মাসিকের সময় কুরআন তিলাওয়াত করা যাবে কি না একটি দালিলিক বিশ্লেষণ

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসজায়েয-নাজায়েয৯ জানু, ২২

প্রশ্ন

মাসিকের সময়ে কি কুরআন তিলাওয়াত করা যাবে? আমি বেশ কিছুদিন যাবত ফেইসবুকে উপরোক্ত বিষয়ে কিছু পোস্ট দেখে বিব্রত বোধ করছি। তাই এই বিষয়টি নিয়ে আপনি যদি বিস্তারিত লিখে জানান তাহলে খুব ভাল হয়। রেফারেন্স হিসেবে লিখাটি আমি এটাচ করে পাঠিয়েছি। লেখাটির পূর্ণ বিবরণ- বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। কুরআনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আমি খেয়াল করলাম যে এই একটা বিষয় নিয়ে আমরা আসলে খুব কম জানি। যা জানি, সেটাও সেই ছোটবেলায় মা চাচীর মুখে শোনা “ফতোয়া।” আসলে ব্যাপারটা কী, সেটা আমরা জানতে পারি না। তাই আমি যতটুকু জানি, বিভিন্ন জায়গা থেকে, সেটা তুলে ধরার চেষ্টা করছি। শেখ মুহাম্মাদ মুস্তাফা আল জিবালি তাঁর বই Worship during Menses এ বলেনঃ মাসিকের সময় কুরআন ধরাঃ এই বিষয়ে আলীমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। যারা নিষেধ করেন, তাঁরা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেনঃ

১. মুসহাফের ব্যাপারে, বাইন্ডিং সহ। -মুসহাফ হল যেটাতে শুধু কুরআনের টেক্সট থাকে ২মুসহাফ কিন্তু বাইন্ডিং ছাড়া।

৩. কুরআনের যেকোনো আয়াত, এক বা একের অধিক। এর মাঝে তাফসীর বা অনুবাদের বইগুলোও রয়েছে। কুরআন ধরা যাবে না, এর প্রমাণ পেশ করা হয় কুরআনের একটি আয়াত দ্বারাঃ নিশ্চয় এটা সম্মানিত কুরআন, যা আছে এক গোপন কিতাবে, যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না। -সূরা আল অয়াকিয়াঃ ৭৭-৭৯ যারা বলেন যে কুরআন মাসিকের সময় ধরা যাবে, তাঁরা বলেন যে, এই আয়াত নিম্ন লিখিত কারণে প্রমাণ হিসেবে পেশ করা যাবে নাঃ ১এই আয়াতে “গোপন কিতাব” বলতে যেই কিতাবকে বুঝানো হয়েছে, সেটা হল “আল লাওহ আল মাহফুজ” যা কিনা আমাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ইমাম মালিক বলেছেন যে এর সবচেয়ে উত্তম ব্যাখ্যা যা তিনি শুনেছেন তা হল, (It is) in Records held (greatly) in honour (Al-Lauh Al-Mahfuz). Exalted (in dignity), purified, In the hands of scribes (angels). Honourable and obedient. -সূরা আবাসাঃ ১৩-১৬

২. এই আয়াতে পাক পবিত্র মানুষের কথা আসেনি। এখানে ফেরেশতাদের কথা বলা হয়েছে। “mutahharun –the purified” টার্মটা কোনও মানুষের জন্য প্রযোজ্য নয় এই পৃথিবীতে। মানুষের জন্য প্রযোজ্য “mutahhirun– purify themselves” যেমন আল্লাহ বলেছেনঃ …Truly, Allah loves those who turn unto Him in repentance and loves those who purify themselves সূরা আল বাকারা, ২২২ মানুষ স্বভাবগতভাবে পবিত্র না, যেমন কিনা ফেরেশতারা। মানুষ পবিত্রতা অর্জনের চেষ্টা করতে থাকে। সূরা আল ওয়াকিয়ার এই আয়াতগুলো সম্পর্কে ইবন কাসীর বলেছেনঃ Indeed, this Quran that has been revealed to Muhammad is surely a great book. It is dignified in a dignified Register that is preserved and respected. This Register–that is in Heaven– cannot be touched except by the purified Angels. This meaning was stated by Ibn Abbas, Anas, Mujahid, Ikrimah, Sa’d bin Jubair, Ad Dahhak, Abu ash-Shatha, ABu Nuhayk, As Suddi, Adb ur Rahman Bin Zayd Bin Aslam and others. আর শেখ আলবানি বলেছেনঃ This ayah is an informative sentence and not a command. Allah informs us that the Qur’an in al lawh al Mahfuz is only touched by the purified angels who are close to Him. As for the Mushaf, that is in our hands, it is touched by the righteous and evil, believers and non believers.

