মাজার বা পীরকে সেজদা করার হুকুম কী

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসআকীদা১৫ এপ্রিল, ২৩

প্রশ্ন

মাজার কে বা পীর সাহেবকে সিজদা করা জায়েজ আছে কিনা? এক ভাই যুক্তি দেয়, আমরা যদি মসজিদে নামাজ পড়ি…. সামনে দেওয়াল থাকে। এর

মানে এই নয় যে আমরা দেওয়ালকে সিজদা করি। অনেক সময় সুন্নত নামাজ পড়ার সময়

সামনে মানুষ বসে থাকে, এর মানে মানুষ কে সিজদা করছিনা। ঠিক তেমনি মাজারে

আমরা আল্লাহকে সিজদা করি, পীরকে না। অন্য আরেক জন বলে সিজদা দুই প্রকার! সিজদা মানে সম্মান দেখানো!

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

ভাল যুক্তি। এরকম যুক্তি দিয়েতো তাহলে মুর্তির সামনে সেজদা দেয়াও জায়েজ হয়ে যাবে। তখন বলবে, তারা মুর্তিকে সেজদা করছে না, বরং আল্লাহকে সেজদা করছে। এটি আসলে একটি খোড়া যুক্তি ছাড়া আর কিছু নয়। আল্লাহকে সেজদা করার জন্য কবরকে সামনে নিতে হবে কেন? যদি সত্যিই আল্লাহকে সেজদা করার ইচ্ছে থাকে, তাহলে সরাসরি আল্লাহকেই সেজদা করে না কেন? আর সুন্নত পড়ার যে উদাহরণ দেয়া হল এটি কেবলি একটি খোড়া যুক্তি, বাস্তবতা ও দ্বীনের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। সেখানে উজরবশতঃ এটি জায়েজ হয়ে থাকে। সেখানে কবরের সামনে সেজদা দেয়ার মাঝে এর কোন ওজরই বাকি নেই। তাই এ যুক্তি এখানে কিছুতেই প্রয়োগ করা যাবে না। সেজদা মানে সম্মান দেখানো হলেতো সালাম বাদ দিয়ে সাহাবায়ে কেরাম সবাই রাসূল c এক সালাম দেয়ার বদলে সেজদাই করতেন তাই না? রাসূল c এর স্ত্রীগণ রাসূল c কে সম্মান করে সেজদা করতেন। কিন্তু এমনটি কোন হাদীসে এসেছে কি? নাকি এসব লোকেরা তাদের মৃত পীর বাবাকে যতটা সম্মান করেন সাহাবাগণ e রাসূল c এর চেয়ে কম সম্মান করতেন? তাহলে সাহাবায়ে কেরামগণ e কেন নবীজী c কে সেজদা করে সম্মান করার পদ্ধতিটি শিখিয়ে গেলেন না? আসলে এটি একটি শিরকী কর্ম। এ কাজ থেকে সবার বিরত থাকা আবশ্যক। নতুবা ঈমান বরবাদ হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা সকল গোনাহই মাফ করে দিতে পারেন। কিন্তু শিরকের গোনাহ মাফ করবেন না। তাই সকলেরই সাবধান থাকা উচিত। আল্লাহ ছাড়া কারো জন্য সেজদা করার নিষিদ্ধতা সম্পর্কিত কয়েকটি হাদীস দেখা যেতে পারে- হযরত মুআজ বিন জাবাল e থেতে বর্ণিত। তিনি সিরিয়া গেলে সেখানকার খৃষ্টান অধিবাসী কর্তৃক পোপ ও পাদ্রীদেরকে সেজদা করতে দেখলেন। হযরত মুআজ e বলেন, আমি তাদেরকে বললামঃ তোমরা কেন এমন কর? তারা উত্তরে বলল, এটাতো আমাদের পূর্ববর্তী নবীদের অভিবাদন (ভক্তি ও সম্মান প্রকাশের মাধ্যম) ছিল। আমি (মুআজ) বললাম, তাহলে আমরা স্বীয় নবীকে এর প্রকারের ভক্তি প্রকাশের অধিক অধিকার রাখি। (সিরিয়া হতে প্রত্যাবর্তনের পর হযরত মুআজ e রাসূল c এর নিকট তাঁকে সেজদা করার অনুমতি চাইলে) তিনি ইরশাদ করেন, এরা (খৃষ্টানরা) স্বীয় নবীদের উপর মিথ্যারোপ করছে (যে তাদের অভিবাদন সেজদা ছিল।)। যেমন ওরা নিজেদের আসমানী কিতাবে বিকৃতি সাধন করেছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাদের মনগড়া অভিবাদনের চাইতে অতি উত্তম অভিবাদন সালাম আমাদের দান করেছেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৯৪০৪, আলমুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৭২৯৪, মুস্তাদরাক আলাস সাহিহাইন, হাদীস নং-৭৩২৫

دَّثَنِي جُنْدَبٌ، قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَبْلَ أَنْ يَمُوتَ بِخَمْسٍ، وَهُوَ يَقُولُ: ……أَلَا وَإِنَّ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ كَانُوا يَتَّخِذُونَ قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ وَصَالِحِيهِمْ مَسَاجِدَ، أَلَا فَلَا تَتَّخِذُوا الْقُبُورَ مَسَاجِدَ، إِنِّي أَنْهَاكُمْ عَنْ ذَلِكَ হযরত জুনদুব e থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল c ইরশাদ মৃত্যুর পূর্বে পাচটি বিষয় বলেছিলেন, (এর মাঝে)…… বলেন, তোমাদের পূর্ববর্তী কত উম্মত স্বীয় নবী ও বুজুর্গদের কবরকে সেজদার স্থান বানিয়েছে। সাবধান! তোমরা কবরকে সেজদার স্থান বানিও না। আমি তোমাদের তা হতে বারণ করছি। -সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫৩২

عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ؛ أَنَّ (ص:241) رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «اللَّهُمَّ لاَ تَجْعَلْ قَبْرِي وَثَناً يُعْبَدُ. اشْتَدَّ غَضَبُ اللهِ عَلَى قَوْمٍ اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ

হযরত আতা বিন ইয়াসার e থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় রাসূল c ইরশাদ করেছেন, হে আল্লাহ! আমার কবরকে প্রতিমার ন্যায় ইবাদতের বস্তু বানিও না। আল্লাহর গজব সেসব লোকের উপর কঠোর আকার ধারণ করেছে, যারা তাদের নবীদের কবরকে সেজদার স্থল বানিয়েছে। -মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৫৭০, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৭৩৫৮ এসব হাদীসসহ আরো অনেক হাদীস প্রমাণ করে আল্লাহ ছাড়া কারো সামনে বা কারো কবরের সামনে সেজদা দেয়া সুষ্পষ্ট কুফরী ও শিরকী কাজ। তাই এসব থেকে বিরত থাকা প্রতিটি মুসলমানের জন্য আবশ্যক।

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১৫ এপ্রিল, ২৩