ফাজায়েলে আমলে বর্ণিত হযরত উম্মে কুলসুম e সম্পর্কিত হাদীস নিয়ে মিথ্যাচারের জবাব

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসতাবলীগ২৩ এপ্রিল, ২২

প্রশ্ন

ফাজায়েলে আমলের একটি ঘটনা প্রসঙ্গে নেটে একটি অভিযোগ ছড়ানো হয়- “সলাতের ফাযীলাত বর্ণনা করতে গিয়ে জনাব শায়খুল হাদীস সাহেব লিখেছেন- “হযরত উম্মু কুলছুমের স্বামী আবদুর রহমান অসুস্থ ছিলেন। একবার তিনি এমন অচেতন অবস্থায় পতিত হলেন যে, সকলেই তাঁহাকে মৃত বলে সাব্যস্ত করিল। উম্মু কুলসুম তাড়াতাড়ি নামাযে দাঁড়াইলেন। নামায শেষ করিবা মাত্র আবদুর রহমান জ্ঞান লাভ করলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, আমার অবস্থা কি মৃত্যুর অনুরূপ হইয়াছিল? লোকজন বলিল, জী হ্যাঁ। তখন তিনি বলিলেন, আমি দেখিলাম, দু’জন ফেরেশতা এসে বলিল, চল আল্লাহর দরবারে তোমার ফায়ছালা হবে। এই বলে তারা আমাকে নিয়া যাইতে উদ্যত হইল। ইত্যবসরে তৃতীয় এক ফেরেশতা আসিয়া তাহাদিগকে বাধা প্রদান করিয়া বলিল, তোমরা চলিয়া যাও ইনি এমন এক ব্যক্তি যিনি মাতৃগর্ভেই সৌভাগ্যবান বলিয়া সাব্যস্ত হইয়াছেন। তাঁর সন্তান-সন্ততিগণ আরও কিছুদিন তাঁর কাছ থেকে অনুগ্রহ লাভের সুযোগ পাইবে। তারপর তিনি আর একমাস জীবিত ছিলেন।”(ফাজায়েলে নামায ৭৩-৭৪ পৃঃ, অনুচ্ছেদ ১৫-১৬) শাইখ সাহেব উক্ত ঘটনা উল্লেখ করার আগে বা পরে লিখেননি যে তিনি তা কোত্থেকে সংকলন করেছেন। হতে পারে উনার এলাকার কোন এক উম্মু কুলসুম এবং তার স্বামীর কাহিনী বর্ণনা করেছেন। আর এ রকম কারো কাহিনী লেখার জন্য যেমনিভাবে তার সনদ (রেফারেন্স) গ্রন্থের নাম উল্লেখ করা নিষ্প্রয়োজন, তেমনিভাবে তাদের নামের শেষে e কিংবা i লেখার প্রয়োজনও মনে করা হয় না। রসূলুল্লাহ c -এর কন্যা ও তাঁর স্বামীই যদি হয়ে থাকেন উক্ত বর্ণনার দম্পতি, তাহলে তাদের নামের শেষে e লেখা প্রয়োজন ছিল। ভুলটা মূল লেখকের নাও হতে পারে, অনুবাদকের নতুবা মুদ্রণগত। যা হোক এসব ত্রুটির কথা উল্লেখ করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমাদের উদ্দেশ্য হলো কুরআন ও হাদীসের আলোকে যা ত্রুটিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা। মুহতারাম উক্ত ঘটনার মাধ্যমে বুঝাতে চেয়েছেন- শুধু মানুষই ভুল করে না বরং ফেরেশতা এবং স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলাও ভুলের ঊর্ধ্বে নন (নাউযুবিল্লাহ) নইলে শায়খের দ্বারা এমন বর্ণনা কিভাবে লিখা সম্ভব হল যে, দু’জন ফেরেশতা যখন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জান কবজ করার জন্য উদ্যত হলেন তখন অপর ফেরেশতা এসে বাধা প্রদান করে তাকে মৃত্যু থেকে একমাসের জন্য অব্যাহতি দিতে পারলেন। ঘটনা থেকে কি প্রমাণিত হয় না যে, প্রথম দু’জন ফেরেশতা ভুল করে এসেছিলেন। তাহলে ব্যাপারটি কি আল্লাহ তা‘আলার অগোচরেই ঘটেছিল? নাকি আল্লাহ তা‘আলা প্রথমে ভুল করে পাঠিয়ে অন্য ফেরেশতা দিয়ে পরে সংশোধন করলেন? আর মালাকুল মউত (‘আ.)-ই বা তখন ছিলেন কোথায়? শায়খ সাহেব জীবিত থাকলে এসব প্রশ্নের কি জবাব দিতেন তিনি? এ ধরনের ভুল- ত্রুটি কি তাবলীগী জামা‘আতের সাল (বছর) লাগানো আলিমদের নজরে পড়ে না? পড়ে থাকলে ওনারা সংশোধন করছেন না কেন? নাকি ওনারাও শাইখুল হাদীস সাহেবের সাথে একমত যে, ফেরেশতার এবং আল্লাহ তা‘আলাও ভুলের ঊর্ধ্বে নন (মায়াজ আল্লাহ, এটাতো শীয়া মাযহাবের ভ্রান্ত আক্বীদা) তাঁরাও ভুল- ত্রুটি করতে পারেন? আল্লাহ তা‘আলা আমাদের ক্ষমা করুন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা সকল ভুল- ত্রুটির ঊর্ধ্বে। এমনকি ফেরেশতারাও ভুল করতে পারে না। সত্যিকারের মুসলিমরা এ আক্বীদাই পোষণ করে। ফেরেশতাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, তারা কখনো তাঁর নাফরমানী করেন না। নিজেদের খেয়াল-খুশি মত কোন কাজ করেন না। সেই শক্তি-সামর্থ্য তাদেরকে দেয়া হয়নি। তাদের মধ্যে যাদেরকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন জনম জনম ধরে তারা সেই কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ কাজে দক্ষ এবং বিশেষজ্ঞ। প্রতি কাজ নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করার যোগ্যতা মহান আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে দিয়েছেন। সুতরাং তাদের কাজে ভুল বা দোষ-ত্র“টির সম্ভাবনা একেবারেই নেই। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে যে নির্দেশ দেন তারা শুধু তা-ই পালন করেন। এই সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন : (لاَ يَعْصُونَ اللهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ “ আল্লাহ তাদেরকে (ফেরেশতাদেরকে) যে আদেশ করেন, তারা কখনও তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করেন না, বরং তাদেরকে যে নির্দেশ দেয়া হয় তারা শুধু তা-ই পালন করেন।”(সূরা তাহরীম

