সুন্দর নামাজের প্রয়োজনীয়তা

মাসিক আল কাউসারনামায১৫ মার্চ, ২১

প্রশ্ন

কিছু কিছু মসজিদে দেখা যায়, ছোট ছোট সুরা দিয়ে তারাবীহ পড়ে। এরপরও এত দ্রুত পড়া হয় যে, রুকু-সিজদাও ঠিকমতো আদায় করা হয় না। আমি জানতে পেরে বললাম, এতো নামাযের নামে প্রহসন। হাদীস শরীফে এভাবে নামায পড়াকে মোরগের ঠোকরের সঙ্গে তুলনা দিয়ে তা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। তখন একজন বলল, অনেকে তো নামাযই পড়ে না। তারা তো এই দ্রুত নামাযে শরীক হতে পারছে। তা মন্দ কি?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

নামায ইসলামের অন্যতম রুকন। ঈমানের পর নামাযের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। কিয়ামতের দিন ইবাদতের মধ্যে সর্বপ্রথম নামাযের হিসাব নেওয়া হবে। তাই নামায সুন্দরভাবে আদায় করার প্রতি যত্নবান হতে হবে। রুকু-সিজদা এবং অন্যান্য রোকন বেশি দ্রুত আদায় করতে হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে। এক হাদীসে আছে-রাসূলুল্লাহ c মসজিদে তাশরীফ আনলেন, এ সময় অপর এক ব্যক্তিও মসজিদে এসে নামায আদায় করল। অতঃপর তাঁর নিকট এসে সালাম করল। তিনি উত্তর দিয়ে বললেন, যাও, নামায পড়। কেননা, তুমি নামায পড়নি। সে গিয়ে নামায পড়ে পুনরায় রাসূলুল্লাহ c কে সালাম করল। এবারও তিনি বললেন, যাও, নামায পড়। কেননা, তুমি নামায পড়নি। এভাবে তিনবার হল। এরপর লোকটি আরয করল, সেই সত্ত্বার কসম, যিনি আপনাকে হক দিয়ে প্রেরণ করেছেন। আমি এর চেয়ে উত্তম নামায পড়তে পারি না। আপনি আমাকে নামায শিক্ষা দিন। তখন তিনি ইরশাদ করলেন, যখন তুমি নামাযের জন্য দাঁড়াবে তখন তাকবীর বলবে। অতঃপর কুরআন মজীদ থেকে যা পার পড়বে। এরপর যখন রুকুতে যাবে, পূর্ণ শান্তভাবে রুকু আদায় করবে। তারপর রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। এরপর শান্তভাবে সিজদা করবে। তারপর সিজদা থেকে সোজা হয়ে বসবে। তুমি পুরো নামায এভাবে আদায় করবে। -সহীহ বুখারী ১/১০৯

উক্ত হাদীসের আলোকে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, রুকু ও সিজদায় সর্বনিম্ন এক তাসবীহ পরিমাণ সময় অপেক্ষা করা ওয়াজিব। এতটুকু বিলম্ব না করলে, অথবা রুকু থেকে সোজা হয়ে না দাঁড়ালে কিংবা দুই সিজদার মাঝে সোজা হয়ে না বসলে ঐ নামায পুনরায় পড়া ওয়াজিব। কেননা, এভাবে নামায পড়লে তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এটা যে কোনো নামায আদায়ের ক্ষেত্রে ন্যূনতম পরিমাণ। আর সুন্নত হল রুকু সিজদায় অন্তত তিন তাসবীহ আদায় করা।

আর তারাবীর নামায তো রমযানের রাতের ফযীলতপূর্ণ আমল। রমযানের খায়র-বরকত ও মাগফিরাত হাসিলের জন্য এই নামায দান করা হয়েছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। তাই তা যত্নসহকারে আদায় করা উচিত। অতএব তারাবীর নামাযে রুকু-সিজদা, কেরাত ইত্যাদি অতি দ্রুততার সাথে আদায় করা অন্যায়। রুকু-সিজদায় সর্বনিম্ন যতটুকু বিলম্ব করতে হয় ততটুকুও যদি না করা হয় তবে ঐ নামায পুনরায় পড়া ওয়াজিব হয়ে যায়। সুতরাং যেভাবে নামায পড়লে তা আদায় হবে, আল্লাহর দরবারে কবুল হবে সেভাবেই পড়া কর্তব্য। এ ব্যাপারে মুসল্লীদেরকে বুঝিয়ে নিতে হবে। প্রশ্নে যে বলা হয়েছে, অনেকে নামাযই পড়ে না, তারা এই উড়ন্ত নামাযে শরীক হতে পারছে এ ধরনের কথা ইবাদতের ক্ষেত্রে চলে না। কেননা, যারা নামায পড়ে না তারা তো গুনাহ করছেই এখন যারা নামায পড়বে তাদের নামাযও যদি যথাযথভাবে না হয় তাহলে এর চেয়ে দুঃখজনক বিষয় আর কী হতে পারে? সুতরাং নামায ভালো করেই পড়তে হবে। এটাই শরীয়তের নির্দেশ।

- والله اعلم باالصواب -

সূত্র

  • সহীহ বুখারী, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ১০৯
  • শরহুল মুনইয়্যাহ, পৃষ্ঠা: ২৯৪
  • আলবিনায়া, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ২৬৫
  • মাআরিফুস সুনান, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ১৮
  • আদ্দুররুল মুখতার, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৪৬৪

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১৫ মার্চ, ২১