৩. এই আয়াতে আল লাওহ আর মাহফুজের মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে। কোনও বিধি নিষেধ রূপে আসেনি আয়াতটি। বলা হয়েছে “laa yamassuhu– not touched) বলা হয়নি (laa yamsashu– it may not be touched) ইবনুল কাইয়্যিম এই প্রসঙ্গে বলেছেনঃ “এই আয়াতটি informative, prohibitive না!” অনেক উলামা বলেন যে যদিও এই আয়াতে মুসহাফের কথা আসেনি, তবু যেহেতু আল লাওহ আল মাহফুজ কেবল ফেরেশতারা ধরেন, এই পৃথিবীর পবিত্র কিতাব কেবল এই পৃথিবীর পবিত্র মানুষেরাই ধরবে। আমাদের উত্তর হল, এই একটি আয়াত দিয়ে আমরা শরিয়তের বিধি নিষেধ নির্ধারণ করতে পারি না। বড়জোর বলা যেতে পারে, কুরআন ধরার সময় অজু করাটা মুস্তাহাব। আরেকটি প্রমাণ যা পেশ করা হয় কুরআন না ধরার পক্ষে, তা হল আল্লাহর রাসুলের লেখা একটি চিঠির কথাঃ তহির ছাড়া আর কেউ কুরআন ধরবে না। এর বিপক্ষে যারা তাঁরা বলেন, ১. শেখ আলবানির মতে, এই হাদিসের প্রতিটি narration দুর্বল। কিন্তু এমন প্রমাণ পাওয়া যায়না যে কোনও বর্ণনাকারী মিথ্যাবাদী। তাই এটাকে গ্রহণ করার দিকেই বেশী মত দিয়েছেন তিনি। এটা প্রমাণ করে যে এই হাদিস অনেকেই দুর্বল হাদিস হিসেবে বিবেচনা করেন। এটাকে তাই প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।

২. তহির কথাটার তিনটা পর্যায় আছেঃ ক) প্রতিটি মুমিনই পবিত্র (সর্ব নিম্ন পর্যায়) খ) এমন কেউ যে বড় অপবিত্রতা হতে পাক কিন্তু ছোট অপবিত্রতা হতে পাক না। গ) সেই মুমিন যে সকল দৈহিক অপবিত্রতা মুক্ত। এই হাদিসকে যদি প্রমাণ হিসেবে নেয়া হয়, তাহলে সেটা কোন পর্যায়ের তহিরের জন্য প্রযোজ্য তা কি কেউ বলতে পারে এই হাদিস থেকে?? নাজাস কথাটা মুশরিকদের জন্য এসেছে। O you who believe (in Allah’s Oneness and in His Messenger (Muhammad)! Verily, the Mushrikun (polytheists, pagans, idolaters, disbelievers in the Oneness of Allah, and in the Message of Muhammad) are Najasun (impure) . সূরা তাওবাঃ২৮ অপর পক্ষে, আল্লাহর রাসুল বলেছেন, সুবহানআল্লাহ একজন মুমিন কখনোই অপবিত্র নয়! (বুখারি) এই কথাটা এসেছিলো যখন আবু হুরাইরাহ তাঁকে কে বলেছেন যে “আমি আপনার কাছে বসতে চাইনি জানাবা থেকে মুক্ত হয়ে গোসল করার পূর্বে। আমি এই বইটি থেকে দুটি প্রমাণের যুক্তিখণ্ডন তুলে ধরলাম। কারণ আমরা যখন মাসিকের সময় কুরআন ধরতে বা পড়তে যাই, তখন এই দুটা প্রমাণ খুব বেশী করে তুলে ধরা হয়। বইটিতে আরও আছে আইশা হতে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল আল্লাহর কথা বলতেন যেকোনো সময়ে এবং যেকোনো অবস্থায়। -মুস্লিম, ৩৭৩ ** এখানে আরবিতে এসেছে যে আল্লাহর কথা “জিকির” করতেন (mention করা অর্থে)। আর আল্লাহর কথা বলা আর কিছুর চেয়ে বেশী আসে কুরআনের কথা বলার ব্যাপারে, কারণ আল্লাহ বলেছেন, আইশা এই হাদিসে সব রকমের জিকির করাকেই বুঝিয়েছেন। আমরা কেন ধরে নেব যে এটা কুরআনের জন্য প্রযোজ্য নয়?? মাসিকের সময় মেয়েদের জন্য বিশেষ অনুমতিঃ শেখ আলবানি এ প্রসঙ্গে তাঁর আলচনায় বলেনঃ একজন মেয়ে এই সময় কী করবে? আমরা কি তাকে নিষেধ করবো এই সময় কুরআন পড়তে এবং তার অন্তরকে আলোকিত করতে? আমরা কি তাকে ঘুমের আগে আয়াতুল কুরসি পড়ে নিজেকে শয়তানের হাত থেকে বাঁচাতে বাঁধা দিবো? ও কি সেই কদিন কিছুই পড়বে না?? না! ও তিলাওয়াত করবে!! …একজন মহিলা যখন জানাবার অবস্থায় থাকে, আমরা তাঁকে বলবো পবিত্র হয়ে নিতে যেমন কিনা আমরা একজন পুরুষকেও বলবো। কিন্তু মাসিকের সময় একজনকে আমরা এই কথা কিভাবে বলবো? আমরা জানি নামায রোজা ওরা এই সময়ে করতে পারে না। কিভাবে জানি?? নিজেরা বানিয়ে নিয়েছি কি এই কথা? না!! শরিয়াতে আছে স্পষ্টভাবে!! তাহলে কুরআন তিলাওয়াত নিষেধ এই সময়ে, সেটা আমরা কোথা থেকে নিচ্ছি যখন স্পষ্টভাবে বলা নেই কিছু? যদি বলেন নামাজ রোজার মতই এটাও নিষিদ্ধ তাহলে বলুন কেন রোজা আবার রাখতে হয় কিন্তু নামায আবার পড়তে হয় না পবিত্র হওয়ার পর? আমরা নিজেদের মনের দাবীতে চলবো না, আমরা সুন্নাহ কী বলে দেখবো। আইশা যখন বিদায় হজের সময় কাঁদছিলেন মাসিকে উপনীত হওয়ার দরুন, তখন আল্লাহর রাসুল বলেছেন এখানে তিনি নামায পড়তে নিষেধ করেছেন, তাওয়াফ করতেও। কিন্তু অন্যদের মত তিলাওয়াত করতে নিষেধ করেননি! উপরে যা কিছু লিখেছি, সবই সেই একটি বই থেকে নেয়া। এসব নিয়ে প্রচুর মতভেদ আছে। আমি পক্ষে বিপক্ষে পড়াশোনা করে যা বুঝেছি, তাতে আমি উপরের শেখদের মতামতটাই মেনে চলি। সৌদি আরবের কুরআন স্কুল গুলো দেখেছি, এমনকি মসজিদুন নববীতে দেখেছি, শিক্ষিকা, ছাত্রী সবাই এই অবস্থায় পড়ছে। পড়া যাবে এটা গ্রহণযোগ্য। ধরা যাবে কিনা, সে নিয়ে সবাই খুব সহজ উপায় বের করে নিয়েছে– হাত মোজা পরে ধরে। আর যারা তাফসীর এর বই থেকে পড়ে, তাঁরা হাত মোজা পরে না। আয়াতে হাত দেয় না, কিন্তু বই বা বইয়ের পাতা খালি হাতেই ধরে। আর পড়ছে তো সবাই। হিফজ করছে যারা, তাঁরা প্রতিদিন বিশাল একটা সময় ব্যয় করে কুরআন নিয়ে। অনলাইনে যখন আমি পড়েছি এই বিষয়ে, আমাদের শেখ আব্দুল ওহাব বলেছিলেন যে তাফসীর বা আরও যেকোনো বই যার মাঝে কুরআনের আয়াতের চেয়ে অন্য লেখা বেশী, সেটা যেকোনো অবস্থায় ধরা যাবে। আর কুরআন ওভাবে না ধরাই ভালো। ধরতে চাইলে হাত মোজা পরে ধরতে… তাহলে আর কোনও সমস্যা নেই। আরও জানতে চাইলে islamqa.com এই পেজে যেয়ে খুঁজে নিতে পারেন আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য। যেহেতু বিষয়টা ফিকহের, সাধারণ মানুষ হিসেবে কোনও একটা বেছে নেয়ার মাঝে ভয় লাগতেই পারে। কিন্তু আল্লাহ তো আমাদের অন্ধভাবে কিছু মেনে নিতে বলেননি! যুক্তি প্রমাণ পড়ে