৬. কেউ হয়ত ভাবতে পারেন যে, স্ত্রীর (উম্মু কুলসুমের) সলাতের ফাযীলাতে আল্লাহ তা‘আলা তার স্বামীর হায়াত এক মাস বাড়িয়ে দিয়েছেন। যদি কেউ এ ধরনের অবান্তর বিশ্বাস পোষণ করেন, তাহলে তা হবে আক্বীদাগত চরম ভুল এবং অবধারিতভাবে কুফর। কারো ‘ইবাদাত ও দু‘আর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা কারো বিপদাপদ দূর করে দেন বটে, কিন্তু হায়াত বৃদ্ধি করে দেন না। কারণ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর পূর্ব নির্ধারণকৃত সময়সীমার মধ্যেই সকল প্রাণীর মৃত্যু ঘটান। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন : (وَلِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٌ فَإِذَا جَاء أَجَلُهُمْ لاَ يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً وَلاَ يَسْتَقْدِمُونَ “ সকল জাতির জন্য রয়েছে সুনির্দিষ্ট জীবনকাল। যখন তাদের সে নির্ধারিত সময় উপস্থিত হবে, তখন তারা সে সময়কে এক মুহূর্তের জন্যও আগে পিছে করতে পারবে না।”(সূরা আল-আ‘রাফ-৩৪) মহান আল্লাহ আরো বলেন : (وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَنْ تَمُوتَ إِلَّا بِإِذْنِ اللهِ كِتَاباً مُؤَجَّلاً “ আল্লাহ অনুমতি ব্যতীত কারও মৃত্যু হতে পারে না, যেহেতু তার মেয়াদ অবধারিত।”(সূরা আল-ইমরান ১৪৫) এবার আপনারাই বলুন, কুরআনের এসব আয়াতের সাথে তাবলীগে নিসাব গ্রন্থকার সাহেবের বক্তব্য সাংঘর্ষিত কি না? সলাতে ফাযীলাত বর্ণনা করার জন্য কি কুরআন ও সহীহ হাদীসের বক্তব্যের অভাব রয়েছে যে, তাঁর জন্য মিথ্যা বানোয়াট আজগুবি কিস্সা কাহিনীর আশ্রয় নিতে হবে? কিন্তু ফাজায়েলে আমলের দারুল কিতাব, ২০০১ সংস্করণে দুররে মনসুরের রেফারেন্স দেয়া আছে। (পৃষ্ঠা ১৬ (ওপরে) বা ৭৩ (নিচে))। এ ব্যাপারে আপনার কাছ থেকে উত্তর আশা করছি। যাযাকাল্লাহ।

