সারাক্ষণ পেশাব ঝরলে শরীর ও কাপড়ের হুকুম কি এক দিরহাম পরিমাণ নাপাক নির্ণয় করবে কিভাবে

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসপবিত্রতা১৯ মার্চ, ২২

প্রশ্ন

মাজুর আমার প্রস্রাবের সমস্যা আছে। প্রস্রাবের বেগ না থাকলেও চলাফেরার সময় খুব অল্প পরিমাণ প্রস্রাব বের হয়, এক ফোঁটারও কম। না দেখলে টের পাওয়া যায়না। যে কোন সময়ই কুলুখ করিনা কেন টিস্যু হাল্কা ভিজে যায়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে: ১. যেহেতু ঘরের বাইরে থাকলে প্রতি ওয়াক্ত নামাজের আগে পোশাক পরিবর্তন করা সম্ভব হয়না। সেক্ষেত্রে নামাজ পড়ব কিভাবে? ২. প্রতিদিন কাপড় ধোওয়া অনেক সময় সম্ভব না। সেক্ষেত্রে কি করবো? ৩. কি পরিমাণ প্রস্রাব লাগলে কাপড় নাপাক হয়? অতি সামান্য লাগলেই নাকি এক দিরহাম পরিমাণ লাগতে হবে? এক দিরহাম পরিমাণ মানে কতটুকু?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

যদি সারাক্ষণই অল্প অল্প পরিমাণ পেশাব বের হতে থাকে, এতটুকু সময় পাওয়া যায় না, যার মাঝে ফরজ নামাযটুকু আদায় করা যায়, তাহলে শরয়ী পরিভাষায় উক্ত ব্যক্তি মাজুর। এরকম মাজুর ব্যক্তির হুকুম হল নামাযের সময় হয়ে গেলে অযু করবে আর সে অযু দিয়ে সামনের নামাযের সময় শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত নামায পড়তে পারবে। নামায ভাঙ্গবে না। কিন্তু পরের নামাযের সময় হয়ে গেলেই অযুটি ভেঙ্গে যাবে। আবার নতুন করে অযু করে নামায পড়তে হবে। এভাবে মাজুর ব্যক্তি নামায আদায় করবে। যদি সম্ভব হয়, তাহলে পবিত্র কাপড় দিয়ে নামায আদায় করবে। যদি সম্ভব না হয়, তাহলে উক্ত কাপড়সহই নামায আদায় করবে। নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। শংকিত হওয়ার কিছু নেই। (وصاحب عذر من به سلس) بول لا يمكنه إمساكه (أو استطلاق بطن أو انفلات ريح أو استحاضة) أو بعينه رمد أو عمش أو غرب، وكذا كل ما يخرج بوجع ولو من أذن وثدي وسرة (إن استوعب عذره تمام وقت صلاة مفروضة بأن لا يجد في جميع وقتها زمنا يتوضأ ويصلي فيه خاليا عن الحدث (ولو حكما) لأن الانقطاع اليسير ملحق بالعدم (وهذا شرط) العذر (في حق الابتداء، وفي) حق (البقاء كفى وجوده في جزء من الوقت) ولو مرة (وفي) حق الزوال يشترط (استيعاب الانقطاع) تمام الوقت (حقيقة) لأنه الانقطاع الكامل. (وحكمه الوضوء) لا غسل ثوبه ونحوه (لكل فرض) اللام للوقت كما في – (لدلوك الشمس) (الإسراء: 78)- (ثم يصلي) به (فيه فرضا ونفلا) فدخل الواجب بالأولى (فإذا خرج الوقت بطل) أي: ظهر حدثه السابق، (الدر المختار مع رد المحتار، كتاب الطهارة، مطلب فى احكام المعذور-1/504-505 তথ্যসূত্র ১-হাশিয়াতুত তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ-১৪৮-১৫১ ২-ফাতওয়ায়ে শামী-১/৫০৪-৫০৫ ৩-মাজমাউল আনহুর-১/৮৪ গলীজ নাপাক যেমন পেশাব যতটুকুই লাগুক না কেন যেখানে নাপাক লাগছে কাপড়ের উক্তঅংশটি নাপাক হয়ে যাবে। তবে কথা হল, এর দ্বারা নামায পড়া শুদ্ধ হবে কি না? এক্ষেত্রে যদি গলীজ নাপাক এক দিরহাম পরিমাণ হয়, তাহলে উক্ত কাপড়সহ নামায পড়া জায়েজ নয়। কিন্তু যদি এক দিরহাম থেকে কম হয়, তাহলে উক্ত কাপড়সহ নামায পড়া জায়েজ আছে। صلى الله عليه و سلم قال : تعاد الصلاة من قدر الدرهم من الدم (سنن الدر قطنى، كتاب الصلاة، باب قدر النجاسة التي تبطل الصلاة، رقم الحديث-1) হযরত আবু হুরায়রা e থেকে বর্ণিত। রাসূল c ইরশাদ করেছেন-এক দিরহাম পরিণাম রক্তের দরুন নামাযকে পুনরায় আদায় কর। -সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৩৮৯৬, জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-১০৭৮৩, মারেফাতুস সুনান ওয়াল আসার লিল বায়হাকী, হাদীস নং-১৩২৩, আল জামেউল কাবীর, হাদীস নং-২৩৮ فلما ذكره صاحب الأسرار عن علي وبن مسعود أنهما قدرا النجاسة بالدرهم وكفى بهما حجة في الاقتداء وروي عن عمر أيضا أنه قدره بظفره(عمدة القارى شرح صحيح البخارى، كتاب الوضوء، باب غسل الدم، رقم الحديث-227،3/140 হযরত আলী e এবং ইবনে মাসউদ e (কাপড়) নাপাক হওয়ার পরিমাণ নির্দিষ্ট করেছেন এক দিরহাম। আর আব্দুল্লাহ বিন ওমর e নির্ধারণ করেছেন নখ পরিমাণ। -উমদাতুল কারী-৩/১৪০, আদিল্লাতুল হানাফিয়্যাহ-১০১ قال محمد فى الآثار: أخبرنا أبو حنيفة رح عن حماد عن ابراهيم قال: إذا كان الدم قدر الدرهم والبول وغيره فأعد صلاتك، وإن كان أقل من قدر الدرهم فأمض على صلاتك، ص-28 فإن قلت: هذا إنما يدل على عفو الأقل عن الدرهم دون قدر الدرهم ومذهب الحنفية أوقدر الدرهم عفو ايضا، احاديث الإكتفاء بالأحجار فى الإستنجاء تفيد كون قدر الدرهم عفو، لأن موضع الاستنجاء مقدر به، (اعلاء السنن-1/405 এক দিরহাম নির্দিষ্ট করার সূরত হল, হাতের তালু সোজা করে রেখে তার উপর এক ফোটা পানি ফেলা, হাত নড়ানো বা কাত করা ছাড়া যতটুকু স্থান পরিব্যপ্ত হবে ততটুকুই হল এক দিরহামের আয়তন। এতটুকু পরিমাণ তরল গলীজ নাপাক হলে উক্ত কাপড়সহ নামায আদায় জায়েজ হবে। আর যদি শক্ত হয় গলীজ নাপাকটি, তাহলে এক দিরহামের উজন পরিমাণসহ নামায আদায় জায়েজ হবে। এক দিরহামের ওজনের পরিমান বর্তমানে প্রায় তিন গ্রাম। -কানযুদ দাকায়েকের টিকা-১৫-১৬

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১৯ মার্চ, ২২