প্রচলিত দোকান-মালিক সমিতি শরীয়ত সম্মত কিনা

মাসিক আল কাউসারবাবসা বানিজ্য৫ জানু, ২১

প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় ব্যবসায়ীগণ একধরনের সমিতি করে থাকে। সমিতিতে দুটি পক্ষ থাকে। এক. মালিক পক্ষ। দুই. সদস্য পক্ষ। যারা সদস্য হয় তাদের সাথে মালিক পক্ষের চুক্তি হয় নিম্নরূপ :

সমিতির মেয়াদ এক বছর (৩৬৫ দিন)। মালিকপক্ষ দৈনিক নির্ধারিত পরিমাণ টাকা (১০০০/২০০০/৫০০০) সদস্যের দোকান থেকে উত্তোল করবে। এভাবে এক বছর (৩৬৫দিন) টাকা তুলবে। বছর শেষে উত্তোলনকৃত টাকা থেকে ৩৬০ দিনের টাকা মালিক পক্ষ সদস্যকে ফেরত দেবে, আর অবশিষ্ট ৫ দিনের টাকা দৈনিক টাকা উত্তোলনের পারিশ্রমিক বাবদ মালিকপক্ষ রেখে দেবে।

উল্লেখ্য, মালিকপক্ষ নিজে দোকানে দোকানে গিয়ে এই টাকা উত্তোলন করে কিংবা টাকা তোলার জন্য বেতনের উপর কোনো কর্মচারী নিয়োগ করে। উত্তোলনকৃত টাকা মালিকপক্ষের হাতে যতদিন থাকবে ততদিন এই টাকা স্বাধীনভাবে মালিকপক্ষ যেকোনো কাজে ব্যবহার করতে পারবে। যারা সদস্য হয় তাদের কারো কারো নিয়ত থাকে, এক বছর টাকা জমানোর পর এই টাকা বছর শেষে উত্তোলন করবে। আবার কারো নিয়ত থাকে, ৩৬০ দিনে সে যে টাকা জমা করবে (যেমন দৈনিক ১০০০ টাকা করে জমা করলে তিন লাখ ষাট হাজার টাকা) তা বছরের মাঝেই উত্তোলন করে নেয়ার আবেদন করবে। মালিকপক্ষের জন্য তার আবেদন গ্রহণ করা বা না করার অধিকার থাকবে। আবেদন গ্রহণ করলেও কখনো পুরো বছরের টাকাই দিয়ে দেয় অথবা এর চেয়ে কিছু কম দেয়। (তবে সবসময়ই তা বর্তমান জমাকৃত টাকার চেয়ে বেশি হয়ে থাকে।)

আর কেউ এ ধরনের চুক্তি করেই সমিতির সদস্য হয়। সেক্ষেত্রে মালিকপক্ষ সদস্যের সাথে চুক্তির কারণে বছরের মাঝখানে ৩৬০ দিনের টাকা সদস্যকে প্রদান করে।

উপরোক্ত অবস্থায় মালিকপক্ষ সদস্য থেকে পাঁচ দিনের টাকার চেয়ে অতিরিক্ত কোনো অর্থ গ্রহণ করে না।

মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি, শরীয়তের দৃষ্টিতে এই লেনদেন সহীহ কি না? সহীহ না হয়ে থাকলে শরীয়তসম্মতভাবে করার জন্য এতে কী কী পরিবর্তন আনতে হবে?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

প্রশ্নোক্ত সমিতিতে সদস্যদের টাকা উত্তোলনের তিনটি পদ্ধতি বলা হয়েছে-

১) বছর শেষে পুরো টাকা উত্তোলন করা।

২) পুরো বছরে যে পরিমাণ টাকা জমা করা হবে বছরের মাঝেই তা উত্তোলনের আবেদন করা।

৩) বছরের মাঝে পুরো বছরের টাকা উত্তোলন করার শর্তে সমিতিতে অংশগ্রহণ করা।

প্রথম পদ্ধতিতে সদস্যরা যেহেতু নিজেদের জমানো টাকাই উত্তোলন করে তাই এতে কোনো অসুবিধা নেই।

দ্বিতীয় পদ্ধতিতে মালিকপক্ষের যেহেতু সদস্যদের আবেদন মঞ্জুর করা বা না করার পুরো অধিকার রয়েছে (যেমনটি প্রশ্নপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে) তাই মালিকপক্ষ যদি সদস্যদের আবেদন মঞ্জুর করে উক্ত টাকা প্রদান করে তাহলে তা জায়েয হবে। এক্ষেত্রে সমিতিতে টাকা জমা করা এবং মালিকপক্ষ থেকে অগ্রিম টাকা গ্রহণের আবেদন পৃথক পৃথক হতে হবে। একটির সাথে অন্যটিকে শর্তযুক্ত করা যাবে না। আর সমিতির পক্ষ থেকে জমাকৃত টাকার অতিরিক্ত যা দেওয়া হবে তা করযে হাসানা হবে।

তৃতীয় পদ্ধতিতে যেহেতু মালিকপক্ষ থেকে ঋণ পাওয়ার শর্তে সমিতিতে অংশগ্রহণ করা হয় তাই এ পদ্ধতি বৈধ নয়। কেননা সদস্যরা সমিতিতে যা জমা করে তা শরীয়তের দৃষ্টিতে ঋণ হিসেবে বিবেচিত। আর কারো থেকে ভবিষ্যতে ঋণ পাওয়ার শর্তে তাকে ঋণ প্রদান করা জায়েয নয়। তাই এ পদ্ধতি বাদ দিতে হবে।

আর প্রশ্নে সমিতির আয়োজকদের পক্ষ থেকে ৫ দিনের টাকা খরচ বাবদ রেখে দেওয়ার যে কথা বলা হয়েছে তা জায়েয হবে না। কেননা আয়োজকগণ কর্তৃক উক্ত টাকা নিজেদের কাজে খরচ করার বিষয়টি থাকায় শরীয়তের দৃষ্টিতে এটি الأمانة المضمونة - এর অন্তর্ভুক্ত, যা القرض তথা ঋণ-এর হুকুমে। আর কারো থেকে ঋণ গ্রহণ করতে গিয়ে তার থেকে সার্ভিস চার্জ নেওয়ার বিধান শরীয়তে নেই।

- والله اعلم باالصواب -

সূত্র

  • আলজামে লিআহকামিল কুরআন, কুরতুবী, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ২২৫
  • খুলাসাতুল ফাতাওয়া, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৫৩
  • বাদায়েউস সানায়ে, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৫১৮
  • আলমুগনী, ইবনে কুদামা, খন্ড: , পৃষ্ঠা: ৪৩৭
  • মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং: ৩,৭৮৩

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ৫ জানু, ২১