বৃহস্পতিবার তাবলীগের মার্কাজে একত্র হওয়া কি বিদআত

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

আসলে এসব অন্তসারশূণ্য বিদ্বেষমাখা প্রশ্নের উত্তর দিতে মন সায় দেয় না। রাসূল c এর স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে, عَنْ عَلِيِّ بْنِ حُسَيْنٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ مِنْ حُسْنِ إِسْلَامِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيهِ অনুবাদ- হযরত আলী e থেকে বর্ণিত। রাসূল c ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয় ইসলামের সৌন্দর্যের মাঝে এটিও একটি যে, অযথা বিষয়কে উপেক্ষা করা। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৩৯৭৬, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৩১৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭৩৭ কিন্তু যেহেতু এমন অহেতুক বিষয় নিয়েও মুসলিম জনসাধারণ্যের মাঝে ফিতনা ছড়াচ্ছে নামধারী আহলে হাদীসরা। তাই বাধ্য হয়ে এর জবাব লিখছি। আসলে চূড়ান্ত অজ্ঞতা আর মুর্খতার দরূন এমন প্রশ্ন উদিত হয়েছে ভাইটির মনে। আসুন আমরা আগে হাদীসটি দেখে নেই- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لَا تَخْتَصُّوا لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ بِقِيَامٍ مِنْ بَيْنِ اللَّيَالِي، وَلَا تَخُصُّوا يَوْمَ الْجُمُعَةِ بِصِيَامٍ مِنْ بَيْنِ الْأَيَّامِ، إِلَّا أَنْ يَكُونَ فِي صَوْمٍ يَصُومُهُ أَحَدُكُمْ» হযরত আবূ হুরায়রা e থেকে বর্ণিত। রাসূল c ইরশাদ করেছেন, রাতসমূহের মাঝে তোমরা জুমআর রাতকে নামাযের জন্য বিশেষভাবে খাস করো না। আর দিনসমূহের মাঝে জুমআর দিনকে রোযা রাখার জন্য বিশেষভাবে খাস করো না। তবে যদি তোমাদের রোযা রাখার মাঝে এদিন এসে যায়, তাহলে ভিন্ন কথা। -সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১১৪৪ ¯্রফে অনুবাদের দিকে খেয়াল করলেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতকে রাসূল c বিশেষভাবে নামায পড়ার জন্য খাস করতে নিষেধ করেছেন। আর পরদিন তথা জুমআর দিনকে বিশেষভাবে রোজার জন্য খাস করতে নিষেধ করেছেন। আর আমরা সবাই জানি, তাবলীগের মার্কাজে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে কি সবাই একত্র হয় বেশি বেশি করে নামায পড়ার জন্য? বা পরদিন রোযা রাখার জন্য? না দ্বীনী কথা শুনে, দ্বীনী বিষয় শিখে দ্বীন পালনের জজবা আনয়নের জন্য? একথা তাবলীগ সংশ্লিষ্ট সবাই জানেন যে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে তারা মার্কাজের মসজিদে একত্র হন, দ্বীনী বয়ান শুনে, দ্বীনী বিষয় শিখে নিজের ঈমানকে তাজা করার জন্য একত্র হন। বেশি বেশি করে সে রাতে ইবাদত করা পরদিন রোযা রাখা ইত্যাদি উদ্দেশ্য হয় না। তাহলে মুসলিম শরীফের উল্লেখিত তাবলীগের বিরুদ্ধে দলীল হল কিভাবে? এটাতো পুরোপুরোই হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞতাসূচক মনোভাব ছাড়া আর কিছুই নয়। পক্ষান্তরে বৃহস্পতিবারে দ্বীন বয়ান, দ্বীনী মুযাকারা ও দ্বীনী কথা শুনার জন্য মসজিদে একত্রি হওয়ার বর্ণনা রাসূল c এর নিকটতম সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ e থেকে প্রমাণিত। হাদীসে এসেছে- عَنْ أَبِي وَائِلٍ، قَالَ: كَانَ عَبْدُ اللَّهِ يُذَكِّرُ النَّاسَ فِي كُلِّ خَمِيسٍ فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ: يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ لَوَدِدْتُ أَنَّكَ ذَكَّرْتَنَا كُلَّ يَوْمٍ؟ قَالَ: أَمَا إِنَّهُ يَمْنَعُنِي مِنْ ذَلِكَ أَنِّي أَكْرَهُ أَنْ أُمِلَّكُمْ، وَإِنِّي أَتَخَوَّلُكُمْ بِالْمَوْعِظَةِ، كَمَا كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَخَوَّلُنَا بِهَا، مَخَافَةَ السَّآمَةِ عَلَيْنَا “ হযরত ওয়াইল e থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনে মাসউদ e প্রতি বৃহস্পতিবার লোকদের ওয়াজ নসীহত করতেন। তাঁকে একজন বলল, হে আবূ আব্দুর রহমান! আমার মন চায়, যেন আপনি প্রতিদিন আমাদের নসীহ করেন। তিনি বললেন, এ কাজ থেকে আমাকে যা বিরত রাখে তা হল, আমি তোমাদের ক্লান্ত করতে পছন্দ করি না। আর আমি নসীহত করার ব্যাপারে তোমাদের (অবস্থার) প্রতি লক্ষ্য রাখি, যেমন রাসূল c আমাদের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন আমাদের ক্লান্তির আশংকায়। -সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৭০ ইমাম বুখারী i যে পরিচ্ছেদে এ হাদীস এনেছেন, তার শিরোনাম দিয়েছেন- بَابُ مَنْ جَعَلَ لِأَهْلِ العِلْمِ أَيَّامًا مَعْلُومَةً তথা ইলম শিক্ষার্থীর জন্য দিন নির্দিষ্ট করা। বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার ইবনে হাজার আসকালানী i উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, بعض النصوص المبينة والضابطة لحكم توقيت الوعظ، তথা কতিপয় সুষ্পষ্ট ইবারত ও মূলনীতি ওয়াজ-নসীহতের জন্য সময় নির্ধারণের নির্দেশ দেয়। (ফাতহুল বারী) উল্লেখিত হাদীস এবং ইবনে হাজার আসকালানী i এর ব্যাখ্যা দ্বারা একথা সুষ্পষ্টরূপে প্রমাণ করছে যে, ওয়াজ-নসীহতের জন্য সময় নির্ধারণ করা এটি শরীয়ত সম্মত। এবং খোদ সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ e নিজেই প্রতি বৃৃহস্পতিবার ওয়াজ ও নসীহত করতেন। তাহলে তাবলীগের মার্কাজের বয়ান ও নসীহতের জন্য একত্র হওয়া কিভাবে বিদআত হয়? আল্লাহ তাআলা আমাদের এসব জাহিল ব্যক্তিদের প্রোপাগান্ডা থেকে মুসলিম উম্মাহকে হিফাযাত করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।

- والله اعلم باالصواب -