মারেফত ও পীর মুরীদী প্রসঙ্গে জরুরী জ্ঞাতব্য

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসআকীদা১৩ এপ্রিল, ২৩

প্রশ্ন

১.মারেফাত কি? মারেফাতে বিশ্বাস রাখা কি জায়েয? ২. পীর-ফকির মানা যাবে কি? বাংলাদেশের বর্তমান হক্বানী পীর কেউ আছেন কি? ৩. চার ত্বরীকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই!

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

১ম প্রশ্নের জবাব মারেফত শব্দটি আরবী। যার অর্থ হল, পরিচয়। মৌলিকভাবে মারেফতের পরিচয় তাই, যা হাদীসে জিবরাঈলে “ইহসান” এর পরিচয়ে উদ্ধৃত। তথা- যখন হযরত জিবরাঈল রাসূল c কে জিজ্ঞাসা করেন, قَالَ: فَمَا الْإِحْسَانُ؟ قَالَ: ” أَنْ تَعْمَلَ لِلَّهِ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ ” “ ইহসান কি?” তখন রাসূল c জবাবে বলেন, তুমি রবের ইবাদত এভাবে কর যে, যেন তুমি আল্লাহকে দেখ, যদি তাকে দেখতে না পাও, তাহলে অন্তত তিনিতো তোমাকে দেখছেন”। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৩৬৭, সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৮ আল্লাহ তাআলার এতটুকু নৈকট্য অর্জন করা যে, যেন আল্লাহকে দেখার মত ভয়, মোহাব্বত মনে জাগরুক হয়, কিংবা অন্তত ইবাদতের সময় আল্লাহ দেখছেন এমন ভয় ও মোহাব্বত আল্লাহর প্রতি সৃষ্টির নামই মারেফত বা আল্লাহর পরিচয় লাভ। এই মারেফাতে বিশ্বাস রাখার কথা হাদীসেই উদ্ধৃত। সুতরাং এটি নাজায়েজ হওয়ার কোন প্রশ্নই উঠে না। কিন্তু কথা হল, তথাকথিত মারেফাতের ব্যাপারে। যারা শরীয়তের বিধান লঙ্ঘণ করে, ইবাদত না করে বাতেনী ইবাদতকে মারেফাত বলে মিথ্যাচার করে বেড়ায় সেসব ব্যক্তিদের কথিত মারেফতকে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নাজিলকৃত বস্তু মনে করা হারাম। ভন্ড পীর ফকীরদের মারেফত আসলে মারেফত নয়, জাহান্নামে যাওয়ার পথ। যে ব্যক্তির নিজের মাঝেই আল্লাহ তাআলার বিধান ও রাসূল c এর সুন্নত নেই, উক্ত ব্যক্তি কি করে অন্য ব্যক্তিদের আল্লাহ তাআলার সাথে মারেফত বা পরিচয় করিয়ে দিবে? সেতো নিজেই আল্লাহ তাআলাকে চিনে না। তাই শরীয়তের বিধান লঙ্ঘণকারী কথিত মারেফতীদের বিশ্বাস করা জায়েজ নেই। ২ নং এর জবাব পীর ফকীর বলতে আপনি কাদের বুঝাচ্ছেন? আপনার প্রশ্নটি আম প্রশ্ন। আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, শিক্ষককে মানা যাবে কি না? যদি প্রশ্ন করা