দেখার সুযোগ আমাদের আছে। কেন দেখবো না আমরা?? কোনোকিছু সবাই করে, শুনে আসছি মানেই তো তা ভুলের বাইরে না! একটা মেয়ের মাসে ৭-১০ দিন চলে যায় এই অবস্থায়। যদি সত্যিই কোনও পরিষ্কার বক্তব্যে কুরআনে বা হাদিসে এসে না থাকে যে “মাসিকের সময় কুরআন পড়া না জায়েজ” আর এই নিয়ে বড় বড় আলীমরা প্রমাণ দিয়ে বলে গিয়েছেন যে জায়েজ অথবা বলেছেন যে নাজায়েজ হওয়ার স্পষ্ট প্রমাণ নেই, তাহলে কেন আমরা মেয়েটার জন্য সবকিছু জটিল করে তুলবো?? সন্তান হওয়ার পর ৪০ টা দিন একটা মা কুরআন পড়বে না?? কেন আমরা সেই নিয়ম জারি করবো যখন স্পষ্ট প্রমাণ নেই কোনোকিছু নিষেধ করার?? তারপরও বলছি, যা কিছু বলেছি এখানে, আমার নিজের কথা না। তাই এ নিয়ে আরও প্রশ্ন থাকলে এর উত্তর আমি নিজে থেকে দিতে পারবো না। এ শুধু আমি যা জানি, সেটা জানানোর উদ্যোগ। অনেকে সঠিক যুক্তি না বুঝেই এতদিন কোনোকিছু মেনে এসেছি– তাই আমি যেটুকু জানতে পেরেছি, সেটুকু তুলে ধরার উদ্যোগ এটা। আর হয়ত ইনশাআল্লাহ এর মাধ্যমে অনেকের সমস্যার সমাধান হবে, আল্লাহ যেন কবুল করে নেন সেই নিয়ত। আমীন। এখানে তুলে ধরা প্রতিটি কথার রেফারেন্স আছে। যেহেতু বইটির নাম আগেই দিয়েছি, একটা একটা করে বাকি রেফারেন্স দেইনি। তবু যদি কেউ জানতে চান, তর্কের জন্য না, স্রেফ জানার জন্য, আমাকে আয়াত/হাদিস/বক্তব্যের অংশটুকু ইনবক্স করলে আমি বিস্তারিত রেফারেন্স জানিয়ে দিবো ইনশাআল্লাহ। এই হাদিসটি দুর্বল। বিস্তারিত দেখে নিনঃ http://islamqa.info/en/70438 **A’isha said:The Apostle of Allah () used to remember Allah at all moments.حَدَّثَنَا أَبُو كُرَيْبٍ، مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلاَءِ وَإِبْرَاهِيمُ بْنُ مُوسَى قَالاَ حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي زَائِدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ خَالِدِ بْنِ سَلَمَةَ، عَنِ الْبَهِيِّ، عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَذْكُرُ اللَّهَ عَلَى كُلِّ أَحْيَانِهِ . Reference : Sahih Muslim 373In-book reference : Book 3, Hadith 147USC-MSA web (English) reference : Book 3, Hadith 724(deprecated numbering scheme) সম্মানিত মুফতী সাহেব! কুরআন ও হাদীসে আলোকে উক্ত বিষয়টির সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

