মাযহাবের দোহাই দিয়ে হাদীস অস্বিকার করার ভয়ানক খেলায় মেতেছে কথিত আহলে হাদীসরা!

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসআকীদা২৬ নভেম্বর, ২৩

প্রশ্ন

লা মাযহাবের এক আপি লিখেছে – ‘মাযহাব’ বড়, নাকি ‘সুন্নত’ বড়?

১. হানাফী মাযহাব মতে মেয়েরা তাদের ‘ওয়ালী’ ছাড়া বিয়ে করলে বিয়ে বিয়ে হয়ে যাবে।কিন্তু, মালেকী, শাফেয়ী ও হাম্বালি – এই ৩ মাযহাব মতে মেয়েদের ওয়ালী ছাড়া বিয়ে বাতিল তাদেরকে নতুন করে মেয়ের ওয়ালী নিয়ে বিয়ে করতে হবে, নয়তো তারা স্বামী স্ত্রী হিসেবে বসবাস করতে পারবেনা।

২. হানাফী মাযহাব মতে রাতের শেষ বিতির নামায ৩ রাকাত, এর কম বা বেশি কোনোটাই

পড়া যাবে না। হানাফীদের মতে ১ রাকাত কোন নামাযই হয় না। অন্য মাযহাব অনুযায়ী বিতির

নামায ৩ রাকাত পড়া যাবে, ৫ রাকাত পড়া যাবে, এমনকি ১ রাকাত পড়লেও বিতির হয়ে যাবে।

৩. হানাফী মাযহাব মতে মাগরিবের ফরয নামাযের আগে দুই রাকাত নামায পড়া যাবেনা, এই নামায পড়লে কোন সওয়াব পাওয়া যাবেনা। অন্য মাযহাব অনুযায়ী মাগরিবের ফরয নামাযের আগে ২ রাকাত নামায পড়া মোস্তাহাব (উত্তম)।

৪. হানাফী মাযহাব অনুযায়ী নারীরা ঈদের দুই রাকাত নামাজ পড়তে পারবেনা,তাদের জন্য ঈদের মাঠে যাওয়া ঠিকনা। অন্য মাযহাব মতে, নারীদেরকে ঈদের মাঠে নিতে হবে, এমনকি অনেক আলেম বলেছেন, নারীদেরকে ঈদের মাঠে নিয়ে যাওয়া ‘ওয়াজিব’। ৫.হানাফী মাযহাব মতে ধরুন, আজকে আসর নামাযের সময় শুরু ৪:৪৪ মিনিটে, এর আগে আসর পড়া যাবেনা। কোন জায়গায় যদি বাকি ৩ মাযহাবের মসজিদ থাকে আর হানাফী মসজিদ না থাকলে তাহলে হানাফীরা এই সময়ের আগে অন্য মাযহাবগুলোর সাথে আসরের নামায পড়েনা।মালেকী, শাফেয়ী ও হাম্বালি মাযহাব মতে আজকে আসর শুরু ৩:২৫ মিনিটে। বাকি ৩ মাযহাব মতেই ৪:৪৪ এ আসর পড়লে সেটা অনেক দেরী হয়ে যায়। ইচ্ছাকৃতভাবে এতো দেরী করে আসর পড়া মাকরুহ ও অত্যন্ত অনুচিত।জ্ঞানী ভাই ও বোনদের কাছে আজকে আমার প্রশ্নঃউপরের ৫ টি বিষয়ে আমরা কার কথা মানবো, কারকথা আসলে ঠিক, হানাফীদের নাকি বাকি ৩ মাযহাবের? যারা বলে ৪ মাযহাবই ঠিক, তাহলে কিভাবে ৪টা মাযহাবই ঠিক হয় – একদল আরেকদলের ফতোয়াই মানেনা!

হানাফীরা বলতেছে ওয়ালী ছাড়া বিয়ে হবে,বাকি ৩ মাযহাব বলতেছে – বিয়ে হবেনা, সেটা জিনা-ব্যভিচার হবে।বাকি মাযহাবগুলো বলতেছে আসর ৩:২৫ মিনিটের পরে পড়তে হবে, হানাফীরা বলতেছে ঐ সময়ে আসর পড়া যাবেনা, এমনকি তারা জামাত করলেও সেই জামাতে শরীক হওয়া যাবেনা, মসজিদে ইমামকে বাদ দিয়ে ৪:৪৪ মিনিটের পরে আলাদা জামাত করতে হবে।

এইভাবে কি মসজিদে মুসল্লিদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি করে ফেতনা সৃষ্টি করা হচ্ছেনা? এইক্ষেত্রে কি করে ৪ মাযহাব ঠিক থাকলো, হয় বিয়ে হবে,নয়তো জেনা হবে – ২টার যেকোন একটা হবে। হয় আসর হবে হয় হবেনা।আমি পোস্ট ছোট করার জন্য মাত্র ৫টা উদাহরণ নিয়ে আসলাম, এইরকম বহু বিষয় আছে, এর চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ।এখন কেউ যদি বলে, এইখানে ২টাই(হয় বিয়ে হয়ে যাবে নয়তো জেনা হবে),তারা কি দুই মুইখ্যা সাপের মতো কথা বললো না?

