ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতের সংজ্ঞা কি

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসবিবিধ১৩ মে, ২১

প্রশ্ন

ফরজ ওয়াজিব এবং সুন্নত কাকে বলে? এসবের হুকুম কি?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

প্রথমে একটি কথা বুঝে নিতে হবে। সেটি হল, এসব পরিভাষা আল্লাহ ও রাসূল c নির্ধারিত করে যাননি। বরং এসব পরিভাষা কুরআন ও সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস সম্পর্কে বিজ্ঞ মুজতাহিদগণ নির্ধারিত করেছেন। ফুক্বাহায়ে কেরামের ইজমা ও কিয়াস ইসলামী শরীয়তে দলীল। যা এসব পরিভাষা সমস্ত উম্মত মেনে নেয়াই প্রমাণ করে। যদি মুজতাহিদ ইমামগণ তথা মাযহাবের ইমামগণের ইজমা এবং কিয়াস দলীল না হয়, তাহলে পৃথিবীর কোন মুসলমান ইসলামী শরীয়তের কোন বিধানকে ফরজ সুন্নত, ওয়াজিব, মুস্তাহাব শব্দে ব্যক্ত করতে পারবে না। কারণ এসব পরিভাষা আল্লাহ তাআলাও বলেননি। বলেননি রাসূল c ও। এসবই ফুক্বাহায়ে কেরামের পরিভাষা। যা সমস্ত উম্মত এক বাক্যে মেনে নিয়েছে। যা প্রমাণ করে ফুক্বাহাদের কথা গ্রহণযোগ্য। পালনীয়। আল্লাহ তাআলাও পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ও রাসুল c এর কথার পর ফুক্বাহায়ে কেরামের কথা মানার পরিস্কার নির্দেশ প্রদান করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ • হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যকার বিজ্ঞ ব্যক্তি (মুজতাহিদ, ফক্বীহ) গণের। -সূরা নিসা-৫৯

ফরজ কাকে বলে?

যে বিধানটি ক্বতয়ী তথা অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। তাকে ফরজ বলা হয়। অর্থাৎ যা আল্লাহর নির্দেশিত পালনীয় আমল হবার বিষয়ে বিন্দু পরিমাণ কোন সন্দেহ না থাকে। সেটি ফরজ। যেমন নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি। ফরজ অস্বিকারকারী কাফের। -আদ্দুররুল মুখতার, ১/৯৪; বাহরুর রায়েক, ১/২৪; নুরুল আনোয়ার, ১৬৬

ওয়াজিব কাকে বলে?

যা করার আদেশটি জন্নী দলীল তথা ফরজের তুলনায় দুর্বল দলীল দ্বারা প্রমাণিত। -নুরুল আনোয়ার, ১৬৬; উসুলু ফাতহুল ইসলামী, ১/৪৭ ওয়াজিব অস্বিকারকারী গোমরা এবং ফাসিক হয়। কাফের হয় না।

সুন্নত কাকে বলে?

সুন্নতে মুআক্কাদা বলা হয়, যে আমলকে রাসূল c ইবাদত হিসেবে পাবন্দীর সাথে করেছেন। কখনো ওজর ছাড়া ছেড়ে দিয়েছেন বা নিজেতো ছাড়েননি কিন্তু যে ছেড়ে দিয়েছে তাকে ভর্ৎসনা করেননি। এরকম আমলকে সুন্নতে মুআক্কাদা বলা হয়। -আততাআরিফাতুল ফিক্বহিয়্যাহ-৩২৮; আলমুজিজ ফি উসুলিল ফিক্বহ-৪৩৯-৪০

সুন্নতে মুআক্কাদা ওয়াজিবের মতই। অর্থাৎ ওয়াজিবের ব্যাপারে যেমন জবাবদিহী করতে হবে, তেমনি সুন্নতে মুআক্কাদার ক্ষেত্রে জবাবদিহী করতে হবে। তবে ওয়াজিব তরককারীর জন্য সুনিশ্চিত শাস্তি পেতে হবে, আর সুন্নতে মুআক্কাদা ছেড়ে দিলে কখনো মাফ পেয়েও যেতে পারে। তবে শাস্তিও পেতে পারে। -তা'রিফাতুল জুর্জানি, ১৩৮ ফরজ নামাযের আগে পরের সুন্নতে মুআক্কাদার অত্যধিক গুরুত্ব দেয়া উচিত। এ কারণেই ফুক্বাহায়ে কেরাম লিখেন যে, যদি কেউ সুন্নতকে হক মনে না করে এটাকে ছেড়ে দেয়, তাহলে এ কর্ম তাকে কুফরী পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। -রাদ্দুল মুহতার, ২/৪৯২; বাদাউস সানায়ে, ১/৬৪৪ তবে কেউ যদি সুন্নতকে সহীহতো মনে করে, কিন্তু অলসতা করে ছেড়ে দেয়। তাহলে সে গোনাহগার হবে।

আর সুন্নতে গায়রে মুআক্কাদা বলা হয় যা রাসূল c সর্বদা করতেন না। মাঝে মাঝে ছেড়ে দিতেন ওজর ছাড়াই। -রাদ্দুল মুহতার, ১/১০৫; নুরুল আনোয়ার, ১৬৭; বাহরুর রায়েক, ১/১৩২, ২/৩৩; ফাতহুল কাদীর, ১/২১; উসূলু ফাতহুল ইসলামী, ১/৮৬ সুন্নত অস্বিকারকারী ফাসিক এবং গোনাহগার হয়। কিন্তু তাচ্ছিল্য করে অস্বিকার করলে কাফির হয়ে যায়।

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১৩ মে, ২১