রুকু পেলেই রাকাত পেল এ সম্পর্কে হাদীসের দলীল আছে কি

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসনামায২৯ জানু, ২২

প্রশ্ন

এটা সম্বন্ধে কি আমাদের পক্ষে কোন দলিল আছে? আর এই ব্যাপারে বিজ্ঞ মুজতাহিদ ও উলামাগন এর মাজহাব কি? আর তার দেওয়া ইবনে হাজার i এর বর্ণনাটি কি সঠিক কিনা?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

রুকু পেলে উক্ত রাকাত পেয়েছে কি না? এ ব্যাপারে মতভেদ আছে। তবে বিশুদ্ধ ও প্রসিদ্ধ মত হল রুকু পেলে উক্ত রাকাত পেয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। রুকু পেলে উক্ত রাকাত ধর্তব্য হওয়ার পক্ষের দলীল সবচে’ বেশি ও শক্তিশালী। যা রুকু পেলে রাকাত না পাওয়ার পক্ষে নেই। রাসূল c এর বক্তব্যের আলোকে ১ عن معاذ بن جبل قالا : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : إذا أتى أحد كم الصلاة والامام على حال فليصنع كما يصنع الامام হযরত মুয়াজ বিন জাবাল e থেকে বর্ণিত। রাসূল c ইরশাদ করেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ নামাযে আসে, এমতাবস্থায় যে ইমাম নামায পড়াচ্ছে, তাহলে সে তাই করতে থাকবে যা ইমাম করছে। সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৫৮৮, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২০৬৬১, আলমুজামুল কাবীর, হাদীস নং-২৬৭, সুবুলুস সালাম, হাদীস নং-৩৯৬, বুলুগুল মারাম, হাদীস নং-৪২৮) কথিত আহলে হাদীস ভাইদের কাছে মান্যবর ব্যক্তিবর্গ এ হাদীসকে সহীহ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন যেমন- আল্লামা শাওকানী i -(নাইলুল আওতার-৩/১৮৬) শায়েখ নাসীরুদ্দীন আলবানী i -(সহীহুল জামে, নং-২৬১) শায়েখ ইবনে উসাইমিন i -(শরহু বুলুগিল মারাম লিইবনে উসাইমিন-২/২৯৮) এ হাদীসটি নকল করার পর ইমাম তিরমিজী i লিখেনঃ والعمل على هذا عند أهل العلم ، قالوا : إذا جاء الرجل والامام ساجد فليسجد ولا تجزئه تلك الركعة إذا فاته الركوع مع الامام আহলে ইলমদের নিকট আমল এ হাদীসের উপরই। তারা বলে থাকেন যে, যে ব্যক্তি ইমামকে সেজদাতে পাবে, তার উচিত সেও সেজদাতে চলে যাবে, কিন্তু ইমামের সাথে রুকু না পেয়ে থাকে, তাহলে এ রাকাতটি তার জন্য হয়নি। (তথা সে উক্ত রাকাত পায়নি বলে ধর্তব্য হবে।) ২ عن أبي هريرة أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال من أدرك ركعة من الصلاة فقد أدركها قبل أن يقيم الإمام صلبه হযরত আবু হুরায়রা e থেকে বর্ণিত। রাসূল c ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি নামাযের রুকু পেয়ে যায় ইমাম তার পিঠ সোজা করার পূর্বে, সে ব্যক্তি উক্ত রাকাত পেয়ে গেল। -সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২৪০৮, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১৩২৯, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৪৫, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২০৬৯৩, নসবুর রায়াহ, হাদীস নং-৩২৭عَبْدِ الْعَزِيزِ بْنِ رُفَيْعٍ عَنْ رَجُلٍ عَنِ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ :« إِذَا جِئْتُمْ وَالإِمَامُ رَاكِعٌ فَارْكَعُوا ، وَإِنْ سَاجِدًا فَاسْجُدُوا ، وَلاَ تَعْتَدُّوا بِالسُّجُودِ إِذَا لَمْ يَكُنْ مَعَهُ الرُّكُوعُ রাসূল c ইরশাদ করেছেনঃ যখন তোমরা আস আর ইমাম রুকু অবস্থায় থাকে, তাহলে তোমরা রুকু কর। আর যদি সেজদা অবস্থায় থাকে, তাহলে সেজদা কর। তবে সেজদা দ্বারা তা রাকাতের মাঝে গণ্য করো না, যদি না এর সাথে রুকু থেকে