রোজা অবস্থায় নেবুলাইজার ব্যবহার করা

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসরোজা১৩ মে, ২১

প্রশ্ন

হাপানি রোগীকে রমযান মাসে দিনের বেলা রোযা রাখা অবস্থায় nebulize (inhaler নয়) করতে হল। এতে রোযা কি ভেঙ্গে যাবে?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

আগে নেবুলাইজ সম্পর্কিত ধারণাটি পরিস্কার হওয়া দরকার। অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টের রোগীদের ফুসফুসে ওষুধ প্রয়োগের বহুল পরিচিত যন্ত্রটির নাম নেবুলাইজার। এই যন্ত্রটি দিয়ে তরল ওষুধকে সংকুচিত করে বায়ু বা অক্সিজেন দিয়ে স্প্রে বা অ্যারোসলে রূপান্তরিত করা হয়, যা খুব সহজেই নিঃশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসের শ্বাসনালি ও অ্যালভিউলিতে ঢুকে শ্বাসকষ্ট দূর করে। নেবুলাইজার দিয়ে শ্বাসকষ্ট দূর করার চিকিৎসাটি নেবুলাইজ নামে পরিচিত। বহু কারণে ঘরেই কিছু রোগীর নেবুলাইজ করার প্রয়োজন হতে পারে, বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট আছে এমন শিশু ও বয়স্কদের বেলায়।

ধরনঃ

তিন ধরনের নেবুলাইজার সাধারণত ব্যবহৃত হয়।

১. জেট নেবুলাইজার—এটি সহজে ব্যবহারযোগ্য বলে বাড়িতেও চালানো যায়।

২. আল্ট্রাসনিক নেবুলাইজার—এটিতে আল্ট্রাসাউন্ড দিয়ে ওষুধের তরল উপাদানকে রূপান্তরিত করে শ্বাসনালিতে পাঠানো হয়।

৩. মেশ নেবুলাইজার—এ ক্ষেত্রে মেশ বা জালের সাহায্যে তরল ওষুধকে অ্যারোসলে পরিণত করে শ্বাসনালিতে পাঠানো হয়।

সহজলভ্য ও পরিচালনা সহজ বলে বাংলাদেশে জেট নেবুলাইজার বেশি ব্যবহৃত হয়।

ব্যবহারঃ

অ্যাজমা, সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ বা দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্ট রোগ) ও অন্যান্য শ্বাসনালিজনিত রোগ যদি তীব্র আকার ধারণ করে, রোগী যদি ইনহেলার নিতে ব্যর্থ হয়, রোগীকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিতে হয়, তখন নেবুলাইজার দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

নেবুলাইজার দিয়ে আসলে প্রয়োজনীয় ওষুধ অ্যারোসল বা স্প্রে আকারে ফুসফুসে পৌঁছানো হয়। এ ধরনের ওষুধের মধ্যে ব্রঙ্কোডাইলেটর (সালবিউটামল, ইগ্রাট্রেপিয়াম ব্রমাইড) বেশি ব্যবহৃত হয়। যা থাকে নেবুলাইজারের কয়েকটি অংশ থাকে—

১. কম্প্রেশার, যার মাধ্যমে চাপযুক্ত বাতাস প্রয়োগ করা হয়।

২. টিউব, যা প্লাস্টিকের তৈরি, এটি কম্প্রেশারকে নেবুলাইজারের ওষুধ চেম্বারের সঙ্গে যুক্ত করে।

৩. নেবুলাইজার—এখানে ওষুধ চেম্বারের তরল ওষুধটি অ্যারোসল বা স্প্রেতে রূপান্তরিত হয়।

ব্যবহার পদ্ধতিঃ

► রোগীকে আরামদায়কভাবে আধাশোয়া বা বসা অবস্থায় রাখতে হবে।

► নেবুলাইজারের অংশগুলো জোড়া দিতে হবে। প্রতি স্প্রেতে ২৩ মিলি পানি, সঙ্গে ৫-১ মিলি সালবিউটামল সলিউশন এবং প্রয়োজনে ইপ্রাট্রোসিয়াম সলিউশন (৫ মিলি) নেওয়া হয়।

► এবার কম্প্রেশারটিকে বৈদ্যুতিক সংযোগ দিয়ে সুইচ অন করা হয়। এতে বাতাস দ্রুত বেগে প্রবাহিত হয়। প্রয়োজনে অক্সিজেন দিয়েও নেবুলাইজ করা যায়।

► এবার ওষুধের অ্যারোসল মাউথপিস (টিপিস) বা মাস্ক দিয়ে মুখে নিঃশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে নিতে হবে। মাউথপিস ব্যবহার করলে রোগীকে এটি দাঁতের ফাঁকে রেখে ঠোঁট বন্ধ করে রাখতে হবে।

► নেবুলাইজ করার সময় রোগীকে ধীরে ধীরে ও লম্বা শ্বাস নিতে হবে।

► সাধারণত ৩-৬ মিলি তরল ওষুধ ৫-১০ মিনিটে নেবুলাইজ করা হয়।

জাতীয় দৈনিক থেকে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের উপরোক্ত বক্তব্যটি এজন্য উল্লেখ করা হল। যেন আমাদের কাছে নেবুলাইজারের হাকীকত পরিস্কার হয়। (দৈনিক কালের কণ্ঠ, ৮ই আগষ্ট, ২০১৬ ইং)

উপরোক্ত বিবরণ থেকে আমাদের কাছে পরিস্কার যে, নেবুলাইজারের মাধ্যমে মূলত শ্বাষকষ্ট দূরীকরণের ওষুধ তরল বা বাষ্প আকারে ভিতরে প্রবেশ করানো হয়ে থাকে। আর রোযা রাখা অবস্থায় খাদ্যনালীতে বাহির থেকে নিরেট বাতাস ছাড়া কিছু প্রবেশ করলেই রোযা ভঙ্গ হয়ে যায়। সেই হিসেবে নেবুলাইজারের মাধ্যমে ওষুদ পৌছালেও রোযা ভেঙ্গে যাবে।

এক্ষেত্রে রোগীর যদি নেবুলাইজার ছাড়া থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ে, তাহলে রোযাটি ভেঙ্গে যাবার পর, রমজান মাস চলে যাবার পর সামর্থ হলে রোযাটি কাযা করে নিবে। যদি তাতেও সামর্থ না থাকে, তাহলে প্রতিটি রোযার জন্য একটি করে ফিদিয়া আদায় করবে।

ফিদিয়া হল, দুইজন মিসকিনকে দুইবেলা খানা খাইয়ে দেয়া। যার পরিমাণ পৌনে দুই সের গম। বা এর সমমূল্য। যা সদকায়ে ফিতির পরিমাণ টাকা।

আর যদি ওষুধ ছাড়া নেবুলাইজার দিয়ে শুধু বাতাস প্রবেশ করায়, তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে না। কিন্তু সাধারণতঃ এমন করা হয় না বলেই আমরা জানি।

أَيَّامًا مَّعْدُودَاتٍ ۚ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ۚ وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ ۖ فَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَّهُ ۚ وَأَن تَصُومُوا خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ • গণনার কয়েকটি দিনের জন্য অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে, অসুখ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে। আর এটি যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট দায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্যদান করবে। যে ব্যক্তি খুশীর সাথে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণ কর হয়। আর যদি রোজা রাখ, তবে তোমাদের জন্যে বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা তা বুঝতে পার। -বাকারা-১৮৪

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১৩ মে, ২১