হয়, মুরুব্বীকে মানা যাবে কি না? যদি প্রশ্ন করা হয়, বড়দের মানা যাবে কি না? আপনি কি জবাব দিবেন? মানা যাবে বলে দিবেন? না ব্যাখ্যা সাপেক্ষে বলবেন? নিশ্চয় ব্যাখ্যা সাপেক্ষে বলবেন। আপনার নিশ্চয় বলতে হবে যে, পরিমল দাসের মত লম্পট শিক্ষকদের কথা মানা যাবে না। সুশিক্ষিত, মার্জিত, উত্তম চরিত্রবান ও দুনিয়া-আখেরাতে কল্যাণকামী শিক্ষকের কথা মানা যাবে। বিদআত ও শিরকে লিপ্ত, জাহান্নামের পথে আহবানকারী মুরুব্বীর কথা মানা যাবে না, হেদায়াতপ্রাপ্ত, বিদআতমুক্ত, জান্নাতের পথে আহবানকারী কল্যাণকামী মুরুব্বীর কথা মানা যাবে। একই কথা প্রযোজ্য বড়দের ক্ষেত্রে। যদি তারা দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য কল্যাণের দিকে ডাকেন, তাহলে তাদের কথা মানা যাবে, আর যদি দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য ক্ষতিকর হন, তাহলে তাদের কথা মানা যাবে না। তেমনি একই কথা পীর মাশায়েখ সম্পর্কে। যদি পীর হক্কানী পীর হোন। যদি পীরের মাঝে শরীয়তের পরিপূর্ণ পাবন্দী থাকে। বিদআত, শিরক, কবরপূজা, মাজারপূজা, বাউল গান, বেপর্দা, গান-বাজনাসহ কুরআন ও হাদীস বিরোধী মতবাদ, রূসুমাত, রীতিনীতি মুক্ত থেকে আল্লাহ তাআলার বিধান ও রাসূল c এর সুন্নতের পরিপূর্ণ পাবন্দ হোন, তাহলে উক্ত পীর মাশায়েখকে মানতে কোন সমস্যা নেই। তবে এক্ষেত্রেও ভক্তির নামে অতিরঞ্জন করা জায়েজ নয়। পীরকে নাজাতের উসীলা মনে করা শিরক ও কুফরী। পীর দুআ কবুল করতে পারে বিশ্বাস করা শিরক ও কুফুরী। পীর আখেরাতে পুলসিরাত পাড় করে দিবে বিশ্বাস করা শিরক ও কুফরী। পীর কবরে এসে ফেরেস্তার সওয়ালের জওয়াব দিয়ে দিবে বিশ্বাস করা শিরক ও কুফরী। আশরাফ আলী থানবী i পীর মুরীদির বিষয়ে পরিস্কার ভাষায় বলেছেন যে, পীরের কাছে বাইয়াত হওয়ার বিষয়টি সর্বোচ্চ মুস্তাহাবের পর্যায়ে। কাজেই এটিকে কাজে-বিশ্বাসে অধিক মর্যাদা দেয়া, যেমন বাইআতকে নাজাতের শর্ত মনে করা অথবা বাইআত পরিত্যাগকারীকে তিরস্কার করা এ সবই বিদআত ও দ্বীনী বিষয়ে সীমালঙ্ঘণ ছাড়া কিছু নয়। -ইমদাদুল ফাতওয়া-৫/২৩৭-২৩৮ পীরের কাছে বাইআত হতেই হবে, এছাড়া আখেরাতে মুক্তি নেই বিশ্বাস করা জায়েজ নেই। সুষ্পষ্ট গোমরাহীর নিদর্শন এমন বক্তব্য দেয়া। বর্তমান বাংলাদেশে হক্কানী পীর মাশায়েখ যেমন আছেন। তেমনি পীরের নামে ভন্ড ও ঈমান বিধ্বংসী পীর ফকীরেরও অভাব নেই। ভন্ড পীরদের মাঝে অন্যতম হল-

