আমাদের এখানে ছেলে মেয়েদের একসাথে ক্লাস করতে হয়।মেয়েরা তেমন পর্দা করে না। তাছাড়া ল্যাব (প্রাকটিকাল) অনেকসময় একসাথে গ্রুপ মিলে করতে হয় যেখানে মেয়েরাও গ্রুপে থাকে।কাজেই তাদের সাথে অনিচ্ছা সত্বেও তাকানো বা কথা বলতে হয়। এমনিভাবে যে সকল ক্লাস নেয় তাদেরও একই অবস্থা। কিন্তু আমি মাসিক মদিনায় পড়েছি এবং অনেক আলেমকেও বলতে শুনেছি যে বেপর্দা মেয়েদের ক্লাস নেওয়া বা তাদের সাথে বসে ক্লাস করলে ফাসেক হয়।কাজেই আমরা কি করব বা আমাদের কি করা উচিৎ কিংবা আমরা আসলেই ফাসেক হয়ে যাচ্ছি কিনা বিষয়টা জানালে খুবই উপকার হয়।
বি:দ্র: আমি সুন্নতি পোশাক পরেই ক্লাস করি এবং নামাজ পড়ি।আমি তবলীগের মেহনতের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত।
- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -
মাসিক মদীনার কথাটি সঠিক। কিন্তু কোন অর্থে? ইচ্ছেকৃত তাদের সাথে গিয়ে বসা, তাদের সাথে কথা বলা, এসব করলে ব্যক্তি ফাসিক হবে। কিন্তু অনিচ্ছায় কারো দিকে চোখ গেলে যদি সে সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তাহলে উক্ত ব্যক্তি ফাসিক বলে গণ্য হবে না। যেহেতু পরিবেশটি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে খুবই সঙ্গীন একটি স্থান। সেই সাথে ধার্মিক এবং খোদাভীরু বিজ্ঞ ব্যক্তিও প্রয়োজন। তাই এসব কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেয়া উচিত হবে না। বাকি নিজেকে খুবই গুটিয়ে রাখতে হবে। যেন ইচ্ছেকৃত কোন গোনাহ না হয়। কারো দিকে দৃষ্টি পড়ার সাথে সাথে মুখ নামিয়ে নিতে হবে। বেশি বেশি ইস্তিগফার পড়তে হবে। আপনি তাবলীগের সাথে জড়িত আছেন শুনে ভাল লাগল। তাবলীগের যে উসূলী কাজগুলো আছে তাতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করুন। দাওয়াত ও তাবলীগের কাজের সাথে লেগে থাকলে ইনশাআল্লাহ আপনার মন পরিস্কার থাকবে ইনশাআল্লাহ।
عَنْ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” لَا تُتْبِعِ النَّظْرَةَ النَّظْرَةَ؛ فَإِنَّمَا لَكَ الْأُولَى وَلَيْسَتْ لَكَ الْآخِرَةُ “ • হযরত বুরাইদা e থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল c হযরত আলী e কে বলেন, হে আলী! (সহসা) একবার দেখার পর পুনরায় (কোন বেগানা নারীকে) দেখো না। কারণ, তোমার জন্য প্রথমবারে অনুমতি রয়েছে (যখন তা অনিচ্ছায় হয়ে যাবে), কিন্তু দ্বিতীয়বারের অনুমতি নেই। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২২৯৭৪, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২৭৫১, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২১৪৯, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৭৭৭
عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَنْظُرُ إِلَى مَحَاسِنِ امْرَأَةٍ أَوَّلَ مَرَّةٍ، ثُمَّ يَغُضُّ بَصَرَهُ إِلَّا أَحْدَثَ اللهُ لَهُ عِبَادَةً يَجِدُ حَلَاوَتَهَا “ • হযরত আবু উমামা e থেকে বর্ণিত। রাসূল c ইরশাদ করেছেন, যে কোন মুসলমান কোন নারীর সৌন্দর্যের প্রতি হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে যায়, অতঃপর সে নিজ চক্ষু নিচু করে নেয়, তবে আল্লাহ তাআলা তার জন্য এক ইবাদতের সুযোগ সৃষ্টি করেন, যাতে সে তার স্বাদ পায়। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২২২৭৮
হযরত আবূ হুরায়রা e থেকে বর্ণিত- فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظَرُ، وَالْأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الِاسْتِمَاعُ، وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلَامُ، وَالْيَدُ زِنَاهَا الْبَطْشُ، وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا، وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى، وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ • রাসূল c ইরশাদ করেন, চোখের জিনা হল (হারাম) দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হল, (গায়রে মাহরামের যৌন উদ্দীপক) কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার জিনা হল, (গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক) কথোপকথন। হাতের জিনা হল, (গায়রে মাহরামকে) ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল, (খারাপ উদ্দেশ্যে) চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় (যদি জিনা করে) এবং মিথ্যা পরিণত করে (যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে)। -সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৯৩২
- والله اعلم باالصواب -