রমজানে তাহাজ্জুদের জামাত পড়ার হুকুম কী

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসনামায১৪ মে, ২১

প্রশ্ন

রাসূল c তো রমজান মাসে তাহাজ্জুদ নামাজ জামাতে পড়তেন সাহাবাদেরকে নিয়ে, উম্মতের জন্য কি তাহাজ্জুদ নামাজ জামাতে পড়া জায়েয আছে?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

রাসূল c রমজান মাসে তাহাজ্জুদ নামায জামাতের সাথে পড়েছেন মর্মের কথাটি সঠিক নয়। রাসূল c রমজান মাসে শুধু তারাবীহ নামায জামাতের সাথে আদায় করেছেন। বুখারী শরীফসহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে মসজিদে এসে রাসূল c এর সাহাবাগণের সাথে যে নামায পড়েছিলেন তিন দিন। মুহাদ্দিসগণ ও ফুক্বাহায়ে কেরামের বক্তব্য অনুপাতে তা তারাবীহ নামায ছিল। তাহাজ্জুদ নামায নয়।

এ কারণেই ফুক্বহায়ে কেরামগণ বলেছেন রমজানের তারাবীহ ছাড়া অন্যান্য নফল, চাই তা তাহাজ্জুদ হোক বা অন্য নামায তা জামাতে পড়া মাকরূহ। তবে যদি ইমাম ছাড়া দুইজন হয়, তাহলে জায়েজ আছে। কিন্তু তিনজন হলে মতভেদ আছে। বাকি ইমাম ছাড়া তিন হয়ে গেলে তা সর্বসম্মত মতানুসারে মাকরূহ। তাই তিনের অধিক ব্যক্তিসহ তারাবীর জামাত মাকরূহ।

আর تداعى তথা ডেকে একত্র করে জামাতের সাথে তাহাজ্জুদ পড়লেতো অবশ্যই মাকরূহ। ডেকে একত্র করার অর্থ এও যে, তিনজনের বেশি মুসল্লি হয়ে যাওয়া। সেই সাথে এভাবে জামাত পড়া বিদআতও হবে।

যে কাজ রাসূল c ও সাহাবাগণ এবং তাবেয়ীগণ করেননি, সেটিকে রাসূল c এর সুন্নত মনে করে পড়া বিদআত। -ফাতওয়া উসমানী, ১/৪৪৪-৪৫৮

তাহাজ্জুদের জামাতকে মাকরূহ আখ্যাদান করে ফাতওয়া প্রদান করেছেন উলামায়ে দেওবন্দের শিরোমণি মুফতীগণ!

১. ফাতাওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ, ৪/২২২-২২৪

২. ফাতাওয়া মাহমূদিয়া, ১১/৩০৫-৩০৮

৩. ফাতাওয়া রহীমিয়া, ৫/২১৭-২১৯

৪. আহসানুল ফাতওয়া, ৩/৪৯৩

৫. ফাতাওয়া হক্কানিয়া, ৩/২৫৯

৬. নিজামুল ফাতাওয়া, ৬/১/৩৩

৭. ইমদাদুল আহকাম, ২/২২৫

৮. ফাতাওয়া উসমানী, ১/৪৪৪-৪৫৮

৯. কিতাবুল ফাতাওয়া, ২/৩৭০-৩৭১

শাইখুল ইসলাম সাইয়্যেদ হুসাইন আহমাদ মাদানী i কেন তাহাজ্জুদের জামাত পড়তেন? যারা আরবী বুঝেন, তারা ফিক্বহের কিতাবের আরবী ইবারত দ্বারাই পরিস্কার হয়ে গেছেন যে, উলামায়ে আহনাফের নিকট তাহাজ্জুদের জামাত মাকরূহ। সেই সাথে উলামায়ে দেওবন্দের সকল মুফতীগণও একই মত পোষণ করেন।

প্রশ্ন হল, উলামায়ে দেওবন্দের একজন শিরোমণি আলেম, শাইখুল ইসলাম সাইয়্যেদ হুসাইন আহমাদ মাদানী i কেন রমজান মাসে তাহাজ্জুদ নামাযের জামাত পড়তেন? এর দু’টি জবাব দেয়া যায়ঃ

১. সাইয়্যেদ হুসাইন আহমাদ মাদানী নাওয়ারাল্লাহু মারকাদাহু একজন বিজ্ঞ মুহাক্কিক আলেম ছিলেন। তার নিকট দলীলের আলোকে রমজানে তাহাজ্জুদ পড়া প্রমাণিত মনে হয়েছে। তাই তিনি পড়েছেন। এটি হযরতের একটি “তাফাররুদ” তথা ব্যক্তিগত আমল। তিনি মুহাক্কিক আলেম ছিলেন, তাই এটি তার ব্যক্তিগত বিষয় হিসেবে রাখতে হবে। এর দ্বারা দলীল পেশ করা যৌক্তিক নয়। বাকি জমহুর এটিকে মাকরূহ বলেছেন। তাই আমরাও এটিকে মাকরূহ মনে করি।

২. হযরত তাহাজ্জুদ নামাযের গুরুত্ব তার অনুসারীদের কাছে বুঝানোর জন্য তিনি তাহাজ্জুদ জামাতে পড়েছেন। সুন্নাহ মনে করে নয়।

- والله اعلم باالصواب -

সূত্র

  • طحطاوى على مراقى الفلاح, পৃষ্ঠা: ৩১৩
  • حلبى كبيرى, পৃষ্ঠা: ৪০৮
  • رد المحتار, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৫০০
  • رد المحتار, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৪৮

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১৪ মে, ২১