প্রাণী বিজ্ঞানের ছাত্রদের জন্য প্রাণীর ছবি আঁকা জায়েজ

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসজায়েয-নাজায়েয১১ মে, ২১

প্রশ্ন

আমি প্রাণীবিজ্ঞানে অনার্সপড়ছি, তাই আমার ব্যবহারিক খাতায় অনেক প্রাণীর চিত্র আঁকতে হয়। এর মধ্যে কিছু প্রাণী আছে যেগুলোর হাত,পা,মুখ ইত্যাদি অঙ্গ স্পষ্ট নয় (যেমন: আরশোলা, ফরিং, মশা, মাছি, সাপ, শামুক, ঝিনুক, প্রবাল ইত্যাদি)। আবার কিছু আনুবীক্ষনিক প্রাণী আছে যাদের বাহ্যিক ভাবে প্রাণী মনে হয়না। যেমন: এমিবা, হাইড্রা, ব্যাকটেরিয়া, বিভিন্ন রোগের জীবাণু ইত্যাদি। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে মানুষ,পশু,পাখি ইত্যাদি এবং উপরে উল্লেখিত প্রাণী সহ সমস্ত প্রাণীর ছবি আঁকা হারাম নাকি কিছু ব্যাতিক্রম আছে?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

ছবি আঁকার ক্ষেত্রে মৌলিক মাসআলা হল, প্রাণীর ছবি আঁকা হারাম। মৃত্যুর পর প্রাণীর ছবি আঁকিয়ে ব্যক্তির কঠিন আযাব হবে মর্মে একাধিক হাদীসে সতর্ক বাণী এসেছে। তবে যেসব আঁকা বস্তুকে প্রাণী বলা যায় না। সেসব বস্তু আঁকাতে কোন সমস্যা নেই। সেই হিসেবে প্রাণী বুঝা যায় না এমন ছবি আঁকার দ্বারা কাজটি হারাম হবে না। বরং এটি জায়েজ আছে।

এ মূলনীতির আলোকে আপনি নিজেই আপনার প্রশ্নকৃত বস্তুগুলো আঁকার হুকুম বের করে নিতে পারবেন আশা করি। যেহেতু এমিবা, হাইড্রা, ব্যাকটেরিয়া, বিভিন্ন রোগের জীবাণু ইত্যাদি কোন প্রাণী নয়, তাই এসব আঁকাতে কোন সমস্যা নেই। তবে আরশোলা, ফরিং, মশা, মাছি, সাপ, শামুক, ঝিনুক যেহেতু প্রাণী। তাই এসব যদি এমনভাবে আঁকা হয় যে, তার প্রাণীসূলভ অবস্থান পরিস্ফুটিত হয়, তাহলে তা আঁকা হারাম হবে। তবে যদি প্রাণীসূলভ অবস্থান পরিস্পুটিত না হয়, তাহলে আঁকা জায়েজ হবে।

عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِى الْحَسَنِ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى ابْنِ عَبَّاسٍ فَقَالَ إِنِّى رَجُلٌ أُصَوِّرُ هَذِهِ الصُّوَرَ فَأَفْتِنِى فِيهَا. فَقَالَ لَهُ ادْنُ مِنِّى. فَدَنَا مِنْهُ ثُمَّ قَالَ ادْنُ مِنِّى. فَدَنَا حَتَّى وَضَعَ يَدَهُ عَلَى رَأْسِهِ قَالَ أُنَبِّئُكَ بِمَا سَمِعْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ « كُلُّ مُصَوِّرٍ فِى النَّارِ يَجْعَلُ لَهُ بِكُلِّ صُورَةٍ صَوَّرَهَا نَفْسًا فَتُعَذِّبُهُ فِى جَهَنَّمَ ». وَقَالَ إِنْ كُنْتَ لاَ بُدَّ فَاعِلاً فَاصْنَعِ الشَّجَرَ وَمَا لاَ نَفْسَ لَهُ

