ফাজায়েলে আমলের ভূমিকাতে কি শিরক রয়েছে

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসতাবলীগ২৮ জুন, ২৩

প্রশ্ন

আহলে হাদীস নামধারী ভাইয়েরা দীর্ঘদিন যাবত একটি অভিযোগ করে আসছেন যে, ফাজায়েলে আমলের ভূমিকাতেই নাকি শিরক রয়েছে।

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

এ অভিযোগটির মিথ্যাচার সম্পর্কে সম্মক ধারণা লাভ করতে প্রথতেই আমরা ফাজায়েলে আমলের মূল উর্দু থেকে অনুবাদকৃত বাংলা ইবারতটি হুবহু উদ্ধৃত করছি- نحمده ونصلى على رسوله الكريم

ভূমিকা হামদ ও সালাতের পর। মুজাদ্দেদীনে ইসলাম ও যমানার উলামা-মাশায়েখের উজ্জ্বল রত্ন (হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস i আমাকে তাবলীগে দ্বীনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু আয়াত ও হাদীস লিখিয়া পেশ করিতে আদেশ করেন। এইরূপ বুযুর্গগণের সন্তুষ্টি হাসিল করা আমার মত গোনাহগারের জন্য গোনাহ-মাফী ও নাজাতের ওসীলা-এই আশায় দ্রুত রচনা করতঃ এ উপকারী কিতাবখানী খেদমতে পেশ করিতেছি। (ফাযায়েলে আমাল, পৃষ্ঠা নং-৭, ফাযায়েলে তবলীগ, পৃষ্ঠা নং-৭,মূল লেখক শাইখুল হাদীস আল্লামা যাকারিয়া কান্ধলবী i , অনুবাদ-মুফতী উবাইদুল্লাহ, নজরে ছানী-হাফেজ মাওলানা যুবায়ের আহমাদ, ও মাওলানা রবিউল হক। কাকরাইল মসজিদ ঢাকা, প্রকাশনী-দারুল কিতাব, বাংলাবাজার ঢাকা। এই হল ফাযায়েলে আমলের বক্তব্য।খুবই সাধারণ একটি ইবারত। কথিত আহলে হাদীস ভ্রান্ত মতাদর্শী ছাড়া আজ পর্যন্ত উক্ত ইবারতে শিরকের কোন গন্ধ কেউ খুজে পাননি। কিন্তু ইংরেজ সৃষ্ট কথিত আহলে হাদীস ভাইয়েরা এতে শিরক খুঁজে পেয়েছেন। চলুন রাসূল c এর হাদীসের আলোকে উক্ত বিষয়টি আগে যাচাই করে নেই। প্রথমে একটি কথা বুঝে নিতে হবে। সেটি হল, হযরত ইলিয়াস i হলেন চাচা। আর ভাতিজা হলেন শায়েখ জাকারিয়া i । মুখ বলা চাচা নয় আপন চাচা ছিলেন হযরত ইলিয়াস i হযরত জাকারিয়া i এর।

এবার আমরা দেখে নেই চাচার ক্ষেত্রে রাসূল c কী ইরশাদ করেছেন?

نَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «الْعَمُّ أَبٌ إِذَا لَمْ يَكُنْ دُونَهُ أَبٌ، وَالْخَالَةُ وَالِدَةٌ إِذَا لَمْ تَكُنْ دُونَهَا أُمٌّ

রাসূল c ইরশাদ করেছেন, চাচা হল পিতা যদি এছাড়া কোন পিতা (সৎ পিতা) না থাকে,আর খালা হচ্ছেন মা, যদি এছাড়া কোন মা (সৎ মা) না থাকে। -আলবিররু ওয়াসসিলাহ, বর্ণনা নং-৮২, আলজামে লিইবনে ওয়াহাব, বর্ণনা নং-৯৪, আদদিরায়াহ, বর্ণনা নং-৬০৩, নছবুর রায়াহ-৩/২৪৮, ইরওয়াউল গালীল-৪/১৪৪, তালখীসুল হাবীর, বর্ণনা নং-১৭৭০ وإِنَّ الْعَمَّ صِنْوُ أَبِيهِ রাসূল c ইরশাদ করেছেন, চাচা পিতার মতই। (ফাজায়েলে সাহাবা লিআহমাদ বিন হাম্বল, বর্ণনা নং-১৭৮১, الْعَمُّ فِي كِتَابِ اللَّهِ وَالِدٌ রাসূল c ইরশাদ করেছেন, চাচা কুরআনের বিধান মতে পিতা। -মারাসীলে আবু দাউদ, হাদীস নং-৫১৩, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৪৫৪৭০ এবার আমরা শায়েখ জাকারিয়া i এর বক্তব্যের দিকে দৃষ্টি দেই।