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে মকবুল দল তাবলীগ জামাতের বিরোধীতার কারণে ওদের মস্তিস্ক থেকে আল্লাহ পাক আকলের নিয়ামত ছিনিয়ে নিয়েছেন। নতুবা শুধু ফাযায়েলে আমলকে নিয়ে এমন কটাক্ষ্য আর ধৃষ্টতার প্রদর্শন লোকটি করতো না। ফাযায়েলে আমল বিদ্বেষী ভাইটি তার লেখনীতে কয়েকটি অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। যথা-

1. উম্মে কুলসুম e ও তার স্বামী হযরত আব্দুর রহমান e যদি যথাক্রমে রাসূল c এর মেয়ে ও জামাতা হয়ে থাকে, তাহলে শায়েখ জাকারিয়া i “রাজিয়াল্লাহু আনহু” লিখেন নি কেন?

2. এ কাহিনীর কোন সূত্র উল্লেখ নেই।

3. এ ঘটনার দ্বারা বুঝা যায়, আল্লাহ ও ফেরেস্তাগণ ভুল করে থাকেন, নাউজুবিল্লাহ।

4. নামাযের বরকতে হায়াতে বরকত আল্লাহ তাআলা বাড়াতে পারেন না। তাই ঘটনাটি অবান্তর। ১ নং অভিযোগের জবাব আমাদের কাছে দারুল কিতাব প্রকাশনীর ফাযায়েলে আমলটি বিদ্যমান। এ প্রকাশনীর ফাযায়েলে আমলের প্রথম অধ্যায়, পৃষ্ঠা নং ১৫ ও ১৬ এবং মূল ফাযায়েলের ৭৩ ও ৭৪ নং পৃষ্ঠায় এ ঘটনাটি উদ্ধৃত করা হয়েছে। স্পষ্ট ভাষায় মূল উর্দু এবং বাংলায় হযরত উম্মে কুলসুম e এর নামের পর লেখা হয়েছে “(রাযিঃ)”। তারপর হযরত আব্দুর রহমান e এর নামের পরও স্পষ্ট ভাষায় লেখা হয়েছে “(রাযিঃ)” তাহলে “e ” লেখা হয়নি বলে এ মহান দুই সাহাবীর ক্ষেত্রে অপমানসূচক আচরণ করা হয়নি? সেই সাথে মিথ্যাচার করা হয়নি? এরকম মিথ্যাচারের নাম দ্বীন প্রচার? ২ নং অভিযোগের জবাব সূত্র উল্লেখ করা হয়নি মর্মে ফাযায়েলে আমল বিদ্বেষী ভাইটি অভিযোগ করেছেন। আসলে সূত্র উল্লেখ করা হয়নি, না বিদ্বেষের কারণে চোখের জ্যোতি কমে যাওয়ার দরূন ঘটনাটি লিপিবদ্ধের পর লেখা “দুররে মানসূর” শব্দটি তার দৃষ্টির আগোচরে রেখে দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা? ঘটনাটির প্রতি আক্রোশ না ফাযায়েলে আমলের উপর? যদি গবেষক ভাইটির মূল উদ্দেশ্য ঘটনাটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। ঘটনাটির সমালোচনা করা, তাহলে তার উচিত ছিল প্রথমে আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী i এর লিখিত বিশ্ব বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে দুররে মানসূর” এর সমালোচনা করা। যেখানে উক্ত ঘটনাটি উল্লেখ করা হয়েছে। দুররে মানসূর থেকে নকলের কারণে ফাযায়েলে আমলের উপর প্রশ্ন উত্থাপনের পূর্বে নৈতিকতার দাবি প্রশ্ন প্রথমে দুররে মানসূরের উপর হবে। সমালোচনা প্রথমে দুররে মানসূরের উপর হবে। কেন জালালুদ্দীন সুয়ূতী i তার তাফসীর গ্রন্থে ঘটনাটি আনলেন। তিনি কি কথিত গবেষক ভাইটির মত জ্ঞান রাখতেন না? তিনি জানতেন না এ ঘটনার দ্বারা আল্লাহ ও ফেরেস্তাদের ভুল হওয়া প্রমাণিত হয়? (নাউজুবিল্লাহ) তিনি জানতেন না, এ ঘটনার দ্বারা কুফরী আক্বিদা প্রমাণিত হয়? দুররে মানসূরের বর্ণনাটির সনদ সহীহ কি না? একথার আলোচনা না