মৃত ব্যক্তির পেনশন ও সমুদয় সম্পদ স্ত্রী সন্তান ও ভাইদের মাঝে বন্টন করা প্রসঙ্গে

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসহেবা-ফারায়েজ২৩ মে, ২১

প্রশ্ন

১. স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর চাকুরীর পেনশনের শরীয়ত সম্মত মালিক কে? শুধু স্ত্রী নাকি সন্তানরা? উল্লেখ্য পেনশন শুধু মৃতের স্ত্রী যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন পাবে। অর্থাৎ‍ মৃতের স্ত্রীর জীবিত বা মৃত্যুর সাথে পেনশনের শর্ত।

২. “মৃতের পরিত্যক্ত সম্পত্তির আয় (বাড়ি ভাড়া দিয়ে প্রাপ্ত টাকা ও চাকুরীর এককালীন টাকা) থেকে তাঁর ভরণ পোষণে অক্ষম সন্তানদের (৩জন) ব্যয় নির্বাহ করা যাবে কিনা (উল্লেখ্য সন্তান মোট ৫জন, ২জন সক্ষম।)? অর্থাত্‍ ঐ ৩ জনের (পড়ালেখা,বোনের বিবাহ) খরচ কি আয়ের যতটুকু তাদের প্রাপ্য তা থেকেই তাঁদের জন্য খরচ করতে হবে নাকি আয় বণ্টন না করেই পিতার মতো মা ই পিতার অবর্তমানে মোট আয় থেকেই যখন যার যতটুকু প্রয়োজন সবার জন্য খরচ করতে পারবে? যেহেতু সন্তানদের কেউই আয়কে বণ্টনের কথা বলে নি।”

সারসংক্ষেপ– মৃতের ছেলে ৩জন সবাই অবিবাহিত। মেয়ে ২ জন। একজন বিবাহিত। মৃতের বিবি ১ জন। মৃতের বাবা মা দাদা দাদী নানা নানী কেউ নেই। মৃতের বোন নেই। মৃতের ৭০ উর্ধ্ব আপন ১ ভাই আছে।

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

মৌলিকভাবে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করার সাথে মৃত ব্যক্তির সম্পদের মালিক তার জিবীত ওয়ারিসগণ হয়ে যায়। কে কতটুকু পাবে, তা শরীয়ত পরিস্কার ভাষায় কুরআন ও হাদীসে বলে দেয়া আছে। যারা ওয়ারিস তথা মৃতের সম্পদের যারা হকদার তারা যদি সম্পদ ভাগ না করে সবাই মিলেমিশে ব্যবহার করতে চায়, তাহলে এতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু একজনও যদি রাজি না থাকে, তাহলে অন্যদের জন্য তার সম্পদ আলাদা না করে দিয়ে সবার মধ্যে সমভাবে বা কমবেশি করে খরচ করা জায়েজ হবে না। মৃতের সম্পদের মাঝে ব্যবসায়িক সম্পত্তি, স্থাবর সম্পত্তি, নগদ অর্থ ও ব্যাংক ব্যালেন্স এবং পেনশন সবই শামিল। উক্ত বক্তব্যের আলোকে আশা করি স্পষ্ট হয়েছে যে, মৃত স্বামীর স্ত্রী সম্পত্তিতে কতটুকু হস্তক্ষেপের অধিকার বহন করে? এবার জেনে নিন মৃত ব্যক্তির জিবীত আত্মীয় স্বজন কে কতটুকু অংশ পাবে?

আরেকটি মূলনীতি মনে রাখবেন, ব্যক্তি মৃত্যুর সময় নিকত্মীয় যারা জীবিত থাকে, তাদের সাথেই কেবল মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির হক সম্পৃক্ত হয়। উক্ত ব্যক্তির আগে যারা ইন্তেকাল করেছেন, তারা এ ব্যক্তি থেকে কিছুই পাবে না। প্রশ্নে উল্লেখিত বর্ণনায় মৃত ব্যক্তি মৃত্যুর সময় রেখে যাওয়া নিকটাত্মীয় হল- স্ত্রী- ১জন। ছেলে-৩জন। মেয়ে- ২জন। আপন ভাই-১জন। ছেলে জীবিত থাকতে আপন ভাই মৃত ব্যক্তি থেকে কোন কিছু পায় না। তাই ভাই কিছুই পাবে না। আর বাকি স্ত্রী, তিন ছেলে আর মেয়ের মাঝে পূর্ণ সম্পত্তি এভাবে বন্টন করবে যে, প্রথমে স্ত্রী পাবে পূর্ণ সম্পত্তি (স্থাবর, অস্থাবর, নগদ অর্থ এবং ব্যাংকে রাখা টাকা ও পেনশনের টাকা) এর আট শতাংশ তথা আট ভাগের এক ভাগ। এক্ষেত্রে স্মর্তব্য যে, যদি মৃত ব্যক্তির পেনশন শুধু স্ত্রীর নামেই লিখে গিয়ে থাকে, বা পেনশনের টাকাটি শুধু স্ত্রীর জন্যই কোম্পানী বরাদ্দ কওে থাকে, তাহলে উক্ত পেনশনের টাকায় অন্য কেউ অংশিদার হবে না। শুধু স্ত্রীই এর মালিক হবে। তারপর বাকি যে সম্পত্তি থাকবে, তাকে চার ভাগে ভাগ করতে হবে। সেই চার ভাগের তিন ভাগ পাবে তিন ভাই। আর এক ভাগ পাবে দুই বোন।

দলীলঃ وَلَهُنَّ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْتُمْ إِن لَّمْ يَكُن لَّكُمْ وَلَدٌ ۚ فَإِن كَانَ لَكُمْ وَلَدٌ فَلَهُنَّ الثُّمُنُ مِمَّا تَرَكْتُم ۚ مِّن بَعْدِ وَصِيَّةٍ تُوصُونَ بِهَا أَوْ دَيْنٍ ۗ • স্ত্রীদের জন্যে এক-চতুর্থাংশ হবে ঐ সম্পত্তির, যা তোমরা ছেড়ে যাও যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে, তবে তাদের জন্যে হবে ঐ সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ, যা তোমরা ছেড়ে যাও ওছিয়্যতের পর, যা তোমরা কর এবং ঋণ পরিশোধের পর। -সূরা নিসা-১২ يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلَادِكُمْ ۖ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنثَيَيْنِ ۚ • আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেনঃ একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান। -সূরা নিসা-১১

- والله اعلم باالصواب -

সূত্র

  • السرجى فى الميراث, পৃষ্ঠা: ১৭

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২৩ মে, ২১