বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব এবং উলামায়ে কিরামকে গালি দেয়া

ইসলামী জিন্দেগীসভ্যতা ও সংস্কৃতি২৪ ফেব, ২১

প্রশ্ন

যারা অমুসলিমদেরকে নিজেদের বন্ধু বলে মনে করে, বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার পরও যাদের মনে কোনরূপ ব্যথার প্রতিক্রিয়া আসে না, কুরআন সংশোধনের দাবীর পরে তাদের মনে কোন আপত্তি হয় না, আলেম-উলামাগণকে হেয় প্রতিপন্ন করতে, মৌলবাদী ও ফতোয়াবাজ বলতে দ্বিধা করে না এবং দেশে শান্তি-শৃংখলা বজায় থাকার পরও যারা সর্বদা সাম্প্রদায়িকতা ও সম্প্রীতি বিনষ্টের মিথ্যা ধূয়া তুলে আলেম সমাজ ও দ্বীনদার মুসলমানদের বিরুদ্ধে মিছিল করছে, তারা কেমন মুসলমান? তারা তো নামায-রোযা ইত্যাদিও পালন করে। তাদের সম্পর্কে কি হুকুম?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াত এবং বহু হাদীসে অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। কুরআনের আয়াত এবং হাদীস সম্পর্কে গভীর জ্ঞান না থাকার কারণে অনেকের মনে হয়তো প্রশ্ন আসতে পারে যে, রাসূলুল্লাহ c তো বিধর্মীদের সাথে ভাল ব্যবহার করতেন এবং সকলের সাথে ভাল ব্যবহার করার জন্য অন্যদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। তাহলে বিধর্মীদের সাথে শত্রুতা পোষণের কি অর্থ? তাদের সেই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে- এ হাদীস তো ঠিক, কিন্তু এটা সকল বিধর্মীদের ব্যাপারে নয়। বরং শুধু তাদের ব্যাপারেই যারা মুসলমানদের সাথে ধর্মের ব্যাপারে যুদ্ধরত নয় এবং মাতৃভূমি থেকে মুসলমানদের বহিষ্কার করার কখনও চিন্তা ভাবনাও করেনা কোনভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত নয়। শুধুমাত্র তাদের সাথে মানবতার দাবীতে সহানুভূতি দেখানো এবং বিপদে-আপদে সমবেদনা প্রকাশের নির্দেশ রয়েছে। বর্তমান বিধর্মীদের যে অবস্থা, তারা মুসলমানদের ধর্মীয় ব্যাপারে আঘাত হানাতো সাধারণ ব্যাপার, উপরন্তু তারা মুসলমানদের রক্ত দিয়ে খেলায় মেতে উঠেছে। তাদের বর্বরতা থেকে অবুঝ নিষ্পাপ শিশু এবং নিরীহ মহিলারা পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না। তারা ভূপৃষ্ঠে মুসলমানদের অস্তিত্বই সহ্য করতে পারছে না। এদের সাথে বন্ধুপ্রতীম কোন সম্পর্ক রাখার ইসলামী শরীয়তের কোন রূপেই অনুমতি নেই।

মসজিদ ভেঙ্গে দেয়া, কুরআনের সংশোধন চাওয়া এবং উলামায়ে দ্বীনকে হেয় করার জন্য ফতোয়াবাজ ও মৌলবাদী প্রভৃতি বলা এসবের প্রত্যেকটাই কুফরী কাজ। মুসলমান বলে দাবী করা সত্ত্বেও যে কেউ এরূপ করবে যে, মুরতাদ বা ইসলামত্যাগী গণ্য হবে। ইসলাম ও মুসলমানিত্বে তাদের কোন অংশ নেই। কোন অন্যায় দেখলে মু’মিনের মনে ব্যাথা লাগতেই হবে। যদি কোন অন্যায় হতে দেখে, তখন মু’মিনদের কর্তব্য হচ্ছেঃ (ক) হাতের ক্ষমতা খাটানো গেলে সে ক্ষমতা প্রয়োগ করে প্রতিরোধ করে আল্লাহর নাফরমানী বন্ধ করা। (খ) যেখানে হাতের ক্ষমতা চলে না সেখানে মুখের নসীহত বা ক্ষেত্রবিশেষে প্রতিবাদ দ্বারা ঐ নাফরমানী বন্ধ করা। (গ) উক্ত ব্যবস্থার অপারগতায় (যেমন নিজের জান চলে যাওয়ার ভয় থাকে) উক্ত নাফরমানীর কারণে মনে ব্যথা রাখা এবং তা বন্ধ করার জন্য দিলে দিলে ফিকির করতে থাকা, দু’আ করা, পরামর্শ ইত্যাদির মাধ্যমে প্রোগ্রাম তৈরী করা যাতে ভবিষ্যতে উক্ত নাফরমানী বন্ধ করা যেতে পারে। আর আন্তরিকভাবে উক্ত কাজটাকে ঘৃণা করতে থাকা- এটা হচ্ছে ঈমানী দায়িত্ব। নবী c বলেনে যে, তৃতীয় কাজটি ঈমানের সর্বনিম্ন স্তরের অর্থাৎ এতটুকু বোধ যদি কারো মধ্যে বিদ্যমান না থাকে, তাহলে তার ঈমানের দাবী মিথ্যা ও প্রহসনমূলক। তার দ্বীনদারী শুধু লোক দেখানো।

- والله اعلم باالصواب -

সূত্র

  • মিশকাত, পৃষ্ঠা: ৪৩৬
  • সূরা: আলে ইমরান, আয়াত: ২৮
  • সূরা: মুমতাহিনা, আয়াত:

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২৪ ফেব, ২১