“এইটা ঠিক, ঐটাও ঠিক” -বলে উম্মতকে ধোঁকা দেওয়া যাবে? প্লিজ ভাইয়া, উপরের মাছালা গুলো একটু ব্যাখ্যা করে দেন।

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

আল্লাহ তা্আলা আপনাকে কবুল করুন। আমাদের দুআ সর্বদা থাকবে আপনার সাথে ইনশাআল্লাহ। প্রশ্নটির জবাব লোকটির প্রশ্নের ধরণ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। তিনি মাযহবা সম্পর্কে ন্যুনতম ধারণাও রাখেন না। অজ্ঞতা আর মুর্খতাবশত উপরোক্ত প্রশ্নগুলো করেছেন। কিন্তু তার মতের পক্ষে সুন্নত হিসেবে কোনটি পালনীয় এর কোন জবাব এবং দলীলই পেশ করেননি। অথচ তার উচিত ছিল হানাফী মাযহাবকে ভুল প্রমাণ করা দলীলের ভিত্তিতে। প্রমাণ করা যে, হানাফী মাযহাব মনগড়া মতবাদ, আর এর বিপরীতে রয়েছে সুন্নত। অথচ তিনি শুধু দোষারোপই করলেন। কিন্তু নিজের মতের পক্ষে কোন দলীলই দিলেন না। আফসোস, তিনি যদি মাযহাবের অর্থ জানতেন। মাযহাব কি জানতেন? তাহলে এরকম মুর্খতার পরিচয় তিনি দিতেন না। মাযহাবতো হল কুরআন ও সুন্নাহ অনুসরণের নাম। সেখানে তিনি মাযহাবকে সুন্নতের প্রতিপক্ষ বানিয়ে দিলেন কিভাবে? অবাক কান্ড! উপরের প্রতিটি মাসআলাই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত মাযহাব। কোন মনগড়া মতবাদ নয়। তিনি আসলে হাদীস অস্বিকারকারী। তার এ নোংরা চেহারা ঢাকার জন্য নাম দিয়েছেন সুন্নত অনুসরনের। অথচ মাযহাবের সকল মাসআলাই সুন্নাহ সম্মত। প্রমাণ দেখুন-

