বারবার গোনাহ করলে তা আর মাফ হয় না

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসআকীদা১২ জানু, ২২

প্রশ্ন

আল্লাহর কাছ থেকে আমার এই গোনাহর মাফ পাওয়ার কী কোন পথ/পদ্ধতি খোলা আছে?(যেহেতু গোনাহটা আমি পরপর অনেকবার করেছি তাও আবার জেনে শুনে) নাকি এইরকম জঘন্য কাজ করার কারনে সারাজীবন গোনাহগার হয়েই থাকতে হবে? যদি উত্তর দিতেন তাহলে হয়তো এই গোনাহগারের কিছুটা উপকার হত।

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

গোনাহের কাজ করে মনে খারাপ লাগা, আফসোস আসা এটা ঈমানের আলামত। গোনাহ করে খারাপ না লাগাটা ঈমানহীনতার আলামত। রাসূল c ইরশাদ করেছেন- عَنْ أَبِي أُمَامَةَ أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا الْإِيمَانُ قَالَ إِذَا سَرَّتْكَ حَسَنَتُكَ وَسَاءَتْكَ سَيِّئَتُكَ فَأَنْتَ مُؤْمِنٌ قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَمَا الْإِثْمُ قَالَ إِذَا حَاكَ فِي نَفْسِكَ شَيْءٌ فَدَعْهََََُ হযরত আবু উমামা e থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূল c কে জিজ্ঞাসা করল, “ঈমান”কি? রাসূল c বললেনঃ যখ তোমার নেক কাজ তোমাকে আনন্দিত করে, আর গোনাহের কাজ তোমাকে পেরেশান করে তাহলে তুমি মুমিন। লোকটি আবার জিজ্ঞেস করেঃ তাহলে গোনাহ কি? তিনি বললেনঃ যখন তোমার মনে কোন বিষয় নিয়ে সংশয় হয়,তাহলে তা ছেড়ে দাও। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২২১৬৬, মুসনাদুল হারেস, হাদীস নং-১১, মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-২৩৩, আলমুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৭৫৪০ সুতরাং আপনার যেহেতু গোনাহের কাজটি করার সময়ই খারাপ লাগছিল, তারপর ও আফসোস লেগেছে তাহলে এটি সাচ্চা ঈমানের আলামত নবীর ভাষায়। তবে বারবার একই গোনাহ করাটা কোন ভাল কাজ নয়। আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা করুন আর যেন কখনো এমন কাজ না হয় আপনার জীবনে। তওবা করার পদ্ধতি إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُولَٰئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا (٤:١٧) وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّىٰ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ وَلَا الَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمْ كُفَّارٌ ۚ أُولَٰئِكَ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا (٤:١٨) অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন,যারা ভূলবশতঃ মন্দ কাজ করে,অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, রহস্যবিদ। আর এমন লোকদের জন্য কোন ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে, এমন কি যখন তাদের কারো মাথার উপর মৃত্যু উপস্থিত হয়,তখন বলতে থাকেঃ আমি এখন তওবা করছি। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। -সূরা নিসা-১৭-১৮ তওবা করার পদ্ধতি হল- সুতরাং বুঝা গেল গোনাহ করে ফেললে মাফ করানোর পদ্ধতি হল খালেস দিলে তওবা করা। তওবা সহীহ হবার জন্য ৩টি শর্ত। যথা- ১-সাথে সাথে গোনাহের কাজটি ছেড়ে দিতে হবে। ২-ভবিষ্যতে এই গোনাহটি না করার দৃঢ় সংকল্প করা। ৩-গোনাহের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। এই ৩টি শর্ত পাওয়া গেলে তওবা সঠিক হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। عن أبي هريرة قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم لا يلج النار رجل بكي من خشية الله حتى يعود اللبن في الضرع ولا يجتمع غبار في سبيل الله ودخان جنهم হযরত আবু হুরায়রা e থেকে বর্ণিত। রাসূল c ইরশাদ করেছেন-“যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে সে ব্যক্তিকে (জাহান্নামের) অগ্নি স্পর্শ করা সম্ভব নয় যদিও দোহনকৃত দুধ উলানে ফিরানো সম্ভব হয়। আর জাহান্নামের ধোঁয়া এবং আল্লাহর পথে (চলার কারণে) উড়ন্ত ধুলি কখনো একসাথে হতে পারেনা। -নাসায়ী শরীফ, হাদিস নং-৩১০৮, সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-১৬৩৩, ২৩১১, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৪২৭ বারবার গোনাহ করে তওবা বারবার কি আল্লাহ মাফ করবেন? হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী i বলতেনঃ যে ব্যক্তি এটা মনে করে যে, তার গোনাহ এত বেশি যে, আল্লাহ এটা ক্ষমা করবেন না। এমন ধারণাকারী দাম্ভিক ও অহংকারী। কারণ সে নিজেকে এত বড় মনে করে যে, তার গোনাহ ক্ষমা করার মত ক্ষমতাবান আল্লাহ তাআলাকে মনে করে না। তার গোনাহকে বড় মনে হয়, আল্লাহর রহমতকে তার তুলনায় ছোট মনে হয়। তাই আল্লাহর রহমতকে বড় মনে করতে হবে। গোনাহ করে নিজের গোনাহকে বড় ও ক্ষমার অযোগ্য মনে করে তওবা না করাটা শয়তানের ওয়াসওয়াসা। তাই আপনি এ ধারণা থেকে ফিরে আসুন। গোনাহ হওয়ার সাথে সাথেই ক্ষমা চান আল্লাহর দরবারে। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাআলা আপনার গোনাহকে মাফ করে দিবেন।

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১২ জানু, ২২