প্রবর্তন করে । এর স্বপক্ষে পুঁজি তৈরির জন্য দেওবন্দী উলামাগণের কিতাবাদি হতে সহীহ ইবারত নিয়ে কাটছাঁট করে কুফুরী কালাম রূপে প্রচার শুরু করে এবং নিরীহ মানুষকে দেওবন্দী উলামাদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলে ওহাবী বলে গালি দিতে প্রয়াস চালায় । কিন্তু আল্লাহপাক স্বীয় মেহেরবাণীতে মুসলমানদেরকে তার খপ্পর হতে হিফাজত করেন। মুষ্টিমেয় কিছু লোক ছাড়া মুসলমানগণ উলামায়ে ‍দেওবন্দের বলিষ্ট পদক্ষেপ ও সুন্নতী তা‘লীম তরবিয়্যত ও আমল-আখলাকের বদৌলতে তার প্রতারণা বুঝতে পারেন এবং নিজেদেরকে তার বিদ‘আতী বেড়াজাল থেকে রক্ষা করেন বর্তমানে আমাদের দেশের কোন কোন অঞ্চলে যে ওহাবী-সুন্নী সংক্রান্ত ঝগড়া-মারামারি হয়, তা সেই আহমদ রেজাখানেরেই জন্ম দেওয়া ব্রটিশ গোলামীর ফসল।

- والله اعلم باالصواب -

সূত্র

  • ফাতাওয়া মাহমূদিয়া, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ১৫৮
  • কিফায়াতুল মুফতী, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ১৯৭

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২২ ফেব, ২১