থাকে। -সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২৪০৯, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২০৬৯৫عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ : مَنْ أَدْرَكَ الإِمَامَ رَاكِعًا ، فَرَكَعَ قَبْلَ أَنْ يَرْفَعَ الإِمَامُ رَأْسَهُ فَقَدْ أَدْرَكَ تِلْكَ الرَّكْعَةَ হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর e থেকে বর্ণিত। রাসূল c বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ইমামকে রুকু অবস্থায় পাবে, তারপর সে ইমাম মাথা উঠানোর আগে তার সাথে রুকু করে, তাহলে উক্ত রাকাত পেয়ে গেছে। -সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২৪১৩ আসারে সাহাবার আলোকে عَنْ عَبْدِ اللَّهِ يَعْنِى ابْنَ مَسْعُودٍ قَالَ : مَنْ لَمْ يُدْرِكِ الإِمَامَ رَاكِعًا لَمْ يُدْرِكْ تِلْكَ الرَّكْعَةَ হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ e থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি ইমামের সাথে রুকু পায়নি, সে উক্ত রাকাত পায়নি। -সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২৪১১ عَنْ زَيْدِ بْنِ وَهْبٍ قَالَ : خَرَجْتُ مَعَ عَبْدِ اللَّهِ يَعْنِى ابْنَ مَسْعُودٍ مِنْ دَارِهِ إِلَى الْمَسْجِدِ ، فَلَمَّا تَوَسَّطْنَا الْمَسْجِدَ رَكَعَ الإِمَامُ ، فَكَبَّرَ عَبْدُ اللَّهِ وَرَكَعَ وَرَكَعْتُ مَعَهُ ، ثُمَّ مَشَيْنَا رَاكِعَيْنِ حَتَّى انْتَهَيْنَا إِلَى الصَّفِّ حِينَ رَفَعَ الْقَوْمُ رُءُوسَهُمْ ، فَلَمَّا قَضَى الإِمَامُ الصَّلاَةَ قُمْتُ وَأَنَا أَرَى أَنِّى لَمْ أُدْرِكْ ، فَأَخَذَ عَبْدُ اللَّهِ بِيَدِى وَأَجْلَسَنِى ، ثُمَّ قَالَ : إِنَّكَ قَدْ أَدْرَكْتَ হযরত জায়েব বিন ওহাব থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি একদা আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ e এর সাথে তাঁর ঘরে থেকে মসজিদের দিকে বের হলাম। তারপর যখন আমরা মসজিদের মাঝে পৌঁছলাম তখন ইমাম রুকু করে ফেলে। তখন আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ e তাকবীর বলে রুকু করলেন। আর আমিও তার সাথে রুকু করলাম। তারপর আমরা রুকু অবস্থায় চলতে লাগলাম। অবশেষে আমরা মুসুল্লিদের মাথা উঠানোর সময় কাতারের সাথে মিলিত হলাম। তারপর যখন ইমাম সাহেব নামায শেষ করল। আমি দাঁড়ালাম। কারণ আমার ধারণা ছিল আমি (এক) রাকাত পায়নি। তখন আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ e আমার হাত ধরে বেিসয়ে দিলেন। তারপর বললেনঃ তুমিতো রাকাত পেয়েছো। -সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২৬৯০,২৪১৮, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৯৩৫৫, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৬৩৭, মারেফাতুস সুনান ওয়ালা আসার, হাদীস নং-৮৬৫ عن خارجة بن زيد بن ثابت أن زيد بن ثابت كان يركع على عتبة المسجد ووجهه الى القبلة ثم يمشى معترضا على شقه الأيمن ثم يعتد بها إن وصل الى الصف أو لم يصل হযরত খারেজা বিন জায়েদ বিন সাবেত থেকে বর্ণিত। হযরত জায়েদ বিন সাবেত e মসজিদের নি¤œাংশে রুকু করেন এমতাবস্থায় যে, তার মাথা থাকে কিবলামুখী। তারপর তিনি ডান দিকে আড়াআড়িভাবে চলতে থাকেন, তারপর এ রাকাত গণ্য করেন কাতারে শামিল হতে পারেন বা না পারেন। -তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-২১৬০, মাশকিলুর আসার, হাদীস নং-৪৮৫৭ আরো যেসব সাহাবাগণ e ও তাবেয়ীগণ এ মত পোষণ করেন