করে শুধু নকল করার কারণে ফাযায়েলে আমলের উপর অভিযোগ উত্থাপন প্রতারণা আর ধোঁকাবাজী ছাড়া আর কী হতে পারে? মূল কিতাবের উপর অভিযোগ উত্থাপন না করে অনুবাদের উপর অভিযোগ উত্থাপন কত বড় ধোঁকাবাজি এবং প্রতারণা তা পাঠকদের আদালতে রেখে দিলাম। যৌক্তিক আলোচনা রেখে ওয়াজ করেছেন, এ ঘটনা দ্বারা আল্লাহ তাআলা ও ফেরেস্তাদের ভুল করা প্রমাণিত হয় নাউজুবিল্লাহ। যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার ক্ষেত্রে ভুলত্রুটি হওয়ার আকিদা রাখে সে ব্যক্তি সুনিশ্চিত কাফের। কোন মুসলিম এতে দ্বিমত পোষণ করতে পারে? অবশ্যই নয়। কিন্তু আলোচনা হওয়ার কথা ছিল কি নিয়ে? আর তিনি নিজের পক্ষ থেকে আলোচনা করলেন কী নিয়ে? আহলে হাদীসদের কিতাব থেকে কাছাকাছি ঘটনার প্রমাণ আহলে হাদীসদের ইমাম নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান, তার রচিত “আদ দাউ ওয়াদ দাওয়া” নামক গ্রন্থে শিরোনাম দিয়েছেন- “বারাআত মিনান নার”। এ শিরোনাম দেয়ার পর আহলে হাদীস নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান সাহেব ঘটনা বর্ণনা করেছেনÑ “কতিপয় বুযুর্গ ব্যক্তির অসুস্থ্যতা বেড়ে যায়, বেহুঁশ হয়ে যায়। মালাকুল মওতকে এমতাবস্থায় দেখেন। তিনি বলেন, আমি কি তোমাকে জাহান্নাম মুক্তির কথা লিখে দিব? লোকটি বলল, হ্যা। তারপর একটি কাগজে তা লিখালেন- আস্তাগফিরুল্লাহ! আস্তাগফিরুল্লাহ!। বললেন, এটিই জাহান্নাম মুক্তির কথা। তারপর অসুস্থ্য ব্যক্তি এর দ্বারা সুস্থ্য হয়ে গেল। কাগজটি লোকটির কাছে ছিল। বেশ অনেক দিন পর্যন্ত লোকটি জীবিত ছিল।” (আহলে হাদীসদের ইমাম নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান রচিত “আদ দাউ ওয়াদ দাওয়াহ” শিরোনাম বারাআত মিনান নার) কেউ হয়তো প্রশ্ন করবেন, কিতাবটি নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান সাহেবের নয়। তাদের জন্য বলি, নওয়াব সিদ্দীক হাসান খানের ছেলে সিদ্দীক হাসান খান সাহেবের জীবদ্দশায় একটি কিতাব লিখেছেন, যার নাম হল “মাসারে সিদ্দীকী”। যে কিতাবের শেষে নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান সাহেবের লিখিত কিতাবের একটি সূচি দেয়া হয়। যে সূচির ২৯ নাম্বার কিতাবের নাম “আদ দাউ ওয়াদ দাওয়াহ”। পাঠকগণ লক্ষ্য করুন! ফাযায়েলে আমলের ঘটনাটি বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ দুররে মানসূর থেকে নকল করা হয়েছে। মনগড়া নিজের পক্ষ থেকে বানিয়ে লেখেননি। কিন্তু গায়রে মুকাল্লিদ নওয়াব সিদ্দিক হাসান খান সাহেব যে ঘটনা লিখলেন, তাতে সরাসরি মালাকুল মওত ফেরেস্তার কথা লিখা আছে। যার মৃত্যু সন্নিকটে হওয়ার পরও দুআ পড়ার দরূন তার মৃত্যু হয়নি। যার কোন সূত্র সিদ্দীক হাসান খান উল্লেখ করেননি। উক্ত ঘটনাটিতে কি কথিত গবেষক ভাইয়ের অভিযোগগুলো প্রয়োগ হয় না? আপনাদের পাকিস্তান ও ভারতের কোন আহলে হাদীস আলেম কি কোন দিন নওয়াব সাহেবের এ ঘটনার উপর অভিযোগ উত্থাপন করেছেন? কোন লেখা বা লেকচার কি আপনাদের আছে? যদি না থাকে, তাহলে জালালুদ্দীন সূয়ূতী i এর বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “দুররে মানসূর” এর উদ্ধৃতি দেয়ার পরও ফাযায়েলে আমলের উপর এত আক্রোশ কেন? ৩ নং ও ৪ নং অভিযোগের জবাব এ ঘটনায় আল্লাহ ও ফেরেস্তাদের ভুল করার জাহেলী বক্তব্য কথিত গবেষকের উর্বর মস্তিস্ক প্রসূত কথা। এর কোন ভিত্তি নেই। একথা ঘটনাটির কোথাও বলা হয়নি। বরং নামাযের বরকতে আল্লাহ তাআলা উক্ত ব্যক্তির হায়াতে বরকত দান করেছেন। আল্লাহ তাআলাই পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, যেমন বান্দা নামাযের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য চায়। ইরশাদ হচ্ছে- وَاسْتَعِينُوا بِالصبرِ وَالصَّلَاة তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য চাও। -সূরা বাকারা-৪৫ দুররে মানসূরে সূত্রসহ ঘটনাটি বর্ণিত وَأخرج عبد الرَّزَّاق فِي المُصَنّف وَالْبَيْهَقِيّ من طَرِيق معمر عَن الزُّهْرِيّ عَن حميد ابْن عبد الرَّحْمَن بن عَوْف عَن أمه أم كُلْثُوم بنت عقبَة وَكَانَت من الْمُهَاجِرَات الأول فِي قَوْله (وَاسْتَعِينُوا بِالصبرِ وَالصَّلَاة) قَالَت: غشي على الرَّحْمَن بن عبد الرَّحْمَن غشية فظنوا أَنه افاض نَفسه فِيهَا فَخرجت امْرَأَته أم كُلْثُوم إِلَى الْمَسْجِد تستعين بِمَا أمرت بِهِ من الصَّبْر وَالصَّلَاة فَلَمَّا أَفَاق قَالَ: أغشي عليّ آنِفا قَالُوا: نعم قَالَ: صَدقْتُمْ إِنَّه جَاءَنِي ملكان فَقَالَا لي: انْطلق نحاكمك إِلَى الْعَزِيز الْأمين فَقَالَ ملك آخر: ارْجِعَا فَإِن هَذَا مِمَّن كتبت لَهُ السَّعَادَة وهم فِي بطُون أمهاتهم ويستمع بِهِ بنوه مَا شَاءَ الله فَعَاشَ بعد ذَلِك شهرا ثمَّ مَاتَ আদদুররুল মানসূর, সূরা বাকারা, আয়াত নং-৪৫। আরো রয়েছে- জামে মামার বিন রাশেদ, হাদীস নং-২০০৬৫। আলমাতালেবুল আলিয়া, হাদীস নং-৩৯৭৬। হাদীসটি সম্পর্কে মুহাদ্দিসীনদের মন্তব্য

1. আল্লামা বুসিরী i বলেন, سنده صحيح তথা হাদীসটির সনদ সহীহ। (ইতহাফুল খাইরাতিল মাহরাহ-৭/২২২।

2. আল্লামা সাখাবী i বলেন, ثابت তথা হাদীসটি প্রমাণিত। (আলআয়িবাতিল মারজিয়্যাহ) এরকম প্রমানিত ও সহীহ একটি বর্ণনাকে অজ্ঞ জাহিল গবেষক সাহেব কী কী শব্দ প্রয়োগ করে সাধারণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন। মূল কিতাব দুররে মানসূর রেখে ফাযায়েলে আমলের উপর ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে ধোঁকাবাজী আর প্রতারণার জাল বিস্তার করতে চেয়েছেন। আল্লাহ তাআলা এরকম জাহিল গবেষকদের হাত থেকে মুসলিম উম্মাহকে হিফাযত করুন। দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনতকে সারা পৃথিবীতে আম করে দিন। আমীন। ছুম্মা আমীন।

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২৩ এপ্রিল, ২২

সম্পর্কিত ফতোয়া