ভাড়া বাসার এডভান্সের যাকাত কার উপর আবশ্যক

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসভাড়া-লিজ৯ মে, ২১

প্রশ্ন

জনাব,

যথাবিহীত সম্মান প্রদর্শনপূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, আমার চাচার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে, যা একটি ভাড়াকৃত (দোকান) ঘরে অবস্থিত। যে ঘরটি ভাড়া নেয়ার সময় ঘরের মালিক চাচার কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমান (৪/৫ লাখ) টাকা অগ্রীম হিসেবে গ্রহন করে, এবং চুক্তি এরূপ হয় যে, মেয়াদ (৩/৪/৫ বছর) শেষ হওয়ার পর ভাড়াটিয়া (আমার চাচা) অগ্রীমের পূর্ন টাকা ফেরত পাবেন। এই সময় টাকাটা জামানতের মত থাকবে। আর মাসিক ভাড়া নিয়ম মত প্রতি মাসে পরিশোধ করবেন। এমতাবস্থায় উক্ত অগ্রীমের টাকার মুল মালিক যদিও আমার চাচা, কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তা ব্যবহারের কোন সুযোগই চাচার নেই। বরং ঘরের মালিক তার নিজ প্রয়োজনে বা ব্যবসায় ব্যবহার করে উপকৃত হচ্ছেন। (অগ্রীম গ্রহন করার দ্বিতীয় উদ্দেশ্য সাধারনতঃ এটাই হয়ে থাকে, উক্ত টাকা থেকে লাভবান হওয়া।)

অতএব, আপনাদের নিকট বিনীত প্রশ্ন হলো, উক্ত মেয়াদের সময়ে অগ্রীমের টাকার যাকাত কে আদায় করবে? আমার চাচা নাকি ঘরের মালিক?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

এ মাসআলাটি আসলে ব্যাখ্যা সাপেক্ষ্য বিষয়। প্রথমত পরিস্কার হতে হবে বাড়াদাতা উক্ত টাকাটি কী হিসেবে নিচ্ছেন? আর তিনি কী হিসেবে উক্ত টাকা খরচ করছেন? উক্ত টাকাটি খরচ করা তার জন্য জায়েজ কি না? যদি ধরা হয় যে, উক্ত টাকাটি ভাড়াদাতা জামানাত হিসেবে নিচ্ছেন। তাহলে উক্ত টাকাটি ভাড়াদাতার কাছে আমানত। আর আমানতের বস্তুতে হস্তক্ষেপ করা তথা ব্যয় করা জায়েজ নয়। সে হিসেবে উক্ত টাকার মালিক মূলত ভাড়াটিয়া থেকে যান। তাই প্রতি বছর উক্ত টাকার উপর যাকাত ভাড়াটিয়ারই দিতে হবে। যেহেতু উক্ত টাকা ভাড়াদাতা নিয়ে খরচ করে ফেলেন। তাই এটি আমানত হতে পারে না। তাছাড়া আমানতের বস্তু আমানতদারের বিনা ইচ্ছেয় ধ্বংস হয়ে গেলে এর জরিমানা দিতে হয় না। অথচ বিষয়টি এখানে এমন নয়। কারণ কোন কারণে উক্ত টাকা ভাড়াদাতার কাছ থেকে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেলেও ভাড়াটিয়াকে উক্ত টাকা পরিশোধ করে দিতে ভাড়াদাতা বাধ্য। তাই এটি আমানতের হুকুমে হতে পারে না। যদি রেহেন তথা বন্ধকি সম্পদ বলা হয়, তবুও একই হুকুম দাঁড়াচ্ছে। কারণ বন্ধককৃত বস্তুও বন্ধক গ্রহিতার কাছে আমানতই থাকে। অথচ এখানে আমানতের হুকুম প্রয়োগ করা সম্ভব নয়। যেহেতু উক্ত টাকাটি বন্ধক গ্রহিতা নিজস্ব প্রয়োজনে খরচ করে ফেলে। আর যদি ঋণ ধরা হয়। তাহলেও চুক্তিটি বৈধ হচ্ছে না। কারণ ঋণের বিনিময়ে কারো থেকে উপকার অর্জন করাও সুদ। তাই ঋণ ধরেও এ চুক্তিটিকে জায়েজের আওতায় আনা সম্ভব নয়। তবে এক্ষেত্রে একটি পদ্ধতি অবলম্বন করলে উক্ত চুক্তিটি জায়েজের আওতাভুক্ত হয়। সেটি হল, দীর্ঘ মেয়াদী ভাড়া চুক্তি সম্পাদন। অর্থাৎ ভাড়া চুক্তি সম্পাদনের সময় প্রতি মাসের নির্দিষ্ট ভাড়ার কথা উল্লেখ করা হবে। তারপর সামনে আগত মাসের ভাড়া অগ্রীম পরিশোধ করার নামে উক্ত অতিরিক্ত টাকা প্রদান করা হবে। প্রতি মাসে ভাড়াটিয়া নির্ধারিত ভাড়া পরিশোধ করতে থাকবে। আর যে মাসে উক্ত স্থান থেকে ভাড়াটিয়া চলে যাবে তার কয়েক মাস আগে থেকে ভাড়াদাতার কাছে জমাকৃত উক্ত টাকা থেকে ভাড়া পরিশোধ করে নেয়া হবে। আর যদি কোন অর্থ তারপরও বেঁচে যায়, তাহলে মালিক তা ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে। যদি এ সুরত অবলম্বন করা হয়, তাহলে উক্ত চুক্তিটি এবং অতিরিক্ত টাকা প্রদানটি একটি জায়েজ চুক্তি হবে। তাই উক্ত অতিরিক্ত টাকাটির মালিক হয়ে যাবে বাড়ির মালিক। এতে মৌলিকভাবে ভাড়াটিয়ার কোন মালিকানা বাকি থাকবে না। যেহেতু ভাড়াটিয়া উক্ত টাকার মালিক থাকছে না, তাই তার উপর উক্ত টাকার যাকাত আবশ্যক হওয়ার প্রশ্নই আসে না। পক্ষান্তরে যেহেতু বাড়ির মালিক উক্ত টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছে, তাই উক্ত টাকা খরচ করা তার জন্য জায়েজ হবে। সেই সাথে উক্ত টাকার যাকাতও তার উপর আবশ্যক হবে।

- والله اعلم باالصواب -

সূত্র

  • رد المحتار, খন্ড: ১০, পৃষ্ঠা: ৮২
  • طحطاوى على الدر, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ২৩৬
  • مجمع الأنهر, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ২৭৩
  • رد المحتار, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ২৯৫
  • فتح القدير, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ১৭৪
  • জাদীদ ফিক্বহী মাসায়েল, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ১৪৭

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ৯ মে, ২১