সমকামিতা পশুত্বের নিদর্শন

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসজায়েয-নাজায়েয১২ মে, ২১

প্রশ্ন

সমকামিতা ইসলামে হারাম। সেক্ষেত্রে সমকামি বিয়েও তো হারাম হবার কথা। সঠিক নিয়ম মেনে বিয়ে করলে নাকি সমকামিতা হারাম থাকেনা এইসব আজকাল শুনতে পাচ্ছি। এক্ষেত্রে ইসলাম কি বলে?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

সমকামিতা বিকৃত রূচির নোংরা ব্যক্তিদের কাজ। এটি কোন প্রকৃত মানুষের কাজ নয়। পশুত্বের নিদর্শন এহেন জঘন্য কাজ। মানুষ অন্য প্রাণী থেকে শ্রেষ্ঠ হওয়ার একটি মৌলিক কারণের মাঝে রয়েছে, মানুষ ভদ্রতা ও শালীনতা জানে। অন্য কোন প্রাণী ভদ্রতা ও শালীনতা কি জিনিস বুঝে না। মানুষের লজ্জা রয়েছে। অন্য কোন প্রাণীর লজ্জা নামক এই ভূষণটি নেই। সমকামি মনোবৃত্তি ব্যক্তিকে মনুষত্বের ভদ্র আর শালীন ও লজ্জাশীলতার সেই শ্রেষ্টত্বের মানদন্ড থেকে হটিয়ে পশুত্বের স্তরে নামিয়ে দেয়।

আল্লাহ তাআলা হযরত লুত এর জমানার লোকদের শুধুমাত্র এই কারণেই সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন যে, তারা সমকামি ছিল। বিবাহ করার মাধ্যমে এ নিম্নস্তরের খারাপ কাজটি বৈধতা পাবে না। যেমন মায়ের সাথে, বোনের সাথে জিনা করা হারাম। বিবাহ করে জিনা করলে সেটি হালাল হয়ে যাবে না। আগে যেমন হারাম ছিল তখনো হারামই থাকবে। বরং বিবাহ করার কারনে আরেকটি গোনাহে জড়িত হল। হারাম কাজটি প্রকাশ্যে, সকলকে জানিয়ে করা আরো মারাত্মক অপরাধ। একেতো হারাম ও অভদ্র পশুত্বের কাজ। আবার সেটিকে সবাইকে জানিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে বিবাহ করে করতে চাচ্ছে, তাই এটি গোনাহটির প্রতি বেপরোয়া মনোভাব প্রদর্শন করে করা হচ্ছে। যা আরো জঘন্য পর্যায়ের অপরাধ। তাই এরকম নিম্নস্তরের পশুবৃত্তির কাজ থেকে সকলকে বিরত থাকা আবশ্যক।

وَجَاءَهُ قَوْمُهُ يُهْرَعُونَ إِلَيْهِ وَمِنْ قَبْلُ كَانُوا يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ قَالَ يَا قَوْمِ هَؤُلَاءِ بَنَاتِي هُنَّ أَطْهَرُ لَكُمْ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَلَا تُخْزُونِ فِي ضَيْفِي أَلَيْسَ مِنْكُمْ رَجُلٌ رَشِيدٌ ۞ قَالُوا لَقَدْ عَلِمْتَ مَا لَنَا فِي بَنَاتِكَ مِنْ حَقٍّ وَإِنَّكَ لَتَعْلَمُ مَا نُرِيدُ ۞ قَالَ لَوْ أَنَّ لِي بِكُمْ قُوَّةً أَوْ آوِي إِلَى رُكْنٍ شَدِيدٍ ۞ قَالُوا يَا لُوطُ إِنَّا رُسُلُ رَبِّكَ لَنْ يَصِلُوا إِلَيْكَ فَأَسْرِ بِأَهْلِكَ بِقِطْعٍ مِنَ اللَّيْلِ وَلَا يَلْتَفِتْ مِنْكُمْ أَحَدٌ إِلَّا امْرَأَتَكَ إِنَّهُ مُصِيبُهَا مَا أَصَابَهُمْ إِنَّ مَوْعِدَهُمُ الصُّبْحُ أَلَيْسَ الصُّبْحُ بِقَرِيبٍ ۞ فَلَمَّا جَاءَ أَمْرُنَا جَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهَا حِجَارَةً مِنْ سِجِّيلٍ مَنْضُودٍ

আর তাঁর কওমের লোকেরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে তার (গৃহ) পানে ছুটে আসতে লাগল। পূর্ব থেকেই তারা কু-কর্মে তৎপর ছিল। লূত বললেন-হে আমার কওম, এ আমার কন্যারা রয়েছে, এরা তোমাদের জন্য অধিক পবিত্রতমা। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং অতিথিদের ব্যাপারে আমাকে লজ্জিত করো না, তোমাদের মধ্যে কি কোন ভাল মানুষ নেই। তারা বলল তুমি তো জানই, তোমার কন্যাদের নিয়ে আমাদের কোন গরজ নেই। আর আমরা কি চাই, তাও তুমি অবশ্যই জান। লূত বললেন-হায়, তোমাদের বিরুদ্ধে যদি আমার শক্তি থাকত অথবা আমি কোন সূদৃঢ় আশ্রয় গ্রহণ করতে সক্ষম হতাম। মেহমান ফেরেশতাগন বলল-হে লূত আমরা তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ হতে প্রেরিত ফেরেশতা। এরা কখনো তোমার দিকে পৌঁছাতে পারবে না। ব্যস তুমি কিছুটা রাত থাকতে থাকতে নিজের লোকজন নিয়ে বাইরে চলে যাও। আর তোমাদের কেউ যেন পিছনে ফিরে না তাকায়। কিন্তু তোমার স্ত্রী নিশ্চয় তার উপরও তা আপতিত হবে, যা ওদের উপর আপতিত হবে। ভোর বেলাই তাদের প্রতিশ্রুতির সময়, ভোর কি খুব নিকটে নয়? অবশেষে যখন আমার হুকুম এসে পৌঁছাল, তখন আমি উক্ত জনপদকে উপরকে নীচে করে দিলাম এবং তার উপর স্তরে স্তরে কাঁকর পাথর বর্ষণ করলাম। -সূরা হুদ, ৭৮-৮২

عَنْ أَبِي مُوسَى قَال: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم: ” إِذَا أَتَى الرَّجُلُ الرَّجُلَ فَهُمَا زَانِيَانِ، وَإِذَا أَتَتِ الْمَرْأَةُ الْمَرْأَةَ فَهُمَا زَانِيَانِ“ • হযরত আবূ মুসা আশআরী e থেকে বর্ণিত। রাসূল c ইরশাদ করেছেন, যে পুরুষ পুরুষের সাথে নোংরা কাজে লিপ্ত হয়, উভয়ে জিনাকারী সাব্যস্ত হবে। তেমনি যে নারী আরেক নারীর সাথে কুকর্মে লিপ্ত হয় উভয়ে জিনাকারী সাব্যস্ত হবে। -শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৫০৭৫, সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-১৭০৩৩

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَال: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم: اقْتُلُوا الْفَاعِلَ وَالْمَفْعُولَ بِهِ، فِي عَمَلِ قَوْمِ لُوطٍ، • হযরত ইবনে আব্বাস e থেকে বর্ণিত। রাসূল c ইরশাদ করেছেন, লুত এর কওমের মত কুকর্মে লিপ্ত উভয়কে হত্যা করে ফেল। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৭২৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২৫৬১; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৪৬২; সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৪৫৬; সুনানে দারাকুতনী, হাদীস নং-৩২৩৪

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১২ মে, ২১