1. মাইজভান্ডারীর সকল পীর।

2. দেওয়ানবাগী।

3. সুরেশ্বরী পীর।

4. আটরশীর পীর।

5. কুতুববাগী।

6. রাজারবাগী।

7. সায়দাবাদী।

8. চন্দ্রপুরী।

9. কেল্লাবাবা। ১০- মাজার ও উরসকেন্দ্রীক সকল পীরসহ আরো অনেকে। হক্কানী পীর মাশায়েখদের মাঝে রয়েছেন–

1. সাইয়্যেদ হুসাইন আহমাদ মাদানী i এর খলীফাগণ।

2. হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী i এর খলীফাগণ।

3. সাইয়্যেদ আস’আদ মাদানী i এর খলীফাগণ।

4. হাকীম আখতার i এর খলীফাগণ।

5. হারদুই i এর খলীফাগণ।

6. চরমোনাইয়ের পীর।

7. মুফতী আহমদ শফী দা.বা.।

8. মাওলানা আব্দুল মতীন দা.বা. ঢালকানগর মাদরাসা।

9. মাওলানা ইদ্রিস শায়েখে সন্দিপী i এর খলীফাগণ। ১০- হাফেজ্জী হুজুর i এর খলীফাগণ। ১১- উজানীর পীর। ১২- মাওলানা আব্দুল হামীদ মধুপুর। এছাড়া আরো অনেক পীর মাশায়েখ রয়েছেন আমাদের দেশে। যারা মাজারপূজা, কবরপূজা, পীরপূজা ও বাউলগান, গান-বাজনা করার শিক্ষা নয়, বরং আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্বের দিকে আহবান করেন। আপনার নিকটস্থ কোন কওমী মাদরাসার ফারিগ আলেম থেকে জেনে নিন আপনার জন্য উপকারী মুর্শীদ কে হতে পারে? তবে আগেই আমরা বলেছি আখেরাতে নাজাতের জন্য মুরীদ হওয়া শর্ত নয়। এমনটি মনে করা গোমরাহী। আল্লাহর বিধান ও রাসূল c এর সুন্নতের অনুসরণই প্রকৃত সফলতার চাবিকাঠি। শুধু পীরের মুরীদ হওয়া নয়। মুরীদ হয়ে গোনাহ করলে যেমন জাহান্নামী হবে, তেমনি মুরীদ না হয়ে গোনাহ করলেও জাহান্নামী হতে হবে। ৩নং প্রশ্নের জবাব রাসূল c ছিলেন ইলম ও আমলের জামে তথা পূর্ণাঙ্গরূপ। সকল প্রকার ইলমের উৎসগিরি ছিলেন রাসূল c । কিন্তু তাঁর ইন্তেকালের পর সকল ইলমের পূর্ণতা এক ব্যক্তির মাঝে পাওয়া অসম্ভব হয়ে যায়। কিন্তু প্রয়োজনীয় সকল ইলমই মানুষের প্রয়োজন। যেমন ইলমে কিরাআত। ইলমে ফিক্বহ। ইলমে হাদীস। ইলমে কুরআন। ইলমে আকায়েদ, ইলমে তাসাউফ ইত্যাদি। যেহেতু উলামায়ে কেরাম হলেন রাসূল c এর ওয়ারিস। তাই স্বাভাবিকভাবেই তারা রাসূল c থেকে পাওয়া প্রয়োজনীয় সকল ইলমের ওয়ারাসাত লাভ করেন। কিন্তু একজনের কাছে সকল ইলম জমা ছিল না। একদল হয়ে পড়েন ইলমে কিরাত বিশেষজ্ঞ, আরেকদল ইলমে হাদীস বিশেষজ্ঞ। আরেকদল ইলমে ফিক্বহ বিশেষজ্ঞ ইত্যাদি। উপরোক্ত প্রয়োজনীয় বিষয়াদীতে সাধারণ মুসলমানদের উপর জরুরী হল সেসব বিজ্ঞ ব্যক্তিদের অনুসরণ করা। এসব বিজ্ঞ বিজ্ঞ ব্যক্তিদের পথ-নির্দেশনা মেনে শরীয়তের অনুসরণ করা। যেহেতু সবাই সব বিষয়ে প্রাজ্ঞ হওয়া সম্ভব নয়, তাই যারা যে বিষয়ে অনভিজ্ঞ তারা গ্রহণযোগ্য অভিজ্ঞদের পথ-নির্দেশনা মেনে চলে আসছেন আবহমান কাল থেকে। বিজ্ঞ উলামাদের অনুসরণের ব্যাপারে আল্লামা ইবনে তাইমিয়া i লিখেন-

فَيَجِبُ عَلَى الْمُسْلِمِينَ -بَعْدَ مُوَالَاةِ اللَّهِ تعالى وَرَسُولِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- مُوَالَاةُ الْمُؤْمِنِينَ كَمَا نَطَقَ بِهِ الْقُرْآنُ. خُصُوصًا الْعُلَمَاءُ , الَّذِينَ هُمْ وَرَثَةُ الْأَنْبِيَاءِ الَّذِينَ جَعَلَهُمْ اللَّهُ بِمَنْزِلَةِ النُّجُومِ , يُهْتَدَى بِهِمْ فِي ظُلُمَاتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ . وَقَدْ أَجْمَعَ الْمُسْلِمُونَ عَلَى هِدَايَتِهِمْ وَدِرَايَتِهِمْ. إذْ كَلُّ أُمَّةٍ -قَبْلَ مَبْعَثِ نبيِّنا مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- فَعُلَمَاؤُهَا شِرَارُهَا , إلَّا الْمُسْلِمِينَ فَإِنَّ عُلَمَاءَهُمْ خِيَارُهُمْ؛ فَإِنَّهُمْ خُلَفَاءُ الرَّسُولِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي أُمَّتِهِ , والمحيون لِمَا مَاتَ مِنْ سُنَّتِهِ. بِهِمْ قَامَ الْكِتَابُ , وَبِهِ قَامُوا , وَبِهِمْ نَطَقَ الْكِتَابُ وَبِهِ نَطَقُوا.

