সওয়াল-জওয়াবের পর রূহের অবস্থান

ইসলামী জিন্দেগীমৃত্যু ও আনুষঙ্গিক২৩ ফেব, ২১

প্রশ্ন

আমরা জানি মানুষের মৃত্যুর পর তার রূহ আল্লাহ পাকের নিকট চলে যায়। উক্ত ব্যক্তির দাফনের পর রূহকে কবরে এনে সাওয়াল-জওয়াব করা হয়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে এই যে, তারপর রূহ কি পুনরায় কবর হতে নিয়ে যাওয়া হয়? আর সেখান থেকে রূহ নেয়া না হলে উক্ত রূহ আমাদেরকে দেখতে পায় কি-না? অনেকে বলে, মৃত ব্যক্তির রূহ বৃহস্পতিবার দিন তার আত্মীয়-স্বজনদের নিকট দু‘আর জন্য আসে। তা কতটুকু সঠিক জানতে ইচ্ছুক। যেসব বিধর্মীকে দাফন করা হয় না তাদের বিধান কি?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

মানুষের মৃত্যুর পর রূহ অন্য এক জগতে চলে যায়। যাকে শরী‘আতের ভাষায় ‘আলমে বরযখ’ বলা হয়। সেখানেকার পূর্ণ অবস্থা সম্পর্কে অবগত হওয়া অসম্ভব। তবে হাদীস শরীফের আলোকে বলা যায় যে, মৃত ব্যক্তি যদি নেককার হয়, তাহলে তার রূহকে সাত আকাশের উপরে অবস্থিত ইল্লিয়্যীন নামক স্থানে পৌঁছানো হয়। আর যদি বদকার বা কাফির হয়, তাহলে তার রূহকে সাত যমীনের নীচে সিজ্জীন নামক স্থানে জেলখানায় মারাত্মক কষ্ট দিয়ে বন্দী করে রাখা হয়। ওখান থেকে মৃত ব্যক্তির রূহকে শরীরের সাথে, চাই শরীর যেকানেই হোক না কেন, বিশেষ একটা সম্পর্ক করে দেয়া হয়। যার দ্বারা তার কবরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং সে প্রশ্নের উত্তর দেয় বা আফসোস করতে থাকে। সেখানকার সুখ-দুঃখ, একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ এবং তাদের সালামের উত্তর দেয়ার মত ক্ষমতা দান করা হয়। আর কোন কোন নেককারের রূহকে বরযখী জগতে আল্লাহর পক্ষ হতে বিচরণের অনুমতি দেয়া হয়। উল্লেখিত বর্ণনা থেকে বুঝা যায় যে, মানুষের রূহকে স্ব-স্ব স্থানে নিয়ে যাওয়ার পর তা মৃত ব্যক্তির শরীরে দ্বিতীয় বার ফিরিয়ে দেয়া হয় না। বরং শুধু শরীরের সাথে রূহের এক প্রকার বিশেষ সম্পর্ক করে দেয়া হয়। যাদ্বারা তার প্রশ্নোত্তর সংশ্লিষ্ট কার্যাদি ফেরেশতাগণ সমাধা করে নেন এবং এর দ্বারা একথাও প্রতীয়মান হয় যে, মৃত ব্যক্তি সে অবস্থায় আমাদেরকে চিনেন, কবরে সালাম দিলে উত্তরও দেন। যেহেতু রূহকে কবরে ফিরিয়ে দেয়া হয় না। সুতরাং তা দ্বিতীয় বার নিয়ে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আবার অনেকে যে বলে থাকে, প্রতি বৃহস্পতিবার রূহ আত্মীয়-স্বজনের নিকট সাওয়াবের জন্য এসে থাকে, তাদের এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল ও ভিত্তিহীন। এ ধরনের আকীদা থাকলে তাওবা ইস্তিগফার করে নেয়া জরুরী। উল্লেখ্য যে, শরীরের সাথে রূহের ক্ষীণ সম্পর্কের জন্য শরীর সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় বহাল থাকা জরুরী নয় এবং পানাহারের প্রয়োজন হওয়াও জরুরী নয়।

- والله اعلم باالصواب -

সূত্র

  • মা’আরিফুল কুরআন, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ২৩৬
  • ফাতাওয়া রশীদিয়া, পৃষ্ঠা: ২৫৫
  • মিশকাত শরীফ, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ২৪
  • আপকে মাসায়িল, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৩১
  • আত-তারগীব ওযাত-তারহীব, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৩৬৭
  • সূরা: আলে ইমরান, আয়াত: ১৭০

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২৩ ফেব, ২১