মহিলাদের জন্য পুরুষের পোশাক পরিধান করার হুকুম কি

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসসভ্যতা ও সংস্কৃতি১১ মে, ২১

প্রশ্ন

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত মেয়েদের যে পোষাক পরিধান করতে হয় সেটা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ কিনা?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

শুধু একটি বিষয় নিয়ে কেন চিন্তিত সেটি আমাদের বোধগম্য নয়। এখানে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আরো একাধিক বিষয়ে চিন্তিত হওয়ার কথা। যথা-

১. শরয়ী পর্দা রক্ষা করা সম্ভব হবে কি না?

২. বসবাস করবে কাদের সাথে? মাহরাম ছাড়া মহিলাদের জন্য বাহিরে বসবাস জায়েজ নয়। তাই করণীয় কি?

৩. পুরুষের পোশাক পরিধান করা জায়েজ হবে কি না?

এই তিনটি পয়েন্টই উক্ত চাকরীতে জয়েন্ট হওয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট। শরয়ী পর্দা রক্ষা করা সম্ভব না হলে, মাহরাম ছাড়া অন্যত্র একাকি বসবাস করতে হলে, সেই সাথে পুরুষের পোশাক পরিধান করতে হলে এ চাকরী করা কিছুতেই জায়েজ হবে না। বিশেষ করে এমন মহিলার জন্যতো কিছুতেই সুযোগ নেই, যিনি এসব না-জায়েজ কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়া ছাড়াও নিজের জীবিকা উপার্জন করতে সক্ষম।

একজন বিশেষজ্ঞ মহিলা ডাক্তার উক্ত না-জায়েজ কাজের সাথে জড়িত হওয়া ছাড়াই ইসলামী শরীয়ত মেনে ডাক্তারী করে নিজের জীবিকা উপার্জন করতে সক্ষম। সেখানে এতগুলো হারাম কাজের সাথে জড়িত হয়ে উক্ত চাকরি করা কি করে জায়েজ হতে পারে? শরয়ী পর্দা অনুসরণ প্রত্যেক নর-নারীর উপর ফরজ বিধান। وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى • আর তোমরা অবস্থান কর তোমার বসবাসের গৃহে। নিজেদের মুর্খতার যুগের মহিলাদের মত প্রকাশ করো না। -সূরা আহযাব-৩৩ এ আয়াত কি প্রকাশ করছে? শুধু কাপড় চোপড় দিয়ে নিজেকে ঢেকে রাখাকেই যথেষ্ট মনে করবে না, বরং এমনভাবে পর্দা করবে যে, শরীরসহ কাপড়ও যেন পরপুরুষের সামনে প্রকাশিত না হয়। যেন কোন পরপুরুষের নজরই নারীর উপর নিবদ্ধ না হতে পারে।

তবে প্রয়োজনের বিষয়টি ভিন্ন। তখন প্রয়োজনে বাহিরে যেতে পারবে। وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ • আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ c -এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। -সূরা আহযাব-৫৩

বিখ্যাত তাফসীরবিদ ইমাম কুরতুবী i উক্ত আয়াতের আলোচনায় বলেন, উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ c -এর স্ত্রীদের কাছে কোনো প্রয়োজনে পর্দার আড়াল থেকে কিছু চাওয়া বা কোনো মাসআলা জিজ্ঞাসা করার অনুমতি দিয়েছেন। সাধারণ নারীরাও উপরোক্ত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। -তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৪৬

নবী করীম c -এর স্ত্রীগণ হলেন সকল মুমিনের মা। অথচ তাঁদের সাথেই লেনদেন বা কথা-বার্তা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে করতে বলা হয়েছে। তাহলে অন্যান্য সাধারণ বেগানা নারীদের ক্ষেত্রে হুকুমটি কত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত তা তো সহজেই অনুমেয়। মহিলাদের জন্য মাহরাম ছাড়া কোথাও অবস্থান করা জায়েজ নয়।

عن أبي سعيد الخدري قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم لا يحل لإمرأة تؤمن بالله واليوم الآخر أن تسافر سفرا يكون ثلاثة أيام فصاعدا إلا ومعها أبوها أو ابنها أو زوجها أو أخوها أو ذو محرم منها • হযরত আবু সাঈদ খুদরী e থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল c ইরশাদ করেছেনঃ আল্লাহ তাআলা এবং কিয়ামত দিবসের উপর ঈমান রাখে এমন কোন মহিলার জন্য জায়েজ নয়, তিন দিন বা এর চেয়ে অধিক দিনের সফর করে অথচ তার সাথে তার পিতা, তার ছেলে, বা তার স্বামী বা তার ভাই কিংবা কোন মাহরাম না থাকে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪২৩

মৃত্যু বা মারাত্মক কোন ক্ষতির আশংকা ছাড়া এমনিতেই পুরুষের জন্য নারীর এবং নারীর জন্য পুরুষের পোশাক পরিধান করা হারাম। عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَال: «لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّجُلَ يَلْبَسُ لِبْسَةَ الْمَرْأَةِ، وَالْمَرْأَةَ تَلْبَسُ لِبْسَةَ الرَّجُلِ» • হযরত আবূ হুরায়রা e থেকে বর্ণিত। রাসূল c অভিসম্পাত করেছেন ঐ পুরুষকে যে মহিলার পোশাক পরিধান করে এবং ঐ মহিলাকে যে পুরুষের পোশাক পরিধান করে। এবার আপনি নিজেই নির্ণিত করে নিন, উক্ত পোষ্টে আপনার বোনের চাকরি করার কী বিধান?

- والله اعلم باالصواب -

সূত্র

  • মুসনাদে আহমদ, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৩২৫
  • সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং: ৪,০৯৮
  • সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং: ৫,৭৫২

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১১ মে, ২১