নির্যাতিতা স্ত্রীর তালাক নিয়ে আলাদা হবার পদ্ধতি কি

আহলে হ্বক বাংলা মিডিয়া সার্ভিসবিবাহ-তালাক২০ এপ্রিল, ২২

প্রশ্ন

একটি মেয়ে ৩ মাস ধরে তালাকের জন্য অপেক্ষা করছে। সব ধরনের কাজ প্রায় সমাপ্ত। শুধু স্বামী বিদেশে থাকায় দেরী হচ্ছে। এই তালাকের কারণ সমূহ হলো; ১। স্বামী শারিরিক ভাবে নির্যাতন করেছেন ২। স্বামী মদ্য পান করেন ৩।স্বামী আগের স্ত্রীর সাথে তালাক দেয়ার পর ও সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়া ৪। স্ত্রী কে জোর করে মদ খাওয়ানো ৫। গভীর রাতে বন্ধু দের নিয়ে মদ খাওয়া ঘরে বউ কে রেখে। এরকম বিভিন্ন অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে মেয়েটি তালাকের জন্য আবেদন করে আদালতে। সে অন্যুায়ী কাজ চলছে। কিন্তু স্বামী বিদেশে চলে যাওয়ায় কাজ টা থেমে আছে। এই অবস্থায় মেয়েটি সব কাজেই মনোনিবেশ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। মেয়েটি কোন ভাবেই স্বামীর কাছে যাবে না। কিন্তু সে বার বার বলে যে তার স্বামী কে সে যে ভালোবাসা দিয়েছে, এবং তার মনে যে অবস্থান দিয়েছে তা আর কাউকে দিতে পারবে না। ১: মেয়েটি কি এভাবেই তালাকের জন্য অপেক্ষা করবে? ২: মেয়ে টি তার স্বামী কে ত্যাগ করেও যে অবস্থান দিয়েছে তা কি শিরক এর শামিল?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

ইসলাম সংসার ভাঙ্গাকে পছন্দ করে না। তাই স্বাভাবিকভাবে তালাক ইসলামে পছন্দনীয় নয়। তবে নিরূপায় অবস্থায় তালাক দেয়ার অনুমতি রয়েছে। এক্ষেত্রে করণীয় হল, প্রাথমিকভাবে যার কারণে তালাক দেয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে,তাকে বুঝানো, নিজের বুঝানোর মাধ্যমে কাজ না হলে, পরিবারের মাধ্যমে বুঝানো, মুরব্বীদের মাধ্যমে বুঝানো। তারপরও যদি ঠিক না হয়। তাহলে ইসলামী শরীয়ত এক তালাক দেয়ার অনুমতি প্রদান করে। এটি স্বাভাবিক নিয়ম। আর স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক দেয়ার জন্য জরুরী হল, স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক দেয়ার অধিকার দেয়া। যদি তালাকের অধিকার স্বামী স্ত্রীকে না দিয়ে থাকে, তাহলে স্ত্রী স্বামীকে তালাক দিতে পারবে না। বর্তমানে কাবিননামায় স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক দেয়ার অধিকার দিয়ে দেয়া হয়। সে হিসেবে স্ত্রীও স্বামীকে তালাক দিতে পারে নৈতিক কারণে। স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক দেয়ার অধিকার দিয়ে থাকে, তাহলে স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক দেয়ার জন্য স্বামীর মঞ্জুরী জরুরী নয়। স্বামীর দেয়া অধিকার বলে স্ত্রী নিজের উপর তালাক পতিত করে আলাদা হয়ে যেতে পারবে। কিন্তু স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক দেয়ার অধিকার না দিয়ে থাকে, তাহলে স্ত্রী নিজের উপর তালাক পতিত করতে পারবে না। তবে এক্ষেত্রে স্ত্রী নিজের উপর তালাক নেয়ার জন্য স্বামীর সাথে খোলা তালাকের চুক্তি করতে পারে। সেটি হল, অর্থের বিনিময়ে বা মোহর মাফ করিয়ে নেবার বিনিময়ে স্বামীর কাছ থেকে তালাক নিয়ে নেয়া। উপরোক্ত বক্তব্যের আলোকে আপনি নিজেই নির্ধারিত করে নিতে পারবেন উক্ত মহিলার এখন কী করা উচিত। যদি স্বামীর সাথে থাকা সম্ভব হয়, বা স্বামীকে বুঝিয়ে ভাল পথে নিয়ে আসা সম্ভব হয়, তাহলে তালাকের পথে না যাওয়াই হবে উত্তম কাজ। তারপরও যদি সম্ভব না হয়, তাহলে উপরোক্ত মূলনীতির আলোকে মহিলা নিজের জন্য উপযুক্ত অবস্থান আরোপ করতে পারবে। قوله تعالى- فَإنْ خِفْتُمْ أَنْ لاَ يُقِيمَا حُدُودَ اللهِ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيما افْتَدَتْ بِهِ (سورة البقرة-229 আর যদি তোমরা আশংকা কর যে, তারা উভয়ে আল্লাহর সীমারেখা রক্ষা করতে পারবে না, তবে সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি বিনিময় দিয়ে নিষ্কৃতি পেতে চায় তাহলে উভয়ের মধ্যে কারো কোন অপরাধ নেই। -সুরা বাকারা-২২৯ وفي رد المحتار- وأنواعه ثلاثة : تفويض ، وتوكيل ، ورسالة وألفاظ التفويض ثلاثة : تخيير وأمر بيد ، ومشيئة . (قال لها اختاري أو أمرك بيدك ينوي) تفويض (الطلاق) لأنها كناية فلا يعملان بلا نية (أو طلقي نفسك فلها أن تطلق في مجلس علمها به) مشافهة أو إخبارا (وإن طال) يوما أو أكثر ما لم يوقته ويمضي الوقت قبل علمها (ما لم تقم) لتبدل مجلسها حقيقة (أو) حكما بأن (تعمل ما يقطعه) مما يدل على الإعراض لأنه تمليك فيتوقف على قبول في المجلس لا توكيل ، فلم يصح رجوعه ، حتى لو خيرها ثم حلف أن لا يطلقها فطلقت لم يحنث في الأصح (لا) تطلق (بعده) أي المجلس (إلا إذا زاد) في قوله طلقي نفسك وأخواته (متى شئت أو متى ما شئت أو إذا شئت أو إذا ما شئت) فلا يتقيد بالمجلس (ولم يصح رجوعه) لما مر (رد المحتار-كتاب الطلاق، باب تفويض الطلاق-4/452) আর আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নটি বোধগম্য নয়। তাই পরিস্কার করে বলুন। দুই নং প্রশ্নটির দ্বারা আপনি কি বুঝাতে চাচ্ছেন?

- والله اعلم باالصواب -

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ২০ এপ্রিল, ২২