মসজিদে আসতে অনুৎসাহিত করে আমরা কি মহিলাদের বঞ্চিত করছি

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসনামায৩১ মে, ২২

প্রশ্ন

হুজুর আমাদের এইখানে কিছু আহলে হাদীস ভাই এটা নিয়ে খুব উঠে পরে লেগেছে যে, আমরা হানাফীরা নাকি বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছি উদাহরণ স্বরূপ তিনি বললেন

১. দুই ঈদের নামাজ মহিলাদের পরার কথা হাদীসে থাকলেও হানাফীরা তাদের বঞ্চিত করে।

২. মহিলাদের মসজিদে নামাজ পরার পক্ষে হাদীস থাকলেও হানাফীরা তার বিপক্ষে। আশা করি একটু তারাতারি উত্তরটি জানানর চেষ্টা করবেন।

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

وعليكم السلام ورحنة الله وبركاته আসলে মহিলা আর পুরুষ সমান এ স্লোগানটি মুসলমানদের স্লোগান নয়। ইহুদী ও খৃষ্টানদের স্লোগান। তারা জানে মুসলমানদের ঈমান মজবুত থাকলে, তাদের মনে খারাবী না থাকলে তাদের সেই ঈমানী বলের সাথে পৃথিবীর কোন তাগুতী শক্তি কুলিয়ে উঠবে না। তাই তারা নারীদের পুরুষদের কাতারে শামিল করে পুরুষদের মনের পবিত্রতাকে নষ্ট করার ষড়যন্ত্র শুরু করে। সিনেমা, নাটক, ড্রামা ইত্যাদির মাধ্যমে আমাদের যুবকদের নজর নষ্ট করে দিয়েছে। দিয়েছে মনের সুকোমল পবিত্রতাকে। নামাযী ব্যক্তিদের মধ্যেও সেই নোংরামী ঢুকানোর জন্য স্লোগান তুলেছে নারীদেরও মসজিদে আসতে হবে। পুরুষ নারী একসাথে নামায পড়বে। যেন নামাযী ব্যক্তিদের নজরও পবিত্র না থাকে। ইহুদী খৃষ্টানদের থিউরী পুরুষ ও নারী এক। তারা সমান সমান। সরাসরি মুসলমানরা এ থিউরী গিলবে না। তাই ধর্মের নামে তা প্রবেশ করাচ্ছে আলেম নামের কিছু অর্থলোভীদের মাধ্যমে। স্লোগান তুলে দিল মুখে মুখে পুরুষরা মসজিদে আসতে পারলে নারীরা পারবে না কেন? আর এজন্য আশ্রয় নিল কিছু মানসুখ ও রাসুল c এর জমানার সাথে খাস কিছু হাদীসের। আল্লাহ তাআলা এ ষড়যন্ত্রকারীদের থেকে মুসলিম উম্মাহকে হিফাযত করুন। নারীদের আসল স্থান হল তাদের বসবাসের ঘর। নারীদের মসজিদে এসে নামায পড়া রাসূল c পছন্দ করতেন না। তবে যেহেতু রাসূল c সবার নবী। আর রাসূল c এর কাছে ওহী নাজিল হতো। তাই নারীরা রাসূল c এর জমানায় ওহীর বানী শুনার জন্য মসজিদে আসতো। এটি ছিল শুধুই প্রয়োজনের তাগিতে। যে প্রয়োজন রাসূল c ইন্তেকালের দ্বারা বন্ধ হয়ে গেছে। প্রয়োজনীয় দ্বীন শিখা প্রতিটি নর-নারীর জন্য আবশ্যক। রাসূল c ছিলেন সেই দ্বীনের বাহক। তাই রাসূল c এর সময়ে যেহেতু সময়ে সময়ে দ্বীনের বিধান অবতীর্ণ হতো, তাই পুরুষ সাহাবীদের সাথে মহিলা সাহাবীরাও রাসূল c এর দরবারে এসে সেই দ্বীন শিখতে চেষ্টা করতেন। সেখানে পুরুষ নারী এক সাথে হওয়ার কারনে কোন ফিতনার আশংকা ছিল না। কিন্তু বর্তমানে সেই আশংকা ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করেছে। তাই ফুক্বাহায়ে কেরাম নারীদের ঈদগাহে ও মসজিদে গিয়ে নামায পড়তে নিষেধ করেন। এটা না জায়েজ নয়, তবে মাকরূহ। সেই সাথে ইসলামের মূল স্পিরিটের বিপরীত পদ্ধতি। কারণ ইসলামের মূল থিউরী হল নারীরা থাকবে বাড়িকে সৌন্দর্য মন্ডিত করে। রাস্তাঘাটে অবাধে বিচরণ এটা তাদের কাজ নয়। নিম্নের হাদীসগুলো দেখুন- عن عبد الله بن سويد الأنصاري عن عمته امرأة أبي حميد الساعدي : أنها جاءت النبي صلى الله عليه و سلم فقالت : يا رسول الله صلى الله عليه و سلم إني أحب الصلاة معك فقال : قد علمت أنك تحبين الصلاة معي و صلاتك في بيتك خير من صلاتك في حجرتك و صلاتك في حجرتك خير من صلاتك في دارك و صلاتك في دارك خير من صلاتك في مسجد قومك و صلاتك في مسجد قومك خير من صلاتك في مسجدي فأمرت فبني لها مسجد في أقصى شيء من بيتها و أظلمه فكانت تصلي فيه حتى لقيت الله عز و جل আব্দুল্লাহ বিন সুয়াইদ আল আনসারী e তার চাচা থেকে বর্ণনা করেন যে, আবু হুমাইদ আস সায়িদী এর স্ত্রী রাসূল c এর কাছে এসে বললেনহে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয় আমি আপনার সাথে নামায পড়তে পছন্দ করি। তখন নবীজী c বললেন-আমি জেনেছি যে, তুমি আমার সাথে নামায পড়তে পছন্দ কর। অথচ তোমার একান্ত রুমে নামায পড়া উত্তম তোমার জন্য তোমার বসবাসের