عن ابن عمر : عن النبي صلى الله عليه و سلم قال لا تقرأ الحائض ولا الجنب شيئا من القرآن (سنن الترمذى، ابواب الطهارات، باب ما جاء في الجنب والحائض : أنهما لا يقرأن القرآن، رقم الحديث-131 অনুবাদ-হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর e থেকে বর্ণিত। রাসূল c ইরশাদ করেছেন-ঋতুবতী মহিলা এবং গোসল ফরজ হওয়া ব্যক্তি কোরআন পড়বে না। সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৩১, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-৯৯১, মুসনাদুর রাবী, হাদীস নং-১১, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১০৯০, মুসন্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৩৮২৩ জাহিল আর মুর্খদের জন্য দ্বীনী বিষয়ের গবেষণার অধিকার আল্লাহ তাআলা দেননি। শুধুমাত্র নবী এবং মুজতাহিদকেদায়িত্ব দিয়েছেন গবেষণা করে সিদ্ধান্ত দিতে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে وَإِذَا جَاءَهُمْ أَمْرٌ مِّنَ الْأَمْنِ أَوِ الْخَوْفِ أَذَاعُوا بِهِ ۖ وَلَوْ رَدُّوهُ إِلَى الرَّسُولِ وَإِلَىٰ أُولِي الْأَمْرِ مِنْهُمْ لَعَلِمَهُ الَّذِينَ يَسْتَنبِطُونَهُ مِنْهُمْ ۗ وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ لَاتَّبَعْتُمُ الشَّيْطَانَ إِلَّا قَلِيلًا (٤:٨٣) আর যখন তাদের কছে পৌঁছে কোন সংবাদ শাস্তি সংক্রান্ত কিংবা ভয়ের, তখন তারা সেগুলোকে (যাচাই না করেই) রটিয়ে দেয়। তারা যদি তা রাসূল বা যারা কর্তৃত্বের অধিকারী তাদের কাছে নিয়ে যেত, তবে তাদের মধ্যে যারা তার তথ্য অনুসন্ধানী তারা তার বাস্তবতা জেনে নিত। -সূরা নিসা-৮৩ এ আয়াতে রাসূল c এবং গবেষক মুজতাহিদদের জন্য গবেষণাকে খাস করে দিয়েছেন। কারণ জাহেল ব্যক্তিরাও ধর্ম নিয়ে গবেষণা শুরু করে দিলে, কুরআনও হাদীসের বাহ্যিক অর্থ দেখেই ফাতওয়া দেয়া শুরু করলে ফলাফল কতটা ভয়াবহ হবে, উপরোক্ত উদ্ভট গবেষকের উর্বর গবেষণা এর জ্বলন্ত প্রমাণ। যারা সারাদিন কিয়াস করা হারাম হারাম বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন সেই সব কথিত আহলে হাদীসরা যখন স্পষ্ট আয়াত ও হাদীস রেখে ¯্রফে যুক্তির উপর নির্ভর করে এ মাসআলাকে বিকৃত করার অপচেষ্টা করে থাকে, তখন শুধু অবাকই হই। অনেকগুলো বিষয় সম্পর্কে অজ্ঞতা আর মুর্খতার কারণে উক্ত গবেষকের গবেষণাটি অস্তিত্ব লাভ হয়েছে। আমরা সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি- আরবী ব্যকরণ সম্পর্কে অজ্ঞতা কুরআন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পবিত্র কালাম। এ পবিত্র কালাম কোন অপবিত্রের জন্য ধরা জায়েজ নেই। এ বিধান মুসলমানদের জন্য। যেমন নামায রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদির বিধান মুসলমানদের জন্য। এ বিধান বিধর্মী ব্যক্তি পালন নাও করতে পারে। কিন্তু মুসলমানদের জন্য এ বিধান লঙ্ঘণ করার কোন সুযোগ নেই। কুরআন স্পর্শ করতে হলে পবিত্র থাকতে হবে। অপবিত্র অবস্থায় কোন মুসলমানের জন্য কুরআন স্পর্শ জায়েজ নয়। যদি নিজেকে মুসলিম দাবি করে নিজেকে অমুসলিমের মতই মনে করে থাকে, তাহলে তার জন্য ভিন্ন কথা। এ বিষয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন- لَّا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ(٥٦:٧٩) যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না। -সূরা ওয়াকিয়া-৭৯ অর্থ উক্ত আয়াতের শব্দেই স্পষ্ট। আরো স্পষ্ট হতে এ আয়াতের পূর্বের আয়াতের দিকে দৃষ্টি দেই- إِنَّهُ لَقُرْآنٌ كَرِيمٌ (٥٦:٧٧) فِي كِتَابٍ مَّكْنُونٍ (٥٦:٧٨) নিশ্চয় এটা সম্মাণিত কুরআন। যা আছে এক গোপন কিতাবে (সূরা ওয়াকিয়া-৭৭-৭৮) একথা বলার পরই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআন স্পর্শ করার আদবের প্রতি নির্দেশ দিয়ে আরবী ব্যাকরণের মুজারে’ তথা বর্তমান ও ভবিষ্যতকালীন অর্থবোধক ক্রিয়া ব্যবহার করে বলেন- যারা পাক পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করছে না এবং করবে না। কিন্তু لَّا يَمَسُّهُ এর অনুবাদ “স্পর্শ করতে পারে না” করাটা আরবী ব্যকরণ সম্পর্কে চূড়ান্ত মুর্খতা ছাড়া কিছু নয়। কোথায় ভবিষ্যত অর্থবোধক শব্দ আর কোথায় অতীত কালীন শব্দ “পারে না”। একেই বলে আদার বেপারী জাহাজের খবর নেয়। এ বিষয়ের হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞতা হাদীসে এসেছে- عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرِ بْنِ حَزْمٍ أَنَّ فِي الْكِتَابِ الَّذِي كَتَبَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَمْرِو بْنِ حَزْمٍ أَنْ لَا يَمَسَّ الْقُرْآنَ إِلَّا طَاهِرٌ হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবু বকর বিন হাযম বলেনঃ রাসূল c আমর বিন হাযম এর কাছে এই মর্মে চিঠি লিখেছিলেন যে, পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন কেউ স্পর্শ করবে না”। -মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৬৮০, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২৮৩০, মারেফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং-২০৯, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১৩২১৭, আল মুজামুস সাগীর, হাদীস নং-১১৬২, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং-৪৬৫, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২২৬৬ মুয়াত্তা মালিকে বর্ণিত এ সহীহ হাদীসকেও গবেষক সাহেব আলবানী i এর একটি ভুল গবেষণার উপর ভিত্তি করে বাদ দিয়ে দিতে চাচ্ছেন। অথচ সমস্ত মুহাদ্দিসীনে কেরাম এ ব্যপারে একমত যে, মুয়াত্তা মালিকের সকল হাদীসই সহীহ। এবার আসুন দেখি মুহাদ্দিসীনে কেরাম উক্ত হাদীসের ব্যাপারে কী মন্তব্য করেছেন?- ১ হযরত ইমাম আহমাদ i বলেন, আমার ধারণা মতে উক্ত হাদীসটি সহীহ। -তানকীহ তাহকীকুল তালীক-১/১৩১ ২ ইমাম দারেমী i বলেন, সনদটি হাসান। -সুনানে কুবরা, লিলবায়হাকী-৪/৮৯ ৩ আবু যুরআ রাজী i বলেন, সনদটি হাসান।

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ৯ জানু, ২২