রূহে সাওয়াব রিসানী

ইসলামী জিন্দেগীবিবিধ২৩ ফেব, ২১

প্রশ্ন

আমরা যে মৃত ব্যক্তি বিশেষ করে পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের জন্য ইসতিগফার ও দান-সদকা দ্বারা সাওয়াব রিসানী করে থাকি, এর কোন প্রমাণ কুরআন-হাদীসে আছে কি?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

কুরআন-হাদীসের দৃষ্টিতে মৃত ব্যক্তিদের জন্য ইসতিগফার ও দান সদকা দ্বারা সাওযাব রিসানী করলে এতে তাদের ফায়দা হয় এবং তাদের গুনাহ মাফ হয়। বরং হাদীস শরীফে রয়েছে, তারা আত্মীয়-স্বজনদের নিকট থেকে এগুলো পাওয়ার অপেক্ষায় থাকে। সুতরাং আত্মীয়-স্বজনরা যখন সাওয়াব রিসানী করে, তখন সেগুলোকে আল্লাহ তা‘আলা বহুগুণে বৃদ্ধি করে তাদের নিকট পৌঁছিয়ে দেন।

নিম্নে এতদসংক্রান্ত কুরআন-হাদীসের দলীল প্রদত্ত হলঃ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-

“যারা তাদের (মুহাজির ও আনসার) পরে আগমন করেছে, তারা বলে- “হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ও ঈমানে অগ্রগামী আমাদের ভাইদেরকে ক্ষমা কর এবং ঈমানদারদের বিরুদ্ধে অন্তরে কোন বিদ্বেষ রেখোনা। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি দয়ালু, পরম করুণাময়।” (সূরা হাশরঃ ১০)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস e বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া-সাল্লাম ইরশাদ করেছেন- “কবরে মৃত ব্যক্তির এমন অবস্থা হয় যেমন অথৈ পানিতে নিমজ্জিত সাহায্য প্রার্থী ব্যক্তি। (সে নিজেকে উদ্ধার করার জন্য ব্যাকুল হয়ে কাউকে ডাকতে থাকে) তেমনিভাবে উক্ত মৃত ব্যক্তি সর্বদা অপেক্ষা করতে থাকে যে, তার পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের পক্ষ হতে তার মুক্তির জন্য কোন দু’আ ও ইস্‌তিগফার পৌঁছে কি-না? যখন তাদের কারো পক্ষ থেকে কোনো দু’আ পৌঁছে, তখন সেই দু’আ তাদের দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যস্থিত সমগ্র জিনিস হতে অধিক আনন্দ দান করে। আর আল্লাহ তা‘আলা কবরবাসীদের নিকট দুনিয়াবাসীদের দু’আকে পাহাড় সমপরিমাণ করে (বহুগুণে বৃদ্ধি করে) এর সাওয়াব পৌঁছিয়ে থাকনে। তাই মৃতদের জন্য জীবিতদের পক্ষ হতে উত্তম উপঢৌকন হচ্ছে, তাদের জন্য দু’আ ও ইসতিগফার করা।” (মিশকাত শরীফঃ ২০৫ পৃষ্ঠা)

হযরত সা’দ ইবনে উবাদা e -এর আম্মা যখন ইনতিকাল করেন, তখন তিনি মায়ের থেকে দূরে (কোথাও) ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া-সাল্লাম-এর নিকট বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার আম্মার ইনতিকালের সময় আমি তার থেকে দূরে ছিলাম। এখন আমি তাঁর পক্ষ থেকে কোন কিছু সদকা করলে এর দ্বারা তার উপকার হবে কি? নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বললেন- হ্যাঁ, অবশ্যই উপকার হবে। তিনি বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকে স্বাক্ষী রেখে বলছি, আমার ‘মিখরাফ’ নামক বাগানটি মায়ের সাওয়াব রিসানীর জন্য সদকা করে দিলাম।(বুখারী শরীফ, পৃঃ ১/৩৮৬)

হযরত মা’কিল ইবনে ইয়াসার e বলেন যে, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া-সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “তোমাদের মৃতদের উপর সূরা ইয়াসীন তিলাওয়াত কর।”(মিশকাত শরীফঃ ১৪১ পৃষ্ঠা)

হযরত আবূ হুরাইরা e বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া-সাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ “আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে (অনেক) নেক বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিবেন। (তা দেখে সেই) বান্দা আশ্চার্যান্বিত হয়ে আল্লাহ তা‘আলার নিকট আরয করবে- হে আল্লাহ! এ মর্যাদা আমার জন্য কোথা হতে এবং কিভাবে নসীব হলো? আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, “এটা তোমার সন্তানাদির ইসতিগফারের বিনিময়।”(মিশকাত শরীফঃ ২০৫-২০৬)

হযরত জাবের e বলেন, নবীয়ে আকরাম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া-সাল্লাম কুরবানীর দিনে দু’টি ভেড়া যবেহ করলেন। যবেহের পূর্বে তা কবুল হওয়ার জন্য দু‘আর মধ্যে বলরেন, “তোমার দেয়া সম্পদ হতে তোমারই জন্য আমার ও আমার উম্মতের মধ্যে যাদের কুরবানীর সামর্থ নেই, তাদের পক্ষ হতে তোমার নামে কুরবানী করছি।

- والله اعلم باالصواب -

সূত্র

  • মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা: ১২৮

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২৩ ফেব, ২১