সহীহ হাদীস অনুপাতে ব্যক্তি মুসাফির কখন হয়

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসবিবিধ২৯ জানু, ২২

প্রশ্ন

মাননীয় মুফতী সাহেব, আমি শরিফ উদ্দীন, এখন বর্তমানে আমি ওমানে থাকি, এখানে ওমানে একটি প্রসিদ্ধ মাযহাব মাযহাবে ইবাজী, এই মাজ্বাবপন্থিদের পিছনে ৫ ওয়াক্ত নামায পড়তে হয়। আমার ১ম প্রশ্ন হলোঃ ওদের পেছনে আমার ইকতিদা সহিহ হবে কিনা? ২য় প্রশ্ন হলোঃ এখানে অনেক ওমানী ১২ কিলো বা তার থেকে কিছু দূর থেকে আসার কারণে, চার চার রাকাত নামাযগুলোতে কসর পড়ে, আমাকে প্রায় দিন তাদের সামনে কসর পড়তে না দেখায়, এক ওমানী প্রশ্ন করে বসে,অতপরঃ আমি হানাফি মাযহাবের মাসালা বলেছি, কিন্তু সে কোরান হাদীস থেকে দলীল তালাশ করে, আমার কাছে দলীল জানা না থাকায় পরে বলবো বলে কেটে পড়ি। এখন শ্রদ্ধেয় মুফতী সাহেবে কাছে আমার বিনিত আরজঃ আপনি আমায়, হানাফী মাযহাবের মতে মকীম ও মুসাফির এবং কত দূর গেলে মুসাফিরের হুকুম হবে? মাসআলা গুলোর দলীল কোরআন হাদীসের আলোকে দিয়ে, আমাকে চিন্তামুক্ত করলে চির কৃতজ্ঞ থাকিব। বিঃ দ্রঃ কুরআন ও হাদিসের রেফান্সসহ দেওয়ার অনুরোধ করছি।