হযরত সাঈদ বিন আবুল হাসান বলেন, এক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস e এর কাছে এসে বলল, আমি চিত্রকর। এবং চিত্র অংকন করি। এতএব এ সম্পর্কে আমাকে শরীয়তের বিধান বলে দিন। ইবনে আব্বাস e বলেন, আমার কাছে আস। সে ব্যক্তি তাঁর কাছে গেল। তিনি পুন য় বললেন, আমার কাছে আস। সে ব্যক্তি তার এত কাছে গেল যে, ইবনে আব্বাস তাঁর হাত ঐ ব্যক্তির মাথার উপর খলেন, এবং বললেন, আমি তোমাকে এ সম্পর্কে এমন একটি হাদীস শুনাচ্ছি, যা আমি সূল c এর কাছে শুনেছি। আমি সূল c কে বলতে শুনেছি যে, “সকল চিত্রকরই দোযখে যাবে। আর প্রত্যেক চিত্রের পরিবর্তে জীবিত এক ব্যক্তিকে বানানো হবে, যা দোযখে তাকে শাস্তি দেবে”। ইবনে আব্বাস e বলেন, যদি তোমাকে এরূপ করতেই হয়, তাহলে গাছ-পালা বা এমন বস্তুর ছবি তৈরী কর যা প্ ণী নয়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫৬৬২

ن عبد الله بن عمر رضي الله عنهما أخبر: أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال إن الذين يصنعون هذه الصور يعذبون يوم القيامة يقال لهم أحيوا ما خلقتم • হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর e থেকে বর্ণিত। রাসূল c ইরশাদ করেছেন-যে লোকেরা ছবি আঁকে, কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দেয়া হবে। আর তাদের বলা হবে যে, যা তোমরা বানিয়েছো তাতে প্রাণ দাও। -তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৬৯৪১, সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৬০৭, ৭১১৯, ৫৬১২, ৫৬১৬, ৭১১৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫৬৫৭; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৮৪৫

عبد الله قا: سمعت النبي صلى الله عليه و سلم يقول (إن أشد الناس عذابا عند الله يوم القيامة المصورون) • হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ e থেকে বর্ণিত। রাসূল c ইরশাদ করেছেন যে, কিয়ামতের দিন বেশি কঠিন শাস্তি হবে ছবি অংকনকারীদের। -তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৬৪৩২, সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৬০৬, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫৬৫৯

عَنْ أَبِي طَلْحَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيهِ كَلْبٌ وَلَا تَصَاوِيرُ • হযরত আবু তালহা e থেকে বর্ণিত। রাসূল c কে আমি বলতে শুনেছি যে, ঐ ঘরে ফেরেস্তা প্রবেশ করে না, যেই ঘরে কুকুর বা জীব-জন্তুর ছবি থাকে। -তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৫২৭২, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১৫৯, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৩৬৪৯, সুনানে বায়হাকী, হাদীস নং-১০৮৪, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-২৮০৪, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২৬৬৩, সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩০৫৩, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫৬৩৩, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৮৫৫

عن سعيد بن أبي الحسن قا: كنت عند ابن عباس رضي الله عنهما إذ أتاه رجل فقال يا أبا عباس إني إنسان إنما معيشتي من صنعة يدي وإني أصنع هذه التصاوير . فقال ابن عباس لا أحدثك إلا ما سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول سمعته يقول (من صور صورة فإن الله معذبه حتى ينفخ فيها الروح وليس بنافخ فيها أبدا) . فربا الرجل ربوة شديدة واصفر وجهه فقال ويحك إن أبيت إلا أن تصنع فعليك بهذا الشجر كل شيء ليس فيه روح

হযরত সাঈদ বিন আবিল হাসান i বলেন, আমি একদা হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস e এর কাছে ছিলাম। তখন তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এল। লোকটি এসে বলল-‘হে ইবনে আব্বাস! আমার উপার্জনের নির্ভরতা আমার হাতের সৃষ্টির উপর, আমি ছবি আঁকি’। হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস e বললেন-‘আমি তোমার কাছে সেই কথা বর্ণনা করছি, যা আমি রাসূল c কে বলতে শুনেছি, আমি রাসূল c কে এটা বলতে শুনেছি যে, যেই ব্যক্তি ছবি বানায়, তাকে আল্লাহ তায়ালা শাস্তি দিতে থাকবেন যতক্ষণ না সে উক্ত ছবিতে প্রাণ দিতে পারে, আর সেই ব্যক্তি কোনদিন তাতে প্রাণ দিতে পারবে না’। একথা শুনে লোকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আর তার চেহারা পাংশু হয়ে গেল। তখন হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস e বললেন-“আরে ভাই! যদি তুমি বানাতেই চাও, তাহলে গাছের ছবি আঁকো। আর প্রত্যেক ঐ বস্তুর ছবি আঁকো, যাতে প্রাণ নেই। -তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৬৪৩৪; সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২১১২; মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদীস নং-২৫৭৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৩৩৯৪; মু’জামে ইবনে আসাকীর, হাদীস নং-১১; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৮৪৮

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১১ মে, ২১