পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ না পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসপবিত্রতা১৭ মে, ২১

প্রশ্ন

প্রশ্ন আসসালামু আলাইকুম। আমার জানা মতে একটি হাদীস আছে, “পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ” আজকে একজন বলতেছে যে, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। এটা অনেক যায়গায় দেখেছি। আমি তাকে বললাম যে, এটাতো ভুল। পবিত্রতা আর পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা এক জিনিস নয়। এটা নিয়ে অনেকক্ষণ তর্ক হলো। সে বলতে চাচ্ছে যে, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা থেকেইতো পবিত্রতা। আমি বললাম যে, না পবিত্রতার মধ্যেতো পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা আছে। আসলে ব্যাপারটি ঠিক কি? একটু ব্যাখ্যা কওে বললে ভাল হতো।

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

عن أبى مالك الأشعرى قال قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم- « الطهور شطر الإيمان • হযরত আবু মালিক আশআরী e থেকে বর্ণিত। পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। -সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫৫৬, মুসনাদে আহমাদ,হাদীস নং-২২৯০২; সুনানে দারেমী, হাদীস নং-৬৫৩; সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৮৫

الطهور شطر الإيمان الطهور هاهنا يراد به التطهر والشطر النصف وكأن الإشارة إلى الصلاة وأنها لا تصح إلا بالطهارة فكأنها نصفها وقد سمى الله عز وجل الصلاة إيمانا بقوله (وما كان الله ليضيع إيمانكم) • আবুল ফরজ আব্দুর রহমান বিন জওযী i বলেনঃ পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ এর পবিত্রতার দ্বারা এখানে উদ্দেশ্য হলঃ পবিত্র হওয়া। আর অঙ্গ দ্বারা উদ্দেশ্য হল অর্ধেক। এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে নামাযের দিকে। আর নামায পবিত্রতা ছাড়া অর্জিত হয় না। তাই যেন এটি ঈমানের অর্ধেক। আর আল্লাহ তাআলা নামাযকেই ঈমান সাব্যস্ত করে ইরশাদ করেছেনঃ “আর আল্লাহ তাআলা এমন নন যে, তোমাদের ঈমানকে নিষ্ফল করে দিবেন। -কাশফুল মাশকিল মিন হাদীসিস সাহিহাইন, নং-৩০১০২৩৭৬

وقيل معناه أن الايمان يجب ما قبله من الخطايا وكذلك الوضوء لأن الوضوء لا يصح الا مع الايمان فصار لتوقفه على الايمان في معنى الشطر وقيل المراد بالايمان هنا الصلاة كما قال الله تعالى وما كان الله ليضيع ايمانكم والطهارة شرط في صحة الصلاة فصارت كالشطر وليس يلزم في الشطر أن يكون نصفا حقيقيا وهذا القول أقرب الأقوال ويحتمل أن يكون معناه أن الايمان تصديق بالقلب وانقياد بالظاهر وهما شطران للايمان والطهارة متضمنة الصلاة فهي انقياد في الظاهر

ইমাম নববী i বলেন, কেউ কেউ বলেন, ঈমান পূর্বের গোনাহকে মাফ করে দেয়। তেমনি অজ্ওু। কারণ অজু ঈমান ছাড়া শুদ্ধ হয় না। সুতরাং অজু শুদ্ধ হওয়া ঈমানের উপর নির্ভরশীল অঙ্গ হওয়া হিসেবে। আর কেউ কেউ বলেন যে, ঈমান দ্বারা এখানে নামায উদ্দেশ্য। যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন “আর আল্লাহ তাআলা এমন নন যে, তোমাদের ঈমানকে নিষ্ফল করে দিবেন”। আর নামায শুদ্ধ হওয়ার শর্ত হল পবিত্রতা। তাই এ পবিত্রতা হয়ে গেল অঙ্গ। আর অঙ্গ হওয়ার জন্য এটি আবশ্যক নয় যে, এটি বাস্তবেই অর্ধেক হবে। একথাটিই সকল বক্তব্যের মাঝে অধিক যৌক্তিক। আর একথার সম্ভাবনা রাখে যে, ঈমান হল মনের স্বীকারোক্তি ও বাহ্যিক প্রকাশের নাম। এ দুটি হল ঈমানের জন্য শর্ত। আর পবিত্রতা নামাযকে অন্তর্ভূক্তকারী। তাই এটি ঈমানের বাহ্যিক প্রকাশক (এ হিসেবে ঈমানের দু’টি শাখার একটি হওয়ায় এটি ঈমানের অঙ্গ)। -শরহে নববী-১/১১৮

মুহাদ্দিসীনে কেরামের উক্ত আলোচনা দ্বারা একথা সুষ্পষ্ট যে, হাদীসে বর্ণিত পবিত্রতা দ্বারা অজু উদ্দেশ্য। অন্য কিছু নয়। সকল মুহাদ্দিসগণ এ ব্যাপারে একমত। আর এ হাদীসটি মূলত অজুর জন্যই এসেছে। তথা অজুর ফজীলত বর্ণনার জন্যই এসেছে। তাই এর অর্থ হল অজু। তার মানে হল পবিত্র হওয়া। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হওয়া নয়। অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় ও অজু করে পবিত্র হওয়া যায়। আবার পবিত্র অবস্থায় ও অপরিচ্ছন্ন থাকা যায়। যেমন গায়ের জামা ময়লা হয়েছে, নাপাক হয়নি। গায়ে কাঁদা লেগেছে, নাপাক লাগেনি। উক্ত ব্যক্তি যদি অজু করে তাহলে সে পবিত্র হয়ে গেছে। তার জন্য এমতাবস্থায় নামায পড়া, কুরআন তিলাওয়াত করা জায়েজ। পক্ষান্তরে এক ব্যক্তির কাপড় চোপড় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। গায়ে কোন ময়লা নেই। কিন্তু প্রস্রাবের ছিটা তার জামায় লেগেছে। অজু নেই। তাহলে সে ব্যক্তি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন, কিন্তু পবিত্র নয়। তার জন্য কুরআন পড়া, নামায পড়া কোনটিই জায়েজ নয়। আশা করি বিষয়টি পরিস্কার হয়েছে।

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১৭ মে, ২১