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

ভাইজান! মাযহাবে ইবাজীর নাম আমরা শুনিনি কখনো। তাদের আক্বিদা বিশ্বাস না জেনে তাদের ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে পারছি না। তাই তাদের আক্বিদা বিশ্বাস বিষয়ে আমাদেরকে জানান। তাদের লেখা বা বই যদি থাকে তাহলে পিডিএফ কপি আমাদের কাছে পাঠান। আমরা সেসব দেখে তাদের আক্বিদা বিশ্বাস ও আমল সম্পর্কে পরিপূর্ণ জেনে তারপর উত্তর দেয়া যাবে। ব্যক্তি মুসাফির কখন হবে? ইমাম বুখারী i বুখারী শরীফের ১ম খন্ডের ১৪৭ নং পৃষ্ঠায় একটি বাব কায়েম করেছেন। যার শিরোনাম হল, بَابٌ: فِي كَمْ يَقْصُرُ الصَّلاَةَ তথা কতটুকু দূরত্বে কসর করা উচিত? এর অধ্যায়। এ বাবের অধীনে ইমাম বুখারী i উল্লেখ করেনঃ وَسَمَّى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَوْمًا وَلَيْلَةً سَفَرًا» وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ، وَابْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ، يَقْصُرَانِ، وَيُفْطِرَانِ فِي أَرْبَعَةِ بُرُدٍ وَهِيَ سِتَّةَ عَشَرَ فَرْسَخًا আর রাসূল c এক দিন আর এক রাতের দূরত্বকেও সফর বলেছেন। হযরত ইবনে ওমর e এবং হযরত ইবনে আব্বাস e চার বারীদ সফরের সময় কসর পড়া রোযা ভাঙ্গার কথা বলেছেন। আর সেটি হল, ১৬ ফরসখ তথা ৪৮ মাইল হয়। (গায়রে মুকাল্লিদ ওহীদুজ্জামান সাহেবের অনুবাদ) বুখারীর আরেক বর্ণনায় এসেছে- ইমাম বুখারী i এর কায়েম করা উক্ত বাব দ্বারা একথা সুস্পষ্টরূপে প্রমানিত হচ্ছে যে, সফরের দূরত্ব হল ৪৮ মাইল। কেননা, চার বারীদ দ্বারা ১৬ ফরসখ হয়, আর এক ফরসখ তিন মাইল হয়ে থাকে। সেই হিসেবে ষোলকে তিন দিয়ে গুণ দিলে হচ্ছে ৪৮। সুতরাং ইমাম বুখারী i এর নিকট সফরের দূরত্ব দাঁড়াচ্ছে ৪৮ মাইল। কিন্তু ইমাম বুখারী i এর কায়েম করা উক্ত বাবের উল্টো কতিপয় গায়রে মুকাল্লিদ বলে থাকে যে, সফরের জন্য কোন নির্ধারিত কোন সীমাই নেই। আর কতিপয় গায়রে মুকাল্লিদ বলে থাকে যে, ৯ মাইল হল সফরের দূরত্ব। আর কেউ কেউ বলে থাকে ৩ মাইল। -তাইসীরুল বারী-২/১৩৬, ফাতাওয়া নজিরীয়া-১/৬৩০, ফাতাওয়া উলামায়ে হাদীস-৩/৮ “এক বারীদ মানে ১২ মাইল, সুতরাং ৪ বারীদ হল ৪৮ মাইল”। (মুখতারুস সিহাহ লিররাজী) আরেকটি সহীহ হাদীস عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّهُ سُئِلَ أنقصر الصلاة إلَى عَرَفَةَ قَالَ لَا وَلَكِنْ إلَى عُسْفَانَ وَإِلَى جُدَّةَ وَإِلَى الطَّائِفِ 2 وَإِسْنَادُهُ صَحِيحٌ وَذَكَرَهُ مَالِكٌ فِي الْمُوَطَّأِ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ بَلَاغًا. أخرجه الشافعي في مسنده “ 1/185” كتاب الصلاة، باب صلاة المسافرين الحديث “ 526”. وأخرجه مالك في الموطأ “ 1/148” كتاب قصر الصلاة في السفر، باب ما يجب فيه قصر الصلاة، الحديث “ 15” بلاغاً عن ابن عباس ورواه أيضاً البيهقي في السنن الكبرى “ 3/137” كتاب الصلاة، باب السفر الذي لا تقصر في مثله الصلاة. ورواه في المعرفة “ 2/418- 419” كتاب الصلاة، باب السفر الذي تقصر في مثله الصلاة بلا خوف رقم “ 1579، 1580”. হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস e কে জিজ্ঞাসা করা হল, মক্কা থেকে আরাফায় যাওয়ার সময় কসর পড়া হবে কি? জবাবে তিনি বললেন, না, তবে আসফান, জেদ্দা বা তায়েফ ইত্যাদি এলাকায় সফরের জন্য কসর পড়তে পারো। ইবনে হাজার আসকালানী i বলেন, হাদীসটির সনদ সহীহ। মুয়াত্তা মালিকেও এ হাদীস বর্ণিত। -তালখীসে হাবীর-২/৪৬, হাদীস নং-৬০৮ উল্লেখ্য মক্কা ও জেদ্দার মধ্যবর্তী দূরত্ব হল ৭২ কিলোমিটার। মক্কা ও তায়েফের দূরত্ব হল ৮৮ কিলোমিটার। আর মক্কা ও আসফানের দূরত্ব হল ৮০ কিলোমিটার। উপরোক্ত সহীহ হাদীসের আলোকে একথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, সফরের দূরত্ব ১০/১২ কিলোমিটার নয়, বরং কমপক্ষে ৮০/৮৮ কিলোমিটার। যেসব কিছুর উপর গবেষণা করে ফুক্বাহায়ে আহনাফ সতর্কতার সাথে ৪৮ মাইলে শরয়ীকে সফরের দূরত্ব সাব্যস্ত করেছেন। যা বর্তমান কিলোমিটার অনুপাতে কমপক্ষে ৮৩ কিলোমিটার। এটি মনগড়া কোন কথা নয়, হাদীস ভিত্তিক সহীহ সীদ্ধান্ত। আল্লাহ তাআলা আমাদের সহীহ বুঝ দান করুন।

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২৯ জানু, ২২