গৃহে নামায পড়ার চেয়ে। আর তোমার বসবাসের গৃহে নামায পড়া উত্তম তোমার বাড়িতে নামায পড়ার চেয়ে। আর তোমার বাড়িতে নামায পড়া উত্তম তোমার এলাকার মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে। আর তোমার এলাকার মসজিদে নামায পড়া উত্তম আমার মসজিদে (মসজিদে নববীতে) নামায পড়ার চেয়ে। তারপর তিনি আদেশ দিলেন তার গৃহের কোণে একটি রুম বানাতে। আর সেটিকে অন্ধকারচ্ছন্ন করে ফেললেন। তারপর সেখানেই তিনি নামায পড়তেন মৃত্যু পর্যন্ত। সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১৬৮৯, ইলাউস সুনান-৩/২৬। এ হাদীস কি প্রমাণ করছে? মহিলারা মসজিদে না গিয়ে বাড়িতে নামায পড়বে এ নির্দেশ কার? যদি রাসূল c নারীদের মসজিদে আসাকে অপছন্দ করে থাকেন, তাহলে সেখানে আমি কে যে, তাদের মসজিদে আসা পছন্দ করবো? তাহলে বঞ্চিত করার প্রশ্ন করাটা কতটুকু যৌক্তিক। ঐ ব্যক্তির বক্তব্য অনুপাতে যদি এর নাম বঞ্চনা হয়, তাহলে এ বঞ্চনাতো রাসূল c যে বঞ্চিত করার শিক্ষা দিয়েছেন সেটি আমাদের জন্য পালনীয়। যদিও কথিত এসব আহলে হাদীস নামধারী সুন্নতের দুশমনদের কাছে পছন্দনীয় না হয়। عن أبي عمرو الشيباني أنه رأى بن مسعود يخرج النساء من المسجد ويقول أخرجن إلى بيوتكن خير لكن হযরত আবু আমর বিন শায়বানী থেকে বর্ণিত। তিনি দেখেছেন-হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ e মহিলাদের মসজিদে থেকে বের করে দিতেন। আর বলতেন যে, মসজিদের চেয়ে তোমাদের জন্য ঘরই উত্তম। মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৫২০১, মুসান্নাফে ইবনুল জি’দ, হাদীস নং-৪২৯ সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৫৪৪১ আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৯৪৭৫। ভাল করে খেয়াল করুন। আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ e অপছন্দ করেন, আমরাও তা অপছন্দ করি। যে বঞ্চনা রাসূল c এর প্রিয় সাহাবীর আমল। সেটি আমাদের গলার মালা। যদিও সেটি সাহাবা বিদ্বেষীদের অপছন্দ হয়ে থাকে। عَنْ عَمْرَةَ بِنْتِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَنَّهَا أَخْبَرَتْهُ أَنَّ عَائِشَةَ زَوْجَ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- قَالَتْ لَوْ أَدْرَكَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم– مَا أَحْدَثَ النِّسَاءُ لَمَنَعَهُنَّ الْمَسْجِدَ كَمَا مُنِعَهُ نِسَاءُ بَنِى إِسْرَائِيلَ. قَالَ يَحْيَى فَقُلْتُ لِعَمْرَةَ أَمُنِعَهُ نِسَاءُ بَنِى إِسْرَائِيلَ قَالَتْ نَعَمْ. হযরত আমরাতা বিনতে আবদির রহমান বলেন-রাসূল c এর সহধর্মীনী হযরত আয়শা e বলেছেন-যদি রাসূলুল্লাহ c মহিলাদের এখনকার অবস্থা জানতেন, তারা কি করে? তাহলে তাদের মসজিদে আসতে নিষেধ করতেন যেভাবে বনী ইসরাঈলের মহিলাদের নিষেধ করা হয়েছে। ইয়াহইয়া বলেন-আমি আমরাতাকে বললাম-বনী ইসরাঈলের মহিলাদের কি মসজিদে আসতে নিষেধ করা হয়েছে? তিনি বললেন-হ্যাঁ। সহিহ মুসলিম -১/১৮৩, হাদীস নং-১০২৭ সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৫৬৯ মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৫৯৮২ মুসনাদুর রাবী, হাদীস নং-২৫৯ সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৫৪০ এবার ভেবে দেখুন-রাসূল c এর তিরোধানের পর মুসলিম নারীরা এমন কি পোশাক পড়তেন, যার কারনে আম্মাজান হযরত আয়শা e একথা বলেছেন? আর বর্তমান নারীদের পোশাকের দৃশ্য দেখলে আম্মাজান আয়শা e কী বলতেন? উপরোক্ত হাদীস দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যে, বর্তমানে নারীদের মসজিদে আসার স্লোগান এটি মূলত নামাযীদের মনে খারাবী সৃষ্টির ষড়যন্ত্র। যা ইহুদী খৃষ্টানদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের নীল নকশা। মানুষকে ধোকা দেয়ার জন্য যে নোংরামীর গায়ে লেবেল লাগানো হয়েছে দ্বীন আর বঞ্চিত হবার মুখরোচক স্লোগান। আল্লাহ তাআলা আমাদের এ ফিতনাবাজ কথিত আহলে হাদীসদের ধোকা থেকে মুসলিম উম্মাহকে হিফাযত করুন। আমীন।

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ৩১ মে, ২২