মৃত্যুর পর ধুমধাম করে খাওয়া-দাওয়ার অনুষ্ঠান করা

ইসলামী জিন্দেগীমৃত্যু ও আনুষঙ্গিক২২ ফেব, ২১

প্রশ্ন

পিতা-মাতা বা আত্মীয়-স্বজনদের মৃত্যুর পর বর্তমানে যে সাক্ষাতকারীদের কয়েকদিন পর্যন্ত খাওয়ানো হয় বা ধুমধাম করে গরীব-ধনী সকলকে দাওয়াত করে খাওয়ানো হয়, শরী‘আতে তা জায়িয কি-না ?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

এখানে দু’টি বিষয় লক্ষণীয়, একটি হচ্ছে মৃত ব্যক্তির পরিবার পরিজনকে সান্তনা দিতে বা তাদের প্রতি সমবেদনা জানাতে যারা আসে তাদেরকে মৃত ব্যক্তির বাড়িতেই খানা খাওয়ানো। আর অপরটি হচ্ছে ঈসালে সাওয়াবের নামে অনুষ্ঠান করে লোকদেরকে খাওয়ানো।

প্রথমটির ব্যাপারে শরী‘আতের হুকুম হল কারো মৃত্যুর পরপরই তার পরিবার পরিজনদের কাছে যেয়ে তাদের প্রতি সমবেদনা জানানো। বিভিন্ন সান্তনার বাণী শুনানো, এটা বড় সাওয়াবের কাজ। অবশ্য উযর থাকলে বিলম্বেও যেতে পারে। আর সান্তনা সমবেদনা জানাতে যারা আসবে তারা নিজেরাই মৃত ব্যক্তির পরিবারের জন্যে খানাদানা তৈরি করে নিয়ে আসা সুন্নাত।

কিন্তু আজকাল আমাদের দেশে বদ রুসুম হয়ে গেছে যে, আত্মীয়-স্বজন যারা সান্তনা দেয়ার জন্য আসে তাদেরকে মৃত ব্যক্তির ঘর থেকেই দাওয়াতের ন্যায় খানা পাকিয়ে খাওয়ানো হয়, এটা মাকরূহ ও নাজায়িয।

আর ঈসালে সাওয়াবের নামে আমাদের দেশে অনেক গর্হিত কাজ রয়েছে, যা শরী‘আতের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বিদ‘আত ও মনগড়া। নির্দিষ্ট কোন দিন তারিখ, যেমন ত্রিশা, চল্লিশা ইত্যাদি উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজন, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সহ ধনী-গরীব সকলের জন্যে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা, টাকার ‍বিনিময়ে কুরআন শরীফ খতম করানো, মৃত ব্যক্তির সম্পদ বন্টন না করে ইয়াতিমদের সম্পদ থেকে দান-খয়রাত করা ইত্যাদি। এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন ও তাতে যোগদান করা উভয়টাই বিদ‘আত ও নাজায়িয।

বরং সাওয়াব রিসানীর সহীহ তরীকা হচ্ছে মৃতব্যক্তির ওয়ারিসগণ ব্যক্তিগতভাবে সাওয়াব পৌছানোর নিয়্যতে সময়ে সময়ে কুরআন খতম করে দু‘আ- দরুদ পাঠ করে বা নামায পড়ে সাওয়াব রিসানী করে দিবে। আর যখন যার সামর্থ হয়, নিজের মাল দ্বারা গরীব-মিসকীন, ইয়াতিম-অসহায়দের খানা খাওয়াবে, কাপড়-চোপড়, টাকা-পয়সা ইত্যাদি দান করবে। আর মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে সদকায়ে জারিয়াহ সহ অন্যান্য নেক কাজ করে তাকে সাওয়াব রিসানী করতে থাকবে।

- والله اعلم باالصواب -

সূত্র

  • আহসানুল ফাতাওয়া, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৩৬১
  • ফাতাওয়ায়ে শামী, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ২৪০

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২২ ফেব, ২১