1. হযরত আবু উবায়দা e -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৬৩৮

2. হযরত জায়েদ বিন সাবেত e -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৬৩৯

3. হযরত আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের e -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৬৪১

4. হযরত উরওয়া e -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৬৪২

5. হযরত সাঈদ বিন জুবায়ের e -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৬৪৩

6. হযরত আবু সালামা e -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৬৪৪

7. আমর বিন তামীম। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৬৪৬

8. হযরত হিশাম ও হাসান বসরী i (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৬৪৭) প্রমুখ সাহাবা ও তাবেয়ীগণ। আরো হাদীস ও আসারে সাহাবার জন্য দ্রষ্টব্য- মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১/২৪৩, কিতাবুল আসার লিইমাম মুহাম্মদ-৩৪৭) জমহুর উলামাদের মত আল্লামা ইবনে রুশদ মালেকী i বলেনঃ الذى عليه الجمهور انه اذا ادرك الإمام قبل أن يرفع رأسه من الركوع وركع معه فهو مدرك للركعة وليس عليه قضائها জমহুরদের বক্তব্য হল, যদি ইমামের মাথা উঠানোর আগেই যদি কেউ ইমামকে রুকুতে পেয়ে যায়, তাহলে সে উক্ত রাকাত পেয়ে গেছে। আর তার উপর উক্ত রাকাতের কাযা আদায় করতে হবে না। -বিদায়াতুল মুজতাহিদ-১/১৫৮ প্রশ্নে উল্লেখিত দলীলের জবাব প্রশ্নে উল্লেখিত সর্ব প্রথম যে হাদীসের উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে। উক্ত হাদীসে আলোচ্য মাসআলার কোন স্পষ্ট উল্লেখই হয়নি। তাই এটি দিয়ে দলীল দেয়া কিছুতেই ঠিক নয়। কারণ হাদীসটিতে বলা হচ্ছে নামাযের যে অংশ পাওয়া না যায়, তা আদায় করার জন্য, আর যা পাওয়া যায়, তা না আদায়ের জন্য। কথাতো ঠিকই আছে। এটি আমাদের মতের বিরুদ্ধে দলীল হচ্ছে কিভাবে? আমরাতো রাসূল c এর হাদীস ও সাহাবাগণের আমলের ভিত্তিতে বলছি যে, রুকু পেলে রাকাত পেয়েছে, তাই তার কোন কিছু মূলত না পাওয়ার নেই। রুকু পেল মানেই হল কিয়াম পেল। অর্থাৎ সে যেন কিয়াম আদায় করল। যেখানে আদায় করা পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে না আদায় করার বিধান আরোপন কি ঠিক? তাই এ হাদীস দিয়ে দলীল দেয়াই ভুল। যেখানে আমাদের মতে পক্ষে হাদীস ও আসারে সাহাবা অসংখ্য। সেখানে দলীল ছাড়াই শুধু ইমাম বুখারী i এর নিজস্ব মতের উপর চলাটা কিছুতেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২৯ জানু, ২২