অনুবাদ- কুরআনে কারীমের ভাষ্য অনুযায়ী মুসলমানদের উপর অপরিহার্য যে, তারা আল্লাহ তাআলা ও তদীয় রাসূল c এর মোহাব্বতের পর মুমীনদের সাথে মোহাব্বত ও হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক রাখবে। বিশেষতঃ উলামায়ে কেরামের সাথে। যারা নবীগণের ওয়ারিস তথা উত্তরসূরী। আল্লাহ তাআলা যাদেরকে বানিয়েছেন নক্ষত্রতূল্য। যাদের মাধ্যমে জল ও স্থলের ঘোর অন্ধকারে মানুষ হেদায়াতের আলো লাভ করে। যাদের ব্যাপারে মুসলমানরা একমত যে, তারা রয়েছেন জ্ঞান ও হেদায়াতের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত। পক্ষান্তরে রাসূল c এর আবির্ভাবের পূর্বে সকল উম্মতের মাঝে নিকৃষ্ট সম্প্রদায় হত উলামা সম্প্রদায়। একমাত্র মুসলিম জাতিই এর বিপরীত। তাদের মাঝে সর্বোত্তম হলেন এই উলামায়ে কেরাম। কেননা, তারা রাসূল c এর প্রতিনিধি। তার মৃত সুন্নতের জীবনদানকারী। তাদের দ্বারা কুরআন সুপ্রতিষ্ঠিত ও কুরআন দ্বারা তারা সুপ্রতিষ্ঠিত। কুরআন তাদের কথা বলে, আর তারা কুরআনে কারীমের কথা বলেন। (রাফউল মালাম আনিল আইম্মাতিল আলাম-৮, ভূমিকা) রাসূল c এর এসব উত্তরসূরীদের মাঝে আল্লাহ তাআলা কতককে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ব্যাপক প্রসিদ্ধি দান করেছেন। যেমন তিলাওয়াত ও কেরাআত শাস্ত্রে কুররায়ে সাবআ তথা সাত কারী। আকাইদ শাস্ত্রে ইমাম তাহাবী i , ইমাম আবূ মানসূর মাতুরীদী i ও ইমাম আবুল হাসান আশআরী i । ফিক্বহ ও ফাতওয়া বিষয়ে চার ইমাম তথা ইমাম আবূ হানীফা i , ইমাম শাফেয়ী i , ইমাম মালিক i ও ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল i । তেমনি তাসাউফ তথা পীর মুরীদি বিষয়ে চার হক্কানী পীর মাশায়েখকে খ্যাতি দান করেছেন। তাসাউফের প্রসিদ্ধ চার তরীকা কাদের দিকে নিসবত করা? তাসাউফের অনেক সিলসিলা রয়েছে। কিন্তু এর মাঝে সবচে’ প্রসিদ্ধ হল চারটি। যথা-

1. কাদেরিয়া। এ তরীকা হযরত শায়েখ আব্দুল কাদির জিলানী i এর দিকে নিসবত করে বলা হয়। (৪৭০-৫৬১হি)

2. চিশতিয়া। এ তরীকা হযরত শায়েখ মুঈনুদ্দীন চিশতী i এর দিকে নিসবত করা। (৫২৭-৬৩৩হিঃ)

3. সোহরাওয়ারদিয়া। এ তরীকা হযরত শায়েখ শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী i এর দিকে নিসবত করে বলা হয়। -৫৩৯-৬৩২

