পাগড়ি বাঁধার সুন্নত তরীকা কি

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসবিবিধ৪ এপ্রিল, ২৩

প্রশ্ন

পাগড়ি পরার সুন্নাত তরিকা কি? শুধু মাথায় কাপড় পেঁচালে কি পাগড়ি হয়ে যায়? নাকি মাথায় পেঁচিয়ে পিঠ পর্যন্ত ঝুলিয়ে দিতে হয়? পুরো মাথা পেঁচাতে হবে নাকি টুপির চারপাশে গিঁট দিয়ে পিঠের দিকে লেজ ছড়িয়ে দিতে হবে?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

স্বয়ং রাসূলুল্লাহ c বিভিন্ন সময় পাগড়ি ব্যবহার করেছেন তা বহু হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে। এখানে দু’ একটি হাদীস উল্লেখ করা হল। জাবির e বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ c (মক্কায়) প্রবেশ করলেন। তখন তাঁর মাথায় কালো পাগড়ি ছিল।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩৫৮ মুগীরা ইবনে শুবা e বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ c ওযু করলেন এবং মাথার অগ্রভাগ ও পাগড়ির উপর মাসাহ করলেন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৮১ তাঁর পাগড়ি পরিধান সংক্রান্ত এ ধরনের আরো অনেক বর্ণনা হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। সাহাবা, তাবেয়ীগণও নামাযে এবং নামাযের বাইরে বিভিন্ন সময় ব্যাপকভাবে পাগড়ি ব্যবহার করতেন। দ্রষ্টব্য : সহীহ বুখারী ১/৫৬ সুলাইমান ইবনে আবি আবদিল্লাহ i বলেন, আমি মুহাজির সাহাবীগণকে কালো, সাদা, হলুদ, সবুজ বিভিন্ন রঙের পাগড়ি পরতে দেখেছি।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২৫৪৮৯ আবদুল্লাহ ইবনে উমর e সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি মক্কা মুকাররমার উদ্দেশে বের হলে সঙ্গে পাগড়ি নিতেন এবং তা পরিধান করতেন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৫৫২ আবু উবাইদ i বলেছেন, আমি আতা ইবনে ইয়াযিদকে পাগড়ি পরিহিত অবস্থায় নামায পড়তে দেখেছি।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১১৭৮০ উপরোক্ত হাদীস ও আছার থেকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, সাহাবা, তাবেয়ীন নামাযে ও নামাযের বাইরে বিভিন্ন সময় ব্যাপকভাবে পাগড়ি পরতেন। তাঁদের কাছে পোশাক হিসেবে পাগড়ির একটি বিশেষ অবস্থান ও গুরুত্ব ছিল। এখন প্রশ্ন হল পাগড়ি বাঁধতেন কিভাবে? আসলে সুনির্দিষ্টভাবে কোন পদ্ধতির কথা হাদীসে পাওয়া যায় না। টুপি ঢাকতে হবে? না ঢাকা প্রয়োজন নেই? পুরো মাথা পেঁচাতে হবে না? নাকি পেঁচতে হবে না? এসব প্রশ্নের জবাবসহ কোন বর্ণনা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়নি। পাগড়ি বাঁধার বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। একটিতো হচ্ছে পূর্ণ পাগড়ি মাথার উপর বাঁধা এবং এর কোন লেজ বা ঝুল তথা শিমলা না রাখা। দ্বিতীয় হল এর শিমলা পেছনে ঝুলিয়ে রাখা। রাসূল c থেকে উভয় পন্থার পাগড়ি বাঁধার কথা প্রমাণিত। তবে তিনি সাধারণতঃ দু’কাঁধের মাঝামাঝি স্থানে পেছন দিকে শিমলা ঝুলিয়ে রাখতেন। রাসূল c এর পাগড়ির দৈর্ঘতা কতটুকু ছিল এ বিষয়ে মতভেদ আছে। ইমাম নববী i বলেন, রাসূল c এর পাগড়ি দুই ধরণের ছিল। ছোট পাগড়ি আনুমানিক তিন গজ ছিল। আর বড় পাগড়ি ছিল সাত গজ। -আপকি মাসায়েল আওর উনকা হল-৮/৩৫৪ এ কারণেই পরিমাণ নির্ধারনের ক্ষেত্রে কোন সুন্নত নেই। পাগড়ি টুপির উপর এবং টুপি ছাড়া উভয়ভাবে ব্যবহার করা যায়। অবশ্য মুশরিকরা যদি পাগড়ি ব্যবহার করে যেমন উপমহাদেশের শিখরা ব্যবহার করে থাকে, তখন তাদের থেকে স্বাতন্ত্রতা বজায় রাখার জন্য টুপির উপর পাগড়ি বাঁধতে হবে।

عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا اعْتَمَّ سَدَلَ عِمَامَتَهُ بَيْنَ كَتِفَيْهِ قَالَ نَافِعٌ: وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يَسْدِلُ عِمَامَتَهُ بَيْنَ كَتِفَيْهِ، قَالَ عُبَيْدُ اللهِ: وَرَأَيْتُ القَاسِمَ، وَسَالِمًا يَفْعَلاَنِ ذَلِكَ. হযরত ইবনে উমর e বলেন, রাসূল c যখন পাগড়ি পরতেন, তখন তার শিমলা উভয় কাঁধের মাঝখানে পেছন দিকে ঝুলিয়ে রাখতেন। নাফে i বলেন, আমি আব্দুল্লাহ বিন উমর e কে এরূপ করতে দেখেছি। নাফেল শিষ্য উবায়দুল্লাহ বলেন, আমি আবু বকর e এর পৌত্র কাশেম বিন মুহাম্মদকে এরূপ করতে দেখেছি। -তিরমিজী, হাদীস নং-১৭৩৬

أدركت المهاجرين الأولين يعتمون بعمائم كرابيس سود وبيض وحمر وخضر وصفر، يضع أحدهم العمامة على رأسه ويضع القلنسوة فوقها، ثم يدير العمائم هكذا على كوره لا يخرجها من ذقنه আমি প্রথম সারির মুহাজিরগণকে দেখেছি তাঁরা সুতির পাগড়ি পরিধান করতেন। কালো, সাদা, লাল, সবুজ, হলুদ ইত্যাদি রংয়ের। তারা পাগড়ির কাপড় মাথায় রেখে তার উপর টুপি রাখতেন। অতপর তার উপর পাগড়ি ঘুরিয়ে পরতেন।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১২/৫৪৫

كانت له عمامة تسمى السحاب، كساها عليا, وكان يلبسها ويلبسها تحتها القلنسوة، وكان يلبس القلنسوة بغير عمامة، ويلبس العمامة بغير قلنسوة، (زاد المعاد فى هدى خير العباد-1/135)

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ৪ এপ্রিল, ২৩