1. ওয়ালী ছাড়া বিবাহ বৈধ হওয়ার সুন্নাহের প্রমাণ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ؛ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «الْأَيِّمُ أَحَقُّ بِنَفْسِهَا مِنْ وَلِيِّهَا. হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস e থেকে বর্ণিত। রাসূল c ইরশাদ করেছেন, মেয়ে তার ব্যক্তিগত বিষয়ে অভিভাবকের চেয়ে অধিক হকদার। -মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৮৮৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৪২১, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৮৮৮, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২০৯৮, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২২৩৪, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১১০৮, সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৩২৬০, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪০৮৪, সুনানে দারাকুতনী, হাদীস নং-৩৫৭৬ عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ قَالَ: ” جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ أَبِي وَنِعْمَ الْأَبُ هُوَ، خَطَبَنِي إِلَيْهِ عَمُّ وَلَدِي فَرَدَّهُ، وَأَنْكَحَنِي رَجُلًا وَأَنَا كَارِهَةٌ. فَبَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى أَبِيهَا، فَسَأَلَهُ عَنْ قَوْلِهَا، فَقَالَ: صَدَقَتْ، أَنْكَحْتُهَا وَلَمْ آلُهَا خَيْرًا. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا نِكَاحَ لَكِ، اذْهَبِي فَانْكِحِي مَنْ شِئْتِ» হযরত সালামা বিনতে আব্দুর রহমান e থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক মেয়ে রাসূল c এর কাছে এল। এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা! কতইনা উত্তম পিতা! আমার চাচাত ভাই আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিল আর তিনি তাকে ফিরিয়ে দিলেন। আর এমন এক ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছেন যাকে আমি অপছন্দ করি। এ ব্যাপারে রাসূল c তার পিতাকে জিজ্ঞাসা করলে পিতা বলে, মেয়েটি সত্যই বলেছে। আমি তাকে এমন পাত্রের সাথে বিয়ে দিচ্ছি যার পরিবার ভাল নয়। তখন রাসূল c মেয়েটিকে বললেন, “এ বিয়ে হবে না, তুমি যাও, যাকে ইচ্ছে বিয়ে করে নাও”। -সুনানে সাঈদ বিন মানসূর, হাদীস নং-৫৬৮, মুসন্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-১০৩০৪, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৫৯৫৩, দিরায়া ফী তাখরীজি আহাদিসীল হিদায়া, হাদীস নং-৫৪১ 2469 – حَدَّثَنَا حُسَيْنٌ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: ” أَنَّ جَارِيَةً بِكْرًا أَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَكَرَتْ أَنَّ أَبَاهَا زَوَّجَهَا وَهِيَ كَارِهَةٌ فَخَيَّرَهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ” إسناده صحيح على شرط البخاري. وأخرجه أبو داود ۞ ، وابن ماجه ۞ ، والنسائي في “الكبرى” ۞ ، وأبو يعلى ۞ ، والطحاوي 4/365، والدارقطني 3/234-235، والبيهقي 7/117 من طريق حسين بن محمد المروذي، بهذا الإسناد. وأخرجه ابن ماجه ۞ ، والنسائي ۞ ، والدارقطني 3/235 من طريق مُعمر بن سليمان، عن زيد بن حبان، والدارقطني 3/235 من طريق أيوب بن سويد، عن سفيان الثوري، كلاهما عن أيوب السختياني، به. হযরত ইবনে আব্বাস e থেকে বর্ণিত। কুমারী মেয়ে রাসূল c এর কাছে এসে বলল, আমার পিতা আমার অপছন্দ সত্বেও বিয়ে দিয়েছে, তখন রাসূল c সে মেয়েকে অধিকার দিলেন, (যাকে ইচ্ছে বিয়ে করতে পারে বা এ বিয়ে রাখতেও পারে)। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৪৬৯, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৮৭৫, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২০৯৬, সুনানুল কুবরা নাসায়ী, হাদীস নং-৫৩৬৬, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৩৫৬৬ عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: جَاءَتْ فَتَاةٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: ” إِنَّ أَبِي زَوَّجَنِي ابْنَ أَخِيهِ، لِيَرْفَعَ بِي خَسِيسَتَهُ، قَالَ: فَجَعَلَ الْأَمْرَ إِلَيْهَا، فَقَالَتْ: قَدْ أَجَزْتُ مَا صَنَعَ أَبِي، وَلَكِنْ أَرَدْتُ أَنْ تَعْلَمَ النِّسَاءُ أَنْ لَيْسَ إِلَى الْآبَاءِ مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ “ হযরত বুরাইদা e থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক মহিলা নবীজী c এর কাছে এসে বলল, আমার পিতা আমাকে তার ভাতিজার কাছে বিয়ে দিয়েছে, যাতে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। রাবী বলেন, তখন রাসূল c বিষয়টি মেয়ের ইখতিয়ারের উপর ন্যস্ত করেন, (অর্থাৎ ইচ্ছে করলে বিয়ে রাখতেও পারবে, ইচ্ছে করলে ভেঙ্গেও দিতে পারবে) তখন মহিলাটি বললেন, আমার পিতা যা করেছেন, তা আমি মেনে নিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল, মেয়েরা যেন জেনে নেয় যে, বিয়ের ব্যাপারে পিতাদের (চূড়ান্ত) মতের অধিকার নেই্ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৮৭৪, মুসনাদে ইসহাক বিন রাহুয়াহ, হাদীস নং-১৩৫৯, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৩৫৫৫) উল্লেখিত হাদীস ছাড়াও আরো এমন অনেক হাদীস রয়েছে, যা স্পষ্ট ভাষায় প্রমাণ করে যে, বিয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবক নয়, প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এক্ষেত্রে পিতা বা অভিভাবকের হস্তক্ষেপের অধিকার নেই। সুতরাং প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলা অভিভাবক ছাড়া বিয়ে করে নিলে তা সম্পন্ন হয়ে যাবে। বিপরীতমুখী হাদীসের জবাব কি? যে সকল হাদীস দ্বারা একথা বুঝা