সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাইট ব্যবহারের হুকুম কি

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসজায়েয-নাজায়েয১৬ মে, ২১

প্রশ্ন

ফেইসবুক এবং আরো যেসব সামাজিক সাইট আছে যেমন টুইটার ইত্যাদি এগুলো ব্যবহার করা যাবে কি?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

যদি শরীয়তে নিষিদ্ধ কোন কারণ না পাওয়া যায়, তাহলে এসব ব্যবহারে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। প্রত্যেক নতুন দুনিয়াবী ও ভোগ্য সামগ্রির ক্ষেত্রে মূলনীতি হল তা বৈধ হবে। তবে যদি শরয়ী নিষেধকৃত কোন কারণ পাওয়া যায়, তাহলে তা নিষিদ্ধ বলে বিবেচিত হবে। এ কারণে ফুক্বাহায়ে কেরাম মূলনীতি নির্ধারণ করেছেন যে, “প্রত্যেক বস্তুর মৌলিকত্ব হল তা জায়েজ হবে”। -আলকাওয়ায়িদুল ফিক্বহিয়্যাহ আব্দুল আজীজ আজ্জামকৃত, কায়দা নং-৫

প্রত্যেক নতুন বস্তুর মাঝে নিষিদ্ধতা না পাওয়া গেলে তা যে জায়েজ হবে, এর প্রমাণ কুরআন-হাদীস ও যুক্তির আলোকেও বুঝে আসে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে- قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِينَةَ اللَّهِ الَّتِي أَخْرَجَ لِعِبَادِهِ وَالطَّيِّبَاتِ مِنَ الرِّزْقِ • আপনি বলুনঃ আল্লাহর সাজ-সজ্জাকে, যা তিনি বান্দাদের জন্যে সৃষ্টি করেছেন এবং পবিত্র খাদ্রবস্তুসমূহকে কে হারাম করেছে? -সূরা আরাফ-৩২

এ আয়াত বুঝাচ্ছে, নিজের পক্ষ থেকে কোন বস্তুকে হারাম করার অধিকার কারো নেই। হারাম শুধু ঐ সকল বস্তুই হতে পারে, যা আল্লাহ বা তার রাসূল c হারাম করেছেন। সুতরাং যে বস্তুর হারাম হওয়া কুরআনে বা হাদীসে বর্ণিত নেই,তাকে হুট করে হারাম বলার অধিকার কারো নেই।

হাদীসে এসছে- عَن أَبِي الدَّرْدَاءِ، رَضِي اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُول اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيه وَسَلَّم: مَا أَحَلَّ اللَّهُ فِي كِتَابِهِ فَهُوَ حَلالٌ وَمَا حَرَّمَ فَهُوَ حَرَامٌ وَمَا سَكَتَ عَنْهُ فَهُوَ عَفْوٌ فَاقْبَلُوا مِنَ اللَّهِ عَافِيَتَهُ فَإِنَّ اللَّهَ لَمْ يَكُنْ لِيَنْسَى شَيْئًا، ثُمَّ تَلا هَذِهِ الآيَةَ: (وَمَا كان ربك نسيا) • হযরত আবু দারদা e থেকে বর্ণিত। রাসূল c ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা স্বীয় কিতাবে যা হালাল করেছেন, তা হালাল, আর যা হারাম করেছেন, তা হারাম। আর যেসব বিষয়ে কিছু বলেননি, তা ক্ষমাকৃত। আল্লাহর মার্জনা গ্রহণ কর। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা (যা উল্লেখ করা প্রয়োজন) তা কখনোই ভুলে যান না। তারপর তিনি তিলাওয়াত করলেন এই আয়াত- “তোমাদের রব কখনো ভুলে যায় না” (সূরা মারিয়াম-৬৩)। -মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৪০৮৭; মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-২১০২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-৭১১৩; সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-১৯৭২২

তাছাড়া যুক্তিও একথা বলে যে, আল্লাহ তাআলা মানুষকে মেধা দিয়েছেন। উদ্ভাবণী ক্ষমতা দিয়েছেন। যেন সেই ক্ষমতা দিয়ে সে দুনিয়া ও আখেরাতের উপকার অর্জন করতে পারে। আল্লাহর দেয়া সেই মেধার ক্ষমতা দিয়ে কোন আবিস্কার করলেই যদি উক্ত বস্তুটি হারাম হয়ে যায়, তাহলে আল্লাহ তাআলার মেধা দেয়ার কোন যৌক্তিকতা বাকি থাকে না। তবে, যদি উক্ত আবিস্কৃত, নববস্তুতে শরীয়তে নিষিদ্ধ কোন কাজ পাওয়া যায়, তবে তা সুনিশ্চিত হারাম হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।

সুতরাং সামাজিক সাইটের দ্বারা যদি গোনাহের কাজ না করা হয়, দুনিয়াবী প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়, বা দ্বীন প্রচারের কাজে ব্যবহার করা হয়, তাহলে এটিকে নাজায়েজ বলার কোন সুযোগ নেই। বরং দ্বীন প্রচারের কাজে ব্যবহার করলে এর দ্বারা নিশ্চয় সওয়াব পাওয়া যাবে। বাকি অযথা সময় নষ্ট করা। গায়র মাহরাম মেয়েদের ছবি দেখা, অশ্লীলতা ছড়ানো, নানাভিদ গোনাহের কাজে যদি এসব ব্যবহার করা হয়, তাহলে এসব ব্যবহার করা জায়েজ হবে না।

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১৬ মে, ২১