প্রয়োজনে ঘুষ প্রদান এবং না জানিয়ে পিতা থেকে টাকা খরচের বিধান কি

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসজায়েয-নাজায়েয১৩ এপ্রিল, ২৩

প্রশ্ন

একটা জটিল সমস্যার সমাধান দেবার জন্য অনুরোধ করছি। মেডিকেল কলেজে ছাত্র হিসেবে ভর্তি সংক্রান্ত সমস্যা। মেডিকেলে ভর্তি হতে যে কাগজপত্রগুলো লাগে– ১)S.S.C ও H.S.C এর সনদপত্র ও টেস্টিমোনিয়াল। ২)ভর্তি পরীক্ষার এডমিট কার্ড

৩. এপলিকিশন ফর্ম

৪. কপি সত্যায়িত ছবি ৫)নাগরিক সনদপত্র। সমস্যাটা আসলে ৩, ৪, ৫ নম্বর ডকুমেন্ট নিয়ে।

আমি ছবি সত্যায়িত করেছি কিন্তু ছবি সত্যায়িত করার সময় একজন পিয়নের কাছে ছবিগুলো দিয়েছিলাম।পিয়ন ছবি সত্যায়িত করার পর আমার কাছে টাকা চাইলে তাকে টাকা দিতে হল। এখন এই টাকা নিশ্চয় বৈধ নয়? তাই এই ছবিগুলো দিয়ে ভর্তি হওয়াটা কি উচিত হবে? দ্বিতীয়ত, নাগরিক সনদপত্র আনতে গিয়ে দেখা গেল চেয়ারম্যান সাহেব কার্যালয়ে নেই। কিন্তু উনি আগে থেকে এক্সট্রা কিছু সনদপত্রে তার স্বাক্ষর করে রেখেছেন। সেই আগে থেকে স্বাক্ষর করা কাগজে শুধু নিজের নাম ও ঠিকানা লিখে দিলেই সনদপত্র পূর্ণ হয়। এই ক্ষেত্রেও পিয়নকে (তাদের মতে চা-পানির) টাকা দিতে হয়েছে। এখন এইভাবে সনদ নেয়া কি ঠিক হল?

আরেকটা প্রবলেম হল পিয়নকে যে টাকাটা দিয়েছিলাম সে টাকার একটা বিরাট অংশ একজনের কাছ থেকে ধার নিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম যে সাত দিনের মাঝে টাকা দিব কিন্তু টাকা দিতে একদিন দেরি হয়। এতে করে কি ধার করা টাকাটা হারাম হয়ে যাবে? আর ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।সেই অংশটা আমি পিতার অনুমতি ছাড়া নিয়েছিলাম। অনুমতি চাইলে টাকা অবশ্যই দিত। এখন অনুমতি না নেওয়ায় কি সেটা হারাম হবে? আর এর ফলে কি এই সনদটাই হারাম হয়ে যাবে?

একই প্রবলেম হয়েছে এপলিকেশন ফর্মকে নিয়ে। সেটা নেবার সময় আমি পিতার অনুমতি না নিয়ে তার টাকা খরচ করেছি এবং পরবর্তীতে বলিনি। যদিও বললে সে টাকা দিত। তো এই ক্ষেত্রে কি বিধান হবে? তাহলে মূল প্রশ্ন দাঁড়াল যে এইভাব সংগ্রহ করা ২, ৩ ও ৪ নম্বর ডকুমেন্টগুলো দিয়ে ভর্তি হলে কি সেটা অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে? এবং এইভাবে ভর্তি হয়ে ভবিষতে টাকা উপার্জন করলে সেই টাকা কি হালাল হবে? ভর্তি হবার বৈধ অধিকার সরকার দিয়েছে এবং প্রত্যেকটা ডকুমেন্ট এর তথ্যগুলো সত্য হওয়া সত্যেও কি এটা অবৈধ হবে? আমি শুধু জানতে চাইছি এইভাবে করে ভর্তি হলে সেটা গ্রহণযোগ্য কিনা?

আর যদি অগ্রহণযোগ্য হয় তাহলে সমাধানটা কি হবে?

আপনি যদি একটু সময় পান তাহলে এই বিষয়টার সমাধান দিলে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

ঘুষ নেয়া কখনোই জায়েজ নয়। কিন্তু নিজের অনিবার্য প্রয়োজন পুরণার্থে, নিজের উপর থেকে জুলুমকে হঠানোর জন্য ঘুষ দেয়া জায়েজ আছে। কিন্তু নেয়া কখনোই জায়েজ নয়। সেই হিসেবে পিয়নকে টাকা দিয়ে আপনার ডকুমেন্টটি গ্রহণ করা জায়েজ হয়েছে। কোন সমস্যা নেই। সাধারণতঃ চেয়ারম্যানগণ এভাবেই সাইন করে রেখে দেয়। আর প্রয়োজনে সেখানে নাম লিখিয়ে কাজ সমাধা করা হয়ে থাকে। এটি যেহেতু আমাদের দেশের স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। তাই এটি আপনার নিজের ভুল হিসেবে সাব্যস্ত হবে না। এটি চেয়ারম্যান সাহেবের গাফলতি সাব্যস্ত হবে। তাই এভাবে সনদ সংগ্রহ করা আপনার জন্য দোষনীয় হয়নি ইনশাআল্লাহ। ওয়াদা খিলাফ করা নাজায়েজ। কিন্তু যদি ব্যক্তি যদি অপরাগ হয়, তাহলে এক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই মাফ করে দিবেন যদি সাচ্চা দিলে তওবা করে থাকেন। আর পিতার অনুমতি ছাড়া তার কাছ থেকে টাকা নেয়া জায়েজ নয়। তাই আপনার কাজটি ঠিক হয়নি। কিন্তু এসবের কারণে আপনার ডকুমেন্ট সংগ্রহ এবং ভর্তি কার্যক্রম নাজায়েজ হবে না। فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلَا عَادٍ فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ (١٦:١١٥ অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন রক্ত, শুকরের মাংস এবং যা জবাই কালে আল্লাহ ছাড়া অন্যের নাম উচ্চারণ করা হয়েছে। অতঃপর কেউ সীমালঙ্ঘন কারী না হয়ে নিরুপায় হয়ে পড়লে তবে, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। -সূরা নাহল-১১৫ وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوا بِهَا إِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوا فَرِيقًا مِّنْ أَمْوَالِ النَّاسِ بِالْإِثْمِ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ (٢:١٨٨ তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না। এবং জনগণের সম্পদের কিয়দংশ জেনে-শুনে পাপ পন্থায় আত্নসাৎ করার উদ্দেশে শাসন কতৃপক্ষের হাতেও তুলে দিও না। -সূরা বাকারা-১৮৮ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ إِلَّا أَن تَكُونَ تِجَارَةً عَن تَرَاضٍ مِّنكُمْ ۚ وَلَا تَقْتُلُوا أَنفُسَكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا (٤:٢٩) হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ। আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু। -সূরা নিসা-২৯ دفع المال للسلطان الجائر لدفع الظلم عن نفسه وماله ولاستخراج حق له ليس برشوة يعني في حق الدافع (رد المحتار، كتاب الحظر ولاباحة-9/607، فتح القدير، كتاب ادب القاضى-7/255، البحر الرائق، كتاب القضاء-6/262)

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১৩ এপ্রিল, ২৩