যায় যে, অভিভাবক ছাড়া বিয়ে সম্পন্ন হয় না, সেগুলোর অনেকগুলো জবাব মুহাদ্দিসীনে কেরাম ও ফুক্বাহায়ে কেরাম দিয়েছেন। প্রশ্নে উল্লেখিত হাদীসটি আমরা দেখে নেই, তাহলে উত্তর দিতে সুবিধা হবে عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيُّمَا امْرَأَةٍ نَكَحَتْ بِغَيْرِ إِذْنِ مَوَالِيهَا، فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ»، ثَلَاثَ مَرَّاتٍ «فَإِنْ دَخَلَ بِهَا فَالْمَهْرُ لَهَا بِمَا أَصَابَ مِنْهَا، فَإِنْ تَشَاجَرُوا فَالسُّلْطَانُ وَلِيُّ مَنْ لَا وَلِيَّ لَهُ» হযরত আয়শা e থেকে বর্ণিত। রাসূল c ইরশাদ করেছেন, যে মহিলাকে তার অভিভাবক বিয়ে দেয়নি, তার বিয়ে বাতিল, তার বিয়ে বাতিল, তার বিয়ে বাতিল। এরপর স্বামী যদি তার তার সাথে মিলামিশা করে তবে সে মহরের অধিকারী হবে স্বামী তার সাথে (হালাল পদ্ধতিতে) মেলামেশা করার কারণে। আর যদি তাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়, তবে যার অভিভাবক নেই, বাদশাই তার অভিভাবক বলে বিবেচিত হবে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১৮৭৯, সুনানে তিরামিজী, হাদীস নং-১১০২, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৮৭৯ হাদীসটির বিষয়ে মন্তব্য ইমাম বুখারী i বলেন, হাদীসটি মুনকার। -আলইলালুল কাবীর-২৫৭ ইমাম তিরমিজী i বলেন, হাসান। -সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১১০২ ইমাম তাহাবী i বলেন, হাদীসটি ফাসিদ। -শরহু মাআনিল আসার-৩/৭ ইবনে কাত্তান i বলেন, হাদীসটি হাসান। -আলওয়াহমু ওয়ালইহামু-৪/৫৭৭ জবাব নং ১ আমরা শক্তিশালিত্বের দিক থেকে আমাদের বর্ণিত হাদীসকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। হযরত আয়শা সিদ্দিকা e থেকে বর্ণিত হাদীসটির বিষয়ে ইমাম বুখারী i থেকে মুনকার হওয়ার এবং ইমাম তাহাবী i থেকে ফাসিদ হওয়ার কালাম রয়েছে। তাই আমরা এর উপর আমল করি না। পক্ষান্তরে আমাদের উপরে বর্ণিত সহীহ মুসলিম ও মুয়াত্তা মালিকের বর্ণনাটি সহীহ। জবাব নং-২ এ হাদীস দ্বারাই বুঝা যাচ্ছে যে, এখানে বিবাহ বাতিল হয়ে যাওয়া উদ্দেশ্য নয়। কারণ হাদীসের শেষাংশে বলা হচ্ছে, স্ত্রী মহরের অধিকারী হবে। যদি বিবাহ শুদ্ধই না হতো, তাহলে মোহর আবশ্যক হওয়ার কথা আসছে কেন? মোহরতো বিবাহের মাধ্যমে আবশ্যক হয়। বিবাহ ছাড়া আর্থিক জরিমানার জন্য ব্যবহৃত হয় আরবী عقرا শব্দ ব্যবহৃত হয়। অথচ এখানে ব্যবহৃত করা হয়েছে। মোহর শব্দ। যা বিবাহের সাথে খাস। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে এখানে আসলেই বিবাহ বাতিল হয়ে যায়, এটি উদ্দেশ্য নয়। বরং ধমকী দেয়া উদ্দেশ্য। যেন অভিভাবকদের না জানিয়ে মেয়েরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হয়। জবাব নং ৩ أَنَّ عَائِشَةَ، زَوْجَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، زَوَّجَتْ حَفْصَةَ بِنْتَ عَبْدِ الرَّحْمنِ، الْمُنْذِرَ بْنَ الزُّبَيْرِ. وَعَبْدُ الرَّحْمنِ غَائِبٌ بِالشَّأْمِ. যেমন প্রশ্নে উল্লেখিত অভিভাবক ছাড়া মহিলা কর্তৃক বিয়ে সম্পন্ন না হওয়ার হাদীসটি হযরত আয়শা সিদ্দিকা e এর। অথচ খোদ আয়শা e তার ভাই আব্দুর রহমানের মেয়ে হাফসাকে তার অভিভাবক আব্দুর রহমানকে ছাড়াই নিজে বিয়ে দিয়েছিলেন মুনজির বিন যুবায়েরের সাথে। -মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-২০৪০, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৪২৫৫, সুনানুস সাগীর লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২৩৭৪, মারেফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং-১৩৫২২, সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-১৩৬৫৩, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৫৯৫৫ সুতরাং বুঝা গেল যে, উক্ত হাদীস দ্বারা খোদ বর্ণনাকারী হযরত আয়শা e নিজেই বিবাহ শুদ্ধ হয় না একথা বুঝেন নি। বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, বিয়ে অসম্পূর্ণ হয় অভিভাবক ছাড়া। কারণ, যে অভিভাবক মেয়েকে লালন পালন করল, তাকে না জানিয়ে বিয়ে করাটাতো অসম্পূর্ণই। তাই বলা হয়েছে তা বাতিল। বাতিল মানে অসম্পূর্ণ। যেমন আরেক হাদীসে এসেছে- عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيُّمَا مَمْلُوكٍ تَزَوَّجَ بِغَيْرِ إِذْنِ سَيِّدِهِ، فَهُوَ عَاهِرٌ» অনুবাদ- হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ e থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল c ইরশাদ করেছেন, যে গোলাম মনীবের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করে তাহলে সে জিনাকারী। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২০৭৮, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৪২১২, সুনানে দারামী, হাদীস নং-২২৭৯, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১১১১, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-২৭০৫ আসলে কি গোলাম জিনাকারী হবে? একথাতো কেউ বলেন না। এখানে যেমন সবাই বলেন যে, এর দ্বারা ধমকী দেয়া উদ্দেশ্য। ঠিক তেমনি যেন কোন মেয়ে তার অভিভাবক ছাড়া বিয়ে না করে, কারণ মেয়ে মানুষ হওয়ার কারণে সে পাত্র নির্ণিত করতে ভুল করতে পারে, তাই সতর্ক করে বলা হয়েছে তার বিবাহ বাতিল হওয়ার সমতূল্য। যেমন গোলামের বিবাহ জিনার সমতূল্য। আসলে যিনা নয়। জবাব নং ৪ আসলে বাতিল বলে হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে, যদি মেয়ে গায়রে কুফুতে বিয়ে করে, তাহলে তার বিয়ে অভিভাবক এসে বাতিল করে দিতে পারে। সে হিসেবে তার বিয়েকে বাতিল বলা হয়েছে। জবাব নং-৫ বাতিল দ্বারা উদ্দেশ্য হল, যদি নাবালেগ বা পাগল মেয়ে বিয়ে করে, তাহলে তার বিবাহ বাতিল। এভাবে আমরা উভয় হাদীসের উপর আমল করতে পারি। বিস্তারিত জানতে পড়–ন- ইলাউস সুনান-১১/৬৫-৭০, মাকাতাবা আশরাফিয়া দেওবন্দ।

