ব্যাংকে ইন্টার্নশিপ করার হুকুম কি

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসব্যাংক-বিমা২০ এপ্রিল, ২২

প্রশ্ন

আমি বিবিএ পড়ছি, যার একটি কোর্স হিসেবে আমাদের ব্যাংকে ইন্টার্নশিপ করতে হয়। এটা কি হারাম হবে? উল্লেখ্য, ইন্টার্নশিপ থেকে আমি কোনও বেতন বা উপার্জন পাবো না। শুধুমাত্র কোর্স পাশ করার প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট পাবো। দয়া করে উত্তর দিয়ে জটিলতা থেকে মুক্তিতে সহায়তা করলে কৃতজ্ঞ থাকব।

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

ইন্টার্নশিপ কি? বিজনেস গ্র্যাজুয়েট বা টেকনিক্যাল গ্র্যাজুয়েটদের কোন প্রতিষ্ঠানে খন্ডকালীন কোন একটি বিষয়ে হাতে-কলমে শিক্ষা নেয়াকে ইন্টার্নশিপ বলা হয়ে থাকে। ইন্টার্নশিপ পড়াশোনার অন্যতম অংশ। কারণ, ইন্টার্নশিপ রিপোর্ট জমা দেয়ার পরই একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদ পেয়ে থাকে। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে ইন্টার্নশিপ বাধ্যতামূলক নয়। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে এ বিষয়ে আলাদা নিয়ম। এমবিএ প্রোগ্রামে ইন্টার্নশিপ সম্পর্কে মতপার্থক্য থাকলেও আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের কয়েকটি বিষয়ে ইন্টার্নশিপ মোটামুটি বাধ্যতামূলক। উক্ত অবস্থা বিবেচনায় মৌলিকভাবে ইন্টার্নশিপ জায়েজ আছে। কিন্তু কথা হল ব্যাংকে ইন্টার্নশিপ জায়েজ কি না? যেহেতু ইন্টার্নশিপ করার দ্বারা শিক্ষার্থী একজন চাকরীজীবীর মতই উক্ত প্রতিষ্ঠানে কাজ কর্ম পরিচালনা করে থাকেন। প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন কার্য পরিচালনায় সহযোগী হয়ে থাকেন। সেই ক্ষেত্রে আমাদের দেখতে হবে কোন কাজে শিক্ষার্থীটি সহযোগিতা করছে? যদি উক্ত কাজটি ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী জায়েজ হয়, তাহলে শিক্ষার্থীর কাজটি জায়েজ হবে। আর যদি উক্ত কাজটি না জায়েজ হয়, তাহলে শিক্ষার্থীটির জন্য উক্ত কাজের সহযোগিতা করা জায়েজ হবে না। এ হিসেবে আমরা জানি যে, ব্যাংকের সকল লেনদেনই কিন্তু না-জায়েজ নয়। বরং কেবলমাত্র সুদী লেনদেন না জায়েজ। ব্যাংকের অবস্থা এই যে, তার পূর্ণ সম্পদ কয়েকটি বিষয়ের সমষ্টি। যথা- ১-মূলধন। ২-সঞ্চয়কারীদের জমাকৃত টাকা। ৩-জায়েজ ব্যবসার আমদানী। ৪-সুদ এবং হারাম ব্যাবসার আমদানী। এ চারটি বিষয়ের মাঝে কেবল ৪র্থ সুরতটি হারাম। বাকিগুলো যদি কোন হারাম কাজ না হয় তাহলে মূলত জায়েজ। যেসব ব্যাংকে প্রথম ৩টি বিষয়ের লেনদেন অধিক। আর ৪র্থ বিষয়টি তথা হারাম লেনদেনের লভ্যাংশ কম সেসব ব্যাংকের হালাল লেনদেনের উপর ইন্টার্নশিপ জায়েজ। কোন সমস্যা নেই। হারাম কাজের সহায়তার বিভিন্ন স্তর আছে। শরীয়তে সর্ব ধরণের সহায়তা হারাম নয়। বরং সেসব সহায়তা হারাম যাতে সরাসরি হারাম কাজে জড়িত হওয়া হয়। যেমন সুদী লেনদেন করা। সুদী লেনদেন লেখা। সুদী টাকা উসুল করা ইত্যাদী। عبد الله بن مسعود عن أبيه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال لعن الله آكل الربا وموكله وشاهديه وكاتبه হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ e এর পিতা থেকে বর্ণিত। রাসূল c ইরশাদ করেছেন-“যে সুদ খায়, যে সুদ খাওয়ায়, তার সাক্ষী যে হয়, আর দলিল যে লিখে তাদের সকলেরই উপর আল্লাহ তায়ালা অভিশাপ করেছেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-৩৮০৯, মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস নং-৪৯৮১ সুতরাং উল্লেখিত বক্তব্যের আলোকে আপনার জন্য ব্যাংকের হালাল ডিপার্টমেন্টে ইন্টার্নশিপ করা জায়েজ আছে। হারাম ডিপার্টমেন্টে জায়েজ হবে না। যেহেতু তার দ্বারা হারাম কাজের সহযোগিতা হয়ে যাবে। যা জায়েজ নয়। وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ (٥:٢) সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তিদাতা। -সূরা মায়িদা-২

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২০ এপ্রিল, ২২