মাযারে ওরস, বিশ্বজাকের মঞ্জিল ও বিশ্ব ইজতেমায় যাওয়ার হুকুম

ইসলামী জিন্দেগীজায়েয-নাজায়েয২২ ফেব, ২১

প্রশ্ন

বাংলাদেশের ভাবপ্রবণ মানুষ বিভিন্ন মাযারে, ওরশে, বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে এবং প্রতি বৎসর টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমাতে উপস্থিত হয়ে থাকে। টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমায় উপস্থিত হওয়া বাস্তবে কোন গুরুত্ব রাখে কি ?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

শরী‘আতের দৃষ্টিতে ওরস ও মাযারে সমবেত হওয়া বিদ‘আত ও নাজায়িয। কারণ নবী কারীম c ‍মৃত্যুর পূর্বে উম্মতকে তাঁর মাযারে অনুষ্ঠান করা থেকে কঠোর ভাবে নিষেধ করে গেছেন। সুতরাং একজন মুসলমানের জন্য ঐসব অনুষ্ঠানে শরীক হওয়া কোনভাবেই জায়িয নয়। আর আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য হক্কানী পীর বা বুজুর্গের নিকট যাওয়া শরী‘আতের দৃষ্টিতে আবশ্যিক কাজ। কারণ, নিজের কলব থেকে দুনিয়ার মোহ, রাগ, হিংসা, ফখর ও রিয়া ইত্যাদি খারাপ খাসলতগুলো দূর করে আখিরাতের মুহব্বত, নম্রতা, ইখলাস, শোকর, সবর প্রভৃতি ভাল খাসলত হাসিল করা জরুরী। এগুলো হাসিল না করলে দিলের রোগের কারণে সারা যিন্দেগীর আমল বরবাদ হয়ে যেতে পারে। যেমন- হাশরের ময়দানে সর্বপ্রথম যে তিন ব্যক্তিকে হাযির করা হবে, তারা প্রত্যেকে ব্যক্তিগতভাবে নেকীর পাহাড় নিয়ে হাযির হবে। কিন্তু ইখলাস না থাকার কারণে তাদের সমস্ত নেকী বাতিল হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, বর্তমান যামানায় হক্কানী পীর তাকে বলা হয়, যার মধ্যে দশটি আলামত পাওয়া যায় - বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন- থানবী i -এর লিখিত কসদুস সাবীল নামক গ্রন্থ।

অপরদিকে দুনিয়াদার ও ব্যবসায়ী পীরের সংখ্যা বর্তমানে খুবই বেশী । বিনা পুঁজিতে ব্যবসা হিসেবে জনসাধারণের ধর্মীয় জ্ঞানের সল্পতার সুযোগ নিয়ে বহু ব্যবসায়ী পীর আস্তানা গেড়ে সাধারণ মানুষের অবশিষ্ট দীন-ঈমানটুকু বিনষ্ট করার ফাঁদ পেতে বসেছে । তাই তাদের দরবারে যাওয়া কিছুতেই জায়িয হবে না। এসব পীরের মধ্যে ১০টি আলামতের একটিও পাওয়া যায় না। যারা যায়, তারাও পীরের দরবারে যে একমাত্র আল্লাহকে পাওয়ার জন্য যেতে হয় তা জানে না। তারা সেখানে গিয়ে পীরের পায়ে সিজদা করে, কবরে তাওয়াফ করে, পীরের পা বা কবর চুম্বন করে, পীর বা মাযারের নামে মান্নত করে প্রভৃতি শরী‘আত গর্হিত কাজ করে থাকে। এরা পীরের কাছে মামলা-মোকদ্দমায় জয়লাভ, ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নতি ও রোগ-শোক থেকে মুক্তি লাভের জন্য গিয়ে থাকে। সাধারণ মুসলমানদের উচিত, হক্কানী উলামায়ে কিরামের নিকট জিজ্ঞাসা করে জেনে শুনে কোন বুযুর্গের নিকট যাতাযাত করা।

عن ابن عباس رضي الله تعالى عنه قا: لعن رسول الله صلى الله تعالى عليه وسلم زائرات القبور المتخذين عليها المساجد والسرج. (سنن الترمذي ح:320)

তাবলীগী মেহনত সকল হক্কানী উলামায়ে কিরামের মতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সর্বশ্রেণীর মুসলমানদের বিশেষ করে সাধারণ মুসলামান ভাইদের দীন ও ঈমান শিক্ষার জন্য বর্তমান যামানায় তাবলিগী জামা‘আতের কর্মসূচী খুবই সুন্দর। এ ব্যাপারে সমস্ত হক্কানী উলামায়ে কিরাম একমত। হযরত সাহাবায়ে কিরাম e এ ধরনের পদ্ধতিতে মেহনত করেই দীন ও ঈমান শিখতেন ও শিখাতেন।

এ ধরণের দাওয়াত যখন বন্ধ হয়ে যাবে, তখন সেই এলাকার জনসাধারণ থেকে দীনও বিদায় নিতে থাকবে। স্পেন ও রাশিয়া ইত্যাদি তার নযীর।

আজ আমাদের দেশসহ সকল বিশ্বে অসংখ্য বিধর্মী এই দাওয়াতের উসীলায় ইসলামে দীক্ষিত হচ্ছে। এ দাওয়াতে বহু স্থানের গির্জা ও মন্দির মসজিদে পরিণত হচ্ছে। বহু নামধারী মুসলমান এই মেহনতের উসিলায় পূর্ণ দীনদার হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করছে। সেই জবরদস্ত মেহনতকে আরো ব্যাপক করার জন্য টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করা হয়ে থাকে। এই ইজতেমায় বিদেশ থেকে বুযুর্গানে দীন তাশরীফ আনেন। বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের অসংখ্য লোক তাদের বয়ান শুনে। সেই ইজতিমা আর ওরস, মাযারকে এক সমান মনে করা মারাত্মক ভুল। দুটোর মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। একটা হিদায়াতের পথ। আর অন্যটা গোমরাহীর পথ। আল্লাহ তা‘আলা সকলকে সহীহ সমঝ দান করুন।

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২২ ফেব, ২১