আমি আনোয়ারা বেগম। আমার মোট পাঁচ সন্তান। ২ জন ছেলে, ৩ জন মেয়ে। একজন মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী। অন্য ছেলে পরিবার নিয়ে ভিন্ন থাকে। সে আমাদের ভরণ-পোষণ দেয় না। আমার স্বামী (ক্যানসারের রোগী ছিলেন) অসুস্থ হওয়া থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল খেদমত আমার ছোট মেয়ে করেছে এবং আমার ও আমার মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের সমস্ত দায়-দায়িত্ব মৃত্যু পর্যন্ত আমার ছোট মেয়ে বহন করবে। এই দায়-দায়িত্ব বহন করার শর্তে আমি তার নামে আমার বসত-বাড়ীর ৩১ শতাংশ জমি হেবা দলীল করে দিয়েছি। এছাড়া আমার আরো (১৪৪ শতাংশ ১৮ গণ্ডা) জমি আছে, যাতে আমার মৃত্যুর পর পাঁচ সন্তান মিরাছের ভিত্তিতে শরীক হবে। মুফতী সাহেবের কাছে আমার জানার বিষয় হল :
১. মৃত্যু পর্যন্ত আমার ও আমার মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের সকল দায়-দায়িত্ব বহন করার শর্তে আমার ছোট মেয়ের নামে বসত-বাড়ীর ৩১ শতাংশ দলীল করে দেওয়া শরীয়তসম্মত হয়েছে কি না?
২. আরো জানতে চাই, আমি আমার (১৪৪ শতাংশ ১৮ গণ্ডা) জমির আয় আমার ছোট মেয়েকে দিচ্ছি। উক্ত আয় এককভাবে তাকে দেওয়া বৈধ হচ্ছে কি না? নাকি আমার সকল সন্তানের মাঝে তা বণ্টন করে দিতে হবে?
৩. আরো জানতে চাই, আমার মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের পেছনে ছোট মেয়ের ব্যয়ের পরিমাণ যদি অনেক বেশি হয়, তাহলে আমার ছেলে মিরাছসূত্রে যে সম্পদ পাবে, তা থেকে কর্তন করা যাবে কি না? নাকি ব্যয় বেশি হলেও তা ছোট মেয়েকেই বহন করতে হবে?
৪. আরো জানতে চাই, মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে ওয়ারিশসূত্রে যে জমি পাবে, তার মৃত্যুর পর ঐ জমির মালিক কে হবে? যেহেতু তার স্ত্রী-সন্তান নেই। যেহেতু ছোট মেয়ে তার দায়-দায়িত্ব নিয়েছে, সুতরাং উক্ত সম্পদ ছোট মেয়ে পাবে, নাকি সকল ওয়ারিশই পাবে?
উপরোক্ত সব বিষয়ে দয়া করে সমাধান জানিয়ে আমাদের অস্থিরতা দূর করবেন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : প্রশ্নে কেবলমাত্র আমার ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে।
- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -
১. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি আপনার ও আপনার মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের মৃত্যু পর্যন্ত ব্যয়ভার বহন করার শর্তে ছোট মেয়েকে যে জমিনটুকু হেবা দলীল করে দিয়েছেন তা বৈধ হয়েছে। আপনার মেয়ে উক্ত জমি নিজে দখলে নেওয়ার দ্বারা তার মালিক হয়ে গেছে। এখন তার দায়িত্ব হল নিজের কৃত শর্ত পূরণ করা।
২. মেয়েকে হেবা করার পর আপনার মালিকানায় যে ১৪৪ শতাংশ জমি রয়েছে, তার আয়ের মালিক আপনি। উক্ত আয় কোথায় কীভাবে খরচ করবেন সে ব্যাপারে আপনার একক অধিকার রয়েছে। সন্তানরা সামর্থ্যবান হলে তাতে কারো কোনো বিশেষ অধিকার নেই। আপনি চাইলে তা নিজের কাছে জমা রাখতে পারেন। অথবা সন্তানদের তা বণ্টন করে দিতে পারেন। আবার এক্ষেত্রে ছোট মেয়ে যেহেতু একা আপনাদের দেখাশোনা করছে তাই উক্ত জমির আয় বিশেষভাবে তাকে দিতেও কোনো অসুবিধা নেই।
৩. ৪. আপনি ও আপনার অসুস্থ ছেলে যে সম্পদ নিজেদের মালিকানাধীন রেখে যাবেন তা পরবর্তীতে মীরাছনীতি অনুযায়ীই বণ্টিত হবে। আপনার ও আপনার অসুস্থ ছেলের সেবার কারণে আপনার ছোট মেয়ে কোনো অতিরিক্ত অংশ দাবি করতে পারবে না। তবে আপনি চাইলে নিজ জীবদ্দশায় তাকে এ ব্যাপারে আর্থিক সহযোগিতা করতে পারেন।
- والله اعلم باالصواب -