মিরকাতুল মাফাতীহ-৬/২৬৫-২৭৪, মাকাতাবা আশরাফিয়া দেওবন্দ।

তুহফাতুল আলমায়ী-৩/৫১৫-৫১৮, মাকতাবা হেযাজ দেওবন্দ। তাহলে এ মাসআলায় আমরা মাযহাবের অনুসরণ করে সুন্নতের খেলাফ গেলাম কিভাবে? আসলে লোকটি হাদীসের দুশমন। কিন্তু সেজেছে সুন্নতের প্রেমিক। পড়েছে সুন্নতের মুখোশ। আসলে হাদীস তথা সুন্নাহ অস্বিকারকারী। বিতর নামায তিন রাকাত (১) আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত আয়েশা e কে জিজ্ঞাসা করেন যে, রমযানে নবীজীর নামায কেমন হত? তিনি উত্তরে বলেন, রাসূলুল্লাহ c রমযানে এবং রমযানের বাইরে এগার রাকাতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না! এরপর আরও চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা তো বলাই বাহুল্য! এরপর তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন।–(সহীহ বুখারী ১/১৫৪, হাদীস ১১৪৭; সহীহ মুসলিম ১/২৫৪, হাদীস ৭৩৮; সুনানে নাসায়ী ১/২৪৮, হাদীস ১৬৯৭; সুনানে আবু দাউদ ১/১৮৯, হাদীস ১৩৩৫; মুসনাদে আহমদ ৬/৩৬, হাদীস ২৪০৭৩) (২) সা‘দ ইবনে হিশাম i বলেন, হযরত আয়েশা e তাকে বলেছেন, রাসূলুল্লাহ c বিতরের দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না। -(সুনানে নাসায়ী ১/২৪৮; হাদীস ১৬৯৮; মুয়াত্তা মুহাম্মাদ ১৫১ (বাবুস সালাম ফিল বিতর) মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৪/৪৯৪, হাদীস ৬৯১২; সুনানে দারাকুতনী ২/৩২, হাদীস ১৫৬৫; সুনানে কুবরা বাইহাকী ৩/৩১) এই হাদীসটি ইমাম হাকেম আবু আব্দুল্লাহ i ও ‘মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন’ কিতাবে বর্ণনা করেছেন। তার আরবী পাঠ এই- كان رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يسلم في الركعتين الأوليين من الوتر অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ c বিতরের প্রথম দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না। ইমাম হাকেম i তা বর্ণনা করার পর বলেন- هذا حديث صحيح على شرط الشيخين অর্থাৎ হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক সহীহ। ইমাম শামসুদ্দীন যাহাবী i ‘তালখীসুল মুস্তাদরাক’-এ হাকেম i -এর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন। -(মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন ১/৩০৪, হাদীস ১১৮০) এই হাদীস দ্বারা একদিকে যেমন প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ c তাঁর সাধারণ নিয়মে তিন রাকাত বিতর আদায় করতেন তেমনি একথাও প্রমাণিত হয় যে, তিন রাকাতের দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহহুদের জন্য বসতেন, কিন্তু সালাম ফেরাতেন না। সালাম ফেরাতেন সবশেষে তৃতীয় রাকাতে। যদি দ্বিতীয় রাকাতে বৈঠক করার নিয়ম না থাকত তাহলে সালাম করার বা না করার প্রসঙ্গতই আসত না। কেননা সালাম তো ফেরানো হয়ে থাকে।

ইমাম ইবনে হাযম যাহেরী i ‘মুহাল্লা’ কিতাবে বিতরের বিভিন্ন পদ্ধতির মাঝে আলোচিত পদ্ধতিটিও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, বিতর তিন রাকাত পড়া হবে। দ্বিতীয় রাকাতে বসবে এবং (তাশাহহুদ পড়ে) সালাম ফেরানো ছাড়াই দাঁড়িয়ে যাবে। তৃতীয় রাকাত পড়ে বসবে, তাশাহহুদ পড়বে এবং সালাম ফেরাবে, যেভাবে মাগরিবের নামায পড়া হয়। এটিই ইমান আবু হানীফা i -এর মত। এর দলিল হচ্ছে, সাদ ইবনে হিশাম i -এর সূত্রে বর্ণিত হাদীস, যাতে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা e বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ c বিতরের দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না। -(মুহাল্লা ইবনে হাযম ২/৮৯)

