রাসূল ﷺ মাটির তৈরী না নূরের তৈরী

ইসলামী জিন্দেগীআকীদা২৩ ফেব, ২১

প্রশ্ন

রাসূল c মাটির তৈরী না নূরের তৈরী?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

হুযূর c মাটির তৈরী ছিলেন, নূরের তৈরী নয়। তবে তার মাটির শরীরের মধ্যে যথেষ্ট নূরের সংমিশ্রন ছিল। এটা মাটির তৈরী মানুষ জাতের হওয়ার পরিপন্থী নয়।

মানব জাতির প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, তারা পিতার ঔরসে মাতৃগর্ভে জন্মলাভ করে মাতৃদুগ্ধ পান করে, ধীরে ধীরে ছোট থেকে বড় হতে থাকে। পানাহার, নিদ্রা ও প্রস্রাব-পায়াখানার ইত্যাদির মত স্বাভাবিক ক্রিয়া কর্মের পাশাপাশি তারা জৈবিক চাহিদার কারণে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং এতে সন্তান-সন্ততির প্রজন্ম হয়ে থাকে। তারা সুখে যেমন হাসে, দুঃখে তেমন কাঁদে।

রোগ, শোক ও দুঃখ যেমন তাদের কাতর করে, তেমনি যাদু ও বিষের ক্রিয়া তাদের চরম কষ্ট দেয়। এমনকি মৃত্যুর দুয়ারে পর্যন্ত ঠেলে দেয়। আর এ সমস্ত মানবীয় বৈশিষ্ট্য কেবল মাটির তৈরী মানুষের বেলায়ই প্রযোজ্য। এখন এমন কেউকি আছেন, যিনি প্রমাণ করতে পারেন যে, মানবীয় এ সমস্ত বৈশিষ্ট্যের কোন একটি থেকেও হযরত মুহাম্মাদ c মুক্ত ছিলেন? কেউ পারবেন না। কারণ- তিনি তো মাটির তৈরী মানুষই ছিলেন। তার শরীরের ভিতর নূরের সংমিশ্রণ ছিল। কিন্তু তিনি নূরের তৈরী ছিলেন না। অধিকন্তু রাসূল c ছিলেন সমস্ত নবীগণের সরদার, সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব।

প্রমাণঃ

১. পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে- হে নবী! আপনি বলে দিন যে, আমি তোমাদের মত মানুষ জাতেরই একজন। তবে আমার নিকট ওহী আসে (এ ক্ষেত্রে আমি তোমাদের থেকে ব্যতিক্রম)। -সূরা কাহাফ ১১০ আল্লাহ পাক বলেন- “আর আমি মানুষকে মাটির সারাংশ (খাদ্যসার) হতে সৃষ্টি-করেছি।” -সূরাহ মু’মিনূন- ১২ আর হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যেহেতু মানুষ বলা জরুরী, তা না হলে, প্রথম আয়াত অস্বীকার করে কাফির হবে। আর যখন মানুষ বলা হল, তাহলে দ্বিতীয় আয়াত হিসেবে তাঁর মাটির তৈরী হওয়া জরুরীভাবে বিশ্বাস করতে হবে। তা না হলে দ্বিতীয় আয়াত অস্বীকার কারে কাফির হতে হবে। তাছাড়া সেক্ষেত্রে মানুষ যে আশরাফুল মাখলুকাত, তার থেকে নবী c বহির্ভূত হয়ে যাবেন, যা কখনও বাঞ্ছনীয় নয়। কাজেই তাঁকে যদি সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে স্বীকার করা হয, তাহলে তাঁকে মাটির তৈরী মানুষ হিসেবে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে।

২. সূরা আ‘রাফ ৬৯ নং আয়াত। হুদ ২৭ নং আয়াত। মু’মনিূন ৩৩ নং আয়াত, শুয়ারা ২৩নং আয়াত। উল্লেখিত আয়াতসমূহেও রাসূল c -এর মাটির তৈরী হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়।

৩. মিশকাত শরীফ ২য় খন্ড ২৫০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছেঃ হযরত আয়িশা e বলেন, “রাসূলুল্লাহ c একজন মানুষ ছিলেন।”

৪. বুখারী শরীফ ১ম খন্ড ৩৩২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ c বলেনঃ “নিশ্চয়ই আমি একজন মানুষ।” আর মানুষ মাটিরই হয়, নূরের হয় না। মহানবী c -এর শরীর মুবারক নূরের তৈরী ছিল এ ব্যাপারে কোন আয়াত বা সহীহ হাদীসে প্রমাণ পাওয়া যায় না।

তাই একথা অস্বীকার করা যায় না যে, মাটির তৈরী ছিলেন এবং মানুষ জাতের ছিলেন; মানুষ জাতের বাইরে ছিলেন না। তবে রুহানিয়্যতের মত শারীরিক বিভিন্ন দিক দিয়েও তিনি সাধারণ মানুষ থেকে ব্যতিক্রম ছিলেন। যেমন হযরত আনাস e থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ c -এর শরীরে জান্নাতী ৪০ জন লোকের সমপরিমাণ শক্তি ছিল ইত্যাদি (সুবহানাল্লাহ)। আর রাসূল হিসেবে তার মর্যাদা তো সকল নবী ও রাসূলের ঊধ্বেং ছিল। বিভিন্ন আয়াতে বা হাদীসে নবী c -কে “নূর” বলা হয়েছে, এর দ্বারা উদ্যেশ্য হল- তিনি হিদায়াতের নূর ও পথ প্রদর্শনের জ্যোতি ছিলেন।

নবী c -এর নূরকে যারা আল্লাহর জাতের নূরের অংশ মনে করে, তাদের এ আকীদা শিরকের পর্যায়ভুক্ত। সুতরাং যে ব্যক্তি ‘রাসূল c নূরের তৈরী’ এ আকীদা পোষণ করবে সে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত থেকে খারিজ হয়ে যাবে।

- والله اعلم باالصواب -

সূত্র

  • খাইরুল ফাতাওয়া, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ১৩৭

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২৩ ফেব, ২১