প্রত্যেক আযানের পূর্বে নিয়মিত দরূদ পাঠ করা

ইসলামী জিন্দেগীবিবিধ২৪ ফেব, ২১

প্রশ্ন

আমাদের মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের আযানের পূর্বে মুয়াযযিন সাহেব সালাম পাঠ করেনঃ আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া হাবীবাল্লাহ, আসসালাতু আসসালামু আলাইকা ইয়া শাফি’আল মুযনিবীন। আসসালাতু আসসালামু  আলাইকা ইয়া রাহমাতাল্লিল ‘আলামিন। প্রত্যেক আযানের পূর্বে নিয়মিত এ ধরনের সালাম পাঠ করা শরী‘আত সম্মত কি-না?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

নবী করীম c এর উপর দরুদ শরীফ পাঠ করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। দরুদ পাঠের মাধ্যমে নবী c এর প্রতি মহব্বত প্রকাশ পায় যা প্রতিটি মুমিনের জন্য জরুরী। তবে মুসলমানদের সকল আমলই শরী‘আত নির্ধারিত বিধান অনুযায়ী হতে হবে। ইচ্ছামত কেউ কোন আমলকে নির্ধারিত করে নিতে পারে না । যেমন নামায পড়া থুবই ফযীলত পূর্ণ। কিন্তু ফজর ‍ও আসরের পর নফল নামায পড়া শরী‘আতে নিষেধ। তখন কেউ নামায পড়লে সওয়াব তো দূরের কথা বরং গুনাহ হবে। আযানের পর দু‘আর পূর্বে নবীজী c এর উপর দরূদ পাঠ করা শরী‘আতে সুন্নাত হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে। কিন্তু আযানের পূর্বে নিয়ম বানিয়ে দরূদ পাঠ করার কোন বিধান শরী‘আতে নেই। তাই দরূদ পাঠ করা ফযীলতের বিষয় হলেও আযানের পূর্বে দরূদ পাঠের নিয়ম করে নেয়া গর্হিত ও ‍বিদ‘আত কাজ। এটা শরী‘আতের নিয়মকে পরিবর্তন করার শামিল। এ নিয়মের দ্বারা মানুষ এমন বিভ্রান্তিতে পড়বে যে, মানুষ মনে করবে হয়ত আযানের আগে এভাবে দরূদ পড়া শরী‘আতের নিয়ম। অথচ এটা শরী‘আতের কোন বিশেষ নিয়ম নয়। তাই তার এ কাজের দ্বারা শরী‘আতের আযান বিধানকে বিকৃত করে দেয়া হচ্ছে। বলা বাহুল্য-আযানের শেষে দরূদ পড়ার নিয়ত ছিল। তা না পড়ে আযানের পূর্বে দরূদ পড়া নামাযের শেষে (আত্তাহিয়্যাতুর পর) দরূদ শরীফ না পড়ে সূরা ফাতিহার শুরুতে পড়ার মতই অপরাধ। যা গর্হিত হওয়া স্পষ্ট। দরূদ শরীফ পাঠ অবশ্যই রাসূলুল্লাহ c কর্তৃক বর্ণিত তরীকায় হতে হবে। মনগড়া তরীকায় না হওয়া জরুরী। আযানের পূর্বে দরূদ পড়া মনগড়া তরীকা। সাহাবায়ে কিরাম রা.রাসূলুল্লাহ c -এর প্রতি আমাদের চেয়ে বেশী মহব্বত রাখতেন। উল্লেখিত পদ্ধতি কোন উত্তম কাজ হলে এ কাজে তাঁরাই অগ্রগামী হতেন। অথচ কোন সাহাবী e থেকে এ ধরনের কাজ বর্ণিত নেই।

হযরত নাফে i বলেন- এক ব্যক্তি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের e সামনে হাঁচি দিয়ে الحمدلله এর সাথে والسلام على رسول لله বলল। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর e বললেন- এটা বাহ্যিক দৃষ্টিতে ভাল হলেও নবীজী c আমাদেরকে হাচির পর এই দরূদ পড়তে শিক্ষা দেননি। বরং الحمدلله على كل حال পড়তে শিখিয়েছেন। -তিরমিযী শরীফ, ২/১০৩

এতদভিন্ন ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ! ইয়া শাফি‘আল মুযনিবীন! ইয়া রাহমাতাল্লিল আলামিন! এভাবে ইয়া হরফ দ্বারা নবী করীম c আলিমুল গায়িব এবং সর্বত্রই বিরাজমান, এই ভ্রান্ত আকীদা প্রকাশ পায়- যা নিঃসন্দেহে নাজায়িয ও শিরকের পর্যায়ভূক্ত। যে ব্যক্তি শিরক থেকে বাঁচতে চায়, তার কর্তব্য শিরকের আশংকাজনক শব্দ হতেও বিরত থাকা। হ্যা, নবীজী c - এর রওযা মুবারক সামনে নিয়ে এভাবে বলতে নিষেধ নেই। কারণ তখন নবী c -কে সরাসরি সম্বোধন করাই নিয়ম এবং তিনি সরাসরি সেই ডাকের জবাব দেন বলে হাদীস রয়েছে।

- والله اعلم باالصواب -

সূত্র

  • মিশকাত, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ২৭১
  • আলমগীরী, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৫৭
  • আহসানুল ফাতাওয়া, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৩৬৯

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২৪ ফেব, ২১