সাদ ইবনে হিশাম i -এর রেওয়ায়াতটি আরও একটি সনদে বর্ণিত হয়েছে, যার আরবী পাঠ নিম্নরূপ- كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر بثلاث لا يسلم إلا في آخرهن অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ c তিন রাকাত বিতর পড়তেন এবং শুধু সর্বশেষ রাকাতে সালাম ফেরাতেন। হাকেম i এই রেওয়ায়াতের পর লেখেন, আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা.ও এভাবে বিতর পড়তেন এবং তাঁর সূত্রে মদীনাবাসীগণ তা গ্রহণ করেছেন। -(মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন ১/৩০৪, হাদীস ১১৮১) (৩) আব্দুল্লাহ ইবনে আবী কাইস বলেন- قلت لعائشة : بكم كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر؟ قالت: كان يوتر بأربع وثلاث , وست وثلاث , وثمان وثلاث , وعشر وثلاث , ولم يكن يوتر بأنقص من سبع , ولا بأكثر من ثلاث عشرة. অর্থাৎ আমি হযরত আয়েশা e -এর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবীজী বিতরে কত রাকাত পড়তেন? উত্তরে তিনি বলেন, চার এবং তিন, ছয় এবং তিন, আট এবং তিন, দশ এবং তিন। তিনি বিতরে সাত রাকাতের কম এবং তের রাকাতের অধিক পড়তেন না। -সুনানে আবু দাউদ ১/১৯৩, হাদীস ১৩৫৭ (১৩৬২); তহাবী শরীফ ১/১৩৯; মুসনাদে আহমদ ৬/১৪৯, হাদীস ২৫১৫৯

চিন্তা করে দেখুন, রাসূলুল্লাহ c তাহাজ্জুদ নামায কখনো চার রাকাত, কখনো ছয় রাকাত, কখনো আট রাকাত, কখনো দশ রাকাত পড়তেন; কিন্তু মূল বিতর সর্বদা তিন রাকাতই হত।