4. নকশবন্দিয়া। এ তরীকা হযরত শায়েখ বাহাউদ্দীন নকশবন্দী i এর দিকে নিসবত করা। -৭১৮-৭৯১ এ চার সিলসিলা হাদীসের সনদের মতই তাদের শায়েখ হয়ে হয়ে তাবে তাবেয়ী, তারপর তাবেয়ী, তারপর সাহাবী তারপর অবশেষে রাসূল c পর্যন্ত গিয়ে মিলেছে। এ চার তরীকার শায়েখদের ইলমী ও আমলী হালাত ছিল সর্বজনবিদিত। ইখলাস ও লিল্লাহিয়্যাতের কারণে আল্লাহ তাআলা তাদের দিয়েছিলেন ব্যাপক পরিচিত ও প্রসিদ্ধি। তাই পরবর্তী বুজুর্গানে দ্বীন নিজেদের নিসবত তাদের করা শুরু করে দেন। এভাবেই ছড়িয়ে পড়ে এ চার তরীকা। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এ নূরানী সিলসিলার দিকে অনেক ভন্ড ও বিদআতি ও শিরকী কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত কথিত পীররাও নিসবত করে থাকে। তাই শুধু সিলসিলার নিসবত দেখেই তাদেরকে হক বলা শুরু করা হবে বোকামী। পীর ভাল না খারাপ তা মাপার মাপকাঠি শুধু সিলসিলার নিসবত নয়, বরং ইলম, আমল, তাকওয়া, ইখলাস, কুরআন ও হাদীসের অনুসরণ-অনুকরণ, এক কথায় শরীয়ত ও সুন্নতের অনুসরণের ভিত্তিতে পীর সাহেবেকে যাচাই করতে হবে। উক্ত মাপকাঠিতে উক্ত পীর উত্তীর্ণ হন, তাহলে তিনি প্রকৃত পীর। নতুবা ভন্ড। ঈমান বিধ্বংসী শয়তানের দোসর। চার তরীকা কি ইসলামকে বিভক্তকারী চার পথ? অনেক আলেম নামধারী ভাইকেও আজকাল দেখা যায় যে, একটি হাস্যকর বিষয়ের অবতারণা করে থাকেন। তাদের বক্তব্য হল চার তরীকা মানে হল চার পথ। যে পথের কোনটিতেই ইসলাম নেই। সঠিক পথ হল শুধুই ইসলাম। হাস্যকর বক্তব্য। উক্ত ভাই হয়তো না বুঝার কারনে কিংবা বুঝেও ইলম ও আমলের রূহানিয়্যাত থেকে বঞ্চিত থাকার কারণে এমন বোকামীসূলভ বক্তব্য প্রদান করে থাকেন। আমরা যদি উক্ত ভাইকে প্রশ্ন করি- ১ কুরআনের সাত কিরাত কি ইসলামের সাত পথ? একটিতে নাজাত আর বাকিগুলোতে ধ্বংস? (নাউজুবিল্লাহ) নাকি এর প্রতিটি কিরাতের দ্বারাই পূর্ণাঙ্গ কুরআন পাওয়া যায়? নিশ্চয় এর জবাব হল, কুরআন সাত কিরাতে নাজিল হলেও, এক কিরাতে পড়লেও সেটি পূর্ণাঙ্গ কুরআনকেই বুঝায়। তেমনি চার তরীকার মূল টার্গেট একই। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আদেশ নিষেধ, রাসূল c এর আদেশ নিষেধ মোহাব্বত নিয়ে পালন করার মানসিকতা তৈরী করা। ২ দ্বীনী ইলম শিখার বর্তমানে দু’টি পদ্ধতি প্রচলিত। একটি হল একাডেমিক পদ্ধতিতে দ্বীন শিখা। যা রাসূল c থেকে প্রমানিত পদ্ধতি নয়। আরেকটি হল কোন আলেমের কাছে থেকে জ্ঞান শিক্ষা করা। যা রাসূল c থেকে প্রমাণিত পদ্ধতি। এখন প্রশ্ন হল দ্বীন শিখার উপরোক্ত দুই পদ্ধতির একটি ইসলাম, আরেকটি গোমরাহী? এমন আহমকী কথা কি কেউ বলবেন? নাকি উভয়টি দ্বারাই উদ্দেশ্য একটি। যা হল দ্বীনের ইলম শিক্ষা করা। একাডেমিক পদ্ধতিটি কেবল দ্বীন শিখার সহায়ক হিসেবে আবিস্কৃত হয়েছে। এটি সুন্নত বা সওয়াবের কাজ একথা কেউ বলে না। তেমনি তাসাউওফের ৪ তরীকা কোন সুন্নত নয়। নয় এটি আবশ্যকীয় বিষয়। বরং রাসূল c এর আনীত দ্বীন নিজের অভ্যাসে পরিণত করার জন্য, শরীয়তের বিধানগুলোকে পূর্ণাঙ্গভাবে পালন করার জন্য একটি সহায়ক পদ্ধতি ছাড়া আর কিছু নয়। পীর দেখেই তার পিছনে যেমন ছুটতে শুরু করা যাবে না। আগে যাচাই করে নিতে হবে তিনি ভাল মানুষ না ধোঁকাবাজ। তিনি আল্লাহ ও রাসূলের আশেক না শয়তানের দোসর। এ কারণে সকল পীরকে যেমন মন্দ বলা গোড়ামী, তেমনি পীর শুনেই ভক্তি করতে চাওয়া আহমকী ও গোমরাহীর নিদর্শন।

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১৩ এপ্রিল, ২৩