১ নং জবাব ইলিয়াস i ছিলেন শায়েখ জাকারিয়া i এর চাচা। আর চাচা পিতার মত। আর হাদীসে ইরশাদ হয়েছে-

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، أَنَّهُ قَالَ: «رِضَا الرَّبِّ فِي رِضَا الْوَالِدِ، وَسَخَطُ الرَّبَّ فِي سَخَطِ الْوَالِدِ

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর e থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল c ইরশাদ করেছেন, প্রতিপালকের সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টিতে এবং প্রতিপালকের অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টিতে নিহিত।(আলআদাবুল মুফরাদ, হাদীস নং-২, তিরমিজী, হাদীস নং-১৮৯৯, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-২৩৯৪, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪২৯, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৭৪৪৭) উক্ত হাদীসে পরিস্কার ভাষায় পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি আর পিতার অসন্তুষ্টিকে আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ বলে রাসূল c ইরশাদ করেছেন। রাসূল c এর উক্ত হাদীসের উপর আমল করে পিতাতূল্য চাচার আদেশ রক্ষা করে তাকে সন্তুষ্ট করা যদি শিরক হয়, তাহলে সেই শিরকের নির্দেশতো রাসূল c নিজেই দিলেন। সেই শিরকের প্রতি আহবানতো খোদ রাসূল c নিজেই দিলেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি রেখে পিতা বা পিতাতূ্ল্য কারো আদেশ মেনে তার সন্তুষ্টি কামনা শিরক হলে সেই শিরকের প্রতি রাসূল c নিজেই উৎসাহ দিচ্ছেন। তাহলে কি কথিত আহলে হাদীস শায়েখেরা রাসূল c থেকেও বেশি শিরক বিদআত সম্পর্কে অবগত? নাকি রাসূল c থেকেও বেশি শিরক থেকে ভয় পান? এমন মুর্খ শায়েখদের থেকে আল্লাহ তাআলা আমাদের হিফাযত করুন। যারা রাসূল c এর আদেশ পালনকে শিরক বলে আখ্যায়িত করে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে।

২ নং জবাব রাসূল c থেকে একাধিক হাদীসের মাঝে বড়কে শ্রদ্ধা এবং ছোটদের স্নেহ করার নির্দেশ এসেছে। হাদীসে ইরশাদ হচ্ছে-

عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ

، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَمْ يَرْحَمْ صَغِيرَنَا، وَيَعْرِفْ حَقَّ كَبِيرِنَا

হযরত আমর বিন শুয়াইব তার পিতা, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল c ইরশাদ করেছেন, ঐ ব্যক্তি আমাদের দলভূক্ত নয়, যে ছোটদের প্রতি দয়ালু নয়, আর বড়দের হক সম্পর্কে থাকে বেখবর। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৬৩৩৩ এরকম বহু হাদীস রয়েছে যাতে বড়দের কথা মান্য করতে আদেশ করা হয়েছে। বড়দের আদেশ মানা, তাদের কথা শোনার দ্বারা বড়রা খুশি হবেন, সন্তুষ্ট হবেন এটাই আল্লাহ ও রাসূল c এর আদেশ। এর দ্বারা আল্লাহ তাআলা খুশি হয়ে থাকেন। এসব হাদীসের উপর আমল করে শায়েখ জাকারিয়া i তার পিতাতূল্য মুরুব্বী ইলিয়াস i এর আদেশ রক্ষা করে তাকে খুশি করতে গ্রন্থটি সংকলিত করেছেন। এতে শিরক করলেন কোথায়? এতো হাদীসের নির্দেশ পালন। হাদীসের নির্দেশ পালনের নাম শিরক বলা আর আদার ব্যাপারী হয়ে জাহাজের খবর নেয়ার মাঝে কোন পার্থক্য নেই। সুতরাং বুঝা গেল শায়েখ জাকারিয়া i তার কিতাবের ভূমিকায় উক্ত কথাটি লিখে কোন প্রকার শিরকী বক্তব্য দেননি। বরং হাদীসে বর্ণিত রাসূল c এর আদেশ পালনার্থেই তিনি উক্ত শব্দগুলো লিখেছেন। কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে কথিত কিছু শায়েখরা তাবলীগের মত মহান জামাতকে কলুষিত করার জন্য এ হীন অভিযোগের অপবাদ উত্থাপন করেছে। আল্লাহ তাআলা এসব অজ্ঞ জাহিল শায়েখদের মিথ্যাচার থেকে মুসলিম উম্মাহকে হিফাজত করুন। আমীন। এ সংক্রান্ত জবাব ভিডিওতে দেখতে ক্লিক করুন

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২৮ জুন, ২৩