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী i ফাতহুল বারী ৩/২৬ باب كيف صلاة الليل, كتاب التهجد)- এ লেখেন- هذا أصح ما وقفت عليه من ذلك, وبه يجمع بين ما اختلف عن عائشة في ذلك. والله أعلم আমার জানামতে এটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সর্বাধিক সহীহ রেওয়ায়াত। এ বিষয়ে হযরত আয়েশা e বর্ণিত হাদীসের বর্ণনাকারীদের মাঝে যে বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় এর দ্বারা সে সবের মাঝে সমন্বয় করা সম্ভব। (৪) রাসূলুল্লাহ c ের তাহাজ্জুদ ও বিতর প্রত্যক্ষ করার জন্য হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস e এক রাতে তাঁর খালা উম্মুল মুমিনীন হযরত মাইমূনা e -এর ঘরে অবস্থান করেন। তিনি যা যা প্রত্যক্ষ করেছেন বর্ণনা করেছেন। তাঁর শাগরেদরা সে বিবরণ বিভিন্ন শব্দে বর্ণনা করেছেন। আমি এখানে সুনানে নাসায়ী ও অন্যান্য হাদীসের কিতাব থেকে একটি রেওয়ায়াত উদ্ধৃত করছি- ‘মুহাম্মাদ ইবনে আলী তার পিতা থেকে, তিনি তার পিতা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস e থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ c রাতে শযা্য থেকে উঠলেন, এরপর মেসওয়াক করলেন, এরপর দুই রাকাত পড়লেন, এরপর শুয়ে গেলেন। তারপর পুনরায় শয্যা ত্যাগ করলেন, মেসওয়াক করলেন, অযু করলেন এবং দুই রাকাত পড়লেন; এভাবে ছয় রাকাত পূর্ণ করলেন। এরপর তিন রাকাত বিতর পড়লেন। এরপর দুই রাকাত পড়েন। حتى صلى ستا ثم أوتر بثلاث وصلى ركعتين –(সুনানে নাসায়ী ১/২৪৯, হাদীস ১৭০৪; মুসনাদে আহমাদ ১/৩৫০, হাদীস ৩২৭১; তহাবী শরীফ ১/২০১-২০২) (৫) প্রসিদ্ধ তাবেয়ী ইমাম সাঈদ ইবনে জুবাইর, যিনি ইবনে আব্বাস e -এর বিশিষ্ট শাগরেদ, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস e থেকে বর্ণনা করেন- كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر بثلاث ويقرأ في الأولى سبح اسم ربك الأعلى, وفي الثانية قل يا أيها الكفرون, وفي الثالثة قل هو الله أحد. রাসূলুল্লাহ c তিন রাকাত বিতর পড়তেন, প্রথম রাকাতে ‘সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আলা’, দ্বিতীয় রাকাতে ‘কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন’ এবং তৃতীয় রাকাতে ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ পড়তেন। -সুনানে দারেমী ১/৩১১, হাদীস ১৫৯৭; জামে তিরমিযী ১/৬১, হাদীস ৪৬২; সুনানে নাসায়ী ১/২৪৯; হাদীস ১৭০২; তহাবী শরীফ ১/২০১, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৪/৫১২, হাদীস ৬৯৫১ ইমাম নববী i ‘আলখুলাসা’ কিতাবে উক্ত হাদীসের সনদকে সহীহ বলেছেন। -নাসবুর রায়াহ, জামালুদ্দীন যাইলায়ী ২/১১৯ বিতরের তিন রাকাতে উপরোক্ত তিন সূরা, এক এক রাকাতে এক এক সূরা, পড়া সম্পর্কে একাধিক সাহাবী থেকে রেওয়ায়াত বিদ্যমান রয়েছে। প্রতিটি রেওয়ায়াত প্রমাণ করে যে, বিতরের নামায তিন রাকাত। মোটকথা, বিতরের নামায তিন রাকাত হওয়ার বিষয়ে হাদীস ও সুন্নাহর বহু প্রমাণা রয়েছে এবং অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ীর আমলও তাই ছিল। এখানে আরেকটি হাদীস উল্লেখ করছি- عن ثابت قال: قال أنس: يا أبا محمد خذ عني فإني أخذت عن رسول الله صلى الله عليه وسلم, وأخذ رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الله, ولن تأخذ عن أحد أوثق مني, قال: ثم صلى بي العشاء, ثم صلى سب ركعات يسلم بين الركعتين, ثم أوتر بثلاث يسلم في آخرهن (الروياني وابن عساكر, ورجاله ثقات, كما في كنز العمال) প্রসিদ্ধ তাবেয়ী সাবেত বুনানী i , বলেন, আমাকে হযরত আনাস ইবনে মালেক i বলেছেন, হে আবু মুহাম্মাদ! (সাবেত e -এর কুনিয়াত-উপনাম) আমার কাছ থেকে শিখে নাও। আমি রাসূলুল্লাহ c থেকে গ্রহণ করেছি। আর তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন থেকে নিয়েছেন। তুমি শেখার জন্য আমার চেয়ে অধিক নির্ভরযোগ্য কাউকে পাবে না। একথা বলে তিনি আমাকে নিয়ে ইশার নামায আদায় করেন। এরপর ছয় রাকাত পড়েন, তা এভাবে যে, প্রতি দুই রাকাতে সালাম ফেরান। এরপর তিন রাকাত বিতর পড়েন এবং সবশেষে সালাম ফেরান। -মুসনাদে রুয়ানী, তারীখে ইবনে আসাকির; ইমাম সুয়ূতী i বলেন, এই হাদীসের রাবীগণ নির্ভরযোগ্য (কানযুল উম্মাল ৮/৬৬-৬৭, হাদীস ২১৯০২ ‘আলবিতরু মিন কিতাবিস সালাত, কিসমুল আফআল) বিতর নামায তিন রাকাত পড়ার ক্ষেত্রেও হানাফী মাযহাব সুন্নাহ সম্মত মাযহাব। সেখানে তিনি সুন্নাতের প্রতিপক্ষ কিভাবে বানালেন মাযহাবে হানাফীকে? একেই বলে নেক সুরতে শয়তানী। মাগরিবের আজানের পর ফরজের আগে দুই রাকাত পড়া প্রসঙ্গে عَن عَبد اللَّهِ بْنِ بُرَيدة، عَن أَبيهِ، رَضِي اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ النَّبيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيه وَسَلَّم قَالَ: بين أَذَانَيْنِ صَلاةٌ إلاَّ الَمْغَرِبَ. হযরত আব্দুল্লাহ বিন বারিদাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল c ইরশাদ করেছেন-প্রতিটি দুই আজান (আজান ও ইকামত) এর মাঝে (নফল) নামায আছে মাগরিব নামায ছাড়া। -মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৪৪২২, আলমুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৮৩২৮, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১০৪০, সুনানে কুবরা বায়হাকী, হাদীস নং-৪১৭২ মুহাদ্দিস বাজ্জার i বলেন, এতে হিব্বান বিন উবায়দুল্লাহ রয়েছেন। যিনি মাশহুর। যার মাঝে কোন সমস্যা নেই। -আলবাহরুর যুখার-১০/৩০৩ عَنْ طَاوُسٍ، قَالَ: سُئِلَ ابْنُ عُمَرَ، عَنِ الرَّكْعَتَيْنِ قَبْلَ الْمَغْرِبِ، فَقَالَ: «مَا رَأَيْتُ أَحَدًا عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّيهِمَا، হযরত তাউস থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর e কে প্রশ্ন করা হল-মাগরিবের (ফরজের আগে ও আজানের পর) আগে কোন নামায আছে কি? তিনি বললেন-আমি নবীজী c এর সময় থেকে আজ পর্যন্ত কাউকে এ সময় নামায পড়তে দেখিনি। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১২৮৪, মুসনাদে আবদ বিন হুমাইদ, হাদীস নং-৮০৪, সুনানে কুবরা বায়হাকী, হাদীস নং-৪১৮৪ আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী i বলেন, হাদীসটির সনদ সহীহ। -উমদাতুল কারী-৭/৩৫৮ আল্লামা ইবনুল মুলাক্কিন i বলেন, এটি হাসান। -আলবাদরুল মুনীর-৪/২৯২ এ মাসআলায়ও হানাফী মাযহাব সুন্নাহ সম্মত। যা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হাদীস দ্বারা প্রমাণিত মতটিকে প্রশ্নকারী জাহিল ভাইটি মাযহাবের ধোয়া তুলে অস্বিকার করে আসলে কি অস্বিকার করছে? মাযহাব নাকি হাদীস? আসলে মাযহাব অস্বিকারকারী নয় হাদীস অস্বিকারকারী। আসর নামাযের সময় প্রসঙ্গে قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: أَنَا أُخْبِرُكَ، صَلِّ الظُّهْرَ، إِذَا كَانَ ظِلُّكَ مِثْلَكَ.وَالْعَصْرَ، إِذَا كَانَ ظِلُّكَ ۞ مِثْلَيْكَ. হযরত আবূ হুরায়রা e বলেন, আমি তোমাদের জানাচ্ছি যে, যখন তোমার ছায়া তোমার সমান হয়, তখন যোহরের নামায পড়, আর যখন তা দ্বিগুণ হয়, তখন আসরের নামায পড়। -মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-১২, ৯, মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-২০৪১, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২১৭৩৪ এ হাদীসতো প্রমাণ করছে হানাফী মাযহাবের মতটি শুধু মাযহাবী মত নয়। বরং এটি হাদীসের মত। হাদীসের মতকে মাযহাবী মত বলে ঠাট্টা করা কি মাযহাবকে ঠাট্টা করা হাদীস ঠাট্টা করা? হাদীসকে নিয়ে যে ব্যক্তি এমন দূরাচারী আচরণ করে থাকে উক্ত ব্যক্তির হেদায়াতের দুআ করা ছাড়া আসলে আমাদের কী’বা করার আছে। মাযহাবের বক্তব্য বলে হাদীস অস্বিকার করার খেলায় মেতেছে উক্ত ভাই। মাযহাবের কোন বক্তব্যই নিজস্ব কোন বক্তব্য নয়। পুরোটাই কুরআন ও সুন্নাহ এরই নির্যাস। তাই মাযহাব অস্বিকার মানে কুরআন ও হাদীস অস্বিকার। একটি মিথ্যাচারের মুখোশ উন্মোচন উক্ত ভাইটির কাছে আমাদের প্রশ্ন তিনি চার মাযহাবের পরস্পরের মাঝে যে কল্পিত বিভেদ আর ফিতনার শংকার কথা লিখলেন সেই ফিতনা আর বিভেদের একটি নজীর এ উপমহাদেশ তথা ভারত, পাকিস্তান বাংলাদেশে দেখাতে পারবেন? আমরা শুধু একটি প্রমাণ চাই। যেখানে এ উপমহাদেশে কোনদিন দুই মাযহাবের মাঝে দ্বন্ধ হয়েছে। স্রেফ একটি প্রমাণ। তাহলে এ তিনি এ দ্বন্দ কোথায় দেখতে পাচ্ছেন? তার কল্পনায়। তার স্বপ্নযোগে! আর তার এ কল্পিত আর স্বপ্নের কথা মানুষকে বলে বলে মানুষকে ধোকা দিচ্ছেন। মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। অথচ এ সকল মাযহাব বিরোধীরাই মূল ফিতনাবাজ। মূল বিভেদ সৃষ্টিকারী। এ উপমহাদেশে ইংরেজরা আসার আগে কোনদিন নামাযের মাসআলা নিয়ে মসজিদে দ্বন্দ হয়নি। কোনদিন তারাবী নিয়ে বিভাদ হয়নি। কিন্তু ইংরেজরা এসে রানী ভিক্টোরিয়ার মাধ্যমে জন্ম দিল ইংরেজদের দোসর এ আহলে হাদীস নামক বিষ বৃক্ষকে। ইংরেজরা চলে গেছে। কিন্তু ইংরেজদের প্রতাত্মা এসব কথিত আহলে হাদীসরা এসে মসজিদে মসজিদে দ্বন্দ ফাসাদ সৃষ্টি করছে। নামাযের মাসআলা নিয়ে মারামারি বাধাচ্ছে। অথচ কোনদিনও নামাযের মাসআলা নিয়ে এ ভারত উপমহাদেশে মাযহাব অনুসারীদের মাঝে কোন ঝগড়া হয়নি। কোন বিবাদ হয়নি। ওরাই ঝগড়ার সূচনা করেছে। ওরাই তারাবীহকে বিবাদের কেন্দ্রবিন্দু বানিয়েছে। অথচ ইংরেজ আসার আগে এটি ঝগড়া হতে পারে মর্মে বলে কেউ কল্পনাও করেনি। তাহলে কি দাঁড়াল? চোর বলছে সাধু ব্যক্তিকে চোর। নিজেরা বাঁধাচ্ছে ঝগড়া, নিজেরা করছে ফিতনা, আর দোষ চাপাচ্ছে মাযহাব অনুসারীদের ঘারে। অথচ মাযহাব অনুসারীদের মাঝে কোনদিনও এ উপমহাদেশে ঝগড়া হয়নি। বিবাদ হয়নি। নিজে চুরি করে অপরকে চোর কেন বলছে এসব আহলে হাদীস নামধারী চোরেরা? নিজের চুরি ঢাকার জন্য। এছাড়া আর কিছু নয়। আল্লাহ তাআলা এসব ধোকাবাজদের হাত থেকে উম্মতে মুসলিমাকে হিফাযত করুন। আমীন।

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২৬ নভেম্বর, ২৩